পরের ঘরে লাগলে আগুন
পরের ঘরে লাগলে আগুন
চারিদিকে দেখে কি মনে হচ্ছে? আজকাল মানুষ খুব প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে গেছে? না! ভুল ভাবছেন! সমাজ এভাবেই ছিল, শুধু আমার আপনার জানার পরিধিটা কম ছিল! এই সোস্যাল মিডিয়া আমাদের নাকের ডগায় সব তুলে ধরছে আর আমি আপনি সবাই সবার কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে পারছি!
তাহলে কি মানুষ খুব অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছে? না ! আবার ভুল! মনে করে দেখুন আগে ,তিরিশ চল্লিশ বছর আগে সামান্য পাঁচ পয়সা জিনিস পত্রের দাম বাড়লে তা নিয়ে প্রতিবাদ, মিটিং, মিছিল সব হতো! এখন? সব চুপচাপ! গ্যাসের দাম, খাদ্যবস্তুর দাম আকাশছোঁয়া! বেকারত্ব! তা নিয়ে কথা বলা আর প্রলাপ বকা এক! তাহলে এসব কেন মনে হচ্ছে? আসলে মানুষ বড় সহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। কোনো কিছুতেই সে সক্রিয় ভাবে পথে নামতে চায় না! ভয় পায়? যতটা না ভয় তার চেয়ে অনীহা! আলস্য! ওসব ঝামেলায় আবার কে যায়? তারচেয়ে যেমন চলছে চলুক! বয়েলিং ফ্রগ সিনড্রোমে ভুগছে পুরো সমাজ আর শুধু নিজেরটা আগলাচ্ছে। তাতেও ঠিক ছিল কিন্তু নিজের ছেলেমেয়েদের পর্যন্ত সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে না প্রায় বেশিরভাগ মানুষ। নীতিবোধ, বিবেক, আদর্শ এসব এখন হাস্যকর কথা। বীর শহিদদের নিয়ে বছরের কয়েকটা দিন আমরা আদিখ্যেতা করি বটে কিন্তু বাকি দিনগুলোতে তারা আমাদের একেবারে নতুন প্রজন্মের কাছে বোকা! যারা নিজেদের ভালোটা না বুঝে অল্প বয়সে "ফুটে গেছে"! হ্যাঁ ঠিক এই টার্মটাই ব্যবহার হয়।এখন চারিদিকে শুধু ফূর্তি, সস্তার ফূর্তি! যে কোনো উৎসব মানে মদের বোতল, মাইক বাজানো, নাচ আর রাতে শরীরী খেলা। না, এক্ষেত্রে নারীপুরুষ ভেদ নেই। সবাই আনন্দ বলতে ওইটুকুই বোঝে। জীবন উপভোগ মানে তাদের কাছে তাই! তারা সম্মান করতে শিখছে না, মান্য করতে শিখছে না, বাধ্য হতে শিখছে না বরং শিখছে অসম্মান করতে, অ্যারোগ্যান্ট হতে, সমালোচনা করতে। আগে আমরা বড়দের সম্পর্কে কিছু বললেই বাড়িতে বলা হতো," বড়দের সম্পর্কে কথা বলতে হয় না"! আর এখন সবার সবকিছু নিয়েই বলার অধিকার আছে। ছাত্রের শিক্ষকের চরিত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে, মা সম্পর্কে মেয়ে যা খুশি তাই বলতে পারে, ছেলে বাবার সামনেই সিগারেট টানছে, মেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরলে কারো কিছু জিজ্ঞাসা করার অধিকার নেই। তাতে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়! ঠিক, একদম ঠিক। কিন্তু ঠিক বেঠিকের বিচার করতে সে শিখলো কখন ,আর তাকে শেখালো কে?
আর বাবা মায়েরাই বা ছেলেমেয়েদের ওসব শেখাবেন কেন? যে সৎ সে মাইনে পায় পনের ,কুড়ি! কোনো রকমে তার সংসার চলে, বিশাল শিক্ষিত অনেকেই বেকার, কোনোরকমে দিন গুজরান করে আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সব কিছুর মাথায় যারা বসে আছেন তাদের না আছে শিক্ষা না বিবেক বোধ। সে সব খায় না মাথায় মাখে? অথচ সব ক্রিমটুকু তাদের ভাগে! তাহলে এই কদিনের জীবনে মানুষ কি আদর্শ ধুয়ে জল খাবে, যদি পেটে ভাতই না জুটলো! এর জন্য দায়ী কে? আমি, আপনি, আমরা সবাই। আমরা সবাই তিল তিল করে সমাজটাকে ধ্বংস করে বসে আছি, আর একে অপরকে দোষারোপ করে শান্তি পাচ্ছি। কিন্তু যেদিন এর বিস্ফোরণ ঘটবে, নিজের ঘরটুকু সামলাতে পারবো তো আমরা?
©® সৌদামিনী শম্পা
