এক আনোখা রক্সাবন্ধন
এক আনোখা রক্সাবন্ধন
মন ভালো নেই সুকুমারীর । আজ ওদের রক্সা বন্ধন। সেই সকাল থেকে ওদের এই বস্তিতে ঘরে ঘরে লাড্ডু , মিঠাইয়ের গন্ধ ম ম করছে। মামা ভি এসেছে। মাই রাখি পরাবে। ফির বুয়া ভি এসেছে, পাপা আর চাচাকে রাখী বাঁধবে। কিন্তু সুকুমারী মানে বছর বারোর সুকুর মন ভালো নেই। ওর যে কিছুই ভালো লাগছে না। আজকের দিনে আগে কত্ত আনন্দ হতো। সকাল সকাল নাহা ধোকে তৈরি হয়ে নিত। তারপর একটা থালায় , কুমকুম, থোরা চাউল আর মিঠাই। রুকুর মানে ওর ভাইয়ের আবার চমচম আর বুন্দির লাড্ডু খুব পছন্দের ছিল।
প্রথমে ভাইকে আরতি করে, মাথায় চাউল ছিটিয়ে, ভগবানের নাম করে কপালে টিকা পরিয়ে শেষে হাতে রাখী বেঁধে দিতো। শেষে মুখে মিঠাই। বদমাসটার কি আর তর সইতো? ফট করে হাত বাড়াতো আর মাই বকতো,
- এ রুকু, আভি নহি! থোরা রুক যা বেটা!
ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তেই চোখটা জ্বালা জ্বালা করে ওঠে সুকুমারীর। ওর হাতে একটা রাখী। গতবছরও তো রুকু ছিল, এ বছর নেই! এ রাখী ও কাকে পরাবে? ওদিকে মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে,
-সুকু, এ সুকুয়া ! কাহা গয়ি বেটা???
না,কক্ষনো যাবে না ও, একদম যাবে না। সবাই নিজের নিজের ভাইকে রাখী পরাবে আর ও !
মুখ গোঁজ করে বসে থাকে সুকুমারী, ঘরের পিছনে ছোট পাঁচিলটার নিচে। এখান থেকে ওকে সহজে দেখা যাবে না।
একি! পায়ের কাছটা ভেজা ভেজা,গরম গরম লাগছে কেন? ও কি? ভুলুয়া! ওকে এখানে বসে থাকতে দেখে ভুলুয়া এসে ওর পা চাটতে থাকে! ভুলুয়া ওদের বাড়ির উঠোনে থাকে, রুকুই কোথা থেকে ওকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল! ভুলুয়ার মাথায় হাত বুলায় সুকু, মনে হয় যেন রুকূ্ই এসে ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে! কি মনে করে কোঁচড় থেকে রাখীটা বের করে পরিয়ে দেয় ওর সামনের একটা পায়ে। ভুলুয়াও আদর পেয়ে কুঁই কুঁই করে লেজ নেড়ে ওর ভালোবাসা জানায়। চট করে উঠে দাঁড়ায় সুকুমারী,
-চল ভুলুয়া, আজ সে তুই আমার রুকুয়া! ঠিক হ্যায়?
ভুলুয়াও যেন লেজ নেড়ে এ প্রস্তাবে সায় দেয়। সুকুমারীর মাই এইবার মেয়ের খুশহাল গলা শুনতে পায়,
-আয়িইইইইইইই....
©®