Rinki Banik Mondal

Tragedy Classics Inspirational

4  

Rinki Banik Mondal

Tragedy Classics Inspirational

কুমাতা কদাপি নয়

কুমাতা কদাপি নয়

4 mins
525



শ্রীচরনেষু মা,


কেমন আছ মা? শুনলাম তোমার শরীরটা নাকি খুব খারাপ করেছে। কথাটা শোনার পর ভেবেছিলাম তোমার সাথে গিয়ে একবার দেখা করে আসি, কিন্তু তুমি হয়তো আমায় দেখলে আরো উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারো, সেই ভয়ে আর যায়নি। মুঠোফোনের যুগেও তোমায় চিঠি পাঠালাম দেখে অবাক হচ্ছ? আসলে ফোন করবো ভেবেও করিনি, সেই সাহসও হয়নি। তুমি যদি আবার প্রচন্ড রেগে যাও, তখন! আর তুমি তো জানো, তোমার গম্ভীর গলাকে আমি প্রথম থেকেই ভয় পাই। ভয়ে তো আমি গুছিয়ে মনের না বলা কথাগুলো বলতেও পারবো না। তাই ভাবলাম এই চিঠিটাই লিখি।


তোমার ছেলে হঠাৎ একদিন আমায় বিয়ে করে নিয়ে ঘরে তুলেছিল। তুমি তো সেই রাগ করে আমায় বরণটুকুনি পর্যন্ত করলে না। পাশের বাড়ির সুমিতা কাকিমা এসে আমায় বরণ করলো। তুমি তো রাগে দুদিন খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত করোনি। মনে পড়ে তোমার? যদিও তারপর তুমি আমার কথাতেই আবার খেয়েছিলে। আমি ভাত মেখে তোমায় খাওয়িয়ে দিয়েছিলাম। সেদিন আমিও কাঁদছিলাম, আর তুমিও কাঁদছিলে। তুমি কেন কাঁদছিলে মা? সেদিন কিন্তু তুমি আর আমায় দূরে ঠেলে দিতে পারোনি। তবে বুকে জড়িয়েও ধরোনি। দুবছর তোমার সাথে ছিলাম। কোনোদিন হেসে আমার সাথে কথা বলোনি, তবে আমি না খেলে ঠিক মুখ ঝামটা দিয়ে খাওয়া করিয়েছ। জ্বর হলে কখনো আমার পাশে এসে দুদন্ড বসোনি, তবে তোমার ছেলেকে দিয়ে ঠিক ডাক্তার দেখিয়ে এনেছ। আমি একলা ঘরে বই পড়তে ভালোবাসতাম দেখে আমায় কত বকেছ, অথচ তুমিই ইচ্ছে করে বাবার ঘর পরিষ্কার করতে আমায় পাঠাতে, যাতে বাবার হাতে সাজানো লাইব্রেরিতে আমি যেতে পারি। বাবা চলে যাওয়ার পর তার ঐ লাইব্রেরিতে তুমি কাউকে ঢুকতে দিতে না, তোমার ছেলেকেও না, কিন্তু আমায় দিতে। তুমি আমার কাছে যতই কড়া হতে চাও, আমি জানি তুমি কি। ভেবেছিলে, কোনোদিনও আমি তোমাকে বুঝব না বলো?


বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তোমার ছেলে রোজ মদ খেয়ে এসে আমায় মারধর করতো, আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কেন সকাল হলেই আমায় গালিগালাজ করতে মা, ঐ বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য? এমনকি তুমি বলতে পুলিশকে খবর দিলে দাও, তোমরা নাকি ভয় পাও না। আসলেই তুমি পুলিশের ভয় দেখিয়ে তোমার ছেলেকে একটু শায়েস্তা করতে চাইতে তাও আমার আমাকে দিয়ে। কি ভাবছ, আমি এতকিছু জানলাম কি করে? আরে, আমি নিজের কানে শুনেছি একদিন, আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তুমি তোমার ছেলের গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে বলছিলে, আমায় মারধর না করতে, নাহলে তুমিই নাকি পুলিশে খবর দেবে। আমি সেদিনিই সব বুঝে নিয়েছিলাম মা।


তোমার ছেলে একটা অবৈধ সম্পর্কে জড়িত ছিল, সেটা তোমার বা আমার কারোরই আজানা নয়। তাও নিজের পোড়া কপাল বলে মেনে নিয়েছিলাম। বাপেরবাড়ি ফিরে যাওয়ার মুখ ছিল না যে! সে তো তুমিও জানতে। পড়াশোনা জেনেও আমি নিরুপায় ছিলাম। কোথায় যাব, কি করবো জানতাম। ভাগ্যের পরিহাস বলে মেনে নিয়েছিলাম। তারপরে তো একদিন যা হল, সামান্য রান্নায় একটু নুন কম হওয়া নিয়ে তুমি যা তুলকালাম অশান্তি শুরু করলে, আমাকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার মত একটা নিষ্ঠুর আদেশ করে বসলে। তোমার ছেলে তো বেশ খুশিই হয়েছিল। নাহলে আরেকজনকে ঘরে তুলতো কি করে! সেদিন তোমাকে এত নিষ্ঠুর হতে দেখে ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছিল। সে যাই হোক, বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় তুমি তো আমার সামনেই এলে না, তবে টুপাই দিদি আমাকে সেদিন জোর করে ওর সাথে নিয়ে গিয়েছিল।টুপাই দিদির বাড়িতেই তো আমার আশ্রয় হল। তবে টুপাইদিদি আমায় বলে দিয়েছে এইসব তুমিই ওকে দিয়ে করিয়েছ। আমার চাকরির জোগাড় তুমিই করিয়ে দিয়েছ লোককে বলে, এমনকি আমার পছন্দের ছোট্ট ফ্ল্যাটটার লোনও তোমার দয়ায় হয়েছে। না দয়া নয়। আশির্বাদ। তুমি যে দেবী। আসলেই তুমি আমাকে নরক থেকে মুক্তি দিয়ে একটা সুন্দর জীবন দান করতে চেয়েছ। তোমার একমাত্র ছেলেকেও তুমি ফেলে দিতে পারোনি। বকেছ, শাসন করেছ, কিন্তু সে শোনোনি। কথাতেই তো আছে, "কুপুত্র যদাপি হয়, কুমাতা কদাপি নয়।"



আমার সাথে বিচ্ছেদের পর তোমার ছেলে আবার বিয়ে করেছে। তোমার ওপরও অত্যাচার করেছে। ভেবেছিলাম এবার প্রতিবাদ করবো, কিন্তু পারিনি, ঐ নতুন বৌটার মুখের দিকে চেয়ে। তার কি দোষ বলো?শুনেছি ঐ মেয়েটাও খুব শান্ত স্বভাবের। বাড়ি,ঘর,ব্যবসা নিজের নামে লিখে নিয়ে তো তোমার ছেলে, তোমায় সপ্তাহ খানেক আগে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছে শুনলাম। ও এটা ঠিক করেনি মা। ঠিক করেনি।


মা গো যে কথাটা বলছিলাম, তুমি কি আমার কাছে এসে থাকতে পারবে না মা? আমিও তো তোমার সন্তান। তুমি আবার আমাকে শাসন করবে, আবার আমাকে বকবে। তবে এবার অন্যকে দিয়ে আমার খেয়াল রাখবে না। খেয়াল রাখার হলে তুমি নিজেই আমাকে খাওয়িয়ে দেবে, বই কিনে দেবে, জ্বর হলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। ও মা দেবে তো বলো?


চিঠির সাথে কিছু টাকা পাঠালাম, কিছু ভালো মন্দ কিনে খেও। আবার টাকা পাঠিয়েছি দেখে রাগ করো না যেন। আমি তোমার অসময়ে দয়া করছি ভেবো না। সন্তানের কর্ম যা, তাই করার চেষ্টা করছি। আর যদি তোমার রাগ না কমে আমায় এসে দুগালে দুখানা থাপ্পড় দিয়ে যেও। আমি কিন্তু রাগ করবো না। বরং তোমাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরবো, তুমি যতই আমায় ছেড়ে চলে যাওয়া্য চেষ্টা করো, আমি কিন্তু তোমায় কোথাও যেতে দেব না।


                            ইতি,


                         তোমার মেয়ে




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy