STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Romance

4  

Manab Mondal

Abstract Romance

সই

সই

4 mins
367

জানি হয়তো আজ আমি তোমার মন খারাপের কারণ। তবু জানে রেখো তোমায় ছাড়া জীবনটা বড় শুন্য। কিছু দীর্ঘশ্বাস কষ্ট গুলোকে ভাষা দিতে চেয়েও পারে না। জেনো তোমার জন্মদিন আমি ভুলি নি এতো বছর পরও।তোমার জন্মদিনে তোমার জন্য টিউলিপ কিনেছিলাম। কিন্তু কেন জানি ফুলটা তোমার উপর ভীষণ অভিমান করেছে। তোমার কাছে যেতে চায়না। আমাকেও যেতে দেয়না। শেষে আমি টিউলিপটাকে তোমার ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখলাম ‌। ফুলেরও অভিমান হয়। শুধু আমার অভিমান হতে নেই। এই ডাইরীর পাতায় আজীবন বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে ছাড়া। ফুলদানীতে চারবছরে পুরনো শুকনো গোলাপটা ফেলতে গিয়ে কাটা ফুটলো। জানিনা আরো কত স্মৃতি চিহ্ন ছড়িয়ে আছে এ ঘরের আনাচে কানাচে। আজ থেকে কোনদিন দেখতে হবেনা ভালোবাসার চিহ্ন গোলাপকে । আমি দূরে থেকেও তোমার ভালো চাইবো। ভালো থেকো, আমার অপূর্ণ ভালোবাসা।

হয়তো পৃথিবীর যে কটা প্রেম হয় তার সমাপ্তিটা বিচ্ছেদেই হয় । কিন্তু আমাদের তো তা হয়নি ।ভালো চাকরি ছিলো না বলে আমাদের এক হওয়াটা আটকে যায়নি। মনে আছে তুমি বিজুদাকে বলেছিলে ও লেখা চালিয়ে যাবে সারা জীবন, কারণ আমি চাকরি করে সংসার চালাবো। তুমি চাকুরী ও পেলে তবুও আমরা আজ আলাদা।

জানি তাতে কারো কিছু যায় আসে না।এই পৃথিবীর বুকেই দুজন বেঁচে থাকবো দুজন দুজনার দীর্ঘশ্বাসে। কিংবা প্রতিহিংসায়। জানি তুমি আমাকে ভীষন ঘৃণা করো কিন্তু কেন সেটা জানা হয়নি?

তাই বারবার নিজেকে শেষ করতে গিয়ে শেষ করতে পারি নি।

কাল পয়লা বৈশাখ অনেক বছর পর বাড়িতে আছি। ঘরটা গুছনো হলো , তুমি তো সেই দিন অফিসে যাবে বলে বেড়িয়ে ছিলে, তাই আলমারিতে ভরা তোমার জামা কাপড়, পুঁটলি করে রাখতে বললাম। ভাবলাম এবার সুন্দর বনে ঝড়বাদলা হলে ত্রান পাঠাবো। মা বললো" যেমন আছে তেমনি থাক।" তোমার বাক্সেটা পেলাম, আমার দেওয়া চকলেটের রেপ্যার, ট্রামের টিকিট, তাজমহল এর সামনে থেকে কিনে দেওয়া চাবির রিং,ভাঙা কাঁচের চুড়ি, শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া রজনী গন্ধার মালা, সব যত্ন করে রাখা ছিলো আলমারীতে আমার অগোচরেই ।

কিন্তু তোমার টাকা বাচিঁয়ে কিনে দেয়া টি-শার্টটার ঘোরদোর মোছা জন্য দিয়ে দিলাম, আসলে জানি তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে পারিনি কোন দিনই। নয়তো তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে। লোকজন সাজানো গল্প শুনে বিশ্বাস করতে না আমি অন্য কারো সাথে সম্পর্ক লিপ্ত হয়েছি। কিন্তু আজ তুমি নেই বহুদিন হয়ে গেলো। কিন্তু ওই বিচ্ছেদকে আজো আমি বিচ্ছেদ মনে করি না।

বিচ্ছেদ কেবল একটি শব্দমাত্র। তুমি যতোই অন্যকারোর সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাও। বহুবছর পরেও আজ তুমি নিশ্চয়ই আমার কথা মনে করো। আমি মনে করি না তোমার কথা। কারণ আমি তো তোমাকে ভুলিনি কোনদিন । তোমাকে অনুভব করি প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসে। আত্নিক বিচ্ছেদ ঘটেনা কভু হয়নি আমার , যা হয়েছে তা শরীরের থেকে শরীরে। আর কিছু টা সময়ের। আমার ভালোবাসায় কোন বিচ্ছেদ নেই

একজীবন কেবল পেয়েও হারানোর যন্ত্রণা আছে,

কাছে না থেকেও তোমার ভালো চাওয়া আছে।

তীব্র স্রোতে নদীর  মাঝখানে ডুবন্তপ্রায় মানুষ যেমন সামান্য খরকুটোও সামনে পেলে বাঁচবার আশায় তা আকড়ে ধরতে চায়, আমি সেরকম সম্পর্কটাকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলাম। তোমার অফিসের দিদিরা আমার ব্যর্থ চেষ্টাটার নাম দিয়েছিলো আমার চালাকি। বন্ধুরা বলছে পাগলামি।শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারলাম না ।সবার সব ধারনাকে হিসেবে নিকেষ ভুল প্রমাণিত করে আমাদের ডিভোর্সের নোটিশটা তুমি পাঠিয়ে দিলে।কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই মুক্তি চেয়েছিলে তুমি , তাই দিয়ে দিলাম একটা সই । শুধু একটা সই যদি চাও সই , তাই সই । আমাদের বিয়ের সময় কতো ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল তোমাকে , কিন্তু কম ঝমেলায় আমাদের বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে ভাবতে পারি নি।

ঠিক একটা জীবনের জন্ম-মৃত্যুর মতো একটা সম্পর্ক।মৃত্যু যখন হয় তখন কয়েকটা সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায় । কিন্তু একটা মানব শিশুর জীবন আসে কতো সময় ধরে। মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীর আলো দেখতে দশ মাস দশ দিন সময়ের প্রয়োজন হয় তার ।মৃত্যু র-আগে একটা মানুষের বাঁচবার আকাংখার ছটপট করে‌। আমাদের সংসারটা সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখবার জন্য ঠিক তেমনি চেষ্টা করেছিলাম আমি , কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছি শুধু অপমান। এখন সব বদলে গেছে। বদলাতে চেষ্টা করছি নিজেকে।

আমারতো এখন মনে হয় একটা নতুন জীবন পেয়েছি।সোমাদি এখন মনে মনে ধন্যবাদ জানাই। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আমার শেষ কথা কি ছিল তা হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারছি না এখন আর । সময়টা একটু বেশি হয়ছে বোধহয় আমাদের ছাড়াছাড়ির , সবকিছু বেমালুম ভুলে বসে আছি? এতই সহজ কি সবকিছু এভাবে ভুলে যাওয়া যায় ?চাইলেই কি সব ভোলা সম্ভব?তবে আমি সবচাইতে যা উপভোগ করেছি তা রাতের নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম। কোন ঝামেলা নাই, আর পাশ বালিশ নিয়ে,ভোর বেলা থেকে উঠে কপালে চুমু খেয়ে তুলে সাইকেল করে দিয়ে আসা নেই কাউকে। নীলাঞ্জনা খুব ক্যারিয়ার সচেতন মেয়ে ছিল।ও সবসময় বলত পাঁচবছরের আগে কোনভাবেই কোন বাচ্চা-কাচ্চার ঝামেলা না! মাসে মাসে কনডম আর পিল কেনার কোন ঝামেলা নেই আর। অনেক চেষ্টা করেও ওর এই সিদ্ধান্ত বদলাতে পারিনি। তাই সবসময় সতর্ক থাকতো যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে যায়। মা-বাবা হওয়াটাও ওর চোখে ছিল একরকম দুর্ঘটনাই! এখন আবার আমি একা।

মা বলে একটা বাচ্চা থাকলেই নাকি সম্পর্কটা ভাঙতো না। যদিও করোনার জন্য আমাদের সম্পর্কটা ভাঙেনি এখনো।

নববর্ষ সকাল মা পায়েশ বানাচ্ছে, মায়ের চোখে জল। বললাম " কি হয়েছে? "

অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বললো " আজ নীলাঞ্জনার জন্মদিন ওকে একটু পায়েস দিয়ে আসবি , ওতো আমার হাতের পায়েস খেতে ভালোবাসে। ওর একটু মাথা গরম। কি করতে কি করে বসেছে। যা না একবার চেষ্টা করে দেখ। ওকে ফিরিয়ে আনতে পারিস, নতুন বছর আজ, ও এসে যদি ঠাকুর ঘরে আলপনাটা এঁকে দেয় খুব ভালো হয়",,,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract