শারদীয়া উপহার।(শরৎকাল)
শারদীয়া উপহার।(শরৎকাল)


সতীশ লোকাল ট্রেন থেকে নেমেই দেখল তার পকেটে মোবাইল ফোনটা নেই। প্রচণ্ড ভীড় ট্রেনে সে প্রত্যেকদিন যাতায়াত করে, কিন্তু এরকম ঘটনা আজই প্রথম ঘটল। সতীশ অবশ্য জানত যে শারদীয়া উৎসবের আগে পকেটমারি, ছিনতাই এইসব হয়েই থাকে। সে সাবধানেই থাকে ট্রেনে-বাসে তবুও পকটমারিটা হয়েই গেল। সতীশের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, মাত্র মাসদুয়েক আগেই সে পনের হাজার টাকা দিয়ে ফোনটা কিনেছিল। প্রথমেই সে ভাবল থানায় গিয়ে একটা ডাইরি করিয়ে রাখি।
তাই সে থানায় গিয়ে পকেটমারি কেসের ডাইরি করিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য একটা অটোরিক্সায় উঠল। সতীশ ওঠার পরেই ওর পাশে বসা লোকটা চলতি অটো থেকে হঠাৎ একলাফে নেমে পড়তে গেল। চলতি অটো থেকে ঐভাবে নামার চেষ্টা করতে যাওয়ায় সতীশ অবাক হয়ে বারণ করল, "আরে কি করছেন পড়ে যাবেন যে!" কিন্তু ঐ লোকটা শুনল না, আর নামতে গিয়ে অটোর ডানপাশে থাকা রেলিংয়ে পা আটকে দুম করে উল্টে পড়ল আর পড়েই যন্ত্রণায় কাৎরাতে লাগল
ঐভাবে পড়তে দেখে অটোওয়ালা রেগে গিয়ে গালাগালি দিয়ে উঠল। কিন্তু সতীশ অটোটাকে দাঁড় করিয়ে নেমে পড়ল। আর নেমেই দেখল পিছন থেকে একটা লরি তীব্র গতিতে ছুটে আসছে। এটা দেখেই সতীশ লাফিয়ে পড়ে এক টানে ঐ লোকটাকে সরিয়ে দিল, আর ঠিক তক্ষুণি পিছন থেকে আসা লরিটা হুশ করে ওদের পাশ দিয়ে চলে গেল। সতীশ ভাবল আর কয়েক সেকেন্ড দেরী করলেই লোকটা লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে যেত। সে লোকটাকে সেই কথাটা বলতে গিয়ে দেখল লোকটা ওর দিকেই ফ্যালফ্যাল করে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর তার মাথা থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে।
সতীশ লোকটাকে বলল, "চলুন একটু দূরেই একটা ডাক্তারখানা আছে ওখানে ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন।" লোকটা কোন কথা না বলে একদৃষ্টে সতীশের দিকে করুণভাবে তাকিয়ে থাকল। সতীশ ভাবল লোকটা শক্ পেয়ে বোধহয় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। যাইহোক সতীশ ধরাধরি করে লোকটাকে ডাক্তারখানায় নিয়ে গেল। যেতে যেতে হঠাৎ সতীশের মোবাইল ফোন হারানোর কথাটা মনে পড়ে গেল, সে এতক্ষণ দিব্যি ভুলে গেছিল, অবশ্য একটা অচেনা অজানা লোকের জন্য নিঃস্বার্থ উপকার করতে তার একটা স্বর্গীয় অনুভূতিও হচ্ছিল।
যাইহোক ডাক্তারখানায় ব্যান্ডেজ করিয়ে ডাক্তারের ফিজ মিটিয়ে দিয়ে সতীশ লোকটাকে বলল, "এখন কেমন বোধ করছেন? একা যেতে পারবেন তো?" লোকটা প্রথমবার কথা বলল, "হ্যাঁ, এখন ভাল আছি।" সতীশ বলল, "আচ্ছা এবার তাহলে আমি যাই।" লোকটা বলল, "দাঁড়ান, আপনি আমার প্রাণ বাঁচালেন আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব, আর পারলে আমায় ক্ষমা করবেন। আমিই আপনার মোবাইল ফোনটা পকটমারি করেছিলাম উৎসবের সময় পরিবারের কথা ভেবে। কিন্তু আর আমি এটা নিতে পারবনা। এই নিন আপনার মোবাইল ফোনটা।" বলে চলে গেল।
সতীশ বিস্ময়ে, আনন্দে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।