# রিটার্ন সারপ্রাইজ গিফট
# রিটার্ন সারপ্রাইজ গিফট


প্রথম প্রথম আমার কলেজ যেতে খুব বিরক্ত লাগতো ভালো লাগতো না, কারন আমার স্কুলের বান্ধবীরা যে কলেজের ভর্তি হয়েছিল আমি ও সেই কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওই কলেজে আমার প্রিয় বিষয়ে অনার্স না পাওয়ায় আমাকে এই কলেজে আমার অপছন্দের বিষয় নিয়ে ভর্তি হতে হয়েছিল । তবে কিছু দিন কলেজ যেতে যেতে কলেজ আর পড়ার বিষয় আমার ভালো লেগে যায়। কলেজে আমি,তৃষা, মৌমি আর অনিতা আমরা ঠেলায় পরে কথা বলতাম একই বিষয় হওয়ার জন্য একে অপরের সাথে কথা বলতাম কিন্তু কয়েক মাসের আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই। যদিও আমাদের চার জনের বাড়ি একদিকে দিকে ছিল না । আমাদের মধ্যে তৃষা ছিল একটু অন্য রকমের সব সময় হাসি খুশি থাকতো ,নিজেও হাসতো এবং আমাদের ও হাসাতো ।ওর জন্য আমরা স্যারের কাছে কয়েক বার বকুনিও খেয়েছি ।সাধারণ কথা মধ্যে ও মজার কথা টেনে এনে এমন ভাব ভঙ্গিতে বলতো যে আমরা না হেসে থাকে পারতাম না, কয়েক বার স্যার ও ওর কথায় নিজের হাসি চেপে রাখতে পারেনি । শুধু কি তাই এপ্রিল ফুল বানানো কিংবা সারপ্রাইজ দেওয়া ,এই কাজ গুলো তৃষা খুব ওস্তাদ।তবে কারো কোনদিন কিছু ক্ষতি অথবা মনে আঘাত দিয়ে কথা বলতো না। তৃষা সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে ভালো বাসতো , আমাদের কেও কয়েকবার সারপ্রাইজ দিয়েছে কিন্তু আমরা কোন দিন ওকে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম না, কোনো না কোনো ভাবে আগেই যেনে যেত আমাদের প্লান , তবে আমরা যে চেষ্টা করিনি এমন না, দু একবার চেষ্টা ও করেছিলাম ।
পরীক্ষার ছুটি, বাড়িতে একা একা খুব বিরক্ত লাগছিল। কতো দিন কলেজ যাওয়া হয়নি সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া হয় নি ,এটা ওটা খাওয়া হয়নি , তাই ভাবলাম কি করা যায় , কোথায় যাওয়া যায় , তখন মৌমি বলল, সামনে তৃষার জন্ম দিন আছে ওকে সামনে থেকে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা ও জানানো হবে একটু ঘোরাও হবে। তাহলে চল ওকে না জানিয়ে ওদের বাড়ি যাই সাথে ওকে সারপ্রাইজ টা দেব আমরা তিন জনে। মৌমির কথায় আমরা রাজি হয়ে গেলাম ঠিক করলাম ১৫ তারিখে আমরা তৃষাদের বাড়ি যাবো কিন্তু তৃষাকে আগে থেকে কিছুই জানাবো না।
তৃষা কাছে শুনেছিলাম, প্রতি বছরই ওর জন্ম দিনটা বাড়িতে পালন করে ওর মা বাবা ভাইয়ের সাথে। তাই তৃষা বাড়িতে থাকবে কিনা কোনো ভাবেই জিজ্ঞেস করলাম না। পরিকল্পনা মতো আমরা ওর বাড়ি যাওয়ার জন্য সবাই সকাল সকাল থেকে বেড়িয়ে পরলাম। আমি কেক মৌমি গিফট এবং অনিতা ক্যান্ডেল ও বাকি জিনিস নিয়ে আসবে আর আমরা সময় মতো ট্রেশনে পৌছবো এবং যে আগে পৌঁছবে সে টিকিট কেটে রাখবে।
ট্রেন থেকে নেমে আমরা একা মোটর ভ্যান উঠি ,আমরা দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে পারতাম কিন্তু যাতে কেক নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য গাড়িতে ওঠা ,আমরা প্রথম বার তৃষা কে সারপ্রাইজ দেব তাই আমাদের মনে এতো আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না, আর আমাদের দেখে তৃষা ও খুব খুশি হয়ে , মনে মনে খুব উত্তেজিত ,কতোদিন পরে আমরা একসাথে বসে আড্ডা দেব , আমরা একদিন ওদের বাড়িতে থাকবো বাড়িতে বলে এসেছি। ভ্যান থেকে নেমে ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি আমাদের কেক গিফট সব ঠিকঠাক আছে কিন্তু যার জন্য এসব এনেছিলাম তাদের বাড়ির গেটে তালা ঝুলছে।আমরা হাসবো না কাঁদবো ঠিক করতে পারছি না , তিন জনে ভ্যাবাচেকা হয়ে তাড়িয়ে রইলাম । আমাদেরকে দেখে ওর পাসের বাড়ির একটা কাকিমা আমাদের কে সরবত করেদিল এবং সাথে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলল, তৃষারা সকালে মামা বাড়ি গিয়েছে আজকে ফিরবে না বলেগিয়েছে ।সে আরো বলল, তৃষার জন্মদিন প্রতি বছর বাড়িতে করে কিন্তু এই বছর একটু অন্য ভাবে কাটাতে চায় তাই মামা বাড়িতে দাদু দিদার কাছে গিয়েছে। শুনে আমাদের আনন্দ বেলুনের মতো চুপসে গেল, আমাদের এতো পরিকল্পনা এতো কিছু সব বৃথা হয়ে গেল। আমরা যাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম তার কারনে আমরাই নিজেরাই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম , এখন এই এতো রৌদ্রে বাড়ি ফিরে যেতে হবে , এই সময় ট্রেশন পর্যন্ত গাড়ি পাওয়া যাবে না হেঁটেই যেতে ।আমরা সেই সকালে বাড়ি থেকে খেয়ে বেড়িয়ে ছিলাম রাস্তায় তেমন কিছু খাওয়া ও হয়নি ভেবেছিলাম তৃষাদের বাড়িতে গিয়ে খাবো , তৃষার মা খুব ভালো রান্না করে ওমায়ের রান্না আমরা আগেও খেয়েছি। কিন্তু এ কি হলো এখন আমরা সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেরাই এপ্রিল মাসের মাঝে এসে নিজেদের অজান্তে এপ্রিল ফুল বেনে গেলাম। এতো সুন্দর লজ্জার কথা টা আর তৃষাকে জানালাম না কিন্তু খিদের জন্য আমরা আর হাঁটতে পারছিলাম না তাই বন্ধুর জন্মদিনের কেক আমরা নিজেরাই একটা গাছ তলায় বসে বার্থডে গার্ল কে বাদ দিয়ে নিজেরাই মনে মনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে কেক টা খেয়ে নিলাম আর বাড়িতে এসে বসলাম ট্রেন মিস করেছি তাই যাইনি।
তার পর থেকে আর আমরা কেউ তৃষাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা মুখেও আনিনি ,নিজেরাই এমন সারপ্রাইজ হয়েছি যে ভাবলেই না হেসে থাকতে পারিনি । অন্যকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে তাকে সারপ্রাইজ না দিয়ে নিজেরাই রিটার্ন সারপ্রাইজ গিফট নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।