Rima Goswami

Tragedy Inspirational Others

3  

Rima Goswami

Tragedy Inspirational Others

সানন্দার সংসার

সানন্দার সংসার

3 mins
279


পুরুষকে কেউ কোনদিন বিয়ে করেনি , বিয়ে করেছে তার সফলতা আর যোগ্যতাকে । অপরদিকে নারীকেও কেউ কোনদিন বিয়ে করেনি , বিয়ে করেছে তার শারীরিক সৌন্দর্যকে । সেই সৌন্দর্য বিচার হয় গায়ের রং দিয়ে , উচ্চতা দিয়ে , দেহের গড়ন দিয়ে । সমাজ কতই নির্লজ্জ তাই না ! ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে একটানা কথা গুলো বলে গেল সানন্দা । ক্রিমিনাল ল ইয়ার হলেও মন্দার বাজারে এইসব ডিভোর্সের কেসও নিতে হয় তাকে । না হলে হাই প্রোফাইল লাইফ স্টাইল মেন্টেন করা সম্ভব নয় । গাড়ির , ফ্ল্যাটের ই এম আই ডাউন পেমেন্ট করতে করতে সানন্দা ঝরঝরে হয়ে যাচ্ছে নিয়ত তবুও রোজগারের সঙ্গে খরচের সমানুপাত কিছুতেই হয় না । কেসটা এসেছে তার একান্ত প্রিয় এক বন্ধুর তরফ থেকে । সানন্দার বন্ধু বাচিক শিল্পী সারণ্য এবার তার গার্লফ্রেন্ড মোনাকে বউ বানাতে চায় । সমস্যা এক জায়গায় সেটা হলো যে মোনা এখনও বিবাহিত । আর তার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিতে রাজি হননি । এবার সানন্দার কাজ হলো কোর্টে নানান এলিগেশন দিয়ে মোনার স্বামীকে বাধ্য করতে হবে ডিভোর্স দিতে । সারণ্য এমন ভাবে জোর করছে যে সানন্দা বাধ্য কেসটা নিতে । কিন্তু ওর মুখ থেকে তিতকুটে সত্যি কথা গুলো বেরিয়েই গেল অপ্রত্যাশিত ভাবে । সারণ্য আর মোনা এই বিবাহের নগ্ন নির্লজ্জ সত্যি গুলো শুনে বেশ কুন্ঠিত । কোথাও না কোথাও তারাও জানে একে অপরের কাছে আসার কারণ , একটা সম্পর্ক ভেঙে আর একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা সবই এই পুরুষের সফলতা এবং যোগ্যতা আর নারীর শারীরিক সৌন্দর্যের কারণে । মোনার স্বামী বেসরকারী চাকুরে আর তার রোজকার বা ফেম নেই সারণ্যর মত ।


সারণ্য ও বিভোর মোনার সৌন্দর্যতে । বিয়েটাকে আজকাল একটা ডিল ছাড়া কিছুই মনে হয়না সানন্দার । সে জানে আজ এই সারণ্য যে কারণে ছুটছে মোনার দিকে বা মোনা ছুটছে সারণ্যর দিকে সেটা পাওয়া হয়ে গেলেই আকর্ষণ কমে যাবে । কমতে বাধ্য আকর্ষণ । এরপর এরাই হয়ত আবার আসবে সানন্দার কাছে মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স এপ্লাই করতে । এদের সোপারেশনের অন্যতম কারণ হতে পারে দুটো । এক নম্বর একে অপরের প্রতি আগ্রহ হারানো । দুই আরো বেটার সফল পুরুষ ও আরো সুন্দর নারীর খোঁজ পেয়ে যাওয়া । পরকীয়া ও আজকাল বৈধ তাই সানন্দাকে একটা পোক্ত এলিবাই খাড়া করতে হবে মোনার স্বামীর বিরুদ্ধে ।


যাতে মোনা ওই লোহার খাঁচা ছেড়ে সারণ্যর সোনার খাঁচায় এসে বসতে পারে । সানন্দা ভাবে আজ কি সত্যি কোন মূল্য আছে বৈদিক বিবাহের ? বহুযুগ আগে যখন নারী ছিলো সমস্ত পুরুষের ভোগ্যপণ্য । উদ্দ্যালক মুনির পুত্র শ্বেতকেতু দেখলেন তার মাকে অন্য এক পুরুষ জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । এটা দেখে শ্বেতকেতুর খুব খারাপ লাগে , পিতার কাছে এই নিয়ে অভিযোগ করলে তিনি জানান নারী সকল পুরুষের ভোগ্যা । তাই একা উদ্দ্যালক শ্বেতকেতুর মাকে নিয়ে বাস করতে অক্ষম । এরপর পরবর্তীতে নারীর মর্যাদা রক্ষায় ঋষি শ্বেতকেতু বৈদিক মতে বিবাহের প্রচলন করেন ।মোনা আর সারণ্য সমস্যার সমাধান হবে জেনে নিশ্চিন্তে চলে যায় । এদিকে সানন্দা লেগে পরে বিবাহ ভঙ্গ অভিযানে । ওর কাজ ওকে তো করতেই হবে , কারণ ওর জন্য পৃথিবীটা অন্যরকম ।


ওর জীবনে প্রেম আসার সুযোগ আসেনি কোনদিনই । অল্প বয়সে অভাব নিয়ে পড়াশোনা তারপর অসুস্থ বাবা মা নিয়ে সংসার । ওরাও যখন চলে গেল , অভাব শেষ হয়ে রোজগারের পথ সুগম হলো তখন একদিন সানন্দার জীবনে এলো লুনি । লুনিকে কুড়িয়ে পেয়েছিলো সানন্দা ওর বাড়ির সামনে ডাস্টবিনে । কারো মুহূর্তের ভালোবাসার ফল হয়ে রক্তমাখা ছোট্ট পরিটা ডাস্টবিনে ঠাঁই পেয়েছিলো । সানন্দা আর দ্বিতীয় বার ভাবেনি , লুনিকে লিগ্যালি দত্তক নিয়েছিলো । তারপর থেকে এক অবিবাহিত মা আর কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ের  বেশ চলছে জীবন । জীবন যেমন রেখেছে সানন্দাকে ও তো তেমনই আছে । বিয়ে করার সুযোগ হয়নি আর চেষ্টাও করেনি ও । কুমারী হলেও মা হওয়া যায় , মাতৃত্বের জন্য বৈবাহিক চুক্তির প্রয়োজন হয়না । সংঘর্ষ থাকবে জীবনে , এগিয়ে যাওয়াটাই নিয়ম । থাক মাথায় এ এম আই এর বোঝা মেয়েটাকে নিয়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকাটাই এখন সানন্দার প্রায়োরিটি ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy