STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Inspirational

রেন লিলি

রেন লিলি

5 mins
296

উনার বাবা পেশায় মৌয়াল। মৌয়াল মানে সুন্দরবন গাছ থেকে যারা মধু সংগ্রহ করে। কি সুন্দর গান কথা গুলো আজোও কানের মধ্যে ভাসে । সাধারণ ভাষা কিন্তু সুন্দরবনের জীবন জীবিকার কথা তুলে ধরছেন মানুষটি তাঁর গানে

" আমরা গাছ কাটি আর মধু ভাঙি

এমন কাজের কাজি।

বাঘের সাথে লড়াই করে

জীবন রাখি বাঁচি।"

শিল্পী হিসেবে গানের কথা আর সুর মন ভরিয়ে দিচ্ছিল । বাজনার জন্য যেটা ব্যবহার করছিলো সেটা ও কেনা নয়, তাঁর নিজের হাতে বানানো। লাউ দিয়ে একতারা আমার দেখেছি । এটা কিন্তু দোতারা।আমরা ভিডিওগ্রফি উনাবাবার গান তুলে ধরতে চেয়েছি কিন্তু উনি জঙ্গলের গল্প বলেই ফুটেজ নষ্ট করলো। কঁকড়া ধরতে গিয়ে কিভাবে বাঘে মুখ থেকে বেঁচে এসেছেন। মৌমাছি কামড় থেকে বন্যদসুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর জীবন যন্ত্রণার গল্প।বনবিবি থেকে কুমীরের জলে ভাসা। সব নিয়ে কত কথা বললেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যাইহোক ছড়ানো ছিটানো কথা গুলোই কেটে ছেঁটে উপস্থাপনা করলাম আমরা । সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে প্রচুর পরিমাণে সুনাম অর্জন করলাম আমরা পেলাম বাহবা। যদিও সুন্দর বনের মানুষটি কিছুই পেলো না।

যাইহোক আমাদের এক বন্ধু কেয়া জানালো উনার কথা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী। একটা কলেজের আংশিক সময় এর অধ্যাপিকা। মৌয়াল এর মেয়ে থেকে অধ্যাপিকা যাত্রা পথটা ভীষণ কঠীন ছিলো । প্রথম দেখার পূর্ব বেশ শ্রদ্ধা করেছিলাম ,সমিহ করছিলাম আমরা।দেখা হবার পর সব কিছুই উড়ে গেলো।

কেয়ার নাম কেয়া দত্ত কিন্তু কারো সাথে আলাপ করার সময় বলে গীত দত্তা । অথচ উনি কোনো কিছু না ভেবেই বললো " নমষ্কার আমার নাম নারায়নী গায়েন"

মহিলা মহল অনেকই হাসি চেপে রাখাতে পারলো না।

উনি কিন্তু বিচলিত হলো না। বললন " আমরা সুন্দরবনের মানুষ। নারায়নী আমাদের লৌকিক দেবীর নাম। নামকরণ ইতিহাসটা দেখুন আগে মানুষজন দেবতার নামেই রাখতো ছেলেমেয়েদের নাম। এখন আধুনিক শহর মানুষদের কথা আলাদা। তবে আমার আরো একটি নাম আছে সেটা হলো পুঁটি । সেটাও ডাকতে পারেন। আসলে আমি যে দিন জন্মেছিলাম সেইদিন বাবার জালে বেশি পুঁটি মাছ ধরার পরেছিলো।"বলে নিজেই হসে দিলো।

সেই হাসিটা বাড়িয়ে তুলতে আমি বললাম " ভাগ্যিস আপনার আরো একটা নাম ছিলো। নয়তো নামটা কেটে ছেঁটে নেরা বলে ডাকতে হতো। যেটা একদম বেমানান।"

যাইহোক বন্ধুত্ব গাঢ় হতে বেশি সময় লাগলো না। লকডাউন আজকাল আমাদের সোস্যাল মিডিয়া নির্ভর করে ফেলেছে। তাই বিনোদন বলো আলোচনা সভা এখন live program এর চলটা বেশ হয়েছে। "গিতের সাথে আড্ডা" আজকাল একটা জনপ্রিয় live অনুষ্ঠান। কেয়া রেডিও জকি, তার উপর সুন্দরী, তাছাড়া বেশ হোমওয়ার্ক করে আসে ও live program এ।

আজ রসিকতা বোধহয় বেশিই করে ফেললাম। নারায়নী শুধু মাত্র ভালো বক্তা নন উনি ভালো গায়িকা। সবচেয়ে বড়ো কথা প্রশিক্ষণ নেওয়া নন। তাই ক্লাসিক থেকে আধুনিক সব গান গেয়ে দেন রিকোয়েস্ট করলেই। কাল উনি দেশের বাড়ি গেছেন। তাই নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই উনি অংশগ্রহণ করতে পারলেন না। আমি মজা করে ই বলে ফেললাম " বাঁশগাছে মাচা বাঁধেতেন গানটা করতে পারতেন। তাহলে নেটওয়ার্ক সমস্যা হতো না।গাছে তো আপনার বাঁদরের থেকে ও ভালো উঠেন পেশাদার তে আপনারা।"

প্যাবলিক অনুষ্ঠান এ এ রকম রসিকতা বোধহয় করা উচিত হয়নি।উনি ভীষণ ভাবে রেগে গেলেন। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন কৌমতত্ব অর্থাৎ কোন একটি বংশের বা বিশেষ অঞ্চলের বসবাস করা মানুষরাই একটা কাজ ভালো করে এ ধারণাটা ভুল। তাছাড়া বহুযুগ আগে শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর সড়ম্বর সভায় , ব্রাম্ভণরূপী অর্জুনকে অংশগ্রহণ করানোর সময় ক্ষত্রিয়রা বাধা দেয়। এই সময় কৃষ্ণ পরুশরাম কথা বলেন ব্রাম্ভণ হয়েও তিনি অনেক ক্ষত্রিয়দের চেয়ে বীর ছিলেন। বংশগত বর্নাশ্রম ভেঙে দেওয়া র কথা বলেন। কিন্তু আজ বোধহয় সেটা ভাঙে নি। 

আমি কখনো নিজের পুরো নাম বলি না। আসলে পদবীটা বলতে লজ্জা লাগে। ফাঁকিবাজি যুক্তি দিয়ে বলি -" ধর্মীয় পরিচয়, বংশ পরিচয় বাদ দিয়ে কাজের মধ্যে দিয়ে পরিচিত হতে চাই আমি।"

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ভর্তি আমি হয়েছিলাম জেনারেল ক্যাটাগরিতে। Sc কোটায় ভর্তি হতে গেলে তো দেড়ি হয়ে যেতো। কারণ sc ছেলে মেয়েদের সবচেয়ে পরে ডাকা হয়। ক্লাসে আমি কোন কিছু বুঝতে না পারলে , জিজ্ঞেস করলে কথা শুনতাম অন্যদের কাছে। লোকজন বলতো " মন্ডল তোরা সেপাই লেঠেলদের জাত। ইঞ্জিনিয়ারিং এ তোদের জায়গা নয়। সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নে।"

ফলে উনি কিরকম অপমানিত হয়েছে বুঝতে পারলাম। আমার বহু ছাত্র online ক্লাস করতে চায় না এই নেটওয়ার্ক প্রবলেম এর জন্য। তাই উনা ঘটনাটিও অনাকাঙ্ক্ষিত। উনার কোন দোষ নেই। তাছাড়া প্রন্তিক গ্রাম গুলোতে যেখান অ্যমবুলেন্স পরিসেবা পাওয়া যায় না। সেখানে মোবাইল পরিসেবা পাওয়া যাবে এটা ভাবা উচিত নয়।

নিছক রসিকতা উনার অভিমান কারণ হয়ে দাঁড়ালো। অভিমান শব্দ ব্যবহার করলাম কারণ উনাকে অপমান করা ইচ্ছে আমার ছিলো না। বন্ধু মনে করি তাই রসিকতা করেছিলাম, বিশ্বাস ছিলো অভিমান ভঙ্গ করে ফলবো। কিন্তু উনার লম্বা চওড়া বার্তা বলেদিলো ক্ষতটা অনেক গভীর এবং দীর্ঘ ও বটে ‌।

উনি লিখলেন" ক্যানি লোকালের যাবুনি খাবুনি যে মানুষ গুলোকে আপনারা দেখে নাক সেঁটকান। তাদের ছাড়া আপনার শহরটা কিন্তু অচল। Google search করে এর ওর লেখা copy করে খিচুড়ি বানিয়ে নিজেদের গবেষক বলে পরিচয় দেন আপনারা। জানেন কি এই সুন্দর বনের একটি নিজস্ব সভ্যতা আছে যেটা অনেক পুরনো। আপনার কলকাতা সভ্য মানুষের জন্য মেট্রোর রেল করতে গিয়ে নর্দমার মতো হয়ে গেছে যে টালির নালা ।একটা সময় ছিল আদি গঙ্গা রিতিমত বানিজ্য জাহাজ চলতো এখান দিয়ে। এই আদি গঙ্গা পার দিয়ে চলে গেলে এখনো অনেক মন্দিরের ধংস চিহ্ন বলে দেবে ,জবচার্নক নিছক

দূর্ঘটনায় বসত এ শহর পত্তন করে নি। এখানে জনপদ ছিলো আগে থেকে, মঙ্গলকাব্য ও তার উল্লেখ আছে। সপ্তগ্রাম কিংবা তমলুকে বিশেষ সুবিধা হবে না বলেই নতুন বন্দর গড়ে তুলতে ই এখানে ইংরেজরা আসেন। নিজেদের কাজের সুবিধার জন্য কলেজ গড়ে বাংলা ভাষাটা শিখেছেন এবং শেখাতে চেয়েছেন। তাই কোলকাতা র ভাষাটাই আজ সভ্য মানুষের ভাষা হয়ে দাঁড়ালো। এলো লেখার ভাষা মুখের ভাষার মধ্যে পার্থক্য। কোলকাতার ভাষা ছাড়া সব ভাষা গুলো হলো ছোট লোকের ভাষা। কিন্তু ভেবে দেখুন আজ ছত্রভোগেই যদি বন্দরটি হতো তাহলে হয়তো যাবুনি খাবুনিটাই ভদ্রলোকের ভাষা হয়ে যেতো।"

বুঝতে পারলাম দুঃখ পেয়েছেন অনেকখানি। রাতে ভালো করে ঘুম হলো না। সকালে উঠে আমার ছাদ বাগানে ঘোরাঘুরি করলাম। মনে পড়লো। চিলেকোঠার উপর ছাদেও কিছু গাছ আছে সেগুলোর যত্ন নেওয়া হয় না। উঠে দেখলাম অযত্নেও বেশ ভালোই হয়ছে ঘাসফুল। অ্যালেবেরা গাছের ফাঁকে থেকে কয়েকটি রেন লিলি ফুটে হাসছে। পুঁটি দেবির হাসিটার মতোই সুন্দর এগুলো।


రచనకు రేటింగ్ ఇవ్వండి
లాగిన్

Similar bengali story from Abstract