❤Susmita Goswami❤

Classics horror

4  

❤Susmita Goswami❤

Classics horror

ভৌতিক পুতুল!

ভৌতিক পুতুল!

18 mins
371


বীরেশ্বর বোস বহুদিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদে আসীন থেকে ভারত সরকারের সেবা করার পর কিছুদিন হল রিটায়ার করেছেন । সরকারী কোয়ার্টার ছেড়ে দিয়ে নিজের দেশে এসে পৈতৃক পুরোনো দোতলা বাড়িটা বিক্রী করে কলকাতার প্রান্তে এক নির্জন মফঃস্বল অঞ্চলে বিশাল এক বাগানঘেরা বাড়ি কিনেছেন । বাড়িটা ছিল পুরোনো আমলের এক জমিদার বাড়ি । পরবর্তীকালে বাড়িটা মেরামত করে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছেন। এই নির্জন জায়গাতেই তিনি সারাজীবন কাটাবার মনস্থ করেন । ম্যাজিস্ট্রেটের পদে বহাল থাকাকালীনই তাঁর স্ত্রী মারা যান । এখন তাঁর সংসারে আপন বলতে একমাত্র ছেলে প্রীতম । বয়স তার খুব বেশী নয় , মাত্র বছর আষ্টেক হবে । ছেলেকে দেখাশোনা করার জন্য বীরেশ্বরবাবু সবসময়ের জন্য একজন ধাই নিযুক্ত করেছেন । নাম তার সুনন্দা । সে যেমন প্রীতমকে ছেলের মত ভালবাসে , তার ভালমন্দ চিন্তা করে , তেমনি প্রীতমও সুনন্দাকে ভালবাসে । তাকে ছাড়া একমুহুর্তও থাকতে পারে না । সুনন্দা শুধু প্রীতমের দেখাশুনা এবং ভাল - মন্দ চিন্তা করে না , বাড়ীতে তার পড়াশুনার দায়িত্বটাও সে নিয়েছে । এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের বাড়িতে দু'বেলা রান্না করা ও বাড়িটা দেখাশোনা করার জন্য দীননাথ নামে একজন লোক আছে । আর আছে একজন ঠিকে ঝি । সে দু'বেলা ঘরদোর মোছে আর এঁটোকাটা বাসনকোসন যা থাকে , মেজে দিয়ে চলে যায়। 

ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বীরেশ্বর বোসের নির্জন অঞ্চলের এই বিশাল বাড়িটাও এত নির্জন যে, অন্ধকার রাতে বাইরে থেকে এই বাগান বাড়িটার দিকে তাকালে কেমন যেন একটা রহস্যময় বীভৎস বলে মনে হয় । ভয়ে সারা শরীর শিউরে ওঠে, মনে হয় যেন প্রচণ্ড এক বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে চলেছে সারাটা দেহের মধ্যে । কোনকালে কোন্ জমিদার মশাই যে এমন নির্জন জায়গায় এই বাড়িটা তৈরী করেছিলেন , তা কে জানে ! বাড়িতে কোনো শব্দ হলে বাড়ির লোকেরা সচকিত হয়ে ওঠে কোন এক অজানা আতঙ্কে । ভাবে এই বুঝি কোনো দুর্যোগ ঘনিয়ে আসবে বাড়িটার ওপর । অবশ্য হলও একদিন তাই । বাড়ীর অন্যান্য সকলে সেই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে রইল । সেদিন ছিল শীতের রাত । তার ওপর নিম্নচাপের আগমনের ফলে দুপুর থেকে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হু - হু শব্দে বয়ে চলেছে প্রচণ্ড বাতাস । ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব প্রতিদিন সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান । কোথায় যে যান , তা কেউ জানে না । গভীর রাত্রে যখন তিনি বাড়ি ফেরেন , তখন তিনি আর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন না । তার ঘরের টেবিলের ওপর তার জন্য রাতের খাবার ঢাকা দেওয়া থাকে । তা তিনি কখনও কখনও খান , আবার কখনও কখনও যেমনকার খাবার , তেমনই পড়ে থাকে । অন্যান্য দিনের মত সেদিনও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন । সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের অন্ধকার সারা পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলেছে । সেই অন্ধকারে বাড়ির চারিদিকে প্রকৃতির খেয়াল - খুশি মত তাণ্ডবলীলার দাপট ছাড়া আর কিছুই শোনার উপায় নেই । রাত বেড়ে চলল । প্রায় ন'টা হবে । এমন সময় ঝন্‌ ঝন্ শব্দে বিকট আওয়াজ তুলে বাড়ির কলিং বেলটা বেজে উঠলো । আওয়াজটা এমন বীভৎস যে , মনে হল প্রস্তর মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটার বোধহয় হৃদকম্প শুরু হয়ে গেল । দোতলার ঘরে বাচ্চা ছেলে প্রীতম হয়তো এমন বীভৎস শব্দে ভয় পেতে পারে , এই ভেবে দীননাথ ছুটে গিয়ে সদর দরজাটা খুলে দিল । দরজাটা খুলে দীননাথ চোখের সামনে যা দেখতে পেল , তাতে তার সারা শরীরের রক্ত যেন হিম হয়ে উঠল । সে দেখলো , বাইরের অন্ধকারের সঙ্গে মিশে একজন মিশমিশে কালো রোগা এবং অস্বাভাবিক লম্বাটে ধরণের লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে বর্শার ফলার মত সাদা ধবধবে দাঁত বার করে হাসছে । তার পরণে পা পর্যন্ত কালো রঙের ওভার কোট আর মাথায় একটা কালো রঙের টুপি।

সে এও দেখলো , এই প্রচণ্ড বৃষ্টিতে তার পরণের পোষাকে একফোঁটা জলের চিহ্নমাত্র নেই । দীননাথকে দেখে আগন্তুক লোকটার দু'চোখে যেন মুহুর্তের জন্যে এক বালক বিদ্যুৎ খেলে গেল । তারপর বললে — মিঃ বীরেশ্বর বোস বাড়ীতে আছেন ? কণ্ঠস্বর যেন বজ্রের গুরুগম্ভীর নাদের মত শোনালো দীননাথের কানে । কোনোরকমে সে উত্তর দিল — আজ্ঞে না , এই সময় তিনি বাড়িতে থাকেন না । আমি দুঃখিত তার সঙ্গে দেখা না হওয়ার জন্যে । আমি মিঃ বোস সাহেবের জন্যে একটা উপহার এনেছিলাম , এটা তাঁকে দিয়ে দেবেন । এই বলে আগন্তুকটা তার হাতে ধরা সুদৃশ্য রঙিন কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট দীননাথের হাতে দিল । মন্ত্রমুগ্ধের মত । হাত বাড়িয়ে দীননাথও সেটা নিয়ে নিল। দীননাথ লক্ষ্য করলো , প্যাকেটটা দেবার সময় লোকটার চোখ দু'টো আরও একবার বিদ্যুতের ঝিলিকের মত জ্বলে উঠলো । তারপর সদর দরজার বাইরে পা দিয়ে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মধ্যে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল । সে ভীষণ ভয় পেয়েছিল । লোকটা চলে যাবার পর এতক্ষণে তার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো । সদর দরজা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি সে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ছুটে গেল সুনন্দার কাছে । তাকে সে সব কথা খুলে বললো । সব শুনে আগন্তুককে সাক্ষাৎ নিয়তি ছাড়া আর কিছুই মনে হল না সুনন্দার। দীননাথের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে সেদিনকার মত সেটা লুকিয়ে রাখল সুনন্দা । পরদিন যা হোক একটা ব্যবস্থা করা যাবে এই ভেবে । গভীর রাতে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব মিঃ বোস বাড়ি ফিরলেন । টেবিলের ওপর তার ঢাকা দেওয়া খাবারগুলো তেমনি পড়ে রইলো । তিনি পোশাক - পরিচ্ছদ পাল্টে বিছানায় শুয়ে পড়লেন । পরদিন সকালে হাত - মুখ ধুয়ে স্নান সেরে সামান্য কিছু জলযোগ সেরে যথারীতি তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন । মিঃ বোস সেদিন বেরিয়ে যাবার পর দীননাথকে ডেকে সুনন্দা একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে চারদিকের জানালা - দরজা বন্ধ করে দিল । তারপর গতরাতে আগন্তুকের উপহার দেওয়া সেই সূদৃশ্য রঙিন কাগজে মোড়া লুকোনো প্যাকেটটা বার করে খুলে দেখে | একটা পুতুল ছাড়া তার মধ্যে আর কিছুই নেই । পুতুলটার দিকে তাকিয়ে তারা অবাক হয়ে গেল । দেখলো , তার দু'টো চোখই নেই ; তার জায়গায় একটা গভীর গর্ত । মাথার এক অংশের চুলগুলো ছেঁড়া । . একে অপরের মুখের দিকে তারা চাওয়া - চাওয়ি করলো । এমন একটা পুরোনো জিনিস যে কেউ কাউকে উপহার দেয় , তা তাদের জানা নেই । তাই তারা পুতুলটাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে মিঃ বোসের শোবার ঘরের টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে ঢুকিয়ে

এই ঘটনার কয়েকদিন পর তারা যখন একরকম পুতুলটার কথা ভুলতে বসেছিল , তখন একদিন সকালে মিঃ বোস সুনন্দা আর দীননাথকে ডেকে পাঠালেন । তারা যখন মিঃ বোসের ঘরে ঢুকলো , তখন দেখলো মিঃ বোস সেই পুতুলটা হাতে ঠিকে নিয়ে উত্তেজিত ভাবে ঘরময় পায়চারি করছেন । তাঁর চোখ দুটো বিস্ফারিত , মুখখানাও পূর্ব কেমন যেন বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে । তারা ঘরে ঢুকতেই মিঃ বোস চিৎকার করে বললেন – এই পুতুলটা কে আমার ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখেছে ? মিঃ বোসের এমন উত্তেজিত কন্ঠস্বর শুনে কেউ কোনো উত্তর না দিয়ে সুনন্দা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো । তাদের এই নীরবতা দেখে মিঃ বোস আবার ধমক দিয়ে উঠে বললেন — আমি কি জিজ্ঞাসা করছি , কে এই পুতুলটা আমার ড্রয়ারে রেখেছে – উত্তর দাও ! এবার সুনন্দা আমতা আমতা করে বললে আজে স্যার আমি , আমি ওটা আপনার টেবিলের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখেছি । তুমি ! “ আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার । ওটা যাতে আপনার নজরে পড়ে । —কোথায় পেলে তুমি এ পুতুল ?

কয়েকদিন আগে দীননাথের হাতে কে যেন দিয়ে গেছে । মিঃ বোস দীননাথের দিকে তাকালেন । তারপর ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বা বললেন কে নিয়ে গেছে পুতুলটা তোমার হাতে ? দীননাথ বললে— “ সেদিন বর্ষায় রাতে বীভৎস আকারের একটা লোক আপনাকে উপহার দেবার জন্য আমার হাতে প্যাকেটে মোড়া এই পুতুলটা দিয়ে গেছে। এই বলে মিঃ বোস একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পাশের একটা চেয়ারে বসে পড়লেন । তারপর বললেন এটা এখনই বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেল । তবে একটা কথা মনে রেখো— এই পুতুলটার কথ্য প্রীতম যেন মুণাক্ষরেও জানতে না পারে । আর তোমাদেরও বলে রাখছি , তোমরা যেন ভালবাসা দেখাতে গিয়ে প্রীতমের হাতে কোন পুতুল কিনে দেবার চেষ্টা কোরো না । তাহলে সমূহ বিপদের হাত থেকে এ বাড়ির একটা লোকও রেহাই পাবে না । যাও ; যা বললাম — তাই করো , ওয়া বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলো । এই বলে পতুলটা তিনি সুনন্দার হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন । সুনন্দা পুতুলটা হাতে নিয়ে দীননাথকে বললে — তুমি খানিকটা কেরোসিন আর একটা দেশালাই নিয়ে বাড়ির বাইরে বাগানে এসে , এটা এখুনি পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।

দীননাথ কেরোসিন আর দেশলাই নিয়ে সুনন্দার পেছনে পেছনে বাড়ির বাইরে বাগানে গিয়ে হাজির হল । তারা যখন পুতুলটা পুড়িয়ে ফেলতে যাচ্ছিল , বাড়ির ঠিকে কি কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিল । সে দেখতে পেয়ে অনুরোধ করে বললো— পুতুলটা পুড়িও না । এটা বরং আমায় দাও , আমি নিয়ে বাড়ী যাই । বাড়ীতে আমার একটা ছোট ছেলে আছে , সে ওটা নিয়ে খেলবে । সুনন্দা দেখলো , ঠিকে কি কাজ শেষে যখন বাড়ি ফিরছে , তখন তার হাতে পুতুলটা দিয়ে দিলে মিঃ বোস কিছুই জানতে পারবেন না । এই ভেবে পুতুলটা তার হাতে দিয়ে । বললে — পুতুলটা না পুড়িয়ে তোমাকে যে দিয়েছি , একথা মিঃ বোস যেন কোনোভাবেই জানতে না পারেন । ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে নিজের কাপড়ের আঁচলের তলায় পুতুলটা লুকিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে গেল ।

এরপর কয়েকটা দিন কেটে গেছে । সেদিন বিকেলবেলা ঠিকে - ঝি বাড়ি থেকে বেরিয়ে মিঃ বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাজ তার বিকেলের কর্তৃক রক্ষা করতে । ছোট ছেলেটা তখন তার ঘরের বসে সেই পুতুলটা নিয়ে খেলা করছিল । এমন সময় সে তার মাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে কি যে তার মনে হল , অমনি পুতুলটা বগলদাবা করে মায়ের পিছনে পিছনে মিঃ বোসের বাড়িতে এসে হাজির হল । ছেলেটা যে পিছন ধরেছে , ঠিকে - কি প্রথমটায় মোটেই জানতে পারেনি । যখন সে বাড়ির দরজায় এসে ঢুকলো , তখনই জানতে পারলো ছেলেটা তার পিছু নিয়েছে । ঘাবড়ে করে ঘাবড়ে গেল ছেলে হাতে পুতুল দেখে । মনে পড়ে গেল তার সুনন্দার নিষেধের কথা । পরক্ষণেই নিজের মনকে সান্ত্বনা দিল- মিঃ বোস এখন বাড়ি নেই , তিনি ফিরবেন সেই রাতে । এরই মধ্যে সে তার কাজ শেষ করে ফিরে যাবে , তাহলে আর তিনি জানতে পারবেন না । একেই বোধ হয় বলে নিয়তি । সে যখন যার ঘাড়ে চাপে , কার ক্ষমতা তাকে দূরে সরিয়ে রাখে ! বাড়ীর দোতলার বারান্দার এককোণে ছেলেটাকে বসিয়ে কি তার কাজ করতে ব্যস্ত আর ছেলেটা পুতুল নিয়ে বারান্দার কোলে বসে খেলায় মত্ত । সুনন্দা তার ঘরে ঘাটের ওপর শুয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল । খাটের পাশে মেঝের ওপর বসে প্রীতম একটা সাদা কাগজে রং - পেন্সিল দিয়ে হিজিবিজি কি সব ছবি এঁকে চলেছিল । দীননাথও সেই সময় কি একটা কাজে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল ।

কখন যে প্রীতম ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়ে বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেছে সুনন্দা জা টেরও পায়নি । প্রীতম দেখলো বারান্দার এককোণে তারই মত একটা ছেলে আপনমনে বলতে একটা পুতুল নিয়ে খেলা করছে । এ ব প্রীতমের কোন খেলার সাথী ছিল না । এমনকি খেলার মত একটা পুতুলও না । কে কখনও তাকে বাড়ীর বাইরে বেড়াতে নিয়ে যায় নি । স্বাভাবিক ভাবেই সে মনমরা হয়ে থাকে সারাদিন । বাবার সঙ্গে তো তার দেখাই হয় না বলা চলে । কারণ , তিনি যখন সকালে বেরিয়ে যান , তখন সে ঘুমিয়ে থাকে ; আবার রাত্রে যখন ফেরেন , তখনও সে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে থাকে । ফলে সারাদিন যেটুকু সময় পায় দীননাথ আর সুনন্দাই তার বন্ধুর অভাব মেটাবার চেষ্টা করে । তাই আজ ছেলেটাকে দেখে তার আনন্দ হল । কিছু ধীর পায় এগিয়ে গেল ছেলেটার দিকে । তাকে জিজ্ঞেস করলো — তুমি কে গো ?

কি নাম তোমার ?

ছেলেটা মুখ তুলে দেখলো , সুন্দর পোষাক তারই মতন ফুটফুটে একটা ছেলে তার সামনে দাঁড়িয়ে । তখন সে উত্তর দিল আমার নাম অনিল । মা আমাকে অনু বলে ডাকে , কিন্তু তোমার নাম কি ?

পাল্টা প্রশ্ন করে ছেলেটা ।

—আমার নাম প্রীতম ।

—তুমি আমার সঙ্গে খেলা করবে ?

—হ্যাঁ ।

—তাহলে তুমি আজ থেকে আমার বন্ধু হলে । —সেই ভাল ।

জান তো , আমার কোনো বন্ধু নেই ; আমি একটুও খেলতে পাই না ।

—তোমার পুতুল নেই ?

—না । আমাকে কেউ পুতুল কিনে দেয় না । —তাই বুঝি ?

 -হ্যাঁ ।

ছেলেটা কয়েক মুহুর্ত কি যেন ভেবে তারপর বললে তাহলে আমার পুতুলটা আমি তোমাকে দিয়ে দেব।

তখন প্রীতম বলে — তুমি তাহলে কি নিয়ে খেলা করবে ?

—আমার মা আমাকে আর একটা পুতুল কিনে দেবে ।

বাইরে থেকে দু'টো বাচ্চা ছেলের এইসব কথাবার্তা সুনন্দার কনে যেতেই , সে সচকিত হয়ে উঠে বসল । বালিশের উপর বইটা উল্টে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো । দেখলো বারান্দার এক কোণে প্রীতম তারই বয়সের একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলছে । জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলো , ওটা ঠিকে -ঝি রমলার ছেলে । কাছে এগিয়ে গিয়ে প্রীতমের হতে পুতুলটা দেখতে পেয়ে আঁতকে উঠলো সুনন্দা ! 

 সর্বনাশ ! এতো সেই পুতুল ! ঝি - কে ডেকে সে বললে – তোমাকে না বলেছিলাম , এ বাড়িতে যেন এ পুতুল না ঢোকে ! তাহলে এটা আবার এলো কি করে ?

ঝি বলল, আমার কোনো দোষ নেই দিদিমণি। আমি কাজে আসার পর দেখলাম , কখন যে ছেলেটা পুতুলটা সঙ্গে করে আমার পেছনে পেছনে এসে হাজির হয়েছে , আমি কিছুই বুঝতে পারিনি ।

--- মিঃ বোস জানতে পারলে আমাদের কারোর রক্ষে রাখবেন না , তা জানো ?

—আমার কাজ শেষ হয়ে গেছে , আমি এখুনি ওকে নিয়ে চলে যাচ্ছি । বোস সাহেব কিছুই জানতে পারবেন না । এই বলে ঝি তার ছেলের হাত ধরে টানলো ।

সুনন্দা প্রীতমকে বুকের কাছে টেনে এনে বললে — ওর পুতুল ওকে দিয়ে দাও ।

প্রীতম আর পুতুলটা দিতে রাজী হয় না ।

সে বলে— এই পুতুল টা অনু আমায় দিয়ে দিয়েছে ।

তবুও সুনন্দা তাকে বার বার বোঝায় পুতুলটা তাকে দিয়ে দেবার জন্যে ।

 কিন্তু প্রীতম বলে — আমার খেলার সাথী নেই , এমনকি একটা পুতুলও নেই । আমি সারাদিন কি নিয়ে থাকি বলো তো ? বাবাকে কতবার বলেছি একটা পুতুল কিনে দেবার জন্যে , কিন্তু আজও টা পুতুল কিনে দিল না । বাবা যেন একটা কি রকম !

ঝি বললে — থাক দিদিমণি । ওকে ভুলিয়ে ওর কাছে থেকে পুতুলটা নিয়ে রাখবেন , আমি না হয় পরে ওটা নিয়ে যাব । এই বলে সে ছেলের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেল । সুনন্দা ভেবে দেখলো , রাত্রে প্রীতম ঘুমিয়ে পড়লে পুতুলটা নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে । তাহলে মিঃ বোস কিছুই জানতে পারতেন না । সেদিন সকাল সকাল প্রীতমকে খাইয়ে - দাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল সুনন্দা । প্রীতম ও পুতুলটাকে পাশে নিয়ে আদর করে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেই কখন ঘুমিয়ে পড়লো । প্রীতম ঘুমিয়ে পড়লে সুনন্দা পুতুলটা নিতে চেষ্টা করে । কিন্তু প্রীতম আরো বেশী করে সেটা আঁকড়ে ধরে । সুনন্দা ভাবতে থাকে — প্রীতম যেভাবে পুতুলটাকে আঁকড়ে ধরে ঘুমুচ্ছে , এই অবস্থায় যদি মিঃ বোস এসে দেখেন , তাহলে সকলকেই বিপদে পড়তে হবে সেদিনও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব মিঃ বোস গভীর রাতে বাড়ি ফিরছিলেন । নির্জন রাস্তায় পথ চলতে চলতে হঠাৎ তাঁর মনে হল , কে যেন তাকে চুপিসারে অনুসরণ করে চলেছে । থমকে দাঁড়িয়ে চারিদিকে দেখার চেষ্টা করলেন , কিন্তু না — কাউকে দেখা গেল না । তিনি আবার চলতে লাগলেন , এবারও সেই একই ব্যাপার । এবার তিনি দাঁড়িয়ে পড়ে হাঁক দিলেন — কে ! কে আমার পিছু নিয়েছো বলো । সঙ্গে সঙ্গে মিঃ বোস সেই নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মধ্যে শুনতে পেলেন হাঃ - হাঃ - হাঃ  শব্দে বিকট এক হাসির শব্দ । সেই হাসির শব্দে গোটা অঞ্চলটার নির্জনতা খানখান য ভেঙে পড়লো যেন । ভয়ে মিঃ বোসের সারা শরীর এই প্রচণ্ড শীতেও ঘেমে উঠলো । তিনি তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এসে বাড়ীতে ঢুকে সদর দরজাটা বন্ধ করে দিলেন । ভেতরে ঢুকে তিনি শুনতে পেলেন সেই পিশাচটার অট্টহাসি । সে বাইরে থেকে বার বার দরজায় ধাক্কা মেরে বলছে— প্রতিশোধ ! প্রতিশোধ আমার চাই । কেউ আমার আটকাতে পারবে না । এর পরেই সব চুপচাপ । এদিকে বাইরের দরজার সামনে চিৎকার শুনে সুনন্দা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ালো । তারপরেই সে দেখতে পেলো মিঃ বোস সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আসছেন । সে তখন পুনরায় ঘরের দিকে পা বাড়াল । ঘরে ঢুকতে গিয়ে যে দৃশ্য তার চোখে পড়লো , তাতে তার সারা শরীর যেন হিম হয়ে এলো । মেরুদণ্ড বেয়ে যেন এক ঝলক বিদুৎ খেলে গেল । সে দেখলো , প্রীতম অঘোরে ঘুমোচ্ছে , আর পুতুলটা এক ভীষণ আকৃতি পিশাচমূর্তি ধারণ করে ঘুমন্ত প্রীতমের গলায় দাঁত বসিয়ে তার রক্ত চুষে খেয়ে চলেছে । প্রীতমের গলার দু'পাশ বেয়ে রক্ত গড়িয়ে নিচের বালিশটা লালে লাল হয়ে গেছে । এরপরই সে পিশাচটা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল । সুনন্দা বুঝতে পারলো , আগন্তুকের দেওয়া পুতুলটা মন্ত্রপুতঃ একটা পিশাচ ছাড়া আর কিছুই নয় । কয়েকটা দিন কেটে গেল । এমন পৈশাচিক ঘটনার কথা সুনন্দা কাউকে কিছুই বলতে পারলো না । এদিকে দিন দিন প্রীতমের চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে আসছে । অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে , কিন্তু কোনো ফল হয়নি । সেদিন সুনন্দা দীননাথের সঙ্গে পরামর্শ করলো — আজ রাতে প্রীতম ঘুমিয়ে পড়লে , যেভাবেই হোক পুতুলটা তার কাছ থেকে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে । কথামত সেদিন রাতে প্রীতম ঘুমিয়ে পড়লে সুনন্দা দীননাথকে সঙ্গে নিয়ে প্রীতমের ঘরে এলো । ঘরে ঢুকতেই তারা দেখলো , পুতুলটার মধ্যে থেকে একটা পিশাচমূর্তি বার হয়ে প্রীতমের গলায় দাঁত বসিয়ে রক্ত খেল । তারপর তাকে ছেড়ে দিয়ে সারা ঘরময় কি যেন খুঁজে বেড়াতে লাগলো । কিছুক্ষণ পর সে আবার প্রীতমের দিকে ফিরে বললে— একটু একটু করে আগে তোকে শেষ করবো , তারপর তোর বাবাকে । তবেই আমার বুক থেকে প্রতিশোধের জ্বালা জুড়োবে । এই বলে সে আবার ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল । দীননাথের কাছে এমন দৃশ্য ছিল কল্পনার বাইরে । তাই এই দৃশ্য দেখার সঙ্গে তার হাত - পা যেন অবশ হয়ে আসছিল । সুনন্দা তার হাতে মৃদু চাপ দিয়ে তার দিকে তাকাতে সে আবার নিজেকে সামলে নিল । 

দীননাথও এবার বুঝতে পারলো ,ওই পুতুলটা একটা মন্ত্রপুতঃ পিশাচ । কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে পারলো না , কিসের প্রতিশোধের নেশায় আগন্তুক ওই পুতুলটাকে পিশাচে পরিণত করে এখানে দিয়ে গেছে । দীননাথ সুনন্দাকে পরামর্শ দিল — দিদি , তুমি বরং বোস সাহেবকে খুলে কথাটা বলো ।

সুনন্দা বললে — হ্যাঁ , আমিও তাই ভাবছি । তা না হলে এইভাবে তো আর একটা বংশকে চোখের সামনে শেষ হতে দেওয়া যায় না । পরদিন সকালে মিঃ বোসই ডেকে পাঠালেন সুনন্দাকে । সুনন্দা মিঃ বোসের ঘরে ঢুকতে মিঃ বোস বললেন –এসো সুনন্দা , বোসো । আমি তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম । সুনন্দা পাশের একটা চেয়ারে বসে বললে— কেন স্যার ?

 —আচ্ছা সুনন্দা , তুমি আমার ছেলেকে অনেকদিন থেকেই দেখছো । তাছাড়া তার মায়ের জায়গাটা তুমিই পূর্ণ করে রেখেছো । সেও যেমন তোমাকে ভালোবাসে তুমিও তেমনি তাকে ভালবাস ।

-আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার ।

-- আচ্ছা , তুমি কি বলতে পার প্রীতমের কি হয়েছে ? এত ডাক্তার দেখালাম , কিন্তু কোনো ফল হল না । তাহলে আমার একমাত্র বংশধর কি বাঁচবে না ?

 মিঃ বোসের ওপর সুনন্দার মায়া হলো । তার মুখের দিকে চেয়ে সুনন্দার চোখের পাতা ভিজে উঠলো । এবার সে নিজের মনকে শক্ত করে ভাবলো - ভাগ্যে যা আছে , তাই হবে । আজ আর সে চুপ করে থাকবে না , সব কথা খুলে বলবে মিঃ বোসের কাছে । মনের সমস্ত দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে

 সে বলে– স্যার , কয়েক দিন থেকেই আপনাকে একটা কথা বলবো বলে ভাবছিলাম ।

 —বল , কি বলতে চাও ।

সুনন্দা তখন ঝি - এর হাতে পুতুলটা দেওয়া থেকে পুনরায় কেমন করে আবার তা এ বাড়ীতে এসে প্রীতমের হাতে পড়লো এবং তারপর থেকে যা যা ঘটনা ঘটছে , তা সবই খুলে বলল ।

সব শুনে মিঃ বোস আর্তনাদ করে উঠে বললেন — তোমরা যে আমার কতখানি সর্বনাশ করলে , তা তোমরা নিজেও জান না। প্রীতমকে আর বাঁচানো যাবে না । আমার বংশের একমাত্র প্রদীপ , তাও তোমাদের ভুলে নিভে যেতে বসেছে ।

—আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না স্যার ।

–শোন সুনন্দা , আমার একমাত্র সন্তানকে একটা পুতুল কিনে দেবার মত সামর্থ্য আমার নিশ্চয়ই আছে । প্রীতম বহু কান্নাকাটি করা সত্ত্বেও আমি ওকে পুতুল কিনে দিইনি । কারণ , ওই পুতুলই একদিন শুধু ওর কেন , সারা বাড়িটার সর্বনাশ ডেকে আনবে । কিন্তু

আজ তোমরা আমার কথা অমান্য করে মা - মরা অসহায় ছেলেটার বেঁচে থাকার দ পথ বন্ধ করে দিয়েছ। 

--- আসলে ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারিনি স্যার । সামান্য একটা পুতুল যে এতটা ভয়ংকর হতে পারে , তা আমাদের কল্পনার বাইরে । কিন্তু একটা প্রশ্ন স্যার, আপনার প্রতি ওই আগন্তুক লোকটার এমন সাংঘাতিক বিদ্বেষ কেন?

এবার মিঃ বোস বলতে শুরু করলেন — হ্যাঁ , সে কথাই আজ তোমাকে আমি বলবো । তাহলে শোন – লোকটির নাম রতন বিশ্বাস । একটা মার্চেন্ট অফিসে কেরাণীর কাজ । যা মাইনে পেত , কোনরকমে তার চলে যেত । একটু সুখ - স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় সে তার রোজগার বাড়াবার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। এর ফলে ভুলবশতঃ সে মুহুর্তের জড়িয়ে পড়ে এক অপরাধীদের দলের সঙ্গে । এরপর পাকা বুদ্ধি আর পাকা হাত না হলে যা হয় , তাই ঘটলো ওর জীবনে।

ধরা পড়ে গেল একদিন পুলিশের হাতে । মামলা শুর হলো । বিচার চলতে লাগলো আমারই আদালতে । এই ব্যাপারটা আর চাপা থাকেনি । কাগজে খবরটা প্রকাশ হতেই চাকরিটাও তার চলে গেল । বিচার চলাকালীন একদিন সে হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে তার ভুল স্বীকার করলো । কিন্তু বিচারকের আসনে বসে তখন আমার কোনো উপায় ছিল না। আমি বাধ্য হয়ে তার বাড়ি তল্লাসির হুকুম দিলাম । সেই সুযোগ নিয়ে পুলিশ তার একমাত্র পুত্র ও পরিবারের ওপর অকথ্য নির্যাতন শুরু করে । ফলে একদিন , সেই শিশুপুত্রটি মারা যায় । এর দিন কয়েক পর পুত্রশোক আর নির্যাতনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তার স্ত্রীও মারা যায় । খবরটা তার কানে যেতে , সেদিন সে পুত্রের নামে শপথ করে যে , এর প্রতিশোধ যেমন করেই হোক সে নেবে । ইতিমধ্যে লোকটার দু’বছরের জেল হয়ে যায়। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর প্রতিশোধের নেশা সে ভুলতে পারে না । একদিন তন্ত্র সাধনায় সফল হয়ে সে তার মৃতপুত্রের খেলার পুতুলটাকে মন্ত্রপুতঃ করে পিশাচে পরিণত করে আমার বাড়িতে দিয়ে গেছে । আমি ওর গতিবিধি ভালভাবেই জানতাম , তাই কোনো পুতুলকে আমি আমল দিতে চাইনি । সেদিন যদি আমি ওর বাড়ি তল্লাসির হুকুম না দিতাম তাহলে পুলিশের অত্যাচারে ওইভাবে ওর স্ত্রী - পুত্র মারা যেত না । আর আমার জীবনেও ঘনিয়ে আসতো না এমন দুর্যোগের কালো মেঘ । কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিল না । আইনের হাতে আমি বাঁধা , তাই আইনের পথেই আমাকে চলতে বাধ্য । যাই হোক , আজ রাতে যেমন করেই হোক পিশাচটাকে শেষ করতেই হবে । এই পর্যন্ত বলে মিঃ বোস থামলেন আর সুনন্দা ফিরে এলো তার ঘরে।  

সেদিনই রাত্রিবেলা প্রীতম পুতুলটাকে আঁকড়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, আর সুনন্দা পাশের একটা চেয়ারে বসে মিঃ বোসের কথাগুলো গভীর ভাবে চিন্তা করছিল । এই সময় হঠাৎ একটা কালো ছায়া ঘরের মেঝের ওপর পড়েই অদৃশ্য হয়ে গেল । সঙ্গে সঙ্গে সুনন্দা ছুটে গেল মিঃ বোসের ঘরে। মিঃ বোস সেদিন তার ঘরেই অপেক্ষা করছিলেন এই সময়টার জন্যে । সুনন্দার মুখে সব শুনে তিনি ড্রয়ার থেকে তাঁর সেফটি রিভলবার টা বার করে নিয়ে ছুটে এলেন । দেখলেন পিশাচটা প্রীতমের দিকে তাকিয়ে বলছে — প্রীতম , আজই তোমার শেষ দিন । তারপরই সে প্রীতমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তার টুটিটা কামড়ে রক্ত খেতে লাগলো । মুহুর্তের মধ্যে মিঃ বোসের রিভলবার থেকে দু দুটো গুলি ছুটে গেল পিশাচটাকে লক্ষ্য করে। দুটো গুলি সেই পিশাচটার দেহ ভেদ করে পাশের জানলার সার্সিতে গিয়ে লাগলো । ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো কাচগুলো । পিশাচটাও মুহুর্তের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো মিঃ বোসের ঘাড়ে । তাকে দ্বিতীয়বার গুলি চালাবার সুযোগ না দিয়ে , পিশাচটা তার বর্শার ফলার মত হিংস্র দাঁতের মড়ে মিঃ বোসের টুটিটা ছিঁড়ে আলাদা করে ফেললো । এরপর পরম তৃপ্তিতে তার রক্ত চুষে খেতে লাগল । কিছুক্ষণ পর ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা মিঃ বোসের নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে পিশাচটা পরম উল্লাসে ফেটে পড়লো । আনন্দে তার মুখখানা আরও বীভৎস হয়ে উঠলো ।

সে বলে উঠলো — প্রতিশোধ !

হ্যাঁ - হ্যাঁ প্রতিশোধ আমি নিয়েছি । আমার শত্রুর বংশে বাতি দেবার আর কেউ নেই । এরপর পিশাচটা হো - হো শব্দে বিকট এক অট্টহাসি হাসতে হাসতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল । সেই হাসির শব্দে সারা বাড়ি যেন কেঁপে উঠলো । সুনন্দা দেখলো মৃত প্রীতমের পাশে পুতুলটা আর নেই । পরদিন সকালে কয়েকজন লোক জোগাড় করে সুনন্দা , দীননাথ আর ঠিকে ঝি মৃতদেহ দুটো নিয়ে হাজির হল পরম শাস্তিক্ষেত্র শ্মশানে । কিছুক্ষণের মধ্যেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো দু ' - দুটো চিতা । সেদিকে তাকিয়ে তাদের মনে হল যেন এ পৃথিবীতে বোধহয় তারাও আর জীবিত নেই , রতনের পরিবারের সাথে সাথে!  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics