সেলফি
সেলফি
আজ সেনবাড়িতে বিরাট আয়োজন। এই বাড়ির মেয়ে ঝিমলির বিয়ে বলে কথা! তাই ওর দাদা অজয়, আর মা প্রমিলাদেবী মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না। তিনি তো জামাইখানাও পাচ্ছেন একেবারে হীরের টুকরো! মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানিতে চাকরি, বাড়ির একমাত্র ছেলে, বিশাল সম্পত্তির মালিক, তার কাছে মেয়ের জন্য ভালো এর থেকে বেশী আর কিছু হয় না। দিব্যেন্দুবাবুর'ও খুব শখ ছিল, মেয়েকে এমন বাড়িতে বিয়ে দিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তা আর হল কই! অকালেই চলে গেলেন। তবে তাঁর অবর্তমানে এই সংসারের হাল ধরেছে ছেলে অজয়। বাবার ব্যবসাপাতি ও'ই এখন সামলায়। সেখান থেকেই বোনের বিয়ে দেবে। কিন্তু দুপুরবেলা হল এক কান্ড! অজয় ব্যাঙ্ক থেকে বাইকে করে টাকা নিয়ে ফেরার সময় খেয়ালই করেনি কখন ওর টাকার ব্যাগটা পড়ে গেছে। ওর যখন মাঝপথে খেয়াল পড়েছে, তখন ও মনেই করতে পারছে না ব্যাগটা পড়ে গেল না চুরি হয়ে গেল। এদিকে বোনের বিয়ে, আর এই দিকে দু লাখটাকা নিখোঁজ। চিন্তায় তো ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কি করবে ও এখন ভেবেই পাচ্ছে না। এরই মধ্যে একটি সাত-আট বছরের ছেলে ওর কাছে এসে দাঁড়ালো। ছেলেটির পরনে ছেড়া একটা গেঞ্জি আর ধূলো জড়ানো হাফ প্যান্ট। ছেলেটি এত জোড়ে দৌড়ে এসেছে যে কথা বলতে পারছে না। অজয় খেয়াল করল হারিয়ে যাওয়া টাকার ব্যাগটা ওর হাতে। ও একটু দম ফেলে অজয়কে ব্যাগটা দিয়ে বলল-
------দাদা তোমার ব্যাগ, বাইক থেকে ব্যাগের বেল্টটা ছিড়ে পড়ে গেল। তাই দৌড়ে তোমায় দিতে এলাম।"
অজয় ব্যাগটা পেয়ে ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। অজয় ওকে ভালোবেসে দুহাজার টাকা দেয় ভালো জামা প্যান্ট কেনবার জন্য। কিন্তু ও টাকাটা নেয়নি। ও বলল দিতে হলে অজয়কেই কিনে দিতে। অজয় তাতেই রাজি হল। নতুন জামা প্যান্ট পড়িয়ে অজয় আজ ওকে ওর বোনের বিয়েতে নিয়ে যাবে। যাওয়ার আগে ছোট ছেলেটি অজয়কে আবদার করে বলল- "দাদা একটা সেলফি তুলে দেবে তোমার ফোনে? সবাই ফোনে দেখি ফটো তুলতে গিয়ে সেলফি সেলফি বলে। কিন্তু ওটা কিভাবে করে? "
অজয় ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে। আর পকেট থেকে ফোনটা বের করে দুজনে মিলে একটা সেলফি তুলে ফোনের ক্যামেরাবন্দী করে।