Susmita Goswami

Abstract Tragedy Others

3  

Susmita Goswami

Abstract Tragedy Others

শেষ চিঠি

শেষ চিঠি

5 mins
262


প্রিয়, 

একটু কষ্ট করে এই লেখাটা পড়ো কেমন।


অনেক বার অনেক কথা বলতে চেয়েছি তোমাকে , কিন্তু পারিনি। মনের কথা মনেই চাপা পড়ে রয়ে গেল শেষপর্যন্ত , তাই যেটুকু পারলাম লিখে দিয়ে গেলাম, প্লিজ পড়ো, এটা আমার শেষ ইচ্ছে ! 

আমি জানি আমি তোমার জন্য যোগ্য মেয়ে কখনো ছিলাম না বা নইও । তবুও তুমি আমাকে এই যে এতদিন ধরে দয়া করে ভালোবেসেছ এর জন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো । আমি মেয়েটা হয়ত তোমার মতো অত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বা ফার্স্ট বয় বা মাধ্যমিকের প্রথম হওয়া মেয়ে নই কিন্তু সত্যি বলতে আমি আমার মতোন ছিলাম জানো। আমি জানি , তুমি বরাবর চেয়েছ আমি যেন তোমার স্কুলের রীতার মতো ট্যালেন্টেড হই বা কেয়ার মতো! কিন্তু আমি সেই আমার মানে সুরভির মতোই রয়ে গেলাম। 

হ্যাঁ তবুও তুমি আমাকে ভালোবেসেছ। কিন্তু যতোই হোক তুমি তো নিজের পছন্দ পেলে না। আমি প্রার্থনা করছি আমার মতো খারাপ পড়াশোনা বা সবদিক থেকে অযোগ্য মেয়ে যেন তোমার জীবনে আর কখনো না আসে। যে আসে সে যেন তোমার প্রথম স্বপ্নে দেখা আলো রীতা বা কেয়ার মতো কেউ হয়। 

তুমি ওদের দুজনের মধ্যে কাউকে চেয়েছিলে, কিন্তু বলতে পারোনি তাদের, কারণ তারা বড়লোকের মেয়ে, তুমি ভয় পেয়েছিলে। তোমার মেধা ওদের টাকার কাছে নত ছিল। কিন্তু আজ নত তো কি হয়েছে, একদিন ঠিকই উঠে দাঁড়াবে। 

তুমি আমাকে বলতে পারোনি আমি কষ্ট পাবো বলে কিন্তু বিশ্বাস করো আমি একটুও কষ্ট পাই নি। আমার খামতি নিশ্চ্য়ই তুমি ধরিয়ে দেবে এতে খারাপ লাগার কি আছে! 

তবে একটা কথা কি জানো, মামাবাড়ি তে থাকা মা মরা ও মামা মামীর দয়ায় বেঁচে থাকা মেয়েটা অনেক স্বপ্ন দেখলেও পূরণ করতে গিয়ে দেখে তার স্বপ্নের গোলাপ আসলে তার স্বপ্নেই গোলাপ, বাস্তবে কাঁটা ছাড়া আর কিছু নয়! 

তোমাকে অনেক বিরক্ত করেছি, তোমার অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি, পরিবারের সকলের কাছে আমার জন্য অনেক অশান্তির মুখে পড়েছ। আর তা হবে না আজ থেকে। অনেক মানুষের ভীড়ে খুঁজে দেখবে, আমার মতো আর কেউ নেই। যদি থাকে সেটা একমাত্র আমিই ছিলাম। তোমার ক্রমবর্ধমান ব্যস্ততা, অবহেলা, উপেক্ষা আর ঘৃণা আমাকে তোমায় আরো অনেক বেশী করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে জানো। তুমি এত ভাবে আমার থেকে দূরে চলে যেতে চাইছ, আমার বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকতে চাইছ কিন্তু আমি সেই,,, বড্ড ভালোবাসি তোমাকে, তুমি যতোই অবহেলা করো আমি তোমাকে কখনো অবহেলা করতে পারব না। তুমি যতোই আমাকে ভুলে যেতে চাও, আমার পক্ষে তোমাকে এ জীবনে ভুলে থাকা সম্ভব নয়। তবে একটা উপায়ে ভুলে থাকা সম্ভব, সেটা হলো আমি যদি এই জীবন টা না রাখি। আমি একটা মেয়ে, তার উপর আবার মা মরা। বাবা থাকে না আমার সাথে । মামার বাড়ি পড়ে আছি। আমি আত্মহত্যা করলে আমার নামে অনেক অনেক খারাপ কথা রটবে আমি জানি, এটাও জানি আমার কষ্ট, মনের ক্ষতটা কেউ দেখতেও পারবে না, বুঝতেও পারবে না। বরং এটাই বলবে, "আমার নিশ্চ্য়ই কোনো কেলেঙ্কারি ছিল আর মাকে খেয়ে এখন মামা মামীর মুখে চুনকালি লাগিয়ে গেলাম! এই মেয়ের মরার কাজে থাকাও অশুচি। " 

যে যার নিজের মেয়েকে শিক্ষা দেবে, উপদেশ দেবে কেউ যেন আমার মতো অমানুষ, অসভ্য, বেহায়া মেয়ে না হয়! 

কিন্তু আমার বড্ড মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। তোমার জীবন সুন্দর হোক। আমার জন্য তোমার জীবনে যা যা ক্ষতি হয়েছে সবকিছু নতুন মানুষ এসে পূরণ করুক ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি শেষবেলায়। চিরটাকাল তোমার ভালো চেয়েছি কিন্তু শেষপর্যন্ত দেখা গেল আমার জন্য তোমার কোনো ভালোই হয়নি। কিন্তু তুমি খুব ভালো মানুষ বলে, খারাপ যে হয়েছে, সে কথাও আমাকে জানাওনি! কিন্তু আমি সব বুঝি। ইদানীং তুমি খুব ব্যস্ত। আমার ফোন ধরো না আগের মতো, কথাও বলো না ঠিক মতো। অল্প কথা বলে রেখে দাও। পরিস্থিতির কথা বলো। আর আমি কীরকম নির্লজ্জের মতো ফের ফোন করি আর তোমার ছবি গুলো সবসময় দেখি কারণ আমি তোমাকে ভালবাসি। জানো আমি অনেক কাঁদি তোমাকে ভেবে, ভাবি তুমি যদি শুনতে পাও! খাই না অনেক সময়, ঘুম আসে না চোখে। অনেক গভীর রাত আমার সাথে সঙ্গ দিয়েছে , তারা জানে আমি কি করেছিলাম সেইসব সময়ে, যখন সারা পৃথিবী নিস্তব্ধ ঘুমে তখন আমি আমার ঘুমহীন চোখে চিরঘুম খুঁজছি কাঁদতে কাঁদতে! 

যাই হোক, অনেক কিছু লিখে ফেললাম। আমি তোমাকে আমার মানে সুরভি নামক একটা শক্ত, প্যাঁচালো দড়ি থেকে মুক্তি দিলাম। আর হয়ত কখনো দেখা হবে না আমার সাথে, আমার ফোন বা মেসেজ বা কোনোরকম কিছুই পাবে না। তোমাকে আমার এ জীবনে ভুলে থাকা অসম্ভব কিন্তু আমার কাছে আমার জীবন শেষ করাটা তো অসম্ভব নয়। 

শুভ বিদায় জানালাম তোমায়। এরপর বা এখন থেকে আর তোমাকে চাপে থাকতে হবে না আমাকে মেসেজ বা রিপ্লাই দেওয়ার জন্য বা ফোন ধরা বা করার জন্য। আর কারোর কাছে জবাবদিহি করতে হবে না সারাদিন কি করেছ ইত্যাদি প্রশ্নের। আর বলতে হবে না কাউকে তোমার শরীর কেমন আছে। আর তোমাকেও শুনতে হবে না অর্পিত, আমার মন খুব খারাপ! খুব কষ্ট পাচ্ছি! আর শুনতে হবে না, আর শুনতে হবে না, আর শুনতে হবে না!!! 

 ভালো থেকো , নিজের খেয়াল রেখো আর হ্যাঁ ঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া ও সমস্ত কাজকর্ম কোরো ও পরিবারকে ভালো রেখো আর পড়াশোনা করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হও।বড় লোক নয় বড় মানুষ হতে হবে যে । তারপর তোমার জীবনে আমার চেয়ে অনেক অনেক ভালো কেউ আসুক । ততটাই ভাল থেকো যতটা ভাল থাকলে এই সুরভি কে মনে পড়বে না!! 

                

                 ইতি, 

                ব্যর্থ সুরভি।


এতটা পড়ার পর বুকটা হু হু করে ওঠে অর্পিত এর। সে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে সুরভি কে। ফোন সুইচ অফ। সে সোজা সুরভির মামা বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু অতদূর আর যেতে হয় না। সে জানতে পারে সুরভি নিখোঁজ হয়ে গেছে। থানায় মিসিং ডায়রি করা হয়েছে। 

      ----------------------------

পাঁচটা বছর কেটে গেছে। আজও খুঁজে পাওয়া যায় নি সুরভি কে। কোথায় গেল, আদৌ বেঁচে আছে না কি সত্যি সত্যিই সে হারিয়ে গেল কেউ জানে না! 

কিন্তু একদিন জানতে পারল পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান অর্পিত রায়। সে খুঁজে পেয়েছিল তার দ্বারা মৃত্যুবরণ করা ভালোবাসার মৃতদেহকে ! যার হাতে তখনো যেন দেখতে পেল শেষ চিঠি টা !!! 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract