গুলাল আবু বকর

Abstract Others

3  

গুলাল আবু বকর

Abstract Others

শেফালির মন খারাপ

শেফালির মন খারাপ

4 mins
350


তিনবছর হল শেফালির বিয়ে হয়েছে ভাস্করের সঙ্গে। দেখাশোনা করে বিয়ে। এখনো কোনো সন্তান হয় নি। মোটামুটি আয়ের একটা ব্যবসা করে ভাস্কর। স্থানীয় বাজারের ভিতরে তার একটা ছোট দোকান আছে। ইদানিং ভাস্করের সাথে শেফালির বনিবনা হচ্ছে না। ব্যবসার জন্য ভাস্করের বাড়ি ফিরতে রাত হয়। শেফালির অভিযোগ স্বামী দেরি করে বাড়ি ফেরে। যদিও রাত দশটা এমন কিছু দেরি নয়। তার কোনো কিছুর নেশা নেই, এমনকি পান সিগারেট পর্যন্ত খায় না। খরিদ্দারের অপেক্ষায় তাকে বসে থাকতে হয়। এদিকে সন্ধ্যায় বড় একাকী বোধ করে শেফালি।

শ্বশুর শাশুড়ি থাকেন অন্যত্র, দেশবাড়িতে। তাই বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। অন্ধকারে গাছের একটা আমড়া পড়ে যদি খুট করে আওয়াজ হয় তবে তার ভয় করে। 

        চেষ্টা করেও সন্তান আসছে না তাদের। ভাস্কর সবরকম চেষ্টা করে শেফালিকে খুশি রাখতে। সে কলেজে লেখাপড়া করা একটা মেয়ে। অবসরে বসে কি করবে ভেবে পায় না। মাঝে মাঝে বসে টিভি দেখে। ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করে। তবু তার সময় কাটে না। মন খারাপ করে। কেন, সে জানে না। অন্য কোনোভাবে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে, কিন্তু কিভাবে তা জানে না। একদিন রাতে দোকান বন্ধ করে ভাস্কর বাড়ি এসেছে। এসে লক্ষ্য করে শেফালি মুখ গুঁজে কাঁদছে। সে জিগ্যেস করে, কি হয়েছে? কোনো সদুত্তর পায় না। ভাস্কর এই ঘটনায় অবাক হয়। এ ঘটনার রেশ তার মাথায় ঘুরতে থাকে। সে বুঝতে পারে না, শেফালির কি হলো! এইভাবে কয়েকদিন স্বাভাবিক কাটলো। সব ঠিকঠাক। কয়েকদিন পর আবার ঐ ব্যাপার। এবার ভাস্কর এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাকে চাপ দেয়। শেফালি কিন্তু কিছুতেই মুখ খোলে না। হালকা আঘাতে কাঁচের পাত্রে যেমন সরু চিড় আসে তেমনই ভাস্করের মনে সুক্ষ চিড় ধরে। এরপর কিছুদিন দু'জনের জীবন নিস্তরঙ্গ কাটলো। ভাস্কর তবুও শেফালিকে খুশি করার কথা ভাবে।

       শেফালি দিনদিন খিটখিটে হতে থাকে। ছোটখাটো বিষয়ে কথায় ঝাঁঝ চলে আসে। ভাস্কর মনঃক্ষুন্ন হয়। অযথা উত্তাপ শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় তর্ক। কখনো কখনো তা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যখন কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। দু'দিন, তিনদিন শুধু চুপচাপ কাটে। ভাস্কর স্বভাবে শান্তশিষ্ট। তাই কেমন করে যেন আবার শুরু হয়ে যায় কথাবার্তা। কিন্তু এই ভালো অবস্থা বেশিদিন টিকে থাকে না। খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আবার তর্কাতর্কি আবার মন কষাকষি। বেশ বাকবিতণ্ডা শুরু করে শেফালি। ভাস্কর কোনোদিন তার গায়ে হাত তোলেনি। রাগ পড়ে গেলে শেফালি মনে মনে অনুতপ্ত হয়। সে বুঝতে পারে না কেন সামান্য কারণে তার রাগ চলে আসে। ভাস্কর ভাবে, তাকে কোনো ভালো ডাক্তার দেখালে কেমন হয়। কেন এত রাগ!

       ইতিমধ্যে একটা ঘটনা ঘটলো। একদিন সন্ধ্যায় একা বসে, শেফালি টিভি খুলে অনুষ্ঠান দেখছিল। হঠাৎই মনে হলো ছাইপাঁশ কিসব হচ্ছে, দেখতে ইচ্ছা করে না! চ্যানেল পাল্টে পাল্টে দেখে, কিছুই ভালো লাগে না। টিভি বন্ধ করে অন্ধকারে বাইরে চলে আসে। একেবারে ফাঁকা জায়গায়। তারপর নিশি পাওয়ার মতো অন্ধকারের মধ্যে হাঁটতে শুরু করে...একা। হাঁটতে হাঁটতে সে একসময় বড়রাস্তায় চলে আসে। তার মন এখন কোথাও যেতে চাইছে। দু'চোখ যেদিকে যায়। কিন্তু কোথায় যাবে সে? এতো নিঃসঙ্গ বোধ আগে সে করেনি। রাস্তায় গাড়িগুলো আলো জ্বালিয়ে মাঝেমধ্যে হুস হুস করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। গাড়ি দূরে চলে গেলে আবার অন্ধকার। সে হাঁটছে রাস্তার ডানদিক দিয়ে। আজ সে শুধুই হাঁটবে। হঠাৎ মনে হলো তার, সে কি যাবে এখন আগেকার ভালোবাসার মানুষটার কাছে। স্কুল জীবনে তার সাথে স্বপ্ন দেখতো। অনেকদিন আগের কথা। কিন্তু সে-ই তো তাকে কথা দিয়েও কথা রাখেনি, চলে গেছে। এখন তো আর ওদিকে যাওয়ার মানে হয়না। তাতে বরং সমস্যা আরো জটিল হবে। মূহুর্তের এই ভাবনা তাকে হতাশ করে তোলে। অন্ধকার যেন আরো চওড়া আর গাঢ় হয়ে তার চারপাশ ঘিরে ধরে। হাঁটা শ্লথ হয়ে যায়। অবসন্ন লাগতে শুরু করে। তবু সে ঠিক করেই ফেলেছে, যাই ঘটুক না কেন, ঐ বাড়িতে আর কখনো ফিরবে না। নিঃসঙ্গ বাড়ি যেন তার ওপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে চায়। এসব সাতপাঁচ ভাবছে। 

          এমনই এক সন্ধিক্ষণে সে চমকে ওঠে। ছুটে চলা গাড়ির চকিত আলোয় সে দেখতে পায় ভাস্করকে। আস্তে সাইকেল চালিয়ে সে বিপরীত দিক থেকে আসছে। অন্ধকারে শেফালি ঠাওর করতে পারেনি। নিজেকে আড়াল করার কোনো সুযোগ সে পায় না। বুঝতে পারে সে ধরা পড়ে যাবে। ভাস্কর হঠাৎ তাকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায়। চমকে ওঠে। সে বলে, একি শেফালি, তুমি এখানে কেন? শেফালি কথা খুঁজে পায়না। মূহুর্ত চুপচাপ থেকে বলে, এমনি হাঁটছিলাম। খুব হাঁফ লাগছিলো বাড়িতে বসে। ভীষণ বোর! ভাস্কর বলে, তা হোক, এই অন্ধকারে একা বড়রাস্তার ওপর তোমার আসা উচিত হয়নি। তুমি কি মনে করো সব রাস্তা নিরাপদ?...সে সাইকেল থেকে নামে। তারপর কাছে থাকা ব্যাগ থেকে কি যেন বের করে। শেফালির সামনে তুলে ধরে বলে, এই দেখ দুটো টিকিট। আজ তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে এদুটো কিনতে গিয়েছিলাম। পরের সপ্তাহে আমরা দীঘা যাচ্ছি। হোটেল বুক করলাম। শেফালি চোখের পাতা ফেলে না। টিকিট দুটোর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। ভাস্কর নরম করে বলে, শেফালি, সাইকেলের পেছনে উঠে বসো। শেফালি নিঃশব্দে সাইকেলের পেছনে ক্যারিয়ারে বসে। ভাস্কর সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দেয়। সাইকেল চলতে শুরু করে। সে শেফালির উদ্দেশ্যে বলে, শক্ত করে ধরো। ভাস্করের চোখ তখন সামনের রাস্তায়।


     

         



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract