প্যাগোডার ঐ নীল আলো
প্যাগোডার ঐ নীল আলো


অনেক রাত অবধি পড়াশোনা করা অরণ্যর ছোটবেলার অভ্যাস। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে গল্পের বইগুলোই ওর একমাত্র সঙ্গী। উত্তরের খোলা জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে আবছা নীল পাহাড় আর চা বাগান। কৃষ্ণপক্ষের আধ-ফালি চাঁদের কোনও তেজ নেই। মরা জ্যোৎস্নার নীলচে আলো গায়ে মেখে বাইরের ঢেউ খেলানো ঝোপঝাড় আর জঙ্গল যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মোহাবিষ্টের মত সেদিকে তাকিয়ে থাকে অরণ্য।
রাত অনেক হয়েছে। হঠাৎ ও দেখতে পায় সেই আলোটা। গত সপ্তাহেও ও দেখেছিল।বহু দূরে নদীর চরে একটা আলো ঘুরে বেড়ায় মাঝে মাঝেই। কখনো ঝোপ জঙ্গলে হারিয়ে যায়, কখনো দেখা দেয়। ঘড়ির কাঁটায় রাত দেড়টা। জানালার কাছে গিয়ে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করে অরণ্য। ইচ্ছা করে নেমে গিয়ে দেখে আসতে। প্রায় আধঘণ্টা আলোর নৃত্য চলল। তারপর ওধারে একটা বিশাল ভাঙ্গা বৌদ্ধ মন্দিরের মত রয়েছে, তার পিছনে অদৃশ্য হয়ে গেল।
অরণ্য একমাস হল এই ছোট্ট টাউন ডামডিমে একটা ব্যাঙ্কে ম্যানেজার হিসাবে জয়েন্ করেছে। কলকাতা ছেড়ে প্রমোশন নিয়ে এই পাহাড়, নদী আর চা বাগানের রাজ্যে আসতে খুব আনন্দ হয়েছিল ওর। স্বভাব কবি অরণ্য বরাবর একটু একা থাকতে ভালবাসে। নিজের পড়াশোনা আর লেখালেখির জন্য এই জায়গাটা ওর ভীষণ পছন্দ হয়েছিল।
বাড়িটা ব্যাঙ্কের লোক ঠিক করে দিয়েছিল। ছোট্ট একটা কাঠের দোতলা বাড়ি। একতলায় বাড়িওয়ালা বুড়ো- বুড়ি থাকেন। দোতলায় দুটো ঘর আর বাথরুম। ছোট্ট বারান্দা। ঠিক ছবির মত। খাওয়ার ব্যবস্থা মালিকের ঘরেই। ওনাদের ছেলে রয়েছে গুজরাটে । তাই অরণ্যর আদর যত্নর ভার নিজেরাই হাতে তুলে নিয়েছিলেন। দু স্যুটকেস বই আর কয়েক সেট জামাকাপড় নিয়ে শুরু হয়েছিল অরণ্যর একার সংসার।
প্রথমবার আলোটা দেখার পর সকালে খুব ভাল করে লক্ষ্য করেছিল অরণ্য, বেশ দূরে ঝোপ জঙ্গলের আড়ালে একটা অসমাপ্ত মন্দির মত দেখতে পেয়েছিল। বহু পুরানো নয় কিন্তু, কয়েক বছর কাজ বন্ধ মনে হয়। জায়গাটা মাইলটাক হবে। সকালেই হাঁটতে হাঁটতে ওদিকে ঘুরে আসবে ভেবেছিল। ওধারে একটা মিলিটারি ক্যাম্প আছে। একবার মনে হয়েছিল তাদের কোনও নাইট এ্যাক্টিভিটি হয়তো!! কত রকম ট্রেনিং হয় ওদের। কিন্তু নদীর কাছাকাছি মিলিটারি ব্যারাকটা পরিত্যক্ত।
একদিন হাঁটতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিল জায়গাটা রাতে কাছে মনে হলেও খুব একটা কাছে নয়। এই ঢেউ খেলানো চড়াই উৎরাই আর ঝোপঝাড় ঠেলে বেশিদূর যেতে পারে নি। গত সপ্তাহে শিলিগুড়ির হংকং মার্কেট থেকে একটা দূরবীন কিনেছিল , সেটাই চোখে দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিল অরণ্য এর পরের রাতগুলোয়। আলোটা কিছুদিন পর পর চোখে পড়ত। এখানকার লোক ভূত, প্রেত, জিন, পরীদের গল্প বিশ্বাস করে। বাড়ি ওয়ালা শুনে বলেছিলেন হয়তো আলেয়া!!
দূর থেকে মন্দির মনে হলেও ওটা আসলে কিছুটা প্যাগোডার আদলে গড়া বৌদ্ধ মন্দির। তবে অসমাপ্ত। দু জন লামাও চোখে পড়েছিল। একদিন হাঁটতে হাঁটতে অনেক কাছে চলে গেছিল অরণ্য। আরেকটু এগোবে ভাবছিল। হঠাৎ একজন লোক কোথা থেকে উদয় হয়ে বলল -"ইয়ে জাগা আচ্ছা নেহি হ্যায় বাবুজি। একেলে ইধার মত আয়া করো। কাঁহা জানা হ্যায় ?"
-"এই একটু ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম ভাই। কেন?" অরণ্য হাল্কা গলায় বলে।
-"সাপ আউর জংলী জানোয়ার আতা হ্যায় ইধার। হাতি , চিতা কভি ভি আ সকতা হ্যায়। "
অরণ্য অবশ্য জানে এখানে দিনেও হাতি বের হয়। লোকটা বলে চলে -"মেরা বকরি খো গ্যায়া হ্যায় কাল । ইসলিয়ে মুঝে আনা পরা। নেহি তো...."
-"আচ্ছা, দূরে ওটা কিসের মন্দির ?"
ওর কথার মাঝেই অরণ্য জিজ্ঞেস করে।
-"ও এক বৌদ্ধ মন্দির বন রাহা থা, লেকিন কাম বন্ধ পরা হ্যায়। কুছ লোগ রহতে হ্যায় উধার। বহুত সারা বাচ্চা রহতা হ্যায়। দুসরা ভাষাকা স্কুল চলতা হ্যায় উধার। লেকিন হামলোগ ঘুস নেহি সকতে। অন্দর জানা মানা হ্যায়। "
খুব অবাক হয় অরণ্য। লোকটা আদিবাসী, নাম ইতয়ারী। ওর সাথেই গল্প করতে করতে ফিরে আসে।
ইতয়ারী বলেছিল ওরা চায়না কেউ ওদের ওখানে যাক।বাচ্চাদের লামা বানানোর ট্রেনিং চলে। ওদের পড়াশোনা হয় অন্য ভাষায়।ক্যাম্পাসে প্রচুর কুকুর রয়েছে ওদের পোষা ।
ব্যাঙ্কে ম্যানেজার ছাড়া মোট সাতজন কর্মী। অরণ্য ক্যাশিয়ার বাবুকে জিজ্ঞেস করেছিল ঐ প্যাগোডার ব্যাপারে। উনি বলেছিলেন-" ওটার কাজ সরকার থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। আসলে ওদের প্ল্যান যেমন ছিল তেমন ভাবে কাজ হচ্ছিল না।বিশাল বড় প্রোজেক্ট হচ্ছিল। পালি ভাষার ইউনিভার্সিটি শুনেছিলাম। তবে পারমিশনের বাইরে গিয়ে বড় করে করছিল ওরা। এসব নিয়ে বোধহয় কেস চলছে। তবে বেশ কিছু লামা থাকে ওখানে।বাচ্চাও আছে প্রচুর। ওরা ডামডিমে বড় একটা আসে না। মালবাজার বা শিলিগুড়ি থেকে ওদের হাটবাজার হয়।মেশেও না কারো সাথে।"
অরণ্য ভাবছিল ঐ আলোর কথাটা বলবে কিনা। তারপর কাজে ডুবে গেছিল। মিলিটারিদের একটা ছোট ব্যারাক রয়েছে কাছেই। নদীর চরে ওদের শুটিং প্র্যাকটিস হয় মাঝে মাঝে। পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে তখন। পূর্ব ভারতের দুয়ার এই জায়গা, একদিকে নেপাল, ভুটান, অন্যদিকে চীন, বাংলাদেশ। আবার কাছেই সিকিম। বর্ডার কাছে বলেই এই পুরো এলাকাটাই মিলিটারিদের দখলে। দুয়ার থেকেই ডুয়ার্স কথাটা এসেছে।
পরপর চারদিন ঐ আলো আর দেখতে পায়নি অরণ্য। কিন্তু রাতেও জানালায় দূরবীন নিয়ে বসাটা ওর অভ্যাস হয়ে গেছিল। প্যাগোডাটা ওকে নেশার মত আকর্ষণ করত।
পরদিন রোববার ওর ঘর ঝাঁট দেয় যে ফুলিয়া বলে বাচ্চা মেয়েটা সে এসে বলল, ওদের বস্তিতে নাকি খুব ভূতের উপদ্রব শুরু হয়েছে। মোট তেরো চোদ্দটা ঘর নিয়ে ওদের বস্তি, এর আগে ছাগল মুরগী চুরি হচ্ছিল। গত সপ্তাহে ওদের পাশের বাড়ির ছেলেটাকে সাপে কেটেছিল।আবার একটা বুড়োকে চিতায় টেনে নিয়ে গেছে। বুড়ো নদীর দিকে বড় বাইরে করতে গেছিল মাঝ রাতে। ওদের বস্তির সবাই বলছে এসব অপদেবতার অভিশাপ। কয়েকজন ভুত দেখতে পেয়েছে। আজ বস্তিতে পূজা হবে এসবের জন্য। ও আর বিকেলে কাজে আসবে না।
অরণ্য জানে এরা কুসংস্কারে বিশ্বাসী। চিতা মানুষখেকো হয় না।ওর খুব ইচ্ছা করছিল ওদের বস্তিতে যেতে। একটু খোঁজ করতে।কিন্তু বলতে পারে না।
ছুটির দুপুরে কাকাবাবুর সাথেই খায় অরণ্য। কাকিমা পরিবেশন করেন। কচি পাঁঠার ঝোল দিয়ে ভাত মেখে অরণ্য কাকাবাবুকে বলে, -"আচ্ছা, ঐ দূরের যে প্যাগোডাটা তৈরি হচ্ছিল, ওটা দেখতে যাওয়া যায় কি?"
-"ওরা ঢুকতে দেয় না শুনেছি। কয়েকজন লামা মৌনব্রত নিয়েছে। তারা মহিলাদের মুখ দেখবে না বহুবছর, সংসারী পুরুষদের ও দেখবে না। তাছাড়া তিব্বতিদের মধ্যে পরিবারে একটার বেশি সন্তান হলে একটি সন্তানকে ওরা মঠে পাঠায় , লামা বানায়। এমন প্রায় কয়েকশো বাচ্চার ট্রেনিং চলছে ওখানে। অনুশাসন খুব কঠোর। এইসব কারণে ওরা ঢুকতে দেয়না আউট-সাইডারদের।"
-"ওটার কাজ বন্ধ কেন ? "
-"কি সব পারমিশনের প্রবলেম শুনেছিলাম। বহুবছর বন্ধ হয়ে আছে। মঠের প্রধান অধ্যক্ষ বদল হয়েছে কয়েকবার।" খেতে খেতেই বৃদ্ধ উত্তর দেন।
বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে অরণ্য চা বাগানের দিকে গেছিল। এই পাহাড়, জঙ্গল, চা বাগান ওকে ভীষণ ভাবে টানে। কলকাতায় তেমন পিছুটান নেই। মাকে হারিয়েছিল সেই ছোট বেলায়। বাবাকে কলেজে থাকতে। দিদি জামাইবাবুর আদরে বাকি পড়া শেষ করে এই চাকরী নিয়ে চলে আসা। দিদি জামাইবাবু ছাড়া আর কেউ নেই নিজের।
চা বাগান ছাড়িয়ে ফুলিয়াদের বস্তির কাছে পৌঁছে গেছিল অরণ্য। একটা বড় গাছকে ঘিরে ওদের কি সব পূজা হচ্ছে। মাদল বাজছে। বড় বড় ধুনো জ্বলছে। ফুলিয়াকে কোথাও দেখতে পেলো না সে। অবশ্য ওর মত আরো কিছু লোক এসেছে। হঠাৎ ওদের ব্যাঙ্কের চৌকিদার লাকুকে দেখতে পেল। লাকুও ম্যানেজারকে দেখে খুব খুশি। বাড়ি নিয়ে গেল জোর করে।
গল্প করতে করতে ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এসেছিল। এখান থেকে ঐ প্যাগোডা খুব কাছে। ও ধারে ঢালু হয়ে নেমে গেছে কিছু ঘাস জমি , ঝোপ-ঝাড় আর ছোট বড় বোল্ডারে ঢাকি জমির মাঝামাঝি ঐ বৌদ্ধ মন্দির। ওদিকে চিতার উপদ্রব বেড়েছে বলে লাকু ওকে একা ছাড়বে না এভাবে। অবশেষে বড় রাস্তা অবধি ওরা ওকে এগিয়ে দিল। অরণ্য বারবার ঐ প্যাগোডার দিকে তাকাচ্ছিল। কেমন চাপচাপ অন্ধকার গায়ে মেখে রহস্যর চাদর মুড়ি দিয়ে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবাই বলছে ওখানে অনেক বাচ্চারা থাকে । অথচ কোনও আলো নেই, ঘন অন্ধকারে ঢাকা। সত্যি কি কেউ থাকে !!
লাকুর মুখেই শুনেছিল ঐ মঠে দুধ ও সবজি দিতে যায় ওদের গ্ৰামের কয়েকজন। ও জিজ্ঞেস করে এমন কেউ আছে কিনা বস্তিতে।
-"বুধুয়া চাচা হ্যায় সাব। ও রোজ দুধ লে যাতা হ্যায় উধার। লেকিন ও বহুত কম বোলতা হ্যায়। "
এমনি কিছু কথা লাকু বলেছিল।
পরেরদিন রাতে আবার আলোর হাতছানি। অরণ্য বেড়িয়ে আসে বারান্দায়। ওর খুব ইচ্ছা করে একবার এগিয়ে গিয়ে ঐ আলোর উৎসর সন্ধান করতে। কিন্তু মেঘে ঢাকা আকাশ আর একটা গুমোট আবহাওয়ায় ওর কেমন অস্বস্তি শুরু হয়। চিতার কথাটা মনে পড়ে। একটা রাত জাগা পাখির চিৎকারে কেমন একটা ভয় ফিরে আসে।
এরপর ব্যাঙ্কে গিয়ে ও প্রবীণ একজন ক্লার্ক ঘোষদাকে জিজ্ঞেস করেছিল ঐ মঠ সম্পর্কে। সেই সময় ঐ মিলিটারি ক্যাম্পের একজন মেজর ওদের ব্যাঙ্কে এসেছিল একটা ড্রাফট্ বানাতে। অরণ্যর সাথে মেজর সখাওতের ভালোই পরিচয় ছিল। ওনাকে নিজের কিউবিকলে ডেকে অরণ্য দু এক কথার পর ঐ আলোর কথা জিজ্ঞেস করে।
উনি একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, -"হামারে জওয়ান নে ভি পিছলে কুছ মাহিনো সে দেখা হ্যায় ও লাইট, লেকিন তিন চার বার সামনে যা কর ভি কুছ নেই মিলা। হামলোগ যানেসে ও লাইট বন্ধ হো যাতা হ্যায়। আউর ও প্যাগোডামে হামলোগ্ দো-তিন বার গ্যায়ে হ্যায়, উধার ভি কুছ নেহি হ্যায়। কুছ বাচ্চা হ্যায় যো টিবেটিয়ান ল্যাঙ্গোয়েজকা কোর্স কর রহা হ্যায়। কুছ লামা পূজারী ওর টিচার হ্যায় ব্যস্। ইস পাহাড়ি আউর জঙ্গল কে বিচ এ্যায়সা বহুত কুছ দিখতা হ্যায় ম্যানেজার সাব। বহুত কুছ হামারা সমঝ কে বাহার হ্যায়। লেকিন হাম লোগ ডিউটি করতে হ্যায়। "
আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা হল ওনার সাথে। উনি চার মাস এখানে আছেন। ওনার আগে যে ছিল সে ও এই আলো দেখেছে। আগে মাসে দু মাসে দেখা যেত এখন ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে।
ব্যাঙ্কের কাজে অরণ্যকে মালবাজার যেতে হয়েছিল। মাত্র সাত কিমি দুরে এই শহর থেকেই ওদের দরকারি সব জিনিস আসে। অরণ্য একটা চার ব্যাটারি টর্চ আর চামড়ার শক্ত জুতো কিনে এনেছিল। তিনদিন পরপর রাতে অস্থির হয়ে বারবার জানালায় যাচ্ছিল সে। অবশেষে সেদিন ঠিক দেড়টায় আলোর খেলা শুরু হয়েছিল । কিন্তু পাঁচ মিনিট পরেই শুক্লপক্ষের ঝকঝকে চাঁদের আলোয় অরণ্য দেখল এক পাল ধূসর হাতির পাল চলেছে ঐ পথে। গোটা পঞ্চাশ হাতি ছানাপোনা সহ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পথে হাতি যেতে এর আগেও কয়েকবার দেখেছে অরণ্য। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে হস্থিযূথ ঐ বিস্তীর্ণ এলাকায় চষে বেড়াল। ঐ আলোটাও বন্ধ হয়ে গেছিল হঠাৎ।
লাকুকে বলে বুধুয়াকে ডেকে পাঠিয়েছিল ও। গত আট বছর ধরে ও দুধ দেয় ওখানে। একবার বুধুয়ার কঠিন অসুখ করেছিল। তারপর বুড়োটা আর কথা বলে না কারো সাথে।
অরণ্য চেষ্টা করেও কিছুই জানতে পারেনি। বেশ কয়েকবার বুধুয়ার কাছে গেছিল ও।
কয়েকদিন পর বুধুয়া ধুম জ্বর নিয়ে মালবাজার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। দেখতে গেছিল অরণ্য। কিছু ফল কিনে দিয়ে এসেছিল ওর ছেলের হাতে। পরে অবশ্য লাকু বলেছিল ছেলেটা দেখেই না বুড়োকে। ভর্তি করে আর খোঁজ নিচ্ছে না বাপের। অরণ্য পরদিন আবার গেছিল হসপিটালে। ওর বদলে দুধ নিয়ে যেত ছেলে। ওদের ভিতরে ঢুকতে দেয় না । বাইরে থেকে একজন এসে দুধ নিয়ে যায়। সবজি ওরা শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি বোঝাই করে আনে।
সে দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে বেরিয়ে পড়ে অরণ্য। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই পৌঁছে যায় ঐ প্যাগোডার কাছে। একটা কাঁচা রাস্তা জঙ্গল ভেদ করে বড় রাস্তায় পড়েছে। ঝোপের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে যতটা সম্ভব কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে অরণ্য। বিশাল পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এলাকাটা। প্যাগোডাটা পাঁচ তলা বাড়ির সমান উঁচু। একটা বড় গেট বন্ধ। কিছু কুকুরের ডাক কানে আসে। বাচ্চাদের হাল্কা আওয়াজ আসছিল। কিছু পড়ছে সবাই সুর করে। চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল অরণ্য। এক জায়গায় বেশ কিছু বড় বড় বোল্ডার পড়েছিল। তার উপর উঠে দেখতে গেছিল অরণ্য। তখনি কয়েকজনের গলার আওয়াজে সাবধান হয়ে একটা ঝোপের আড়ালে চলে যায় সে। দুটো অল্প বয়স্ক লামা উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছিল। ওদের তিব্বতি ভাষার কিছুই বুঝতে পারছিল না অরণ্য। কুলকুল করে ঘামছিল শুধু। আরেকজন লামা উল্টো দিক থেকে দৌড়ে এসে ওদের কি বলল। ওরা তিনজন কথা বলতে বলতে ঘুরে পিছনে চলে গেলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর অরণ্য ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো। আস্তে আস্তে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছিল । হঠাৎ একটা গাড়িকে ঐ প্যাগোডা থেকে বের হতে দেখে জঙ্গলের আড়ালে চলে গেলো ও। ঠিক তক্ষুনি চোখে পড়েছিল সাক্ষাৎ মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে, চারফুট উপরে ফণা তুলে দাঁড়িয়েছিল কালোর উপর ছোপছোপ মৃত্যুদূত। এত কাছ থেকে মৃত্যুকে এর আগে কখনো দেখেনি সে। ফোঁস ফোঁস আওয়াজ দুটো লকলকে জিহ্বা দেখে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেছিল শিরদাঁড়া দিয়ে।
পরিত্রাতার মত বেজে উঠেছিল হাতের মোবাইলটা, আর ঘটনার আকস্মিকতায় ছিটকে পড়েছিল হাত থেকে। সাপটার সব রাগ গিয়ে পড়েেছিল কাঁপতে থাকা মোবাইল সেটটার উপর। সেই ফাঁকে সরে এসেছিল অরণ্য। কিন্তু মোবাইলের আওয়াজে লামা দুটো আবার বেরিয়ে এসেছিল এবং অরণ্য ওদের সামনে পড়ে গেছিল।
রাতে সাহানা আজ চেপে ধরেছিল আলোককে। আলোক কয়েকটা দরকারি ফোন করেই ওর মুখোমুখি বসলো, বলল -" তুমি ঠিক ধরেছিলে, অরণ্য ছিল আমার বান্ধবী অহনার ভাই। কয়েকদিন আগে ওর বডি এই নদীর ধারে পাওয়া যায়। গোখরোর ছোবলে মারা গেছিল। অরণ্য মাত্র দু মাস হয় চাকরী নিয়ে এখানে এসেছিল। ও একা একা ঘুরে বেড়াতো। ওর দিদির অনুরোধেই আমি এসেছি। এখানে একটা বড় গণ্ডগোল রয়েছে। আজ রাতেই হয়তো সবটা জানতে পারবো।"
-"আমাকে কিছুই বলনি। আমি জানলে ...."
সাহানার কথা শেষ করার আগেই আলোক বলে, -"এটার গোপনীয়তা রক্ষা করা খুব দরকার ছিল। তোমায় বলতে চাইনি কারণ টুরিস্ট হিসাবেই থাকতে চেয়েছিলাম। জানলে হয়তো অভিনয়টা সাবলীল হত না। আজ রাতটা খুব ভাইটাল আমার কাছে। "
-"একটা কথা বল, ঐ যে দুজন টুরিস্টের সাথে গল্প করছিলে ওনারা......"
-"ওনারাও ইন্টেলিজেন্ট ব্যুরোর লোক। আমার মতোই ওনারাও এসেছেন ঐ ধরনের তদন্তে। আপাতত আমরা এক সাথেই কাজ করছি। এখানকার পুলিশকেও বিশ্বাস নেই।"
-"যদি তোমাদের কোনও বিপদ হয় .... "
-"হবে না, কাজ গুটিয়ে এনেছি। আজ রাতেই বড় ফোর্স নিয়ে রেইড্ হবে ওখানে। "
একটু পরেই আলোক বেরিয়ে গেলো। সাহানা দুরবীন হাতে জানালায় বসে রইল। বেশ রাতে কয়েকটা গোলা গুলির আওয়াজ আর গাড়ির আওয়াজ শুনেছিল সাহানা। ভোরের দিকে আলোক ফোন করেছিল চিন্তা করতে না। সে ঠিক আছে। সব ঠিক মত এগোচ্ছে।চারপাশ থেকে স্পেশাল ফোর্সের মাত্র আট জন ট্রেইন্ড লোক নিয়ে মুল অপারেশনটা করতে নেমেছিল ওরা। একটা ভুল পদক্ষেপে শিশুদের জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে এটা সবার মাথায় ছিল। অসম্ভব ট্রেইন্ড কুকুরগুলোর কথাও মাথায় ছিল ওদের। খুব কম গোলাগুলি খরচা করে কাজটা করতে হবে এটা আলোক সবাইকে আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিল। আলোকরা শেষ সময় সামনে দিয়ে ঢুকেছিল।ছোটখাটো যুদ্ধ একটা হয়েছিল ভালোই। তবে সব ছাত্রদের বাঁচানো গেছিল।
অবশেষে সকাল দশটায় আলোক ফিরল, সঙ্গে প্রেসের গাড়ি, লালবাতি লাগানো গাড়ি, মিলিটারি গাড়ি। ওর বাঁহাতে ব্যান্ডেজ, একটু খুঁড়িয়েও হাঁটছিল। সাহানা ছুটে যেতেই ও আশ্বস্ত করল কিছু হয়নি। কিছু লোকাল লোক এসেছিল ওদের সঙ্গে। এক বৃদ্ধ বৃদ্ধা কুণ্ঠিত ভাবে এক কোণায় দাঁড়িয়েছিল।
দেবী আর রূপা এক সাথে এত লোক দেখে ঘাবড়ে গেছিল। আলোক বলল ওদের যে, লনে সবার বসার ব্যবস্থা আর চা এর ব্যবস্থা করতে। ওরা ছোটাছুটি করে সব করে ফেলল খুব তাড়াতাড়ি।
একটা ছোট প্রেস কনফারেন্সের ব্যবস্থা হয়েছিল । ইন্টেলিজেন্সের লোকেরা দু একটা কথা বলেই আলোককে পুরোটা বলতে বলল।
আলোক উঠে দাঁড়ায়, বলে, -"প্রায় দশ বছর আগে এখানে একটা বৌদ্ধ মন্দির ও পালি ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র করতে চায় কিছু বৌদ্ধ লামারা। সরকার থেকে জমি ও পারমিশন পেয়ে যায়। এর পর ধীরে ধীরে কাজ শুরু হয়। কাজ কিছুটা এগোনোর পর ওদের মধ্যে মতের অমিল হয় এবং প্রধান লামা ও তার দলবল নিজেদের সরিয়ে নেয়। বিদেশ থেকে প্রচুর অর্থ বেআইনি ভাবে এই প্রজেক্টে আসছিল। এসবের জন্য প্রধান লামা সরকারকে জানিয়ে সরে গেছিল।
সরকার কাজ বন্ধ করতে বলে দেয়। অসম্পূর্ণ প্যাগোডা ধাঁচের মন্দির অসমাপ্ত পড়ে থাকে। কয়েকজন লামা সঙ্ঘ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এবং নিজেরাই মন্দিরটা গড়তে থাকে বিদেশী সাহায্য নিয়ে । বাচ্চাদের নিয়ে এসে পালি ভাষা শেখানো শুরু হয়। গত দু বছর আগে মঠের অধ্যক্ষ বদল হয় এবং নতুন কমিটি আসে। আশে পাশের বৌদ্ধ মঠ ও সন্ন্যাসীদের সাথেও এদের তেমন যোগাযোগ ছিলনা। কিছু অনৈতিক জিনিস এর আড়ালে চলছিল হয়তো। একটা আধা ভৌতিক গল্প রটে যায় লোকের মুখে মুখে যে, কাজ বন্ধ থাকায় ভগবান রূষ্ট।
এই লামারা কাউকে মন্দিরের কাছে যেতে দিত না। ঘিরে রাখা প্যাগোডার ভেতর প্রচুর হিংস্র কুকুর ছাড়া ছিল। এছাড়া চিতা, হাতি ,সাপের উপদ্রব এখানে আছেই। বাচ্চা লামাদের , ছাত্রদের রাখা হয়েছিল কঠোর অনুশাসনে। বাইরে আসা বারণ।
দু বার করে সরকার থেকে ঘুরে গেছে এই অঞ্চল, মিলিটারিরাও প্রথম প্রথম লক্ষ্য করেছিল কিন্তু সন্দেহ জনক কিছুই চোখে পড়েনি তেমন। আসলে এই যে বাচ্চাদের পালি ভাষা শেখানোর স্কুল আর ট্রেনিং এর আড়ালে গত বছর থেকে কিছু ছদ্মবেশী লোকেরা এখানে অন্য কিছু করছিল। দু জন ভালো লামাকে আটকে রাখা হয়েছিল। বাচ্চাদের প্রাণহানির আশংকায় বাকিরা সবটা মেনে নিয়েছিল।
গত বছর থেকে এক আলোর খেলা শুরু হয়েছিল এখানে। সবাই ভুতুড়ে আলো ভেবেছিল। এক দু'জন আগ্ৰহ দেখিয়েছিল কিন্তু কিছুই পায়নি। ঐ প্যাগোডার কাছাকাছি গেলেই সাপের কামড়ে প্রাণ হারাত অনেকেই। এটাকেও ভগবানের অভিশাপ বলে চালানো হত। বেশ চলছিল। হাঁস,মুরগি, ছাগল ওদিকে গেলে ফিরে আসত না আর।
অরণ্য এখানে এসে এসব দেখে কৌতূহলী হয়ে পড়েছিল। দু তিনবার প্যাগোডার কাছ থেকে ঘুরে এসেছিল।খোঁজ খবর নিচ্ছিল। ও বুঝেছিল বেআইনি কিছু হচ্ছে ওখানে।
একজন দুধ বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ হয় ওর। কতটা কি জানতে পেরেছিল জানি না। সেই দুধওয়ালা বুধুয়া প্রবল জ্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সবার যখন ডেঙ্গু হচ্ছে ওর জ্বর নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা ছিল না। এদিকে বুধুয়া আর অরণ্যর যোগাযোগ ঐ লামাদের চোখে পড়তেই ওরা ভয় পেয়ে গেছিল । অরণ্যকে ওরা খরচের খাতায় আগেই রেখেছিল। বুধুয়াকে হাসপাতালে গিয়েই মেরে দেয় ওরা। নতুন হাসপাতালের সব ঘর এখনো ব্যবহার হয় না। ওর দেহটা বন্ধ ব্লাড ব্যাঙ্কের ঘরে পড়েছিল দু দিন। ওর দেহ ক্ষত বিক্ষত করেছিল ওরা যাতে লোকে অন্য কিছু ভাবে , হয়ত বডি পাচার হয়ে যেত। সুযোগ হয়নি। এদিকে দেহ পাওয়ায় পুলিশ নড়েচড়ে বসে।
অরণ্য আস্তে আস্তে আলোর উৎসর খোঁজে নেমেছিল। কিন্তু ওদের চোখে ধরা পড়ে যায় ছেলেটা। ওরা বাধ্য হয়ে অরণ্যর গায়ে সাপের বিষের ইনজেকশন পুশ্ করে। এখানে সাপ রয়েছে। এই খুনটাকে স্বাভাবিক ভাবে চালানো যায়। এর আগেও যারা বেশি জেনে গেছিল তাদের ওরা এভাবেই সরিয়ে দিয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হল কি হতো ওখানে? এর আগে বেশ কয়েকবার পুলিশ গিয়েও সন্দেহজনক কিছু পায়নি। রাতের আলোটা দেখে আমার মনে হয়েছিল কোনও সিগন্যাল পাঠানো হয় কাউকে। আমি ঐ আলো ফলো করে দেখেছি একটা গাড়ি এলো , আবার চলে গেল শিলিগুড়ির দিকে।
এরপর কাল রাতে আচমকা হানায় আমরা যা দেখি তা সত্যি অবাক করার মতই ঘটনা, একটা জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে কাজ হত ওখানে। চোরাই অস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার, জাল নোট ছাড়াও মিলিটারিদের যাবতীয় ইনফরমেশন হ্যাক করে পাচার হত এবং প্রচুর গোপনীয়তার সাথে এসব চলছিল বহুদিন ধরেই। আপাত দৃষ্টিতে বড় একটা উপাসনা কক্ষ এবং লামাদের থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা। বাচ্চাদের হোস্টেল। তথাগতর উপাসনা ঘরের মাটির নিচে লুকানো ঘরে বসেই এসব হত। তিস্তার জলপথে বাংলাদেশ হয়ে এসব অস্ত্র আসত। নেপাল হয়েও কিছু ঢুকত।চায়না বর্ডারে কড়াকড়ি হলেও এদিকে পাহাড় পেরিয়ে বহু মাল আসত।
এদিকে বৌদ্ধ ধর্মের লোক এবং লামা প্রচুর। তাই ঐ ছদ্মবেশটা বেশ কাজে আসছিল আর আলোর সিগন্যালে রাস্তা ক্লিয়ার জানলেই এগুলো ছড়িয়ে পড়ত উত্তর পূর্ব ভারতে। এই এলাকায় এত সন্ত্রাস হানাহানিতে মদত আসছিল বাইরের দেশ থেকে এভাবেই। লামার ছদ্মবেশে ধর্ম চক্রের আড়ালে এসব চলছিল বহুদিন ধরেই। আশেপাশের বৌদ্ধ মনাষ্ট্রিগুলোও এতটা টের পায়নি। বৌদ্ধের উপাসকরা শান্তিপ্রিয় অহিংসার পূজারী হয়।তারা এই জায়গায় উপাসনাই করতে এসেছিল। তাদের আড়ালে এক জঙ্গি গোষ্ঠী এসব করে আসছিল।
এই মুহূর্তে সব আন্ডার কন্ট্রোল। মোট একুশ-জন গ্ৰেফতার হয়েছে। বাচ্চারা সেফ। আপাতত লাভা মনাষ্ট্রিকে খবর করা হয়েছে। ওরা এসে বাচ্চাদের দায়িত্ব নিচ্ছে। কয়েকটা গাড়ি আটক হয়েছে, প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বাকিটা এবার সরকারের হাতে। "
এতক্ষণ সবাই অবাক হয়ে আলোকের কথা শুনছিল। লোকাল লোকেরা অনেকেই বুঝতে পারেনি এখানে এত-বড় একটা ঘটনা ঘটে চলেছে। মিলিটারিরাও টের পায়নি ওদের তথ্য বাইরে কি করে পাচার হত। এত-বড় একটা অস্ত্রের ঘাঁটি এখানে গড়ে উঠেছিল তাও পুলিশ প্রশাসন বুঝতে পারেনি। সবাই যখন আলোককে ধন্যবাদ দিচ্ছিল আলোক বলল, -"ধন্যবাদ যদি দিতে হয় অরণ্য কে দেওয়া উচিত। ওর কৌতূহলের খেসারত ও নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছে। ওর দেখানো পথেই আমরা এই রহস্যর সমাধান করতে পারলাম। "
ভিড়ের মধ্যে এক বৃদ্ধ বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ায়। বৃদ্ধ বলেন, -"ছেলেটা আমার বাড়ি থাকতো। ওর এই একা একা ঘোরার নেশাটা চোখে পড়েছিল। কিন্তু বাধা দেইনি। যদি আটকাতাম হয়তো ও এভাবে অকালে ঝরে যেত না। "
লোকাল এম.এল.এ বলল, -"আমরা অরণ্য বাবুকে মরোণত্তর সম্মান জানিয়ে সম্বর্ধনা দিতে চাই। ওনার নাম সাহসিকতার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবো ।........."
আলোকের ভাল লাগছিল না এই সব রাজনীতির কচকচানি। ও এগিয়ে যায় খোলা আকাশের নীচে। নীল আকাশে সাদা মেঘ হাসছে। অহনাকে ফোন করে সবটা জানাতে হবে। অরণ্য কত বড় কাজ করেছে সে সব বলতে হবে ওদের। এত গুলো বাচ্চাকে ওরা বাঁচাতে পেরেছে, আলোক আনমনে ফোনটা অন করে।
সমাপ্ত
#positiveindia