প্রতিবিম্ব
প্রতিবিম্ব
ঘোরে ফেরে আয়নার সামনে দাঁড়ায় বাপ সোহাগী মেয়ে কুসুম। জন্মের পরেই মা মারা যায়,সেই থেকে ঠাকুমার কাছে মানুষ কুসুম।বাবার আদরের মেয়ে,ঠাকুমার আদরের নাতনী কুসুমকুমারী,ঠাকুমার দেওয়া আদরের নাম।কুসুম তো কুসুম,ফুলের মতই সুন্দর। কুসুমকে দেখেই উপযুক্ত রূপের বর্ণনা দেওয়া যায়। টানা টানা গভীর কালো দুটো চোখ,বাঁশির মত নাক,পদ্মের পাপড়ির মত গোলাপি দুটো ঠোঁট, ঘন কালো মেঘের মত মাথায় রাশি রাশি চুল,দুধের মত গায়ের রঙ,শরীরে মাখনের উজ্জ্বলতা ১৭ বছরের কুসুমকুমারীর। ঠাকুমা নাতনীকে দেখেন আর খুশিতে মন ভরে যায়।নাতনীর পিছনে লাগেন,"ও লো আর কত আয়নার সামনে দাঁড়াবি,তোর রূপের আগুনে যে আয়নার কাঁচ ঝলসে যাবে"। সবে তারুণ্য পার করে যৌবনের দোড়গোড়ায় পা দিচ্ছে,মনে এমনিতেই খুশির জোয়ার,সদাই সেথা বসন্ত।হাসে,আনন্দ পায় ঠাকুমার কথায় আবার এসে দাঁড়ায় আয়নার সামনে। এদিক ঘোরে,ওদিক ঘোরে,চুলগুলো কখনো সামনে আনে,কখনো একটা চোখের ওপর দিয়ে চাপা দিয়ে দেখে কেমন লাগছে। ১২ক্লাস পাশ করে সবে কলেজ যাওয়া শুরু করেছে,এমন রূপসী মেয়ে কি আর ছেলেদের নজর এড়ায়। সর্বদা বুঝতে পারে,আশেপাশের ছেলেরা সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকে জরিপ করছে। ভালই লাগে কুসুমের।নিজেকে আরো বেশী সুন্দরী মনে হয়। এ বয়সে সবার যেমন হয়,অকারণ হাসি,কলকল ছলছল,কুসুমও তেমনি। হাসলে দু'গালে সুন্দর দুটো টোল পড়ে।
বেশ চলছিল,হাসি মজায় কিন্তু চিরদিন কারো সমান যায় না। কুসুমের জীবনেও নেমে এলো ঘন কালো অন্ধকার। কলেজের একটি সিনিয়র ছেলে ওর পিছনে লাগা শুরু করে। ছেলেটা পড়াশুনো করে না,পার্টিবাজি করে কলেজে,দাদাগিরি ফলায়। কুসুমের পিছনে ছেলেটি আদাজল খেয়ে লেগে পড়ে। কুসুম বিব্রত হয়ে পড়ে। একদিন ছেলেটা ওকে প্রোপোজ করে বসে,আর কুসুম অ্যাকসেপ্ট না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কুসুমের বাড়ী থেকে বেরনো দায় হয়ে পড়লো। কিন্তু কলেজে না গেলেও যে চলে না। কদিন অনুপস্থিতির পর কলেজে যায় কুসুম। বন্ধুদের সাথে হেঁটে বাড়ী ফেরার সময় প্রায় বাড়ীর কাছাকাছি বন্ধুরা চলে গেলে যেই একা হয়ে গেছে,ছেলেটি ওর মুখে অ্যাসিড বালব ছুঁড়ে মারে আর বলে যায় "রূপের অহংকার কত থাকে দেখি"। কুসুমের মুখচোখ জ্বলে যায় ও অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে দেখে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে আর বাবা ও ঠাকুমা তার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।হাত দিয়ে দেখে মুখে তখনো ব্যান্ডেজ। অবশেষে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফেরে। ঈশ্বরের আশীর্বাদে চোখের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে মুখের ডান দিকটা বিকৃত হয়ে গেছে। কুসুম বাড়ী ফিরে তার সাধের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর আর্তনাদ করে ওঠে নিজের বিকৃত মুখ দেখে,আয়না যে মিথ্যে বলে না। হাতের সামনে টেবিলে পিতলের ভারী ফুলদানিটা ছিল,সেটা ছুঁড়ে মারে আয়নায়। আয়না ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়,ঘরময় কাঁচের ছড়াছড়ি। দু'হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কুসুম কান্নায় লুটিয়ে পড়ে খাটের ওপর।