STORYMIRROR

Soudamini Shampa

Tragedy Classics Others

4  

Soudamini Shampa

Tragedy Classics Others

আমি বাঁচতে চাই

আমি বাঁচতে চাই

2 mins
267


রীণিতা একদিন জলঙ্গী নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ালো। সূর্যের আলো নিভু নিভু প্রায় । ওর মনে পড়ছে অনেক কিছু। মন কি আর কারোর কথা শোনে? জাফরানি রোদ ওর গলা, ঘাড় ঘেঁষে চুঁইয়ে নামছে। নদীর দুপাশে কাশের সারি সবে সবে সাদা পতাকার মত ফুল নিয়ে মাথা তুলে উৎসবের অপেক্ষায়। সাজছে প্রকৃতি। সাজছে নদী। টলটলে জলে ঘন সন্ধ্যা জমাট বাঁধার অপেক্ষায়। মুখ দেখা যায় না। ও তো মুখ দেখতে চায় না। আজ ও লুকোতে চায় নিজেকে। লুকোতে চায় সমাজ, সংসার সব কিছুর থেকে। কি লাভ? এই ভাবে বেঁচে থেকে।

 কেমোর রিপোর্টটা ওকে দেখায়নি সায়ন্তন। কিন্তু লুকিয়ে দেখতে বাধা কোথায়। শিক্ষিতা ও। স্পষ্ট গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ওর মৃত্যুর পরোয়ানা। ওষুধের যন্ত্রনা, কষ্ট তার চেয়েও বড় বেশি কষ্ট দেয় প্রিয় মানুষের অসহায় মুখগুলো। আজকাল সায়ন্তন চোখে চোখ রেখে কথা বলে না, চোখ এড়ায়। ছেলেটাও ঘেঁষে না ধারেকাছে । শুধু দূর থেকে জুলুজুলু চোখে দেখে। ও নিজেও কি জানে, মায়ের আর বেশিদিন থাকার অধিকার নেই, ওদের জড়িয়ে গড়িয়ে। সবাই যেন ওকে করুণা করে। রোগের কষ্ট সহ্য হয়, হয় না এই প্রিয় মানুষগুলোর দূরত্ব। তারচেয়ে এই বেশ!

 সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রাখে রীণিতা। এই বার ধীরে ধীরে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে জলে। ওর সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যাবে রোগ, শোক, দুঃখভোগ একেবারেই। হঠাৎই কয়েক ধাপ নামের পর টের পায় আর সিঁড়ি নেই। নীচে অতল গভীর , জল শুধু জল! রীণিতা দিশাহারা হয়ে যায়। একি! একি! ও তো ডুবে যাচ্ছে! ও যে সাঁতার জানে না। পাগলের মত হাত পা ছুঁড়তে থাকে ও। কিন্তু পা, হাত ভারী হয়ে আসছে, ধীরে ধীরে শক্তি কমে আসছে, স্রোতের বিরুদ্ধে যুঝবার শক্তি, হাত পা নাড়িয়ে বেঁচে থাকার শক্তি। ও নাকের মুখের ভেতর পেঁকো জলের গন্ধ পায়। ধীরে ধীরে চোখ বুজে আসে। শরীর হাল ছেড়ে দেয়, শুধু মনে পড়ে ছেলেটার মুখ। সব শক্তি জড়ো করে চিৎকার করে রীণিতা, "বাঁচাও, বাঁচাও!" ফাঁকা নদীর ঘাটে সে চিৎকার একা একাই ঘোরেফেরে এ ঘাট থেকে ও ঘাটে।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy