Manab Mondal

Abstract

4.5  

Manab Mondal

Abstract

পটালা কোম্পানি আর ভুতের রাজা

পটালা কোম্পানি আর ভুতের রাজা

5 mins
421


পটলা কোম্পানির কথা আলাদা করে আপনাদের বলতে হবে নাকি। ঠিক আছে বেশি কুঁড়েমি না করে

বলে দিই। পেট মোটা ওপর নিচ সরু বলে আমার নাম পটলা। গোলগাল কুমড়োর মতো চেহারার আমার বন্ধু অরিন্দমকে যেহেতু হাতির বাচ্চার মতো দেখতে লাগে তাই ওর নাম আপু। বাপি সত্যিই মাথামোটা হলেও চানাচুর মতো ওর চরিত্র মুখরোচক তাই ওর বাপি। আসলে আগে বাপি নামে একটা চানাচুর কারখানা কলকাতায় সেটা জানতে তো আপনিও। সেই চুনাচুর মুখে না দিলে ও ওর কান্না থামাতো না ছোট বেলায়। তাই ওর নাম আসলে সত্যি বাপি রেখেছিলো।

আজকে গল্পটার আসল নায়ক হলো ছোটু। ছোটু এ পাড়ার অমলদার চায়ের দোকানে কাজ করে। ও আমাদের তিন জনের একছাত্র। ও আমাদের থেকেও ছোট। আমরা যখন খেলাধুলা করে সময় কাটাই । ও তখন সংসার চালাতে দোকানে কাজ করে। ওর বাবা ট্রেনে ফেরি করতো। কিন্তু একটা দূর ঘটনাতে ওর বাবার পা অকেজো হয়ে যায়। এখন তাই ও স্কুল ছেড়ে দিয়ে চায়ের দোকানে কাজ নিয়েছে।

আমরা তিনজনে তারপর ঠিক করলাম ওকে আমরা পড়াশোনা করাবো। আসলে বেশির মানুষ পড়াশোনা করে চাকুরী পেতে। কিন্তু আজকাল পড়াশোনা পেয়ে লোকজনের চাকুরী হয় কোথায়? বড়রা বলে চাকরি তো এখন বিক্রি হয়। কিন্তু সত্যিকার পড়াশোনা করলে অনেক কিছু জানতে পরা যায়। সেটাতো অনেক আনন্দ দেয় মানুষকে। তাই ওকে আমরা পড়াই তাই ওও এখন পটলা কোম্পানির একজন সদস্য।

সেইদিন একটা কান্ড হলো। ছোট্টু বললো " যেনো আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছিলো। আর পাঁচ মিনিট ঘুমাতে দিলেই সব হয়ে যেতো। কিন্তু খবরে কাগজ দিতে দেরী হেয়ে যাবে তাই তুলে মা।"

বিষয়টা হলো ছোটুর স্বপ্নে সেই দিন ভুতের রাজার বর এসেছিলো। বরটা যখন চাইতে যাবে তখনই ছোটুকে তুলে দিলো ওর মা ঘুম থেকে।

এই ভাবে আমি , আপু ,বাপি প্রতেকেই ভুতের রাজার স্বপ্ন দেখেছি। আর সত্যি ভুতের রাজা এখন আমাদের বাঁচাতে পারে। আমরা কিছুই নিজেদের জন্য চাই না। ভুতের রাজার বর পেলে, ইউরোপে গিয়ে যুদ্ধ থামাতে পারবো আমরা। ঐ যুদ্ধ হচ্ছে বলেই না বাজারে সব কিছুর এতো দাম। মানুষ ঠিক মতো খেতে পারছে না। তবে ভুতের রাজা বর পেলে না খেতে পাওয়া মানুষ গুলোকেও আমরা খাবার খাওয়াতে পারবো।

বাপি বললো " ভোরের স্বপ্ন তো এটা সত্যি হবে ই।"

আপু বললো " কিন্তু এ শহরে বাঁশ বাগান তো নেই তাহলে ভুতের রাজা আসবে কোথা থেকে।"

আমি বললাম " তারমানে ভুতের রাজা আমাদের সংকেত দিচ্ছে । কোন বাঁশবাগানের কাছে যেতে পারলেই ভুত রাজা আমাদের কাছে এসে যাবে।"

আপু বিড় বিড় করতে থাকলো "বাঁশ বাগান চাই বাঁশবাগান চাই"

অমল দার কানে কথাটা যেতেই বললো " বাঁশবাগান কি করবি তোরা আমাদের দেশের বাড়িতেই তো বাঁশ বাগান আছে।"

আমরা এক সাথে বলে ওঠলাম " নিয়ে চলো না আমাদের।"

অমলদা বললো " তোদের তো কতবার নিয়ে যেতে চেয়েছি। তোদের পিসি তো তোদের নিয়ে আসতে বলে। বাপি কত দিন আমাদের বাড়িতে যাই নি। ও তো তোদের ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না।"

অমল দা বাপির পিসতুতো দাদা। গ্রাম থেকে এসে পড়াশোনা করছে এখানে। চাকরি না পেয়ে এখন চা, ঘুগনি, চপ, ঝালমুড়ি বিক্রি করে ভালো পয়সা কামায়। ওর জীবনের গল্প শুনেই বোধহয় কোন এক মন্ত্রী পূজার সময় চা , ঘুগনি, ঝালমুড়ির ব্যবসা করতে বলছিল।

যাইহোক সে সব কথা থাক। কালি পূজাতে অমল দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবছরই ভাই ফোঁটা নিতে ও দেশে যায়‌ । তাই ও আমাদের সাথে ছোটুকে নিয়ে যেতে রাজি হয়ে গেল অমলদা ওদের দেশের বাড়িতে। আমরাও বেশ আনন্দ পেলাম। গ্রামের তাজা চোদ্দ শাক ভাজা খেতে পারবো বলে। আপনার যারা জানেন না তাদের বলে রাখি বাঙালিদের অনেক গুলো খাওয়া দাওয়া উৎসব আছে যা আসলে মানুষকে রোগ মুক্ত রাখতে করা হয়। গারসি ব্রত, গোটাসিদ্ধ, ভুত চতুর্দশী তেচোদ্দ শাক ভাজা খাওয়া, সব রোগমুক্ত থাকার জন্য উপকারী শাকসবজি খাওয়ার রিতী।

যাইহোক ওদের গ্রামে  অনেক বাঁশবাগান । আমার দেখে এলাম গ্রামের বাইরের বাঁশবাগান টাই বেশ বড় আর ঘন গা ছমছম ব্যাপার আছে। তাই সন্ধা ঠিক হলো আমরা সন্ধায় একসাথে ভুতের রাজার সন্ধানে যাবো।

কিন্তু হঠাৎ দেখি ছোটু নেই। আমরা বুঝতে পারলাম ও তর না সইতে পেরে আগে চলে গেছে । আমরা ওখানে গিয়ে ছোটুকে দেখতে পেলাম না। খোঁজা খুঁজি করতে শুরু করতেই। একটু একটু দূরে   ওর তিনটে গুলি পেলাম। বুঝতে পারলাম ও কোন বিপদে পড়ছে।

ছোটু ছোটবেলা থেকে ছেলেধরাকে ভয় পায়।ও দেখেছিলো রামায়নে সীতাকে যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন সীতা তার গহনা গুলো ছড়িয়ে দিয়ে পথ দেখিয়ে গিয়ে ছিলো কোন পথে সীতাকে রাবন নিয়ে যাচ্ছে। সেই থেকে ছোটু নিজের কাছে অনেক কাঁচের গুলি রেখেছিলো। ও বলেছিলো ও গহনার বদলে এ গুলো ব্যবহার করবে।আজ প্রথম ও এর ব্যবহার করছে। সুতরাং ও বড়ো বিপদে পড়েছে। গ্রামে খবর দিতেই জানা গেলো, ওর মতো আরো দুইটো ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামে বাসিরা চিন্তায় পরে গেলো তাহলে কি তেনাকে জাগাবার চেষ্টা করছে কেউ আবার।

শোন গেলো নতুন গল্প।গদ্রবঙ্গা সাঁওতালদের অপদেবতা। বলা হয়ে থাকে অন্য বাড়িঘর থেকে সোনা দানা চুরি করে এনে গদ্রবঙ্গা তা তার নিজের পালিত ঘরের মালিককে দেয়। তার বদলে এইসব অপদেবতারা যে বাড়িতে পালিত হয়, সেই বাড়ির মালিকের ছোট ছোট ছেলে সন্তানগুলোকে খেতে চায়। তারা এইসব ছোট ছেলেদেরকে মেরে ফেলে এবং তাদের আত্মার শক্তি শুষে নিয়ে নিজেরা আরো শক্তিশালী হয় সে।

বলা হয়ে থাকে এদের দেখতে বিশেষ এক ধরণের ছোট বাচ্চার মত পুতুলের মতো। অনেকের বিশ্বাস যে এই অপদেবতাকে বাড়িতে পালন করলে এরা তাদের ধন দৌলত বাড়িয়ে দেবে বলে এ গ্রামের জমিদার একে পালন করে। জমিদারি গেছে কোন কিছু কাজ করে না, অথচ এ সম্পত্তি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে , রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতো। বিপদের কথা পালিত বাড়ি যদি তাদের সন্তান না দিতে চায়।তাহলে গদ্রবঙ্গা নানা উপায়ে সেই পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। জমিদার ছেলে মেয়েদের দেখা নেই বছর দুয়েক।

তাই সবার ধারণা জমিদার বাবু গদ্রবঙ্গা জাগানোর চেষ্টা করেছে। যাইহোক ছোটুর ফেলা কাঁচের গুলি গুলো দেখানো পথ ধরে গ্রাম বাসিরা পৌছালো একটা পুরনো বাড়িতে । সেই পরিত্যক্ত বাড়িতে জমিদারকে পাওয়া গেলো। উদ্ধার হলো আরো দশটা বাচ্চাকে। সবাই খুব খুশি হয়েছিলো আমাদের বুদ্ধি দেখে। কিন্তু আমরা দুঃখিত ছিলাম। একটা নতুন ভুতের সন্ধান পেলেও। ভুতের রাজার সন্ধান পাওয়া গেলো না এইবারে।


,,,


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract