প্রত্যাবর্তন
প্রত্যাবর্তন
সময়টা 2022 এর জুন মাস। করণার উৎপাৎ নেই বললেই চলে মানুষ ধিরে ধিরে আবার ধাতস্থ হতে শুরু করেছে, একটা নতুন গতি আসছে মানুষের মধ্যে। আমি একটা এলোপ্যাথ ঔষধের দোকানের কাউন্টারে কাজ করি। স্যালারি আহামরি না হলেও শেষের দুইবছর আমাকে বেকার থাকতে হয়নি। 2020 তে অবশ্য একবার অসুস্থ হয়েছিলাম তবে আমার মনিব আমাকে হসপিটালে যেতে দেননি। সেই মাসটা বাড়িতেই ছিলাম পাশাপাশি ঔষধ পত্রের সকল ব্যবস্থা তিনিই করে দিয়েছিলেন। 2022 এপ্রিল মাসে কোলকাতার একটি নামি ঔষধের দোকানে ডাক পেয়েছিলাম, স্যালারিটাও বেশ অনেকটাই বেশি কিন্তু স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে স্ত্রী বলে অসময়ে যে তোমাকে বাঁচিয়েছে তার সঙ্গ ছাড়াটা ঠিক হবেনা আমাদের তো কোন সমস্যা হচ্ছেনা। স্ত্রীর মুখথেকে ঠিক এটাই শোনবার অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের মনিব…..আমাদের বলবার কারণ ওখানে আমরা দুইজন আছি, আপনাদের আশির্বাদে আমাদের দোকানের ব্যাবসা মন্দ হয় না। আমাদের মনিব খুব নরম হৃদয়ের মানুষ তিনি বহু বার বলেছেন দেখ বেটার কিছু পেলে চলে যেতে পারিশ আমি কিছু মনে করবোনা। বিষয়টা তাকে জানালে আজ হয়তো এখানে থাকতে পারতাম না আর এই ঘটনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতেও পারতাম না। যাই হোক এবার গল্পের মূল পর্বে আসা যাক।
2022 এপ্রিল মাস দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। ঘড়িতে তখন দুপুর ১ টা সামথিং হবে, ডট সময়টা আমার মনে নেই। আমরা দোকান গোছাতে আরম্ভ করেছি এমন সময় বছর আঠারোর একটি ছেলে আসে আমাদের দোকানে। পরনে টি শার্ট আর স্কাই কালারের একটা জিন্স, হাতে একটা বেশ দামি ঘড়ি, অপর হাতে একটা মোটা ব্রেসলেট রয়েছে ওটা শোনার না রুপার উপর শোনার জল চড়ানো তা বুঝতে পারলাম না, তবে রংটা শোনালী। একটা নুতন বাইক নিয়ে এসেছে দেখে মনে হলো সেটার বয়স দিন দশেকের বেশি হবেনা। যাই হোক গাড়ি থেকে নেবে একটু ব্যাস্ততার সাথে বলল কাকু কনডম হবে। আমরা দুজনাই যেন শুনেও শুনতে পেলাম না ভাবলাম হয়তো কানে ভুল শুনেছি। আবার জিঙ্গাসা করলাম কি লাগবে? ছেলেটি বার বার এদিক ওদিক চাইছিল একটা অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছিলো তার মধ্যে, সেই অস্থিরতার মধ্যেই সে বলল কনডম আছে। না আমরা ভুল শুনিনি আমার সহকর্মী জিঙ্গাসা করল কোন কম্পানির দেব? ছেলেটি ব্যস্ততার সাথে বলল যে কোন কম্পানির দিলেই হবে। সত্তার টাকা প্যাকেটের একটা একটু দামি কোম্পানির মাল বের করে দিতেই সে একশত টাকা দিয়ে প্যাকেটটা পকেটে ভরে চেন্জ না নিয়েই চলে গেল সে। আমি ডয়ারথেকে টাকাটা বার করে তাকে দিতে যাবো তার আগেই ফুল পিকাপের সাথে গাড়িটা উড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল ছেলেটি।
তার পর থেকে সে মাঝে মধ্যেই দোকানে আসতো জিনিস নিতো চলে যেতো। আমরা জিনিসটা বার করবার সাথে সাথে খুচরো টাকাটা বার করে নিতাম। প্রতিবারই ও একশত টাকার নোট দিতো আমাদের। আমার ছেলের বয়সি ছেলে তাই নিজের সন্মান বাঁচাতে কখনো তাকে কোন প্রশ্ন করিনি। তবে আমার সব সময় ওকে দেখলেই মনে হতো কিছু একটা ভূল হচ্ছে। এবার আপনারা হয়তো বলবেন আমি দোকানদার আর ঐ ছেলেছি আমার খরিদ্দার তাহলে তাকে নিয়ে এতটা মাথা বেথা কেন? না সুধু মাথা বেথা করে সত্যিই কোন লাভ নেই কারণ বিবর্তন আমাদের মানবিকতাকেই শেষ করে দিচ্ছে। প্রথম দিন যদি ঐ ছেলেটিকে আমি আমার সন্তানের স্থানে বসিয়ে দেখতাম তাকে যদি একবারের জন্য জিঙ্গাসা করতাম তুমি এটার কি করবে? অথবা তার পরিবারের লোকরা যদি সেদিন তাকে প্রশ্ন করতো তুই এতো টাকা পাচ্ছিস কোথায়? তাহলে হয়তো আজ ছেলেটি একটা অন্যজীবন যাপন করতো কিন্তু সেটা হলোনা একটি কলেজ স্টুডেন্ট অর্থের মোহে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে মধুচক্রের মতো মারাত্যক গ্রুপের সাথে পরিনামে আজ আদালত তাকে পাঁচবছরের জেল হেফাজতের সাজা শুনিয়েছেন। অর্থের লোভ তার উজ্বল ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের চার দেওয়ালে আবদ্ধ করে এমন একটা জীবনের ঠিকানা দিয়েছে যে সেখানথেকে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব নয়। আমি আজ অনুতপ্ত এই ভেবে যে এভাবেই আমাদের কতো ভাবি প্রজন্ম এভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সুধু আমাদের এই চিন্তাধারার জন্য যে ওটাতো অন্যের শন্তান।
