STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Tragedy Inspirational

4  

Paula Bhowmik

Tragedy Inspirational

পুনর্ভবা পর্ব :- ১১

পুনর্ভবা পর্ব :- ১১

3 mins
413

সব কাজ মিটে গেলে বিছানায় শোবার পরেও কিছুতেই ঘুম আসে না নিখিলেশের। ঠাকুমশাইয়ের কথাগুলো মনে পড়ে যায়। যা উনি বলেছেন ভালোর জন্যেই বলেছেন, কিন্তু বীরগন্জের মানুষেরা আট বছর ধরে যেভাবে ভালোবেসে জড়িয়ে রেখেছে তা কাটানোও তো সহজ নয়।

মনে পড়ে গেল জোহা স্যারের কথা। মাত্র কয়েক মাস আগের ঘটনা। উনি চলে গেছেন বরাবরের মতো। বাঁকুড়া থেকে গিয়েছিলেন ঢাকায় কিসের আশায়! ছিলেন তো উনি মুসলমান। না, তবুও শান্তি পাননি। ভাষা আন্দোলনে জড়িত থেকেও বেঁচে গেছিলেন। তবু শেষ রক্ষা হলোনা। 


১৯৬৮ সালের শেষ দিক থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে একটা গরম হাওয়া বইছে ভেতরে ভেতরে। মানুষ ভেতরে ভেতর বিক্ষুব্ধ আয়ুব সরকারের ওপরে। 

এ বছরেই জানুয়ারি মাসের বিশ তারিখে পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর হাতে নিহত হন ছাত্র নেতা আসাদুজ্জামান। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিহত হন একজন। এসব হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রচন্ড বিক্ষোভ জানায় এবং যথারীতি আহত হয়। 

১৮ ই ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। স্হানীয় প্রশাসন নাটৌর - রাজশাহী সড়কে ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা তা উপেক্ষা করছে খবর পেয়ে জোহা স্যার (সৈয়দ মহম্মদ সামসুজ্জোহা) ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং সামরিক কর্মকর্তাদের গুলি না চালাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তার অনুরোধ উপেক্ষা করে কতৃপক্ষ গুলিবর্ষন করে। 


ছাত্রদের ভালো বেসে সত্যিই বুকে গুলিকে বরণ করে নিলেন। বলেছিলেন, "ছাত্রদের গায়ে গুলি লাগার আগে সেই গুলি আমার বুকে লাগবে" । কথা রেখেছেন।


সালটা ১৯৬১, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের রসায়ন এর মেধাবী ছাত্র তখন নিখিলেশ।

নতুন এলেন তখন জোহা স্যার। সুদর্শন তরুণ। 


একে অপরের কাছাকাছি আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি। খুব দিলখোলা মানুষ ছিলেন জোহা স্যার। শোনা কথা যে এরপর ১৯৬৪তে উনি পি এইচ ডি কমপ্লিট করেন। বিদেশে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও যাননি। ছাত্রদের প্রচন্ড ভালো বাসতেন যে! 


তারপর তো শুরু হলো নিখিলেশ এর কর্ম জীবন। তাঁর ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়েছে যে সে। কি করে পালিয়ে আসবে ছাত্রদের ছেড়ে! না কিছুতেই পারবেনা। যা হবার হবে।


কালকে ভোর ভোরেই রওনা দিতে হবে। ওদিকে সুলতার চিন্তাটাও ভাবাচ্ছে। ছোটোবেলার খেলাধুলার জায়গাতে এসেও ঠিক স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। আশ্চর্য! দেশটা তো আগে একটাই ছিল। ১৯৪৭ সালে যখন এই বাড়িতেই পনেরোই আগষ্টে পতাকা উঠিয়ে ছিলো বাবার সাথে বেশ মনে আছে দিনটা কথা। কিন্তু পড়তে গেল রাজশাহীতে। আসলে পূর্ব পাকিস্তানের জায়গা গুলো কে বিদেশ ভাবা যেতোনা তখনও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান লিখেছিলেন "ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা" সে তো সমগ্র বাংলার কথা ভেবেই। তারপর রাজশাহীতে থাকতে থাকতে ওপারের গাছপালা, নদীর জল সবকিছুকেই বোধহয় একটু বেশি ভালো বেসে ফেলেছে। ১৯৬২থেকে চাকরীর সুত্রে বাস করছে বীরগন্জের ভাড়া বাড়িতে। ঢাকা - রংপুর হাইওয়ের ধারে জায়গা অবশ্য একটা নেওয়া হয়েছে বাড়ি করবে বলে। দেখা যাক কবে হয়। আজ এই ভারতের মাটির চেয়ে ওপারের মাটিকেই আপন মনে হয়। এর ই নাম জীবন! কাল যা ছিলো অতি আপন আজ কেন যেন পর পর বলে মনে হয়। তবে হ্যাঁ, অনেকের মতোই ঐ "পূর্ব পাকিস্তান" নামটা ওর মোটেও পছন্দ নয়। আমাদের সোনার বাংলা কেন পাকিস্তান হতে যাবে। ভেতরে ভেতরে অসন্তুষ্ট সকল বাঙালী। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy