Manab Mondal

Abstract Drama Tragedy

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Tragedy

পরিযায়ী এক্সপ্রেস

পরিযায়ী এক্সপ্রেস

3 mins
191


বড়ো বড়ো পন্ডিত গন বলেন সাহিত্য নাকি সমাজের আয়ণা। কিন্তু আমি তা মানি না।সাহিত্যে ভাষার ভাষ্কার্য থাকে, বচন ভঙ্গীও তার অনেক ভালো। আমার মনে হয় সমাজের প্রকৃত প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হলে সেটা হয়তো সাহিত্য হিসাবে গ্রহণ যোগ্য হবে না। তাই তা রঙ টঙ মেশাতে হবে। নয়তো আপনারা তাকে সাহিত্য বলে মান্যতা দেবেন কেন? কিন্তু আমি কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। অশিক্ষিত ও বটে তাই শ্রম জীবি। আর ভিড় ট্রেনে দুই রাত ধরে জেগে গন্তব্য স্থলে পৌঁছনো লোকদের প্রতিনিধি। তাই আমার গল্পে কোন রোমান্টিকতা পাবেন না। ভাষার কোন কারসাজি পাবেন না। একটা নিচক যাত্রার বর্ণণা পাবেন।

ঘটনা ঘটেছিলো, আজ থেকে ঠিক সাত আট মাস আগে বছরের শেষ দিন। আমি ফিরছি কোলকাতায় গোয়া থেকে। ঘরে ফেরার আনন্দ থেকে বুকে আমার কাজ হারানোর আতঙ্ক।

আমি গত চার মাস ধরে, গোয়ার লোকালয়ের থেকে দূরে, একটা ড্রাই ডকে কাজ করছিলাম। এই ড্রাইডকে প্রায় তিনশ মানুষ কাজ করতো। কিন্তু তখন সবাই কাজ ছেড়ে পালিয়েছে।আসলে গত চার মাসে এখানকার শ্রমিকরা কাজ পেয়েছে কেউ ত্রিশ দিন কেউ চল্লিশ দিন। মোটকথা থাকা খাওয়া খরচটাও তারা রোজগার করতে পারেনি। মুদির দোকান , সবজি ওয়ালা ওদের ধার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এই অবস্থায় ওর কাজ ছেড়ে পালানো ছাড়া কোন উপায় নেই। তাছাড়া গত বারের করোনা মহামারীর সময় অনেক টাকা দিয়ে ও একটা লরিতে গরুগাধাদের মতো চাপাচাপি করে যেতে হয়েছিল মানুষ গুলোকে। আবার কাউকে কাউকে ফিরতে হয়েছিল পায়ে হেঁটে হেঁটে। তার ওপর এদের পথে কুকুর ছাগলের মত তাড়া খেতে হয়েছিল। তাই এবার সবাই বেশি সতর্ক হয়েছিল। করোনা মহামারীর তৃতীয় ঢেউ কথা উঠতেই তাই আগে ভাগ সবাই পালাতে শুরু করলো। তাই ট্রেনে যে কয়টা সিটের টিকিট আছে তারচেয়ে বেশি ওয়েটিং লিস্ট আর বিনা টিকিটে যাওয়া যাত্রীদের সংখ্যা বেশি। দুপুর দিকে ভীড় থেকে বিনা টিকিটের যাত্রীদের ধরপাকড় চললো। ফাইনের নামে, অসহায় যাত্রীদের মোটামুটি ভাবে লুটপাট করলো টিটি আর তার সঙ্গী দুই আর পি এফ।

সন্ধ্যায় হকাররা শোনালো ঐ টিকিট পরীক্ষক ছিলো নকল। সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা , সবার কষ্টের টাকা লুটে করে নিয়ে গেলো কিছু ঠকবাজ। এমন সময় দুই টো হিজড়া উঠে জ্বালাতন শুরু করলো‌। একটা হিজড়া আসলে মদ খেয়ে উঠেছিলো ‌ । আমার পাশে একজন মহিলা যাত্রী ছিলেন। অথচ ঐ হিজড়া ওর ব্লাউজ খুলে একটা যুবকের মুখ স্তন দুটো ঘসতে লাগলো। ছেলেটি খুব অসহায় বোধ করছিল। ‌ আমিও ঐ যুবতী মেয়ে টার জন্য বেশ অপ্রস্তুত অবস্থায় পরে গিয়েছিলাম। আমি তাড়াতাড়ি পঞ্চাশ টাকা একটা নোট ওকে দিয়ে বিদায় দিতে চাইলাম। কিন্তু হিজড়া টাকাটা ছুড়ে ফেলে দিল। এবং পাঁচশত টাকা দাবি করলো। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে যাওয়ায় আমি প্রতিবাদ করে বললাম "তুমি জানো এ কামরায় অনেক মানুষ আছে তাদের দৈনিক আয় পঞ্চাশ টাকা হয় নি। আর তোমাকে তো আমি পাঁচ টাকাও দিতাম না। শুধু এ কামরায় মহিলা আছে তাদের সন্মান বাঁচাতে টাকা দিচ্ছিলাম।"

হঠাৎ করে আগ্নেয়গিরি মতো ক্ষোভে ফেটে পড়লো কামরাটা। হিজড়াটা সাথে হাত হাতিও শুরু করে দিলো কেউ কেউ। অনেক কষ্ট ওরা নেমে গেলো। সামনের স্টেশনে।

ওড়িষা ট্রেন ঢুকতেই , কে একজন বললো-"এখানে আবার একটা দল হিজড়া উঠবে । এরা কিন্তু ওরকম জোর জবরদস্তি করে না।"

চা ওয়ালা বললো "না না ওরা আজ কেউ উঠবে না। কাল রাতে এই করলেন থেকে নামতে গিয়ে দুটো হিজড়া মারা গেছে। মাল খেয়ে ভিক্ষা করতে উঠবে হবে না "..

কামরাটা অপরাধ বোধ চুপচাপ হয়ে গেলো। হাওড়া আসতে আসতে আমার পাশে বসা ওই মহিলা আমার ঠিকুজি কুষ্টি জেনে নিল। আমি ও অবিবাহিত বলেই বোধহয় এতো খাতির। মা মেয়ে আরেসি টিকিট মানে হাফ সিট এর টিকেট নিয়ে রেলে উঠেছিল তাই মানবিকতার খাতিরে আমার সিটে ওনাদের একটু বসতে দিয়েছিলাম। এর জন্য অতো বাড়াবাড়ি দরকার ছিলো না। তবুও এ মহিলার মেয়ে যখন বললেন " আমাদের বাড়িতে আসবেন , অপেক্ষায় থাকবো".. তখন মনটা একটা মিষ্টি খুশিতে ভরে গিয়েছিল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract