Rinki Banik Mondal

Classics Inspirational

4  

Rinki Banik Mondal

Classics Inspirational

প্রাপ্তি

প্রাপ্তি

3 mins
317


"তোমর চুলটা খোলো তো! তারপরে স্বামীর পা দুখানা এই ঘটির জলটা দিয়ে ধুঁইয়ে দাও।


ফুলশয্যার রাতে স্ত্রীয়ের শুকনো চুল দিয়ে স্বামীর ভেজা পা মুছে দিতে হয় কিন্তু।"


পিসিশাশুড়ির গম্ভীর গলায় আমি প্রথমে একটু ভয়ই পেলাম। তারপরে চুলের খোঁপাখানা খুলে নিলাম। এ নিয়ম আমারও অজানা নয়। অনেকের বিয়েতে দেখেছি। চুলটা খুলে বসে বরের পা দুটো যেই ঘটির জল দিয়ে ধোয়াতে যাব ওমনি পাশের ঘর থেকে শাশুড়িমায়ের চিৎকার-


-------"এইসব ফালতু নিয়মের কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক রাত হয়েছে এবার সবাই ঘুমাতে যাক। দিদি আপনিও ঘরে যান। এইসব নিয়মের দরকার নেই। জানেন তো এইসব আমার পছন্দ নয়।"


পিসিশাশুড়িমাও আমার শাশুড়ির প্রতি কেরকম এক মুখের ভেঙচি কেটে ঘটি আর পা ধোয়ানোর পাত্রখানা নিয়ে গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। সাথে মুখ চিবিয়ে বলে গেলেন-


------"সারাজীবনেও বদলাবে না এই মহিলা।"


প্রথমে তো পিসিশাশুড়িমাকেই আমি বেশ ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু শাশুড়িমার চিৎকারকে তো আমি এখন দশগুণ বেশি ভয় পাচ্ছি।


বাবাকে বলেছিলাম আমার এত তড়িঘড়ি বিয়ে না দিতে‌। কলেজটাও পাশ করতে দিল না। মেয়েদের নাকি অতো লেখাপড়া করে লাভ নেই। এ বিষয়ে বাবার সাথে তর্ক করেও কোনো লাভ হয়নি। যেই না একটা ভালো সম্বন্ধ পেয়েছে মাথার দিব্যি দিয়ে আমাকে তাতে রাজিও করে নিয়েছেন। আমার বড় দাদাও রয়েছে। সে তো মাধ্যমিকে ফেল করেও বাবার ভালো সন্তান। আসলে আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভেদটা যে এত সহজে পিছু ছাড়বে না।


জুঁই ফুলের গন্ধে ভরে রয়েছে ঘর, সারাটা বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। বেনারসী কাপড়টা বদলে আমি একটা হালকা সিল্কের শাড়ি পরে জুঁইয়ের ঝালর সরিয়ে খাটে গিয়ে বসলাম। ঠিক তখনই আমার স্বামী অভিরূপ ঘরে এলেন। উনি দরজায় ছিটকিনি দিতেই বুকটা বড্ড ধড়ফড় করতে শুরু করলো। এমনিতে বিয়ের আগে কথাবার্তা পাকা হওয়ার পর ফোনে কেমন আছি, কি বৃত্তান্ত ছাড়া আমার কর্তামশাইয়ের সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি। আজকে কর্তামশাই'ই প্রথমে কথা বলা শুরু করেন-


------"কিগো ভয় পাচ্ছ নাকি? আমি তোমায় কোনো কিছুতেই জোর করবো না। প্রথমে আমরা ভালো বন্ধু হই, তারপরে তো স্বামী-স্ত্রী।


কর্তামশাইয়ের মুখে এই কথাগুলো শুনে আমার মনটা জুড়িয়ে গেল। সত্যিই ভালো লাগলো। শুরু হল আমাদের গল্প। সারারাত গল্প করে ভোরের দিকে দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছি।


-------"কি হল ঘুম কি আজ ভাঙ্গবে?"


ধড়ফড়িয়ে খাটের ওপর উঠে বসি আমি। দেখি শাশুড়িমা চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে। হঠাৎই আমার দুচোখ আমার কর্তামশাইটিকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তিনি তো একবারো আমাকে কিছু না বলে কখন স্নান করতে চলে গেছেন। কখন যে সকাল হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ঘরের দরজাটাও যে কর্তামশাই কখন খুলেছেন আমি জানিনা। এইভাবে কি লজ্জায় যে পড়েছি। এই কথাটা নিয়ে নিশ্চয়ই বাড়িতে অশান্তি হবে। আমার বাবা মায়ের কানেও নির্ঘাত কথাটা যাবে। ইস্! লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। কিন্তু শাশুড়িমা চায়ের কাপ নিয়ে কেন দাঁড়িয়ে আছেন বুঝলাম না। চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর রেখেই উনি বললেন-



-----"আমাদের বাড়িতে কিন্তু সবাই খুব সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে যায়। তোমাকেও কিন্তু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে।"


আমি ভয়ে ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। তিনি আরোও বললেন। তবে পরের এই কথাগুলো যে তিনি বলবেন আমি ভাবতে পারিনি।


-------"কলেজে পড়ার ইচ্ছে অথচ এত বেলা অবধি পড়ে পড়ে ঘুমোলে হবে? তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে এই ফর্মটা ফিল আপ করে দিও। কলেজ যেতে হবে তো নাকি? আমার সাথে যা হয়েছে আমি চাইনা তোমার সাথেও তাই হোক। সংসারের যাতাকলে নিজেকে পিষে মারার কোনো দরকার নেই। তোমার মায়ের মুখে শুনেছিলাম, তোমার নাকি পড়াশোনার খুব শখ। তাই এবার থেকে সেটাই করবে। আর শোনো এ বাড়িতে কে কি বলল তাতে কান দেবেনা। যা অসুবিধে হবে আমায় বলবে।"


কথাগুলো বলেই শাশুড়িমা ঘর থেকে চলে গেলেন। আমার চোখে জল এসে পড়েছে কেন আমি নিজেও জানি না। এ প্রাপ্তি যে বিশাল, এর গভীরতা খোঁজার সাধ্য আমার আর নেই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics