STORYMIRROR

Dola Bhattacharyya

Tragedy Classics

3  

Dola Bhattacharyya

Tragedy Classics

সারপ্রাইজ

সারপ্রাইজ

9 mins
183

অপ্রত্যাশিত ভাবে এসে পড়া ঘটনার অভিঘাতে সারপ্রাইজড আমি বহুবার হয়েছি ।সেগুলো কিন্তু খুশি হওয়ার পরিবর্তে আমাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। জীবনের মধ্যপথে এসে এই নিয়ে লিখতে হবে ভাবিনি। লেখার সুযোগটা পেয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম। অতীতের অন্ধকার সরণী । ব্যথাভরা স্মৃতি ।কষ্ট হচ্ছে খুব। তবু চলছি। ওই তো দেখতে পাচ্ছি নার্সিংহোমের বেড। শুয়ে আছি বাইশের আমি। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। আমার প্রথম সন্তান সম্ভাবনা প্রায় অঙ্কুরে বিনষ্ট হল। মায়ের সাথে বাপের বাড়িতে ফিরলাম। ডাক্তার বলেছেন, তিনমাস বিশ্রাম নিতে। তারপরও বেশ কিছুদিন ভারী কাজ করা যাবে না। মাসখানেক বাদে ননদের বিয়ে। ডাক্তার বলেছেন, অনুষ্ঠানে জয়েন করা যাবে। কিন্তু কোনোরকম কাজকর্মে অংশ নেওয়া যাবে না। 

বিয়ের আগে কর্তামশাই কে জানালাম, এবার বাড়ি ফিরতে চাই। তিনি বললেন, বেশ তো। বিয়ের আগের দিন নিয়ে যাব। আমার বাড়ি ফেরার কথায় ভীষণ আপত্তি করলেন শাশুড়ি মা। ছেলেকে বললেন, ও এসে কি করবে! কোনো কাজ করতে পারবে না। তার ওপর ও অসুস্থ। ওর খেয়াল বাপু আমি রাখতে পারব না। আমি বরং দুটো ভালোমন্দ খাবার পাঠিয়ে দেব ওর জন্য। এই কথা শুনে আমার মা বিয়েতে যেতে বারণ করেছিল। শুনিনি। চলে গিয়েছিলাম। কতই বা বয়স তখন আমার। ননদের বিয়ে। খুব আনন্দ করব। এটাই মুখ্য হয়ে উঠেছিল। 

বিয়ের দিন একটা বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সবাই মিলে দুপুরের অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম সে বাড়িতে। তার পর থেকে আর বিশ্রাম নেওয়া হয়নি আমার। টুকটাক কাজ তো করতেই হয়েছে। সময় হেঁটেছে দ্রুতপায়ে ।রাত প্রায় দশটা বাজে। আমার বাপের বাড়ির সকলে নিমন্ত্রিত অতিথি। তারা খেতে বসছে তখন। আমার এক দাদা আমাকে জোর করে খেতে বসিয়ে দিল। বলল, তুই এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এতক্ষণ না খেয়ে থাকিস না। বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেওর এসে অপমান করে তুলে দিল। এত লোক এখনো বাকি রয়েছে। খাওয়া হয়নি তাদের। এরমধ্যে নির্লজ্জের মতো বাড়ির লোক বসে কি করে! মাথা নীচু করে উঠে এলাম। আসলে উনি বাইরে থাকেন। বিয়ে উপলক্ষে এসেছেন। আমার পরিস্থিতি উনি জানতেন না। 

আমাদের লাস্ট ব্যচ বসল বারোটা। খাওয়ার পর আমাকে বলা হল বাসরে থাকতে। আমার তখন কোমর থেকে পা ব্যথায় অবশ হয়ে আসছে। খুব কষ্ট হচ্ছিল। কর্তামশাই আমাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন। শাশুড়ি খুব অসন্তুষ্ট। আমরা সবাই এখানে আছি , ও কেন চলে যাবে। তবে বাড়িতে কারোও থাকার দরকার রয়েছে। তুই চলে যা। ও থাক এখানে। কর্তামশাই জোর করেই ওখান থেকে বার করে আনলেন আমায়। কাল বর কনে কে বিদায় দিয়ে বাকিদের ফেরার কথা। 

