শরৎ সৌধ
শরৎ সৌধ
শরৎ বরাবরই এক ভীষন মন ভালো করা অনুভূতি নিয়ে আসে। অবশ্য কোনো ম্যাজিক ট্যাজিক নয়। শুধু স্মৃতি! প্রতি শরতে প্রেরণা মিস করতো অনেক কিছুই ! আসলে প্রেরণা আর সৌধের প্রেমটা যখনি একটা জমাটি আকার নেবে নেবে করছে, অমনি ও চলে গেলো দূরে। না না, ইচ্ছে করে নয়। হঠাৎই ওর চাকরিটা হয়ে গেলো। সেনাবাহিনীতে। সৌধ বরাবর একগুঁয়ে। যা করবে বলে ঠিক করে, তাই করবে তো করবেই। বাড়ির হাজার বারণ সত্ত্বেও একদিন লাগেজ গুছিয়ে ট্রেন ধরলো বেঙ্গালুরুর। তখন অবশ্য ব্যাঙ্গালোর। প্রেরণা আঠারো, সৌধ একুশ।
সবে সবে প্রেমটা হতে না হতেই এই চলে যাওয়াতে প্রেরণার খুশি হবার কারণ ছিল না কিন্তু বাধাও দেয়নি।কেন দেবে? নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা যে খুব জরুরী! বছরে মাত্র তিনমাস আসা, তাও প্রথম বছর তো সে সব কিচ্ছু না!
সারা বছর বাইরে থাকলেও পূজোর সময়টা সৌধ প্রতি বছর বাড়ি ফেরে। সব ভাইবোনেদের আবদার আর প্রেরণা তো আছেই। সে কদিন ওদের দুজনকে পায় কে? সময় যেন ডানায় ভর করে উড়ে যায়। মাকে মিথ্যা বলে, দাদার চোখ এড়িয়ে, বাবাকে লুকিয়ে সেই সকাল থেকেই দুজনের ঘোরাঘুরি। সকাল সকাল সেই দিনগুলোতে ঘুম ভেঙে যেত সুন্দর একটা গন্ধে। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব, আর সারা উঠোন ছড়ানো শিউলির গন্ধে যখন বাতাস ম ম করছে, সোনালী রঙের রোদ্দুর দেখেই মনে পড়ে যেত, আজ আবার দেখা হবে! ব্যস! তাড়াতাড়ি উঠেই স্নানটান সেরে বেরিয়ে পড়া। কোনোদিন রাতুলার বাড়ি আবার কোনোদিন বা এক্সট্রা ক্লাস, আর পর পর পড়া।
মাঝে কেটে গেছে কতগুলো বছর। একবার শরতে সৌধ আর এলোনা! নিখোঁজ! পরে জানা গেছে জঙ্গির গুলিতে ও শহিদ হয়েছে! যখন ওর দেহটা পাওয়া যায় ততদিনে তা আর লাশও নেই। নাঃ! প্রেরণা অবশ্য যেতে পারেনি, ছুঁতে পারেনি ওর শেষ স্মৃতিকে। বাড়িতে জানলে আর রক্ষে নেই যে!
এর পর বহুবার শরৎ এসেছে।আজো আসে। সেই রোদ, সেই শিউলি, সেই শীতশীত সকাল, কিন্তু সবাই জানে সৌধ আর আসবে না। প্রেরণা আর অপেক্ষাও করে না। তবে মনে মনে শরৎ আসলেই ও খুশি হয়। আজ ওর চুলে পাক, চোখে ভারি চশমা, ও এখন এক মেয়েদের কলেজের প্রফেসর। কিন্তু শরতের দিনগুলোতে ও আঠারোর তন্বী যেন! নামিয়ে বসে সেই জীবনের একমাত্র প্রেমের স্মৃতির ঝাঁপি! সৌধের দেওয়া গোলাপ, শুকিয়ে গিয়েও তাজা! ওর দেওয়া নীল খয়েরী বালুচরী সবেতেই নতুন করে ও খুঁজে পায় বাঁচার রসদ। সৌধের স্মৃতি ওকে দূর্বল করে না, কারণ ও জানে ,ও চলে গেলে ওর সাথে সাথেই ওদের প্রেমের গল্পটাও মুছে যাবে। তাই তো প্রাণপণে ভালো লাগা, ভালোবাসায় আগলে রাখে শরৎ সৌধকে প্রেরণা নিজের বুকের গহীনে!

