সহ্যরূপেণ সংস্থিতা(ধারাবাহিক)৩
সহ্যরূপেণ সংস্থিতা(ধারাবাহিক)৩


৩
পারমিতা চোখ বুজে ডুব দিলো রোমন্থনে, "যে নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ছাড়া মা পূর্ণতা পায় না, সেই লালপাড়ার মেয়েরাই আজও মা হওয়ার সম্মান পায় না... ওরা তো কেবল সহ্য করার জন্যই যেন জন্মেছে! উচ্চশিক্ষিতা চাকরী করা মেয়েটা ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে তার স্বামী বা প্রেমিককে জড়িয়ে ধরলে সেও পায় শিক্ষা-সংস্কারহীনের খেতাব আর সমাজের রক্তচক্ষু… এমনটা সহ্য করাই যেন উচিত!
সাহস হবে না মেয়েদের সহ্য করার শক্তিকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করার। প্রমাণ হবে সদর্থেই মেয়েরাই শক্তিরূপিণী অথবা সর্বংসহা ধরিত্রী। আশৈশব মেয়েদের শিক্ষা প্রতিবাদ নয় উপেক্ষা কিম্বা সহ্য।
যেখানে দেবীমায়েরই সুবোধ নাকি অবোধ সন্তানকুল প্রতিমার অবয়ব নিয়ে অশ্লীল আলোচনায় পিছপা হয় না, সেখানে মেয়েরা কেন পিছোবে? কেন প্রতিবাদ করবে না?
সমাজ যখন ভুলে গেছে যে সহ্য করতে পারাটা মেয়েদের ক্ষমতা, দুর্বলতা নয়, তখন দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে সমাজকে মনে করিয়ে দিতে হবে বৈকি মেয়েরা সহ্য করার উপরন্তু আরও অনেক কিছু পারে। সেই শুভবুদ্ধি-চেতনা কেকের উপর চেরী হয়ে শোভা না পেয়ে জাগ্রত হোক সমাজে।"
ঘ্যাঁচ শব্দে গাড়ী থেমে গেছে, পাঙ্কচার হয়তো, কিন্তু ড্রাইভার বললো গিয়ার নাকি ফেঁসে গেছে, এসব ব্যাপারে পারমিতার ধারণা শূন্যেরও তলায়। এখান থেকে বাড়ী খুব একটা দূরেও নয়, অনায়াসে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলে যেতে পারবে পারমিতা, ড্রাইভারকে গাড়ী রাতেই সারিয়ে নেবার নির্দেশ দিয়ে পারমিতা রাস্তায় নামলো।