Pronab Das

Classics

5.0  

Pronab Das

Classics

সেলফি ।

সেলফি ।

3 mins
693




সুবিনয় সেন আমার ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে স্কুল ও একসাথেই কলেজ পাস করেছি। শান্ত গোবেচারা গোত্রের এই সুবিনয়ের নামের সাথে চেহারার কোথায় যেন একটা মিল আছে। হয়তো রুগ্ন শরীর আর একটু বেশি চুপ করে থাকার কারণে এমন মনে হয়। রোগা হাড় গিলগিলে সুবিনিয়ের মাথায় যত চুল আছে তার থেকে অনেক বেশি তার শরীরে মাদুলি, তাবিজ, পাথর আছে । সেই ছোট্ট থেকে রোগ রোগ আর এই ঠাকুরবাড়ি সেই ঠাকুর বাড়ি করে কিভাবে যে চল্লিশের কোটা পার করে দিল সে ওই ভাল বলতে পারবে। 

সুবিনয় সেন আমার ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে স্কুল ও একসাথেই কলেজ পাস করেছি। শান্ত গোবেচারা গোত্রের এই সুবিনিয়ের নামের সাথে চেহারার কোথায় যেন একটা মিল আছে। হয়তো রুগ্ন শরীর আর একটু বেশি চুপ করে থাকার কারণে এমন মনে হয়। রোগা হাড় গিলগিলে সুবিনিয়ের মাথায় যত চুল আছে তার থেকে অনেক বেশি তার শরীরে মাদুলি, তাবিজ, পাথর  আছে । সেই ছোট্ট থেকে রোগ রোগ আর এই ঠাকুরবাড়ি সেই ঠাকুর বাড়ি করে কিভাবে যে চল্লিশের কোটা পার করে দিল সে ওই ভাল বলতে পারবে। 


একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। বেতন ভালোই। তবুও অবিবাহিত ই রয়ে গেল। বাড়ীতে তার বৃদ্ধ মা মাথায় হাত বুলিয়ে পরম স্নেহে যখন বলে , ,...

 ---হ্যা রে বিনয় আমি মারা গেলে তোর কি হবে বল তো?  

সুবিনয় এই বয়সেও মায়ের কোলে মাথা গুঁজে চুপ করে থাকে। মা বুঝতে পারে বড্ড গোসা হয়েছে ছেলের।


মায়ের খুব শখ ছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার। তাছাড়া বহু বছর হয়ে গেল কোত্থাও যাওয়া হয়নি। কবে যে শেষবার সুবিনয় ঘুরতে গিয়েছিল ঠাওর করতে পারে না। অনেক চিন্তা ভাবনার পরে অফিস থেকে সপ্তাহ খানিক ছুটি নিয়ে নিল। অফিসের বড় বাবু আগবাড়িয়ে সল্প পয়সায় একটা গেস্টহাউসের ব্যবস্থা করে দিলেন। পরিচিত প্রায় সবার কাছ থেকে বিশদে ইনফরমেশন নিয়ে সুবিনয় মাকে নিয়ে পৌঁছে গেল পুরীতে। মন্দিরে পুজো দিয়ে, সমুদ্রে স্নান সেরে কয়েকদিন বেশ তোফায় কাটাল। মাকে সঙ্গে নিয়ে মোবাইলে অনেক ছবি তুলেছে, বেশ কয়েকটি সেলফিও তুলেছে।


মাস ছয়েক পর হঠাৎ একদিন সুবিনিয়ের ফোন পেলাম, খুব ভয়ে ভয়ে কথা বলল। আগেও দেখেছি ও একটুতেই খুব ভয় পেয়ে যায়। তখন ও ঠিকমতো গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। শুধু বুঝলাম পুরীর তোলা মোবাইলে যে ফটো সুবিনয় তুলেছে তাতে কিছু সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তাতে এত ভয়ের কি আছে বুঝলাম না। সেই মুহূর্তে ওকে শান্ত করার জন্য আমি আগামী কাল ওর বাড়িতে যাচ্ছি বলে আস্বস্ত করলাম।

  

পরদিন বিকেলে ওর বাড়িতে হাজির হলাম। অসুস্থ মাসিমাকে সুবিনয় কে নিয়ে চিন্তিত মনে হল। কয়েকদিন সে অফিস কামাই করে মোবাইল নিয়ে বসে আছে। আমি ওর ঘরে গিয়ে দেখলাম খাটের উপর পা ছড়িয়ে বসে মোবাইলে পুরীর ফটো দেখছে। আমাকে কয়েকটা ফটো দেখাল। তাতে কোন অস্বাভাবিক কিছুই চোখে পড়লো না। এরপর সুবিনয় বেছে বেছে মা ও তার সাতটা সেলফি দেখালো। সেগুলি শুধুমাত্র ওই গেস্ট হাউসের ঘরে তোলা। তাতে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম। প্রথম তোলা সেলফির সাথে দ্বিতীয় তোলা সেলফিতে সুবিনয় ও মাসিমাকে একটু অন্য রকম লাগছে। মনে হচ্ছে বেশ কয়েকদিন পর পর তোলা হয়েছে সেলফি গুলো। শেষের সেলফিতে মাসিমাকে দেখাই যাচ্ছে না,একদম আবছা লাগছে । সে বলতে চাইছে কোন এক অজানা কারণে মোবাইলের ওই সাতটা সেলফি আগামী সাত মাসের দুজনকে অগ্রিম দেখিয়েছে। গত পরশু বাথরুমে স্লীপ করে পড়ে গিয়ে কপালটা খানিকটা কেটে গেছে। ছ নম্বর সেলফিতে পরিষ্কার একটা কাটা দাগ দেখা যাচ্ছে সুবিনয়ের কপালে । এ কি করে সম্ভব? সেদিনই আমি মোবাইলটা পরিচিত এক টেকনিশিয়ানের কাছে নিয়ে দেখলাম। সব দেখেশুনে সে একেবারে মৌখিক ফিট সার্টিফিকেট দিয়ে দিল। অদ্ভুত হাস্যকর অথচ মিলে যাওয়া পরিস্থিতির ওই সেলফি গুলির ব্যখ্যা খুঁজে আমি পেলাম না। শুধু মনে হল তা কোন কাকতালীয় ব্যাপার ছাড়া আর কিছু নয়। তবুও মনের কোণে একটা ছোট কাঁটা যেন বিধেই থাকলো। সপ্তম ছবিটা নিয়ে সুবিনয় খুবই উৎকণ্ঠায় আছে বলে মনে হল। যেখানে মাসিমাকে খুবই অস্পষ্ট দেখাচ্ছে। ও ঠিক কি বলতে চাইছে সেটা মুখে না বল্লেও স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। 


এর ঠিক মাস খানেক পরে ভোরের দিকে সুবিনয় দুঃসংবাদ টা শোনাল। ফটো অনুযায়ী ঠিক সপ্তম মাসের শেষ তারিখের কাক ভোরে মাসিমা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। সেদিনই ওর বাড়িতে গিয়ে ওই সেলফি গুলি আবারও দেখতে চাইলাম। সুবিনয় বলল, মাসীমা মারা যাওয়ার পর মোবাইলের ওই সাতটি সেলফি আর পাওয়া যাচ্ছে না। কে যেন বেছে বেছে ওগুলি মোবাইল থেকে মুছে ফেলেছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics