শেষ চিঠি
শেষ চিঠি


প্রিয়তমাষু,
অনু, চিঠিই একমাত্র অবলম্বন ছিল তোমার সাথে যোগাযোগের। এই একবছরে তোমায় প্রতিদিন রাতে একটা করে চিঠি লিখতাম, আর পরের দিন কলেজ যাওয়ার পথে পোস্ট করতাম। শিশুশ্রেণি থেকে ১৮ টা বসন্ত তোমার সাথে হেসেখেলে কাটালাম। কতো মধুর ছিল সেইদিন গুলো। খুনটুসি করতে গিয়ে কারো একজনের রাগ হলে অন্যজনের বুক করতো ঢিপঢিপ। ভাব না হওয়া পর্যন্ত কারো মনে আসতো না শান্তি। এইভাবেই চলতে চলতে একদিন মনের অজান্তে দুজনের বুকের বাঁদিকে ঘর বাঁধলো এক অচেনা ভালোবাসা। যার জন্ম হয়েছিল ভালোলাগা থেকে। তখন তো তুমি আমায় চোখে হারাতে চাইতে না।
মনে আছে অনু বোশেখের দুপুরে মর্নিং স্কুল থেকে এসে তুমি আবদার করতে কাঁচা আম এনে দেওয়ার জন্য। আমি আম এনে দিলে তুমি হাতের তালুতে রাখা নুনে ডুবিয়ে ডুবিয়ে আম খেতে, আর তোমার জিবটা থেকে থেকে গিয়ে তালুতে আঘাত করতো। তোমার মুখ থেকে নির্গত হতো এক অদ্ভূত আওয়াজ, যেটা আমার মনে হতো কোন মিউজিক শুনছি। তোমার চোখের পাতাগুলো পালা করে করে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বুজে বুজে দিতো ভবিষতের ইঙ্গিত।
এই তো সেদিন তুমি ১৯ এ পা দিলে। জন্মদিনে আমি না যাওয়া পর্যন্ত কেক কাটা বন্ধ রেখে মুখ গোমরা করে বসে ছিলে। আমি যাওয়ার পর ক্ষণিকের জন্য অকালে সানাই বেজে উঠলো তোমার-আমার মনবিতানে।
সেই ১৯ তম জন্মদিনের একমাস পর থেকে মাত্র একবৎসর হলো তুমি গেলে পড়তে আমেরিকা। আমার কাছে যদিও তা একযুগ ঠেকছে। একদিন হটাৎ খবর পেলাম তুমি অন্যের হয়ে গেছো। এক সহপাঠীকে বিয়ে করেছো। আমার আর তোমার চিঠি দেওয়ার অধিকার আছে? লেখার অধিকার আছে তাই লিখলাম। দেওয়ার অধিকার তুমি নিজের সনদ বলে রদ করলে, তাই চিঠিটা পোস্ট করতে পারলাম না। যাক্, মনের সিন্দুকে যে স্মৃতিগুলো ভরা আছে, অবসর পেলে সেগুলো মাঝেমধ্যে বের করে দেখো আমায় চিনতে পারো কি না!
শেষান্তে
তোমার বাল্যসখা।