💖Susmita Goswami💖

Abstract Fantasy Inspirational

3  

💖Susmita Goswami💖

Abstract Fantasy Inspirational

ঘুম!

ঘুম!

7 mins
189


কি হবে অন্যের জন্য নিজেকে কষ্ট দিয়ে? কি লাভ অন্য একজনের জন্য রাতের পর রাত জেগে চোখের জল ফেলে? কি হবে ইয়ার! এইসব নাটকবাজির প্রেম ভালোবাসা করে? প্রিয়ার কাঁধ চাপড়ে বলে ওঠে তার প্রিয় বান্ধবী চিত্রা। নাটকবাজির প্রেম ভালোবাসা! তুই এটা বলতে পারলি চিত্রা! ধরা গলায় বলে ওঠে প্রিয়া। 

হ্যাঁ পারলাম বলতে। শান্ত গলায় বলে চিত্রা। 

প্রিয়া চুপ করে কাঁদছে , চিত্রা ওর কাছে বসে ওর চোখ মুছিয়ে বলে, যদি তুই ভালোবাসা কাকে বলে সত্যি সত্যি জানতিস তাহলে আজ তোকে কাঁদতে হতো না রে বান্ধবী!

মানে, কি বলতে চাইছিস, আমি অভ্র কে ভালোবাসি নি? এসব তুই কি বলছিস বলতো? 

চিত্রা প্রিয় বান্ধবীর মনের অবস্থা বুঝে ওর কাছে বসে বলে, তোকে আজ কয়েকটা কথা বলব, তুই শুধু মন দিয়ে শুনবি, কোনো কমেন্ট করবি না। শুধু শুনবি, তারপর বুঝবি তারপর যদি কিছু বলার থাকে তাহলে বলবি। আমার বলার মাঝখানে কিছু বলবি না কেমন। মাথায় ঢুকলো? 

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে ব্যথিত প্রিয়া।

 

জানিস, একটা গোটা জেনারেশন ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে একসময় নিজের ভালো থাকাটাকেই হারিয়ে ফেলে! একটা বাস্তব সত্য কি জানিস, একজন অপ্রেমিক মানুষের পেছনে প্রেমিক মানুষেরা ছুটে বেড়ায়, তাই তো প্রেম কে অন্ধ বলা হয়। 

যদি অন্ধের মতো কেউ কাউকে ভালো না বাসত, প্রেমে না পড়ত, তাহলে দেখতিস এত কষ্ট, এত আত্মহত্যা শুধুমাত্র প্রেমে আঘাত পেয়ে হতো না!

নতুন প্রেমের প্রথম ক'দিন ধরে বাবু আর সোনা নয়ত জান বা জানু নয়তো আরো অনেক কিছু কিন্তু তারপর শুরু আস্তে আস্তে গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া, আস্তে আস্তে অবহেলা করা এবং সেটাকে নিঃশব্দে বাড়ানো তারপর কষ্ট এবং সবশেষে বিচ্ছেদ ও আত্মহত্যা এই তো আজকের দিনের ভালোবাসার সংজ্ঞা!

একটা ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন না করে একটা প্যারেন্টস ডে পালন কর। একটা রোজ ডে তে প্রেমিক বা প্রেমিকা কে গোলাপ না দিয়ে নিজের চোখের সামনে থাকা রান্নাঘরে ঝলসে যাওয়া মা টা কে দে। প্রেমিকের জন্মদিন পালন করে তাকে শার্ট বা ঘড়ি না দিয়ে নিজের বাবা কে কোনো কারণ ছাড়াই বাবার পছন্দ মতো কিছু দে। 

শোন পাগলী, পেছন ফিরে দেখলে দেখবি সেই মা, বাবা যে তোর মনের অবস্থা হয়তো বা কখনো কখনো বোঝে না, দেখে না তোর hidden tears, fake smile অথবা মা, বাবার কাছে নিজের অবস্থান বয়ঃসন্ধি তে অনেক দূরে চলে গেছে মনে হলেও, সেই মা, বাবাকেই দেখবি। 