রাতেই আমার জ্বর এসে গিয়েছিল। সকালে উঠে আর ওবাড়ি যেতে পারলাম না। কর্তামশাই বললেন, এই জ্বর গায়ে আর যেতে হবে না। আমি চলে যাচ্ছি। 

এমন ফাঁকা সকাল আর দেখিনি। এতবড় বাড়িতে ওপরে শ্বশুরমশাই আর নীচে আমি।কি করব ভাবছি। একটু চা, জলখাবার করে শ্বশুরমশাইকে দিলাম আর আমি খেলাম। তারপর! বেলা হচ্ছে। কখন আসবে সব, তারপর রান্না হবে। আমি তো আগে কখনো রান্না করিনি। এবেলাও প্রায় পনেরো জন লোক খাবে। কি হবে চিন্তা করছি। এমন সময়ে বড় ননদের ছেলে সাইকেল নিয়ে এল। প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র । বাড়িতে সবাই খুব ভালোবাসে ওকে। জিজ্ঞেস করলাম, কিরে! ওরা সব কখন আসবে। ওইটুকু ছেলে, হাসতে হাসতে বলল, আসবে, আসবে, এই এলো বলে। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। বললাম কিসের সারপ্রাইজ রে? ফ্রিজ খুলে মিস্টি বার করে মুখে পুরল সে । চিবোতে চিবোতে বলল, দিদা আসুক, তারপর পাবে। এখন আমি কিছু বলব না। চলে গেল। 

এগারোটা নাগাদ ঢুকল সব। শুনলাম সকাল আটটার মধ্যেই বরকণে রওনা দিয়েছে। তবুও এত দেরী হল কেন বুঝলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, মা, এত দেরি হলো যে! শাশুড়ি উত্তর দিলেন না। তার বদলে মামীশাশুড়ি বললেন, তা দেরি হচ্ছে দেখে রান্নাটা তো করে রাখতে পারতে তুমি। তোমার মা কি কোনো শিক্ষাই দেন নি। এখন এই পনেরো জনের রান্না দিদিকে করতে হবে তো। মাথা নীচু করে বললাম, আমি তো পারি না, মানে করিনি কখনো। ঝংকার দিয়ে তিনি বললেন, কি পারো বলো তো তুমি! নিজের প্রথম বাচ্চাটাও ধরে রাখতে পারলে না। অপয়া মেয়ে একটা। সারপ্রাইজ বটে। সারপ্রাইজের ঠেলায় চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে। রান্নাঘরে বসে ফুট কাটলেন মা, দ্যাখো তাহলে, কি নিয়ে ঘর করছি। গোলমাল দেখে কর্তামশাই ওপরে গিয়ে বসে রইলেন। গুরুজনের মুখের ওপর তিনি কথা বলেন না। মামী শাশুড়ি এবার প্রসঙ্গান্তরে গেলেন। হ্যাঁ গো! কিরকম মেয়ে তুমি! কোনো কাজকর্ম শেখোনি। একটা আনপড় মেয়েকে এ বাড়িতে চাপিয়ে দিয়েছে তোমার বাবা মা। তোমাকে এনে কি লাভ হয়েছে দিদির কে জানে। বাপ মা একদম খালি হাতে বিয়ে দিয়েছে। না দিয়েছে টাকা, না গয়না, না কোনো দান সামগ্রী। দিদিকে ভালোমানুষ পেয়ে ঠকিয়ে দিয়েছে একেবারে । সারপ্রাইজের ওপর সারপ্রাইজ। ও বাড়িতে বসে এইসব গুলতানি হয়েছে। তাই আসতে এত দেরি। কান্না চেপে বললাম, এরা তো কিছু নেবে না বলেছিল। 

মামীশাশুড়ি বললেন, তাতে কি হয়েছে! এরকম ছেলের সাথে বিয়ে হওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। তোমার বাবার উচিৎ ছিল, দিদির ঘর সাজিয়ে দেওয়া। কর্তামশাই বিয়েতে কোনো কিছুই নিতে চাননি।বিয়ের কার্ডেও লিখে দিয়েছিলেন, কেউ যেন উপহার না আনেন। তাও জোর করে ঘড়ি, আংটি, বোতাম, এগুলো দিয়েছিলেন বাবা। সেদিন বুঝলাম, কর্তামশাইএর এই সিদ্ধান্ত শাশুড়ি মা মেনে নিতে পারেন নি। সুযোগ বুঝে শোধ নিচ্ছেন। এরকম সারপ্রাইজ আমার জীবনে আরো অনেক বার এসেছে। 

  ননদের বিয়ে মিটে বেশ কিছুদিন পর, একদিন ভোরবেলায় ভাই এসে বলে গেল, মা একটু ইলিশ মাছ কিনেছে। তুই দুপুরে আজ আমাদের সাথে খাবি। কর্তামশাই বাজারে বেরোচ্ছিলেন তখন। শাশুড়ি বললেন, তাহলে আমাদেরও আজ ইলিশ মাছই আনিস।

দশটার মধ্যে ভাত খেয়ে বেরিয়ে গেলেন কর্তামশাই। উনি স্কুলে পড়ান । এখানকার কাজ সেরে সাড়ে দশটা নাগাদ বেরোচ্ছি। শাশুড়ি মা বললেন, তুমিও দুটি খেয়ে যাও। বললাম, জলখাবার খেয়েছি। এখন আর ভাত খেতে পারব না। উনি জোর করলেন, এত সুন্দর ইলিশ ভাপা করেছি। না খেয়ে যাবে না। ইচ্ছে ছিল না। তবু ভাতের থালা নিয়ে টেবিলে বসলাম। একগাল সবে মুখে দিয়েছি। বড় জা তখনই ভাসুরের জন্য ভাত নিয়ে এলেন। সিঁড়ি দিয়ে হুড়মুড় করে নেমে টেবিলে আমাকে দেখেই, বাইরের ঘরে গিয়ে জুতো পরতে শুরু করলেন। জা জিজ্ঞেস করল, কি হল! খাবে তো! না খেয়ে যেয়ো না। ভাসুর বললেন, ওই বেশ্যা মেয়েছেলে টার সাথে এক টেবিলে আমি খেতে পারব না।এটাও এক সারপ্রাইজ বৈকি! ভাসুর কলেজে পড়ান। ক্লাসের টাইম অনুযায়ী তিনি বেরোন। তিনি কোন সময়ে বেরোবেন, সেটা তাঁর মা ও স্ত্রী জানেন। তাহলে আমাকে জোর করে উনি খেতে বসালেন কেন? আর, এক বাড়িতে থাকলেও, ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে মুখ দেখাদেখি নেই। তাই ভাসুরের কাছে তার ভাইয়ের বৌ বেশ্যা হয়ে গেল! একজন শিক্ষক এতটাই প্রতিশোধ পরায়ন! মাছ ভাত সব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। শাশুড়ি বললেন, ফেলে দিলে সব! এত দামী মাছ! বললাম, তাও তো দিয়েছেন ল্যাজাটা। আর দাদা এই সময়ে বেরোবে জেনেও আমাকে খেতে বসালেন কেন? শাশুড়ি বললেন, আসলে, ল্যাজা টা কি করব! কেউ তো খাবে না ওটা। তাই তোমাকে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, তুমি তোমার শোবার ঘরে বসে খেয়ে নেবে। 

বাড়ি পৌঁছে কান্নাটা বার্ষ্ট করল। ভেঙে পড়লাম মায়ের কাছে। আতান্তরে পড়ল মা। বলল, চুপ চুপ, একদম কান্না নয় ।শ্বশুরবাড়িতে এমন কত ঘটনা ঘটে। তার জন্যে এমন কাঁদে! ছিঃ! লোকে জানলে ভাববে, আমি একটা খারাপ ঘরে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। কান্না থামছে না। তখন চোখ পাকিয়ে বলল মা, চুপ! একদম কাঁদতে যেন না দেখি। কাজের বৌটা এখুনি ঢুকবে ঘর মুছতে, ও ঢুকে যেন মুখের হাসিটা দেখতে পায়। অকল্পনীয় সারপ্রাইজ। এরকম সারপ্রাইজ পেতে পেতে একটা সময়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। তাও পারিনি। মনে মনে কেউ বলেছে, এসব এমন কিছু ঘটনাই নয়। এর থেকে অনেক বেশি কষ্টে থাকে অনেকে। 

   আমার বিয়ের পর ছবছর কেটে গেছে। আরো একবার মিসক্যারেজ হবার পর নিস্ফলা বসে আছি। চিকিৎসা চলছে। তবে তাবিজ, কবোচ, মাদুলীতে নয় ।আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নানাভাবে আরোপ করা চলছে আমার ওপর। ওই সংক্রান্ত কাটাছেঁড়াও চলেছে। ওষুধে ওষুধে জর্জরিত ।শরীরও খুব একটা ভালো নয়। দেওরের বিয়ে ।এটাই বাড়ির শেষ কাজ। দুপুরবেলায়, বাড়িভর্তি আত্মীয় স্বজনের সামনে শাশুড়ি মা বললেন, এই আমার ছোট ছেলের বিয়ে হয়ে গেল। তবে, এটাই শেষ কাজ ভেবো না তোমরা। এরপর আমার মেজ ছেলের আবার বিয়ে দেব আমি। এই বৌ তো একটা বাচ্চাও দিতে পারল না। তবে এবার আর এমন হাঘরে ঘরের মেয়ে আনব না। যারা ভালো রকম দান সামগ্রী, টাকা কড়ি, গয়না গাটি দিতে পারবে, সেরকম ঘরের মেয়ে আনবো। এই সারপ্রাইজের ধাক্কায় কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। 

   বিয়ের সাতবছর পর এক অপূর্ব সুন্দর কন্যা সন্তানের মা হতে পেরেছি। অতীতকে পিছে ফেলে বর্তমান এগিয়েছে ভবিষ্যতের দিকে। সারপ্রাইজের অভাব কখনোই হয়নি আমার। বারে বারেই সারপ্রাইজড হয়েছি ।আমার মেয়েটা তখন ইলেভেন এ পড়ে। মেয়ের বড়পিসি, আমার মায়ের সমবয়সী ।মানুষ টি খুবই ভালো। এনার কাছ থেকেও অনেক সারপ্রাইজ পেয়েছি। তার মধ্যে একটা হল, ওনার ছেলের বিয়েতে আমাকে নিমন্ত্রণ না করা। বিয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠানে ওনার বাড়িতে কথা উঠছে, তোমার মেজ ভাইয়ের বৌ কেন আসছে না। তিনি নিজের ভুল স্বীকার না করে বলছেন, সে অহংকারী মেয়ে। যদি না আসতে চায়, আমি কি করব। শেষে পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল, বিনা নিমন্ত্রণে সেখানে যেতে হল আমায়। 

    বড়ননদ প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়ি। নিজের মায়ের কাছে। সেরকম একদিন সন্ধ্যায় উনি এসেছেন। আর একজনও ছিল তখন শাশুড়ির ঘরে। সে পাড়ার একটি বৌ, বাপের বাড়ির আশ্রিতা। খুবই গরীব। ওনার স্বভাব টা ছিল অদ্ভুত। যেমন, আমি ওনাকে একটা জিনিস দিয়ে বললাম, এটা খুব ভালো, তাই না! উনি বলবেন, হ্যাঁ। খুব ভালো । পরমূহুর্তে কেউ যদি বলে, এটা কি খারাপ জিনিস। উনি সঙ্গে সঙ্গেই বলবেন, হ্যাঁ হ্যাঁ। তাইতো। খুব খারাপ। সেদিন আমি ঘুঘনী বানিয়েছিলাম। বড়ননদ ঘুঘনী ভালোবাসেন । তাই ঘুঘনীটা গরম করে দুটো বাটিতে দুজনের জন্যই নিয়ে গেলাম। ওদের খেতে দিয়ে শাশুড়ির পাশে বসলাম আমি। পাড়ার বৌটি ঘুঘনী মুখে দিয়ে বলল, খুবই ভালো হয়েছে খেতে। 

বড়ননদ তখনও মুখে দেয়নি। বৌটার কথায় এক চামচ তুলে মুখে দিল। তারপরেই চিৎকার, উঃ! কি গরম! দিলে তো জিভটা পুড়িয়ে। কি রকম মেয়ে গো তুমি! একবার বলবে তো ঘুঘনীটা গরম ছিল। আমি হতবাক। শাশুড়ি বললেন, দিদি কে বলে দিলে না কেন! ঘুঘনীটা এতটা গরম ছিল। পাড়ার বৌটি কিন্তু ততক্ষণে খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষ হলে সেও ওদের তালে তাল দিয়ে বলতে লাগল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, মেজ বৌ খুব অন্যায় করেছে। ঘুঘনীটা সত্যিই গরম ছিল। ওর তো বলা উচিৎ ছিল। চরম সারপ্রাইজ। কিছু না বলে মাথা নীচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। কারণ, ওখানে আমি কিছু বলতে গেলে, ঘটনাটা গড়াবে অনেকটা দূর। আর পাড়ার বৌটি ওদের আড্ডার রকে বসে খাসখবর পরিবেশন করবে। 

নিজের ঘরে বসে টিভি দেখছিলাম। একটু পরে তিনি আমার ঘরে এসে অবতীর্ণ হলেন। আমি ওখান থেকে চলে এসে নাকি ওনাকে অপমান করেছি। তখন তো কিছু বলতে হয়। বেশ কিছু বাকবিতন্ডার পর তিনি হঠাৎ আমার লেখা নিয়ে আক্রমণ করলেন, কয়েকটা জায়গায় তোমার লেখা বেরোয় বলে, তুমি কি নিজেকে আশাপূর্ণা দেবী ভাবছো নাকি। মোটেও নয়। তোমার ওই ছাইপাঁশ লেখা কেউ পড়ে না। তোমার ওই খাতা কলম আমি ছুঁড়ে ফেলে দেব। দীর্ঘদিন সহ্য করতে করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। ফুঁসে উঠেছিলাম আমি। বলেছিলাম, চলে যাও তুমি। আর কখনও তুমি আসবে না এখানে। তোমায় ঘেন্না করি আমি। তোমার ওই মুখটা আর কোনোদিন যেন দেখতে না হয় আমার । হয়তো আমার বলা উচিৎ হয়নি। জানিনা।তবে এই ঘটনার পরেও উনি এসেছেন এবাড়িতে। এড়িয়ে চলেছেন আমাকে। 

কর্তামশাই এর পত্রিকার প্রতিটা অণুষ্ঠানে ওনার উপস্থিতি বারে বারে বেইজ্জত করেছে আমাকে।এই অণুষ্ঠানে বাইরের অনেক বড় বড় লোক থাকেন। অণুষ্ঠানে আমি কবিতা বা গল্প পাঠ করলে, অথবা আমার লেখা কোনো নাটক অণুষ্ঠিত হলে, অণুষ্ঠান শেষে সবাই যখন আমাকে শুভেচ্ছা জানান, তখন উনি সবার সামনে চিৎকার করে বলেন, খুব সুন্দর লিখেছো, এরপর তুমি নোবেল পেয়ে যাবে। আমার ভাইয়ের বৌ এখন সেলিব্রিটি।অপমানে, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় আমার। বেশ কয়েকবার ওরকম করার পর, ওনাকে আর ডাকা হয় না। তবু বিনা আমন্ত্রণে চলে আসেন উনি। কর্তামশাইএর কাছে অভিযোগ করলে বলেন, এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ওনার মনোভাব সকলেই বুঝতে পারছেন। 

আসলে ওনার আক্রোশের কারণ আমার লেখা। উনি অসাধারণ বিদুষী মহিলা। ওনার বক্তব্য, আমি এতটা লেখা পড়া শিখেও কিছু করতে পারি নি। আর মেজ বৌ তো আমার মতো এতো পড়াশোনা করেনি। ওর সাহস হয় কি করে এসব করার! সত্যিই তো। নিজের ইচ্ছেটাকে গলা টিপে না মেরে হাতে কলম তুলে নিয়েছি। বড় অপরাধ হয়ে গেছে আমার। তাই আমার জীবনে কোনো সারপ্রাইজই খুশি বয়ে আনতে পারেনি। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy