Aparna Chaudhuri

Classics

2.5  

Aparna Chaudhuri

Classics

সম্পর্ক

সম্পর্ক

7 mins
1.3K


“তু মর জা। তু মরেগা তো ম্যায় সওয়া রুপিয়া কা পুজা চঢ়াউঙ্গী মন্দির মে।“ রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো রামপিয়ারী।

“উতনি আসানিসে ম্যায় নাহি মরুঙ্গা। মেরে গলে মে ইয়ে তাবিজ দেখ রহি হো ! মেরে আম্মি নে বান্ধা। তাকি কোই ডায়েন মেরা কুছ বিগাড় না পায়ে।“ উত্তর দিল আসলাম মিয়াঁ, পিছনের গ্যারাজ থেকে।

অখিলেশ বাথরুমে দাড়ি কামাচ্ছিল, বেরিয়ে দেখল স্ত্রী অনুপমা মাথা ধরে চেয়ারে চুপ করে বসে আছে। মুচকি হেসে বলল,” আবার শুরু হয়ে গেছে?”

অনুপমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

“ আজ আবার কি নিয়ে লাগলো?”

“ওদের ঝগড়ার জন্য কি কোন কারণ লাগে? দেখো সকালের চায়ে হয়তো চিনি কম হয়েছিল। এরকমই কিছু একটা হবে।“

অখিলেশ হাসতে হাসতে পাশের ঘরে জামাকাপড় বদলানোর জন্য চলে গেল। ওকে অফিস যেতে হবে।

অখিলেশ একটি সরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করে। কাজের সুত্রে ওর নানা জায়গায় ট্রান্সফার হয়। এবার এসেছে এই উত্তরপ্রদেশের ছোট জেলা শহরে । এখানকার ব্রাঞ্চের, ও ম্যানেজার। ব্যাঙ্ক থেকে ওকে থাকার জন্য একটা বাংলো দিয়েছে, ইংরেজ আমলের। সেই বাংলোতে রান্না করে রামপিয়ারী। আর অখিলেশের গাড়ী চালায় আসলাম মিয়াঁ।

রামপিয়ারী উঁচু জাতের ব্রাহ্মণ। ওর স্বামী কোনো মন্দিরের সেবায়েত। আসলাম মিয়াঁ সুন্নি মুসলমান। বহুদিন থেকে ওরা এই বাংলোতে কাজ করে। আগের যিনি ম্যানেজার ছিলেন তিনিও বাঙালী ছিলেন, তাই ওরা ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। অনুপমা এসে থেকে দেখছে, এদের একেবারে সাপে নেউলে সম্পর্ক। মুখোমুখি হলেই ঝগড়া।

“কাম তো ঠিক সে আতি নেহি, আউর সারে চিজ খারাব করতি হো। ইসকো বোলতে হ্যায় নাচ না জানে আঙ্গন টেড়া।“ কটূক্তি করল আসলাম।

“কি হল আসলাম এতো নারাজ হচ্ছ কেন?” হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করল অখিলেশ।

রান্নাঘরের সামনে ডাইনিং রুম। সেখানে টেবিলে এসে খেতে বসেছে ও। অখিলেশের সামনে সশব্দে খাবারের প্লেটটা নামিয়ে রেখে ঘোমটার আড়াল থেকে একটা রক্তকটাক্ষ আসলামের দিকে হেনে রামপিয়ারী রান্নাঘরে ঢুকে গেল। অখিলেশের সামনে রামপিয়ারী কথা বলেনা।

কোনো উত্তর না পেয়ে অখিলেশ অনুপমার দিকে চেয়ে ইশারায় জানতে চাইল কি ব্যাপার।

অনুপমা হাসতে হাসতে বলল, “কাল বাজার করার সময় আসলাম খনিকটা পুদিনা পাতা এনেছিল সেটা রামপিয়ারী ফ্রিজে তুলতে ভুলে গেছে, তাই সেটা শুকিয়ে গেছে। তুমি কবে নাকি বলেছ যে তোমার পুদিনার চাটনি ভালো লাগে......”

“ও এই ব্যাপার?”

খাওয়া শেষ করে অখিলেশ যেই জুতো পরতে গেল ওমনি আবার শুরু হয়ে গেল।

“হামে কাম সিখানে আয়া হ্যায়... যা ভাগ ইয়াহাঁ সে...“ এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল ছুঁড়ে দিল রামপিয়ারী।

আসলাম খুব সহজেই সেই জলটাকে পাশ কাটিয়ে হে হে করে হাসতে হাসতে বলে উঠলো, “ সাচ সবকো কড়োয়া লাগতা হ্যায় ।“

ঝগড়া আরো খানিক্ষণ চলত, কিন্তু অখিলেশ তৈরি হয়ে গাড়ীর দিকে রওনা দিতেই আসলাম রণে ভঙ্গ দিয়ে গাড়ীর সামনে গিয়ে অখিলেশের জন্য দরজা খুলে দিল।

ওরা বেরিয়ে যেতে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো অনুপমা। গিয়ে বসলো সোফার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে অনুপমাকে এক কাপ চা দিয়ে নিজের চায়ের কাপ আর সঙ্গে একটা পরোটা নিয়ে দরজার কোনে মেঝেতে বসলো রামপিয়ারী।

এখন দু-দণ্ড বিশ্রাম। এই সময়ে অনুপমা আর রামপিয়ারী দুজন আরাম করে বসে চা খায়, একটু প্রাণের মনের কথা বলে। তারপর রামপিয়ারী যায় দুপুরের রান্না করতে আর অনুপমা ওর টুকটাক ঘরের কাজ নিয়ে বা লেখা নিয়ে বসে। কোনো কোনো দিন খেয়াল হলে এক আধটা পোষাকি রান্নাও করে।

 “এই তোরা অত ঝগড়া করিস কেন রে?” জিজ্ঞাসা করল অনুপমা। 

“ উও মেরে টাং ভি তো খিঁচতা হ্যায়। বহুত বদমাশ হ্যায়। পহলে তো মারতাম এখন ওর শাদি হয়ে গেছে তাই মারি না।“ মুচকি হাসল রামপিয়ারী।

“ তুই ওকে কবে থেকে চিনিস?”

“ বহুত দিন। হামি শাদি হয়ে আসলাম। তখন ও ছোট ছেলে।“

“ তোরা কি পাশাপাশি থাকিস?”

“ নাহি নাহি! ওদের মহল্লা আলাদা। হামি এখানে কাজে লাগলাম তখন ও ভি এখানে কাজে লাগলো।“

হাতের মোবাইলটা বেজে উঠতে আড্ডা আর জমলো না। অনুপমার মা ফোন করেছেন। তার মানে পাক্কা আধঘণ্টা। রামপিয়ারী রান্নাঘরে চলে গেল।

মায়ের সঙ্গে কথা শেষ করে ফোনটা রেখে অনুপমা রান্নাঘরের দিকে যেতেই দেখলো রামপিয়ারী খুব যত্ন করে দুটো পরোটা রান্নাঘরের কোনে ঢেকে রাখছে। অনুপমা জানে এটা ও আসলামের জন্য রাখছে। রোজ সন্ধ্যায় যখন আসলাম চা খায় তখন দেয়। সারা দিনের পর খুব খিদে পায় নিশ্চই। একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় অনুপমা। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক একটা অদ্ভুত জিনিষ। সবসময় তাকে নাম দেওয়া যায়না বোধহয়। ওদের মধ্যে কোনো কিছুই সমান নয়। বন্ধুত্ব যে নেই সে কথা আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। কিন্তু দুদিন আগেই অনুপমা ওদের কথা শুনছিল। আসলাম রামপিয়ারীর কাছে টাকা ধার চাইছে। আসলামের বউ-এর শরীর খারাপ। মাইনে পেতে অনেক দেরী। অনুপমাকে অবাক করে দিয়ে নিজের আঁচলের গিঁট খুলে দুটো একশ টাকার নোট বার করে দিল রামপিয়ারী।

রামপিয়ারীর খুব ছোট বয়সে বিয়ে হয়। স্বামী ওর থেকে প্রায় দশ বছরের বড়। তার ওপর ও সুন্দরী এবং নিঃসন্তান । তাই স্বামীর শাসনও খুব কড়া। কিন্তু তাতে রামপিয়ারীর ভালবাসায় কিছু ঘাটতি হয়েছে বলে মনে হয় না। অনুপমা লক্ষ্য করেছে কথায় কথায় রামপিয়ারীর স্বামী যাকে ও ‘ঠাকুর সাহেব’ বলে ডাকে, তার নাম এলেই ওর মুখে একটা রক্তিম আভা দেখা দেয়।  

সাধারণত বিকালবেলায় অখিলেশ ফেরার পর ওর সাথে চা খায় অনুপমা। বিকালের জলখাবার দিয়ে, রাতের খাবার গুছিয়ে রেখে সন্ধ্যা ছটা নাগাদ রামপিয়ারী বাড়ি যায়। সেই সময় আসলাম ওকে খানিকটা এগিয়ে দিয়ে আসে। রোজকার মত আজও অখিলেশের অপেক্ষায় বসেছিল অনুপমা। কিন্তু রাত আটটা বেজে যাওয়ার পরও যখন অখিলেশ এলো না তখন অনুপমা ব্যাঙ্কে ফোন করে জানল যে আজ অখিলেশের ফিরতে দেরি হবে।

“ভাভী, ম্যায় ঘর জাউঁ?” অনুপমার কাছে এসে ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করল রামপিয়ারী। ওর মুখটা শুকিয়ে গেছে। এখন শীতের শুরু। তাই বিকাল পাঁচটা বাজতে না বাজতেই অন্ধকার হতে শুরু হয়। এখন রাস্তা শুনশান। আজ ওকে একাই যেতে হবে।

“আচ্ছা যা।“ অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দিল অনুপমা।

রামপিয়ারী কিছু একটা বলবো বলবো করেও, না বলে ধীরে ধীরে চলে গেল।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই অখিলেশ ফিরল। হেড অফিস থেকে কেউ একজন ইন্সপেকশনের জন্য এসেছিল তাই এতো দেরী।

“রামপিয়ারী কোথায়? এক কাপ চা দিতে বলনা। মাথাটা বড্ড ধরেছে।“ বলল অখিলেশ।

“এতক্ষণ বসে বসে এইমাত্র রামপিয়ারী গেল। দাঁড়াও আমি চা করে দিচ্ছি।“ বলে অনুপমা রান্নাঘরে চা করতে গেল।

“ম্যাডাম কব গয়ী রামপিয়ারী?”

আসলামের গলার স্বরে চমকে ফিরে তাকালো অনুপমা। আসলাম রান্নাঘরের দরজার সামনে খুব কিন্তু কিন্তু করে দাঁড়িয়ে আছে।

“এই আটটা হবে... কেন বলত?”

“কুছ নহি...... আমি এখন ঘর যাব ম্যাডাম ...... মানে আর যদি কিছু কাজ না থাকে তো......”

“আচ্ছা যাও।“

অনুমতি পাবার সঙ্গে সঙ্গে অনুপমাকে অবাক করে দিয়ে আসলাম প্রায় ছুটে বেরিয়ে চলে গেল।

চা আর সাথে জলখাবার নিয়ে অনুপমা অখিলেশের সামনে বসে হাসতে হাসতে এই ঘটনাটা বর্ণনা করছিল।

“এই দুজন শুম্ভ নিশুম্ভের মধ্যে কি কোন সম্পর্ক আছে?”

“আরে ধুর! একজন উত্তরমেরু তো আরেকজন দক্ষিণমেরু।” চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল অখিলেশ।

চা শেষ করে অখিলেশ সবে উঠেছে স্নান করবে বলে, বাইরের দরজার কলিং বেলটা খুব জোরে জোরে বেজে উঠলো। অনুপমা গিয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে এল আসলাম, সঙ্গে রামপিয়ারী।

রামপিয়ারীর অবস্থা দেখে চমকে উঠলো ওরা। মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে, হাতে পিঠে কালশিটে। আসলামের কাঁধে ভর দিয়ে কোনরকমে ঘরে ঢুকেই মাটিতে বসে পড়লো রামপিয়ারী।

“ কি হয়েছে?” জিজ্ঞাসা করল অখিলেশ।

রামপিয়ারী চুপ।

আসলাম যা বলল তা হল – রামপিয়ারীর স্বামী প্রীতম ঠাকুর ভীষণ রাগী ও সন্দেহ প্রবণ। তার ওপর রাতে তার একটু মদ্যপানের অভ্যাস আছে। রামপিয়ারী এখান থেকে খুব দেরীতে বাড়ী পৌছায়, তখন প্রীতম ঠাকুর রাগে এবং নেশায় উন্মাদ। রামপিয়ারী ঘরে ঢুকতেই হাতের কাছে যে লাঠিটা ছিল তাই দিয়ে ওকে প্রচন্ড মারে এবং বাড়ীর থেকে বার করে দেয়। রামপিয়ারীর বাড়ীটা একদম গ্রামের শেষে, ওখানে আশেপাশে কেউ থাকে না। আসলাম জানত প্রীতমের স্বভাব। তাই বাড়ী যাবার সময় একবার রামপিয়ারীর বাড়ীর দিকে গিয়েছিল দেখতে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। ওখানে গিয়ে ও রামপিয়ারীকে বাড়ীর দাওয়ায় প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এখানে নিয়ে এসেছে।

অখিলেশ আর অনুপমা আর সময় নষ্ট না করে ওকে তখনই গাড়ী করে নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে। মাথায় তিনটে স্টিচ পড়লো রামপিয়ারীর। ঘণ্টাখানেক বাদে ব্যান্ডেজ বেঁধে, ব্যথা কমার ইনজেকশন নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেই রামপিয়ারী ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল, “মুঝে ঠাকুর সাহেবকে পাস যানা হ্যায়......”

অখিলেশ আর অনুপমাকে হতভম্ব হয়ে রামপিয়ারীর দিকে চেয়ে থাকতে দেখে ডাক্তারবাবু মুচকি হেসে বললেন,” অবাক হবেন না। এদের সম্পর্ক গুলো আপনারা বুঝতে পারবেন না। পৌঁছে দিয়ে আসুন।”

গাড়ী করে যখন ওরা রামপিয়ারীর বাড়ীর কাছে পৌঁছাল, ওরা দেখতে পেল ঠাকুর সাহেব টলতে টলতে বাড়ীর থেকে বেরিয়ে কোথায় যাচ্ছে। রামপিয়ারীকে দেখে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।

এর একসপ্তাহ বাদে আবার রামপিয়ারী কাজে এলো। মাথায় একটা স্টিকিং প্লাসটার লাগানো।

“কেমন আছিস?” জিজ্ঞাসা করলো অনুপমা।

রামপিয়ারী লাজুক হাসি হেসে বলল, “আচ্ছি হুঁ। ঠাকুর সাহেব বহুত দেখভাল করছে।” ওর মুখে ছড়িয়ে পড়া রক্তিম আভা অনুপমার চোখ এড়ায় না।

“ অভি ভি জিন্দা হ্যায়? মরী নেহি?” ওকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো আসলাম।

“ মরে মেরে দুশমন! ম্যায় তেরে চায়মে জহর দেকে পহলে তুঝে মারুঙ্গি।“ রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দিল রামপিয়ারী।

অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়লো।

“ শুরু হয়ে গেছে?” খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করল অখিলেশ।

মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো অনুপমা।

সমাপ্ত



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics