❤Susmita Goswami❤

Tragedy Others

3.0  

❤Susmita Goswami❤

Tragedy Others

সুপ্রীতি।

সুপ্রীতি।

8 mins
235


আমার নাম...... না থাক নামটা না হয় নাই বললাম! নামে কি আসে যায়!

জানেন, আমি না কারোর কাছে ভালো হতে পারিনি, পারিনি হতে প্রিয়জন, বোঝেনি কেউ আমার মনের গভীরতা, খোঁজে নি কেউ আমার চোখের জল, সব মিলিয়েই যদি বলতে হয় তাহলে এককথায় বলি, আমি মানুষটাকেই এই পৃথিবী বোঝেনি। 

আমি অ্যামবিভার্ট নাকি ইন্ট্রোভার্ট আমি তা জানি না, তবে আমি কাউকে আমার মনের অবস্থা বোঝাতে পারি না, বলতে চাইলেও বলা হয় না অনেক অধরা কথাই। মনের মেঘে ধোঁয়াশা হয়ে ভাসে সব অনুভূতি আকুলতা! আমি খুব অল্পেতেই রেগে যাই কিন্তু কেউই কোনোদিন বুঝলো না যে রাগটা কেন করি। আমার রাগের জন্য আমার উপর অনায়াসে তকমা পড়ে আমি নাকি খুব গুটিয়ে থাকতে ভালোবাসি। গোটা জগৎ একদিকে আর আমি আরেকদিকে। 

হাতে রাখা ফ্রেমে নিজের ছোট্টবেলাকার সেই ছবিটার উপর নিজের অজান্তেই যেন দু ফোঁটা চোখের জল পড়ে আমার। ছোটবেলায় আমি মা বাবার কত আদরের ছিল কিন্তু এখন এই ষোলো বছরে এসে আমি যেন সকলের , বিশেষ করে মায়ের চোখে অসহ্যের হয়ে উঠেছি আমার ভাই আছে একটা, দু বছরের ছোট। মা যেন একটু হলেও ভাইকে একটু বেশিই ভালোবাসে, যত্ন করে, খেয়াল রাখে সবসময়। কাছ ছাড়া হলেই মা যেন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছেলের জন্য। 

কিন্তু আমি ! আমার তো যাওয়ার দরকার নেই কোথাও। স্কুলে ভাইয়ের সাথে যাবো, ফিরব। ব্যস্ এর থেকে আর তো তার যাওয়ার কথা নয়। তাই আমাকে কাছছাড়া করে টান বাড়াবার কোনো প্রসঙ্গই নেই । ভাইকে মা অনেক ভরসা করে। ভাই একা একা যেতে পারে, হাতে হাতে ইলেকট্রনিক কাজকর্ম , দোকান বাজার করতে পারে আরো কত কীই না...! কিন্তু আমি সেখানে লাটসাহেব নবাব নন্দিনীর মতো খাই, ঘুমোই, আয়েস করি। আমাকে পড়াশোনা করতেও কেউ দেখে না, দেখে না কেউ কোনো কাজ করতেও। শুধু দেখে খালি অলসতা । 

আমি একদিন মায়ের কাছে খাইয়ে দেওয়ার আবদার করতে মা বলেছিল, শ্বশুরবাড়ি গেলে কি মা খাইয়ে দেবে তোকে? 

"শ্বশুরবাড়ি " এই একটা ভয়ঙ্কর শব্দ মা যেন বারবার মনে করিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিত যে আমি এই বাড়ির কেউ নই, কোনো না কোনো একদিন আমাকে এইবাড়ি, এইলোকগুলোকে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। আমা বুক ফেটে যায় তবুও চোখ দিয়ে জল আসে না। মা খাইয়ে দিতে গেলে আমি বলি, থাক মা, আমি একাই খেতে পারব। 

মা যখন সারাদিন অসুস্থ থাকে বা কোনো কারণে বাড়ি থাকে না, তখন আমি ঘরের সমস্ত কাজ একা হাতে সামলাই। কিন্তু রান্না পারিনা বলে ঐ অতগুলো কাজের কোনো দাম নেই কারোর কাছে। কারোর কাছে পাইনি কখনো প্রশংসা কিন্তু নিজের চোখের সামনেই বরাবর দেখে এসেছি ভাইয়ের প্রশংসায় বাবা মা পঞ্চমুখ। সবাইকে যেন ভাইয়ের কথা বলতে মায়ের খুব ভালো লাগে, আনন্দ লাগে। মেয়ের কথা উঠলে, মায়ের একটাই কথা, এই তো পড়াশোনা করছে এখন, মেয়ে তো কলাগাছের বাড়, কখন যে বড় হয়ে যায় বোঝাই যায় না। 

ছোট্টোবেলাটাকে খুব মিস করি আমি মাঝে । ফ্রেমটার উপর একটার পর একটা নোনা জলের ফোঁটা পড়ে চলছে অঝোরে। কিন্তু কাউকে দেখানো যায় না কারণ এখন তো তার আর কেউ নেই। মায়ের কাছে গিয়ে কাঁদলে মা বুকে টেনে মাথায় হাত রাখে না, আমি যে বড় হয়েছি। বড় মেয়েদের কে অত ভালোবাসা দেয় শুনি! 

আমি সেদিন একা ছিল বাড়িতে। ভাই স্কুলে, বাবা কাজে আর মাও একটু বেরিয়েছে দরকারে। একা একা কিছু খাই না সে তবুও আমি একবার মজাচ্ছলে হোক বা সত্যি সত্যি শুনেছি আমি নাকি শুধু খাই! সমস্ত কাজ আপাতত সব করে রেখেছি কিন্তু তবুও তার পরিচয় কামচোর হিসেবে! 

মা ফোন করেনি একবারও, তাই জন্য আমিই মাকে ফোন করি। মা বলে, আমি না থাকলে তো তোর ভালোই হয় তাই না, পরমের সাথে কথা বলতে পারিস আমি না থাকলে, আমি কি কিছু বুঝি না। 

এই আরেকটা বিদ্ধকর শব্দ "পরম।" মা কে প্রথম দিন থেকেই পরমের ব্যাপারে সমস্ত কিছু জানিয়েও মা এমন একটা ব্যবহার করত আমার সাথে, মনে খুব আঘাত লাগে। থেকে থেকে রাগের মাথায় ভাবি যে সব ছেড়ে ছুড়ে সে চলে যাবে কিন্তু পরে মনে পরে কোথায় যাবো আমি ? এই পৃথিবীতে আদৌ কি কেউ আছে আমার জন্য! ওদিকে পরম আমার মা অর্থাৎ কাকিমা কে অকাতরে শ্রদ্ধা করে। ছেলেটা পড়াশোনাতেও অনেক ভালো। সবদিক থেকেই ভালো রকমের একটা ছেলে কিন্তু সে যখন শোনে যে তাকে নিয়ে শ্রীতমার বাড়িতে অশান্তি হয়েছে তখন সে অত্যন্ত দুঃখ পেয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না কারণ আমি জানতাম, সে আমাকে কে ভালোবাসে। "আমি জানতাম" এই কথাটা বলার কারণ পরে পরমও আমার প্রতি একটা দূরত্ব তৈরি করা শুরু করেছিল সেও আমার রাগের জন্যই। আমি খুব বেশীই রাগ করি সবার উপর, তাই আমার সাথে সত্যি বলতে মন থেকে কেউ থাকতে চায় না, এ আমার বড়োই আক্ষেপ! আমি মানুষটা ভীষণ একা, কিন্তু আমি ভালোবাসি সবাইকে, নির্লজ্জ অপরাধীর মতো চেয়ে থাকি সামান্য একটু ভালোবাসার আশায়, কিন্তু আমার এই দৃষ্টি আমাকে সকলের কাছে দিন কে দিন বেহায়া, অসভ্য , অবাধ্য মেয়ে করে তুলেছে!  

মা রোজ আমার ফোন চেক করে, সবকিছু দেখে। যন্ত্রণায় দুমড়ে যায় আমার মনটা। আমাকে আমর মা এতটা অবিশ্বাসও করে! 

একদিন মা আমাকে বলেই ফেলে, তুই তো পরের ঘরে চলে যাবি ড্যাং ড্যাং করে.; আমাদের তো তোর ভাইই দেখবে তখন! এত হিংসা করিস কেন ছোট ভাইকে? ছোট ভাইকে একটু বেশি করে তেল দিয়েছি বলে তোরও তেলের দরকার পড়ে গেল? এই বলে গোটা তেলের কৌটোটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, নে জন্মের মতো তেল খেয়ে নে, আর বলবি না তেল খাবো বলে! 

মা এতটা খারাপ ব্যবহার, খারাপ কথা, সন্দেহ, তার উপর খিটখিট একটা কারণেই করত--- আমি মেয়ে তাই। মেয়েদের অত সুখ পেতে নেই। মেয়েদের অনেক খাটতে হয়, খাটতে খাটতে মরে যেতে হয়, সকলের সেবা করতে হয়। আমি তো পরের ঘরে চলে যাবো আমার উপর অত টান থাকা মায়ের পক্ষে সম্ভব নয় রাখা। 

ওদিকে পরমও আমাকে কে বলত, তোমাকে আমি কখনো কোনোদিন কোনো দুঃখ কষ্ট পেতে দেবো না। 

একটু ফোন দেখলেই মা যখন চিৎকার করে বলত, শ্বশুরবাড়িতে ফোন দেখার সময় পাবি তো? 

খুব বলতে ইচ্ছে করে আমার যে, মা কখনো তো বলতে পারো যে চাকরির কাজে ব্যস্ত হয়ে ফোন দেখার সুযোগ পাবো কিনা! কিন্তু চুপ করে রেখে দিই আমি ফোন টা। মনে মনে ভাবি হয়ত মায়ের মনেও অনেক সখ আহ্লাদ চাপা পড়ে গেছে আর সেই কষ্টের প্রতিফলন মা আমার উপর দিয়ে নেয় এটা ভাবলে আমি চাইলেও মায়ের উপর অভিমান করতে পারি না। কিন্তু কার জন্য আমি ভাবছি, যার মনের একটু জায়গাতেই সে নেই, তার জন্য! মায়ের মনে শুধু তার ছেলেই আছে। আমার কষ্টটা হচ্ছে মা বা সবার কাছে হিংসা। আমার অভিমান সকলের কাছে মুখে মুখে চোপা আর আমার কান্নার মূল কারণ একটাই সকলের কাছে, সেটা হলো পরম নিশ্চ্য়ই নোংরা কথা বলেছে! প্রায়দিন অশান্তি মনোমালিন্য, ডিপ্রেশনে চলে যাই আমি । নিজের মতো কিছু করতে গেলেই পায়ে একটা বাঁধন অনুভব হয়, কেউ যেন আমাকে খুব রাগী চোখে দেখছে মনে হয়, মনে হয় কেউ যেন ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে বলছে, দেখিস তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে। এখন বুঝছিস না তো পরে বুঝবি। মেয়ে সন্তান হয়ে কাজকর্ম, পড়াশোনা কিছুই তো করছিস না, শুধু ফোন, শুধু ফোন, পরে মরবি যখন শ্বশুরবাড়িতে, নাকানিচোবানি খাবি তখন বুঝবি, করে যা, করে যা ভালো করে করে যা ! 

তাই একা একা থাকতে এখন বেশি ভালো লাগে আমার । একা থাকলে কাঁদতে পারা যায়, ভগবান কে বলতে পারা যায় যে আমাকে যেন ভগবান খুব তাড়াতাড়ি তুলে নেয়। আমি যে বাপেরবাড়িতে সমস্যার স্তম্ভ এখন। যৌবনে পা দেওয়া মেয়েটা এখন সকলের কাছে জেদী, অবাধ্য, অলস, অপরাধী পশু। যে সবসময় ভুল করে। কোনো সময় তার উপর ভরসা করা যায় না কারোর পক্ষে। 

ওদিকে বেশি ভালোবাসলে হয়ত ভালোবাসাও মুখে থুতু দেয়। পরম বড্ড এড়িয়ে চলা শুরু করে আমাকে। তার কথায় অবজ্ঞা সূর, আচরণে অবহেলা আর সম্পর্কে ফাটল। আমি সব বুঝতে পারি কিন্তু আমি খুব অসহায় একটা মেয়ে, যে সবাই কে আঁকড়ে বাঁচলেও তার থেকে সবাই মুক্তি চায় সবসময়। পরমও। আমি অনেক অনেক চেষ্টা করি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য, কারণ পরম আমাকে ভালো না বাসলেও আমি পরমকে পাগলের মতো ভালোবাসি, ওকে ছাড়া আমার শ্বাস প্রশ্বাস চলতেও কষ্ট হয়। আর পরম আমার পাগলের মতো ভালোবাসাটার সুযোগ নেয় অবহেলা, উপেক্ষা দিয়ে। ব্যস্ পরিবারের দুর্ব্যবহার আর পরমের অবহেলায় আমি প্রায় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু তার চুরমার হয়ে যাওয়া হৃদয় কারোর চোখে পড়ে না কেন? সবাই কি শুধু আমার বসে থাকা দেখতে পায়? সবাই কি শুধু আমাকে ফোন হাতে দেখতে পায়? সবাই কি সবসময় আমাকে ভাইয়ের উপর হিংসা আর মায়ের মুখে মুখে চোপা করতে দেখতে পায়? শুধু ভুল আর অন্যায়! কৈ কখনো তো মুখ ফুটে কিছু চাইনা আমি, যে মা এটা কিনে দেবে, বা ওটা খাবো। সে বলবে কি, বলার মুখেই মা টাকাপয়সা খরচের ফিরিস্তি শোনায়। তাই আর কিছু চাইলেও চাইতে পারি না আমি কিন্তু ভাইয়ের জন্য যেন খুব একটা বেশি খরচ হয় না। ও তো ছোট, ও বায়না করতেই পারে আর সেটা পূরণ করা বাবা মায়ের কর্তব্য। মেয়েদের জীবন শুধু ত্যাগ আর মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়া! মাসিকের ব্যথা সেও মেয়েই সহ্য করে। গর্ভ হলে বা গর্ভপাত হলে এই দুইয়ের যন্ত্রণাই মেয়েদের জন্য। পারিবারিক, সামাজিক ও সাংসারিক যন্ত্রণা সেও মেয়েদেরই। তবুও কোথাও যেন শুনে যেতে হয়, মনে করাতে হয় নিজেদের আমরা যতোই পাহাড়ে উঠি, সমুদ্রে নামি বা আকাশে উড়ি আদতে প্রতিটা ঘরে ঘরে প্রতিটা মেয়ের জীবনের গল্প শুনলে সারা জীবন কেটে যাবে। রাস্তা দিয়ে মেয়েকেই সাবধান হতে হয়, মেয়ে রাতে একলা বেরোতে পারে না, যখন তখন ফিরতে পারে না। আন্দোলন তো তারাই করে, তারাই তো এইসব মেয়েদের ঠিক পোষাক পরতে হয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে সামাজিকতা, মেয়েদের কুমারীত্ব দেখা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ছেলেরা যেহেতু প্রতিটা মায়ের কাছেই আমার ভাইয়ের মতোই আদরের তাই তাদের অত সাবধানে, সামাজিকতা বেড়াজাল বেঁধে, ঠিক ঠিক করে বেরোতে হয় না বা কিছু করতে হয় না কারণ সে তো পুরুষ, সে তো ছেলে তাই না! আমি রোজ লিখে রাখি সব নিজের ডাইরি তে। ডাইরি টা যে আমার দ্বিতীয় রুপ। আমার সমস্ত না বলা কথা , অনুভূতি, কষ্ট কেউ না জানুক, কেউ না বুঝুক, এই ডায়রি সব জানে, বোঝে। আমি খুব রাগী মেয়ে আগেই আপনাদের বলেছি কিন্তু আমি রাগী না কষ্টে জর্জরিত হয়ে চাপা অভিমানী তা জানি না। চট্ করে মাথা গরম করে উল্টো পাল্টা কথা বলতে গিয়েই তো আজ পরিবারের সকলের কাছে নিজের অবস্থান হারিয়েছি, অন্তরের গভীরতা বোঝার মতো সত্যিই কেউ নই। রাগী তার উপর অন্তর্মুখী মানুষের বৈশিষ্ট্য আর সর্বমুখী মানুষের ধর্ম দুইই আমার মনে বইছে। পরম তুমিও কেমন যেন হঠাৎ করেই আমাকে অবহেলা করা শুরু করলে। আমি কি এতোই খারাপ বলোতো তোমাদের সকলের কাছে! 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy