রক্তলোলুপ
রক্তলোলুপ
'' ছাড়ো, ছেড়ে দাও আমায়, আমি সব্বাইকে বলে দেব, তোমরাই আমার ড্যাডিকে মেরে ফেলেছো... ছেড়ে দাও, জেড... জেড...কাম অন, সেভ মি!"
আততায়ীরা সমস্বরে হেসে উঠলো," একটা গ্রীন আয়েড ক্যাট, সি উইল সেভ ইউ? হাউ সিলি! হা হা হা হা! প্যাট কিল দ্যাট ব্লাডি ক্যাট!"
অন্য এক কালো টুপি পরা, জেডের গলা টিপে ধরতে গেল। জেড নিজেকে বাঁচাতে লোকটার গালে আঁচড় বসায়, প্রচন্ড চিৎকার করে লোকটা জেডের কন্ঠনালী বরাবর ছুরি চালিয়ে দেয়।
চোখের সামনে ছটফট করতে করতে জেড; আমার প্রিয় জেড ঘুমিয়ে পড়লো।
উদভ্রান্তের মত ছুটে গেলাম জেডের কাছে।
ওহ গড! মাই অনলি ফ্রেন্ড জেড ইজ ডেড!
কালো স্যুট পরা লোকগুলোর হাত আমার দিকে।
কী করব আমি? কাকে ডাকবো?
মার্গারেট! হ্যাঁ, মার্গারেট নিশ্চয়ই জানে না যে এরাই ড্যাডিকে মেরেছে, জানলে মার্গারেট নিশ্চয়ই পুলিশকে কল করতো!
মম মারা যাওয়ার পর ড্যাডি মার্গারেটকে বিয়ে করে এনেছিল।
ওই তো মার্গারেট আসছে, "দিজ মার্ডারার্স কিল্ড ড্যাডি, মার্গারেট কল দ্য পুলিশ!"
মার্গারেট সবসময় টকটকে লাল লিপস্টিক মাখে, হাসলে সাদা দাঁতগুলো ঝিলিক দিয়ে ওঠে।
খুউউব ভয় করে। কিন্তু এখন মার্গারেটকেই আমার সেভিওর মনে হচ্ছে।
মার্গারেট করুণ চোখে আমার কাছে এসে দাড়ালো। আমার গালে আলতো করে নিজের ম্যানিকিউর করা তর্জনী টানলো, তারপর দাঁতে দাঁত চেপে আমার চিবুক টিপে ধরে লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বললো," ও ওর ড্যাডিকে খুব ভালোবাসে। ড্যাডিকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হয় ওর। হোয়াই ইউ ডোন্ট সেন্ড হার টু হার ড্যাডি?"
আবার হো হো হাসির রোল।
মার্গারেটের খোলা চুল একপাশে সরানো, অন্যপাশে উন্মুক্ত গ্রীবা নেকলেসের দ্যুতিতে ঝকমক করছে।
প্রচন্ড শক্তিতে ঐস্থানে কামড় দিলাম। নেকলেস খসে পড়লো, আমার গজদাঁত ওর চামড়া ফুঁড়ে গভীরে ঢুকলো।
এক নোনতা উষ্ণ তরলে ভরে উঠল আমার মুখগহ্বর। মনে হলো, যেন মাথার জটগুলো খুলে যাচ্ছে।
যেন জন্ম থেকেই এই তরলের অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন।
মার্গারেটের ত্রাহি চিৎকার," সেভ মি...! স্মাশ দ্যাট সাইকিক গার্ল!"
বাগানে চিনার গাছটার নীচে আমাদের পুঁতে দেওয়া হলো। তখনও কিন্তু পাতা ঝরার মরসুম আসেনি।
-----------------------------------------------------------------
একটু একটু করে রাত বাড়ছে। নিচের পৃথিবী থেকে এখনও কিছুটা আলোর স্পর্শ পাচ্ছি।
আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে, আরও একটু।ততক্ষণ শান্তমণ্ডলের সান্নিধ্য উপভোগ করি। এইখান থেকে চাঁদটা খুব কাছ থেকে দেখা যায়, ঐযে, আস্তে আস্তে কেমন পূর্ণাঙ্গ রূপ নিচ্ছে! পাহাড়ের মাথা আমার পদতলে। বেশ লাগে। তারাগুলো, ঝিকমিক করে চারিদিক যেন হীরের কুচি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আহা! কী অপূর্ব চিরন্তনী পারলৌকিক দৃশ্য!
রাতের মাতানো গন্ধের সাথে এক অতি-লোভনীয় তরলের প্রত্যাশায় মুখের ভিতর লালাবর্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছে আমার। আর কতক্ষণ?
একটা উল্কা বুঝিবা খসে পড়লো।
নাহ! আর জাগতিক কিছু চাওয়ার কিছু নেই।
যা পেয়েছি, তা এই জগতে কারোর কাছে নেই, এ আমি হলফ করে বলতে পারি।
ঐতো চিনার, তার ন্যাড়া কালো ডাল এগিয়ে দিচ্ছে। ওর ডালে সেই যে দোলনাটা বাঁধা ছিল, যেটায় চড়ে রোজ বিকেলে আমি দুলতাম, সেটা ঠিক সেরকমই আছে আগের মত। গিয়ে বসি। জেডও এসে গিয়েছে পাশে। ও একটু বেশিক্ষণ ঘুমায়, আমার থেকে প্রায় মিনিট পনের আগে ওকে মারা হয়েছিল তো!
তীক্ষ্ণ শ্যেনদৃষ্টে তাকিয়ে আছি, কখন সব আলো নিভে যাবে!
ঠোঁটের দুই পাশ থেকে শ্বদন্ত বেরিয়ে আসছে ধীরে ধীরে।
চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে যে নোনতা উষ্ণপানীয়ের স্বাদ পেয়েছিলাম, সেই স্বাদ রোজ রাতে আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় পৃথিবীতে। প্রতিরাতে মানুষের গ্রীবার নীলাভ মোটা ধমনীতে কামড় বসিয়ে তৃপ্ত করি নিজেকে। আর জেড?
হুম্ হুম্ হুম্...!
পৃথিবীতে কি কেবল মানুষেরই বাস? উম্?