সম্প্রীতির নক্ষত্র
সম্প্রীতির নক্ষত্র
ধর্মীয় পরিবারে জন্ম, জীবনের শুরুতে ধর্মীয় শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও ধর্মীয় নিরক্ষেপতায় উত্তরণ। এ যেন ডোবা থেকে সাগর হয়ে যাওয়া। মহাপ্রাণ না হলে তা সম্ভব হয় না। দুখুমিয়া সেটাই হয়ে উঠলেন। জীবনের বাঁকে সব কিছুকে উপেক্ষা করে তিনি তুলে ধরলেন সম্প্রীতির ধ্বজা। এটা কতো কঠিন কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের প্রাণের কাব্যসুধা কবি নিজের জীবনে সেটাই করে দেখালেন।
জীবনের প্রতি ছত্রে ছত্রে বিভেদ, অনৈক্যকে খান খান করে তিনি এগিয়ে গেলেন দুর্বার গতিতে স্রোতস্বিনীর মতো। নিজের কবিতা, গান, নাটক যাবতীয় সাহিত্যের উপাদানে মিশ্র ঐতিহ্য হয়ে উঠলো উপজীব্য। তার সাহিত্য হয়ে উঠলো মানবতার, মনুষ্যত্বের কর্ষণ ভূমি।
হিন্দু পুরানের বিভিন্ন চরিত্রকে প্রতীক করে তিনি সৃষ্টি করেছেন কবিতা, গান, নাটক। লিখেছেন, সুর দিয়েছেন, গেয়েছেন শত শত শ্যামাসঙ্গীত। তিনি লিখেছেন ইসলামী গজল গীত। তিনি গানে মা শ্যামাকে তুলে ধরলেন ইসলাম আত্মসচেতন, নিরহংকারী, অশুভনাশিনী শক্তিরূপে। শ্
যামা মা হলেন তার কাছে দেশমাতা, যার কাছে ধর্মের, সম্পদের, কোন ভেদ নেই। তাই তিনি গেয়ে উঠেছেন, " দেব শিশু মারছে চাবুক, বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি, ভূভারত আজ কসাইখানা; আসবি কখন সর্বনাশী।"
তিনি লিখেছেন দুর্গাপূজার গান- "মা গো চিন্ময়ী----- সেই দুর্গারে এই দেশ চায়"। লিখেছেন ঈদের গান- " ও মন ---- রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, নিজেকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ।" শুধু হিন্দু- মুসলিম নয়, তিনি চেয়েছেন সব ধর্মের সমন্বয়। তাই তিনি লিখেছেন, " গাহি সাম্যের গান / যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/ যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ- মুসলিম-ক্রিশ্চান।"
বিদ্রোহী কবি নজরুল ছিলেন নবজাগরণের পথিকৃত। তিনি যেমন করেছেন প্রচলিত রীতির বিরোধিতা, তেমনি চেয়েছেন
ঐতিহ্যের মিলন সাধন। উদারতার পাগলা ঝোরা তার হৃদয়ের
সব মলিনতা ধুঁয়ে মুছে সাফ করেছিল, তাই এসেছিল সাম্য, নিরপেক্ষতার বন্যা। তিনি হয়ে উঠেছিলেন সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।