হ্যাঁ প্রেম প্রত্যেকের জীবনে দরকার তবে সেটা শুধু প্রেমই, নিজের কষ্ট নয়। যে থাকার সে এমনিতেই থাকবে, আর যে থাকবে না সে এমনিতেই অজুহাত দেখাবে। কি হবে এসব? এখন তুই কাঁদছিস কিন্তু কয়েকবছর পর সবকিছুই বদলে যাবে কিন্তু কোনটা বদলাবে না জানিস, বর্তমানে এই কষ্ট পেতে গিয়ে তোর মনে যে ক্ষত গুলো তৈরি হয়েছে। সেগুলো থেকে যাবে আর বারবার চিকিৎসাহীনের মতো ডাক দেবে আর তুই তোর আগত ভবিষ্যত কে সন্দেহ করবি, সবাইকে খারাপ ভাববি। কিন্তু সেই ছেলে কিন্তু দিব্যি আছে আর তুই!  

শোন আজকের দিন খুব toxic, তাই এই বিষাক্ত দ্বীপে তোর ঐ ক্ষুদ্র অমৃত কোনো কাজ করবে না বরং অমৃতটাও গরলের মাঝে পড়ে গিয়ে ছাই হয়ে যাবে তাই ভাবনা চিন্তা করে, যাচাই করে তারপর।

হ্যাঁ তবুও অনেকে হয়ত সত্যিই ঠকে যায় কাউকে চরম ভালোবেসে। কিন্তু কি বলতো, জটিল মনে সরল ভালোবাসা ---- জাস্ট হজম হয় না কারোর।

শোন ইয়ার, যদি আর কাঁদিস ঐ হতচ্ছাড়া ছেলেটার জন্য তো দেখ তোকে কি করি! 

প্রিয়া শুকনো হেসে বলে, তোরা কেউই বুঝবি না রে আমার কষ্ট টা, তুই তো নয়ই, তুই তো এসব প্রেম ভালোবাসা করিস না বা আঘাতটাও পাসনি তাই কটা ভালো ভালো কথা বলে motivate করছিস, কিন্তু সব যন্ত্রণায় অনুপ্রেরণা চলে না রে, সব কষ্টের সান্ত্বনা হয় না! 

চুপ কর একদম! ধমকে বলে ওঠে চিত্রা। প্রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে হস্টেলের বাইরে প্ল্যাটফর্মে । তারপর দূরে বসে থাকা অনাথ, ঘুমন্ত শিশু দের দেখিয়ে বলে, দেখ, ওদের কেউ নেই শুধু মাথার উপর আকাশ ছাড়া। ওদের জন্য কে ভাবে রে? 

আয় এদিকে। বলে আবার টানতে টানতে নিয়ে এসে দেখায় পঙ্গু অকেজো মানুষদের কষ্টের জীবন। বলে, দেখ, এদের দেখে শেখ। জীবনে প্রেমটাই যদি সব হতো তাহলে প্রেম করেই মানুষ সব কিছু ঠিকঠাক করে রাখতে পারত। এদের জীবনের কষ্ট গুলো সম্পর্কে ভাব, দেখবি নিজের কষ্ট গুলো ভুলছিস। কি হবে ঐ সুস্থ, সবল, বেইমান ছেলেটার কথা ভেবে, যে এককালে কথা শেষ করত না, খোঁজ রাখত মুহুর্তে মুহুর্তে, সবসময় তোর নাম ইত্যাদি কত কি, সেইসব ই তো হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। আজ তার সবসময় ব্যস্ততা, তোর সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা বা সময় নেই। তোর দিক থেকে তুই আপ্রাণ চেষ্টা করে সম্পর্ক ধরে রাখলেও সবসময় মনে রাখিস একতরফা কোনো কিছু হয় না। যদি সত্যিকারের ভালোবাসা থাকত , তাহলে অত প্রকাশ করার ব্যাপার থাকত না, অত প্রমাণ করার ব্যাপার থাকত না, থাকত শুধু উপলব্ধি । 

থাক না সে তার মতো, ভুলে যা তো ওকে আর আত্মহত্যা করে কি হবে, ও তোর লাশ দেখতেও আসবে না মাথায় রাখিস! শুনতে খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই সত্যি যে, আজকের দিনে হয়ত বেইমানেরাই বেশি ভালোবাসা পায় কিন্তু বেইমানেরা ভালোবাসা পায় বলে আমাদেরও উচিত নয় বেইমানদেরই ভালোবেসে যাওয়া , বুঝেছিস! নিজের মনকে , নিজের মায়ের ঝলসানো সংসারের জীবন ভেবে কাঁদা, বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ঘাম রুপী রক্ত ভেবে কাঁদা, এইসব মানুষের জন্য কাঁদা। নিজেকে ভালবাসতে শেখ, নিজেকে ঘুমোতে দে। তোর আত্মা তো কোনো দোষ করেনি তাহলে তাকে কেন শাস্তি দিচ্ছিস! যে একদিন বাবু সোনা বলত, সেইই একদিন ছাইয়ের নুড়ো করে। যে একদিন অনেক কথা বলত, অনেক খোঁজ খবর নিত, অনেক স্বপ্ন দেখাত, অনেক ভালোবাসার কথা বলত, সেই তার কাছে এখন সময় নেই তাও শুধু তোর ক্ষেত্রে। তোর ক্ষেত্রে তার ব্যস্ততা, তোর ক্ষেত্রে তার এড়িয়ে যাওয়া, তোর বলা কথাগুলো সে আজ ভুলে যায় কত তাড়াতাড়ি! কি হবে বলতে পারিস যার মন থেকে তুই উঠে গেছিস তাকে নিজের মনে বসিয়ে রাখার? Today's Love is give and take policy, সমযোজী যৌগের মতো হ, তড়িৎযোজীর মতো হোস না। 

"আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।" "তুমি আমার সব।" "আমি তোমাকে না পেলে মরে যাবো।" "আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবো না।" ইত্যাদি কথাগুলো বড় ভয়ঙ্কর রকমের দামী বলেই কারোর ধরে রাখার ক্ষমতা থাকে না। আসলে সবাই বেঁচে থাকে, হ্যাঁ মন থেকে মরে গিয়ে। তবে আমি বলব, প্রেম ভালোবাসা কারোরই খোঁজা উচিত নয়। জীবন কে তুই খুঁজিস নি, জন্ম তো তোর পরিকল্পনা মতো হয়নি, মৃত্যুকেও তুই যতোই খুঁজিস সেও তার সময় মতোই আসবে, তোর পরিকল্পনা মতো হবে না তাহলে এই প্রেম কে কেন পরিকল্পনা করে খুঁজবি? প্রেমকে কেন ভিক্ষা করবি? অপেক্ষা কর, সময় সবার উপরে মনে রাখিস। যে চলে গেছে সে বুঝবি থাকার জন্য আসেনি। মা, বাবা কখনো ছেড়ে চলে যায় না কারণ তারা তাদের জীবনে তোকে ছেড়ে চলে যাবে বলে আনেনি কিন্তু তোর ঐ স্বার্থপর, বেইমান প্রেমিক....! 

তোর চোখের জল একদিন মুছিয়েছিল কারণ সেদিন তার দরকার ছিল তোকে 

আর আজ তোকে কাঁদাচ্ছে, অর্থাৎ দরকার শেষ।  

তুই যতদিন মনে পুষে রাখবি যে ওকে ছাড়া তুই ভালো থাকবি না ততদিন পর্যন্ত তুই সত্যিই ভালো থাকতে পারবি না। যখন ঐ ছেলেটা তোর জীবনে আসেনি তখন কি তোর চলত না? ও আসায় তুই ওকে কি দিয়ে দিয়েছিস যে তুই আজ ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারিস না! ওঠ, উঠে দাঁড়া পাগলী! এই জগতে অনেক মানুষ তোর থেকেও অনেক দুঃখে আছে। না এটা অনুপ্রেরণা বা সান্ত্বনা নয়, এটাই বাস্তব। প্রকৃত প্রেম, ভালোবাসায় যারা আঘাত পায় সেইসব মানুষদের এই আঘাতে কখনো মরে যাওয়া উচিত নয় বরং যারা মরতে চাইছে তাদের বাঁচার আলো দেখিয়ে নিজেকেও বাঁচানোর দরকার। সত্যিকারের ভালবাসতে পারে এমন মানুষ গুলো সব যদি মরে গিয়ে শুধু বেইমানগুলো বেঁচে থাকে তাহলে পৃথিবীটার অবস্থা কি হবে ভাবতে পারছিস! নিজেকে এতটা ব্যস্ত রাখ যাতে তোর দুঃখ, মন খারাপ করার সময় না থাকে। নিজেকে এতটা ভালো রাখ যাতে ঐ বেইমানটাকে কখনো মনে না পড়ে! জানি অনেক অনেক কষ্ট হবে কিন্তু খারাপ এর পরেই ভাল আসে, তোর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না বৈকি।  

আর শোন, অনেক রাত ভালো করে ঘুমোস না তুই, হারিয়ে ফেলেছিস সেই আগের সুন্দর দিনগুলো, হারিয়ে ফেলেছিস শান্তি তাই আজ তুই ঘুমোবি । আমি তোকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো। তোদের মতো প্রকৃত প্রেমী মানুষদের জীবনে ঘুম টা শেষ ঘুম নয়, শুরুর ঘুম হওয়া উচিত। রাত জেগে চোখের জল ফেলে আর জেগে থাকা নয়। নতুন স্বপ্ন, নতুন ইচ্ছা, নতুন করে নিজের প্রতি ভালবাসা রেখে একটা সুন্দর ঘুম দে তো! 

চিত্রার ভালোবাসা মাখা শাসন আর এই সমস্ত কথাগুলো তন্ময় হয়ে শোনে প্রিয়া। চোখে জল তবে দুঃখ, গ্লানির নয়, আনন্দের। মনে মনে ভাবে, এই একটা মেয়ে যে সারাজীবন তার দুঃখের কথা গুলো শোনে, বোঝে। দুঃখের কথা শোনার লোক কৈ এখন? শুনলেও বোঝার লোক নেই। সত্যিই তো, অনেক দিন ভালো করে ঘুমানো হয়নি যার ফলে নিজের জীবন থেকে সমস্ত ইতিবাচক দিক গুলো হারিয়ে গেছে। নাহ, এবার মন থেকে সমস্ত খারাপ কিছু ঝেড়ে ফেলে নিশ্চিন্তে একটা সুন্দর ঘুম দিতে হবে। না, মরে যাওয়ার শেষ ঘুম নয়, নতুন করে বাঁচার প্রথম ঘুম! যেই ঘুম হবে সমস্ত বেইমানদের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার শক্ত, বিশ্বস্ত পাঁচিল। ভাবার সময় নিজেকে নিয়ে, নিজের সামনে দেখা মানুষগুলো কে নিয়ে, নিজের মা, বাবা কে নিয়ে, নিজের স্বপ্ন কে নিয়ে। নিজের সাথে নিজের রাগ, অভিমান, ঝগড়া হোক। সবটাই হোক নিজের অন্তরে থাকা সুপ্ত প্রেমের সাথে। তুই ঠিক ই বলেছিস চিত্রা, এবার সত্যি সত্যিই সেই ঘুম চাই, শান্তির ঘুম!  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract