Malay Biswas

Horror Crime Thriller

3.0  

Malay Biswas

Horror Crime Thriller

পরীদের বাড়ির বাগান।

পরীদের বাড়ির বাগান।

11 mins
2.4K



বিলু আজ পুরো প্রস্তুতি নিয়েছে। যে করেই হোক পরীদের বাড়ির বাগান থেকে যে করেই হোক আম চুরি করবেই। ছোটোবেলা থেকেই পরীদের দেখে আসছে। বড়ো অদ্ভুত একটা পরিবার। কারুর সাথে কথা বলেনা, পাড়ার কোনো উৎসবে অংশগ্রহন করেনা। একদম চুপচাপ। পরীর বাবা বাজারঘাট করতো, কাজ-বাজ করতো। কিন্তু পাড়ার কারুর সাথে একটা কথা অবধি বলতোনা। পরীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর পরীর বাবা খুব বেশী বাড়ি থেকে বেরোতেন না। সত্যিই বড়ো অদ্ভুত একটা পরিবার। ওই পরিবারের আরও একটা অদ্ভুত জিনিস যেটা অনেক'কে বিষ্ময়ে ফেলে দিতো সেটা হচ্ছে ওই পরীর বাবা মাঝেমধ্যেই গোটা ছাগল,মুরগী কিনে নিয়ে যেতেন। অথচ বাড়িতে লোক বলতে মাত্র দুইজন। পরীর বিয়ের আগেও পরীর বাবা ছাগল,মুরগী,হাঁস কিনে নিয়ে যেতো এটা ঠিক। তবে ইদানীং দুইদিন পরপর ছাগল আর মুরগী কিনে বাড়িতে যান পরীর বাবা। এতো ছাগল, মুরগী নিয়ে কি করে? পোষে?? কিন্তু ওই বাড়ির ভেতর দিয়ে কেউ আজ অবধি কোনো ছাগল, মুরগির ডাক শোনেনি।

কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও বিলু পিছুপা হয়নি 

সে তার নিজের পরিকল্পনা মতোন এগিয়ে চললো। ছয় কাটা জমি পুরোটাই পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। আর ওই জমির একেবারে শেষের দিকে পরীরের ঘর। পরীর মা আগে রাস্তায় বার হতো। এখন বেশ কয়েকবছর ধরে উনাকে দেখা যাচ্ছেনা। পরীদের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই পরীর বাবার সাথে পরীর মায়ের ঝামেলা হতো। পরীর বিয়ে হয়ে যাবার পর ঘনঘন অশান্তি হতো। তখন পরীর মায়ের গলা পাওয়া যেতো। তবে বেশ কিছুদিন ধরে পরীদের বাড়ি ক্রমশঃ চুপচাপ। কোনোরকম ঝগড়াঝাটি, ঝামেলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিলোনা। তবে পরীর বাবা মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বাইরে বেরোয় তাও আবার খুব কম সময়ের জন্য।

পাড়ার অনেকেই সন্দেহ করতো পরীর বাবা আবার পরীর মা'কে খুন-টুন করে দেয়নি তো।


- - - - - - - - - - - - - - - - -(২)- - - - - - - - - - - - - - - - - 


পরিকল্পনা মতোন বিলু বাড়ির পাঁচিল টপকেই বাড়ির ভেতরে ঢোকে। বাড়ির পাঁচিল টপকে ভেতরে নামার পর বিলু আশেপাশে বেশ ভালোকরে দেখে নেয়। এরপর সে আম'গাছে আস্তে করে উঠে এবং টপাটপ করে কাঁচা আম পাড়তে থাকে। গাছ থেকে পাড়া আম গুলো, বিলু পাঁচিলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ওর সবথেকে কাছের বন্ধু জয়'কে ছুঁড়ে দেয়। জয় সেই আম গুলো ক্যাঁচ লুফে ব্যাগের ভেতরে ভরতে থাকে। জয় হচ্ছে বিলুর সবথেকে কাছের বন্ধু। তারা দুইজনে কোনো একটা বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে করতে কে সাহসী আর কে ভীতু এই প্রসঙ্গে কথা উঠতেই। এই পরীদের বাগান থেকে আম পাড়ার প্রসঙ্গ আসে। এই পরীদের বাড়ি নিয়ে অনেক বন্ধুর মধ্যেই একটা ভয় কাজ করে। কারন এই বাড়িতে এখনো বিদ্যুৎ এর লাইন নেয়নি। সন্ধ্যা হলেই বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়। তার উপরে এই বাড়ির লোক কারুর সাথে কথা বলেনা৷ পাড়ার লোকের কাছে বিষয়'টা কেমন অদ্ভুত লাগে। এইজন্য অনেক বাড়ির অভিভাবকেরা তাদের ছেলেপুলেরা দুষ্টুমি করলে - পরীর বাগানে রেখে দিয়ে আসবো এইবলে তাদের মনে ভীতি সঞ্চারণ করতে থাকে।


- - - - - - - - - - - - - - - -(৩) - - - - - - - - - - - - - - - - - -


জয়ের সাথে বাজি ধরে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করার থেকে জয়ের কাছে নিজের সম্মান'টা বেশ বড়ো। তাই সেই সম্মান ও নিজেকে বীরপুরুষ হিসেবে প্রমাণ করবার জন্যই বিলু, পরীদের বাড়িতে এসে আম পাড়ার প্রসঙ্গ'টিকে বেশ সিরিয়াস নেয়। এদিকে বিলু তখন আম পেড়ে টপাটপ করে পাঁচিলের বাইরে ছুড়ে ফেলছিলো। জয় ভেতর থেকে আসা আমগুলো ক্যাঁচ ধরার চেষ্টা করছিলো কিন্তু সবকটাকে আর ক্যাঁচ ধরা সম্ভব হয়ে উঠছিলোনা। বেশ কয়েক'টা আম পাড়ার পর বিলু দেখলো গাছের এই ডালে আম বেশ কমে এসেছে৷ তখন বিলু এবার বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিলু আমগাছ থেকে লাফ দিয়ে নেমে, পাঁচিলের উপরে হাতে ভর দিয়ে যেই উপরে উঠতে যাবে। তখনি বিলুর গায়ে কে যেন হাত রেখে বিলুকে উপরে উঠে না যেতে দিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে দেয়। এবং বিলুর হাত'টা চেপে ধরে। বিলুর বুকের ধুকপুকের গতি নিমেষেই বাড়তে লাগলো। বিলুর গলা শুকিয়ে এলো। কান শোঁ শোঁ করতে লাগলো। মুখ'টা কিছুটা হাঁ হয়ে গেলো। বিলু অন্ধকারের মধ্যেই বেশ বুঝতে পারছিলো এটা পরীর বাবা। 

বিলু - কাকু আমাকে ছেড়ে দাও। আমি আর কোনোদিনো আসবোনা।


তবে পরীর বাবা বিলুকে অবাক করে বললো - আমাকে একটু উপকার করতে পারবি বাবা!


বিলুর এবার ধরে প্রাণ ফিরে পেলো। বিলু জিজ্ঞাসা করলো - কি উপকার?


পরীর বাবা - আমার বউ হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে গেছে। তুই কি পাড়ার ছেলেদের'কে বলবি একটু এই বাড়ির দিকে আসতে। আমার একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা আমার বউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। 


বিলু - এই কাজ? আমি এখুনি বাইরে বেড়িয়ে ডাক দিচ্ছি লোক চলে আসবে।


পরীর বাবা - খবরদার! এখানে চেঁচিয়ে লোক ডাকিস না। আমার বউকে আমি জানাতে চাইছিনা। কারণ ও ডাক্তার কবিরাজ এসবে ভয় পায়। এখন যদি হাসপাতালের নাম শোনে তাহলে ওকে আর বাড়ি থেকে বের করা সম্ভব হবেনা।


বিলু - কিন্তু! হাসপাতালে গেলেই তো কাকিমা বুঝে যাবে যে, তাকে সকলে মিলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। এমনি তেও জানবে, অমনি'তেও জানবে।

এদিকে বিলুর আস্তে দেরী হচ্ছে দেখে জয়ও পাঁচিল টপকে ভেতরে আসে। পাঁচিল থেকে নামার পর জয়েরও হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। জয় ভাবলো আজ বুঝি ধরা পড়ে গেলাম৷ কিন্তু বিলু আশ্বাস দেয় কিছু হবেনা। আমাদের একটু কাকুদের সাহায্য করতে হবে।


বিলুর কথায় পরীর বাবা উত্তর দেয়...

আরে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর জানলে অসুবিধা নেই৷ কিন্তু তার আগে জানিয়ে দিলে অসুবিধা। ওহ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেবে, তখন ওকে বার করা খুব মুস্কিল হবে।


বিলু - আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কয়েকজন'কে ডেকে নিয়ে আসছি।


পরীর বাবা বললো - কোনোরকম যেন শব্দ না হয়। চুপিচুপি আসবি তোরা। তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করিস আমার বউয়ের অসুস্থতা নিজের চোখে দেখা যাচ্ছেনা খুব কষ্ট হচ্ছে।


বিলু আর জয় পাড়ার ক্লাবে যায় সাহায্যর চাওয়ার জন্য।


বিলু আর জয়ের কাছে বিষয়'টা বড়ো অদ্ভুত লাগে। বউকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে অথচ বউকে বলা যাবেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্লাবের থেকে তিন-চারজন ছেলে আর একটা ভ্যান জোগাড় করে সকলে মিলে ওই পরীদের বাড়ির গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। পরীদের বাড়ির বাইরের যে গেট'টা ওটা খোলায় ছিলো। সকলে মিলে পরীদের বাড়ির যে সদর দরজা, সেই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দেখে দরজাটা ভেতর থেকে খোলা। বাড়ির ভেতর থেকে ভীষন ধুঁয়ো বেড়োচ্ছে। পাড়ার ছেলেপুলেরা ভাবছে ভেতরে কারুর বিপদ হলো না তো..তো তখন সকলে মিলে ভেতরে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেয়, ভেতরে ঢোকামাত্র তাদের সকলে চোখ পড়ে ভেতরের একটি ঘরের দরজা খোলা রয়েছে আর সেই ঘরের ভেতরে একটা মোমবাতি কিংবা হ্যারিকেন জ্বালানো আছে। যেখান থেকে একটা মৃদু আলোর রেখা বাইরের দেওয়ালে এসে পড়ছে। সেই ঘর'টা থেকেই ধোঁয়া বার হচ্ছিলো। ক্লাবের ছেলেগুলো যখন সকলে মিলে ওই ঘর'টার ভেতরে ঢুকলো তখন তারা দেখলো ওই ঘরের পুরো মেঝো রক্তে রক্তাকার৷ একজন মহিলা সেই রক্ত নিয়ে স্নান করছিলো।

মহিলাটি ছিলেন পরীর মা। তবে ওনার সারা গায়ে রক্ত লেগেছিলো বলে ওনাকে ঠিকমতোন চেনা যাচ্ছিলোনা। ওই মহিলার একহাতে ছিলো মগ ভরতি রক্ত আর অন্যহাতে ছিলো একটি ছুঁড়ি। মহিলাটি মুখে বিড়বিড় করে কি যেন বলছিলো মহিলা'টি সম্পূর্ণ নগ্ন ছিলো। এইরকম একটা পরিবেশে তখন সবাই কি করবে এটা না বুঝতে পেরে পাড়ার ছেলেপুলেরা প্রথমে একটা চিৎকার দেয় এবং তারপর সকলে মিলে একটা ঝাড়া দৌঁড় দেয়। এলোপাথাড়ি দৌঁড় যে যেখানে পারছে দৌঁড়াচ্ছে। এদিকে এতো ছেলের চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়িঘর থেকে সকল প্রতিবেশীরা বাইরে বেড়িয়ে আসে। তারা প্রত্যেকেই দেখলো পরীরের বাড়ির ভেতর থেকে সকলে এলোপাথাড়ি ভাবে দৌঁড় দিচ্ছে। প্রতিবেশীরা যখন ওই বাড়ি থেকে দৌঁড় দিয়ে বেড়িয়ে আসা একজন'কে হাতের সামনে পেয়ে তার পথ আটকে জিজ্ঞাসা করে যে, কি হয়েছে এইভাবে সে দৌঁড়াচ্ছেই বা কেনো? তখন ওই ছেলেটা পরীদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে - ওই বাড়িতে ভূত আছে। বলতে বলতে ছেলেটা ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়। প্রতিবেশীরা কৌতুহল বশত পরীদের বাড়ির ভেতরে যায়। এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে শেষে তারা ঘরের ভেতর থেকে এতো ধুঁয়ো আসছে কেনো সেই ধুঁয়োর কারণ খোঁজার জন্য যেই বাড়ির সদর দরজাটা দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। তখন এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজির পর যেই ঘর'টা থেকে হ্যারিকেন ও মোমের আলো আসছিলো। সেই দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে তারাও একি দৃশ্য দেখতে পায়। 


এইরকম একটা দৃশ্য দেখে সকলেই হতবাক। সেই মুহুর্তে লোকজন সকলে মিলে বাইরে বেড়িয়ে আসে। এবং সদর দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। এরপর সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় থানায় খবর দেবে। ভাবা মাত্রই কাজ সম্পন্ন করা হলো। থানা থেকে আধাঘন্টার মধ্যেই পুলিশ আসে। তবে সবথেকে অদ্ভুত ব্যাপার পুলিশ আসার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই ওই মহিলা দরজা পেটাতে থাকে। সে দরজা পেটাতে পেটাতে বারবার বলতে থাকে - দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু গ্রামবাসীরা কেউ সেইদিকে কান দেয়নি। পুলিশ আসার পর ওই মহিলা'কে পুলিশি হেপাজতে নেওয়া হয়। আশেপাশের দুইজন মহিলা প্রতিবেশী ওই মহিলা'কে শাড়ি পড়ায় এবং শাড়ি পড়ানোর পরপরেই পুলিশ ওই মহিলা'টিকে থানায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।


- - - - - - - - - - - - - - - - - -(৪) - - - - - - - - - - - - - - - - 


এই ঘটনার দুইদিন পর থানা থেকে পুলিশ এসে ওই মহিলার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছিলো। তখন একজন অফিসার জিজ্ঞাসা করে এই ঘটনা'টা সবার আগে কে দেখেছে। তখন সকলেই বিলুর দিকে তাকায়। বিলু পুলিশ দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়। তখন সেই অফিসার বিলুকে আশ্বাস দেয় যে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এরপর বিলু পুরো ঘটনা'টা খুলে বলে। সব ঘটনা শুনে সেই অফিসার বেশ অবাক হয়ে যায়। সে অবাক দৃষ্টিতে বিলুর দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর সে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে - "তুই ঠিক বলছিস তো"?

কারন ওইরাতেই পুলিশের একটি তদন্তকারী ভ্যান আসে। এবং ঘরের ভেতর থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে। যেই লাশ'টা ছিলো পরীর বাবামআনে ওই মহিলার স্বামী ও এই বাড়ির মালিক যিনি। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী ওই ভদ্রলোক ঘটনার তিন'দিন আগে মারা গেছেন। ওই মহিলার স্বামীর দেহ'টা বাথরুমের ভেতরে রাখা ছিলো। 


এরপর সেই অফিসার সকলের দিকে তাকিয়ে বললো - ওই বাড়ির আশেপাশে কেউ যাবেন-না। আমরা গোটা জায়গা সিল করে দিয়েছি। যদি কেউ ওই বাড়ির ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের বলবেন ভেতরে যেন না যায়। এরপর তিনি চলে গেলেন। জয় আর বিলু তখন দুইজনেই, দুইজনের মুখ চাওয়া চায়ি করছে। জয় বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে - হ্যাঁ রে বিলু পরীর বাবা যদি মারা যায় তাহলে সেইদিন আমরা কাকে দেখলাম।

বিলু কোনো উত্তর দিতে পারেনা। এটা একটা অসমাপ্ত জট হয়ে থাকতো যদিনা দুইদিন পর সেই অফিসার আবারো সেই পরীর বাড়ির দিকে আসতো। শুধু অফিসার একা এসেছে বললে ভুল হবে। সাথে ছিলো ৮-৯ জন মাটি কাটার লোক। অফিসার যে যে জায়গা নির্দেশ করছিলো সেই সেই জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করছিলো ওই লোকগুলো। বেশ কিছুক্ষন পর অনেক হাড়গোড় পাওয়া গেলো মাটির তলা থেকে। আশেপাশে প্রচুর মানুষের ভীড় জমে আছে। বড়োরা প্রত্যেকেই বাচ্চাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছিলো। ৬ ঘন্টা পর বেশ কিছু হাড়গোড় নিয়ে অফিসার আবারো থানার দিকে রওনা দেয়। তবে অফিসার যাওয়ার আগে বেশ কয়েকজন জিজ্ঞাসা করে যে। এইরকম অদ্ভুত ভাবে হাড়গোড় তারা মাটির তলা থেকে খুঁড়ে বের করলো। ওই হাড়গুলো কার, কি বৃত্তান্ত।

অফিসার শুধু এটুকু বললো - এই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা মহিলা'টিকে তার এইসকল অদ্ভুত কৃতকর্মের কারণ কি সেসব জিজ্ঞাসা করাতে, সে কিছুতেই মুখ খুলছিলোনা। পরে তাকে ফাঁসির ভয় দেখানো হলে সে গড়গড় করে সব বলতে থাকে।

ওই মহিলা নাকি বুড়ি হয়ে যেতে ভয় পেতেন, সে আরও অনেক বছর বাঁচতে চায় এইজন্য প্রথমে কুকুর-ছাগল-বিড়ালের উপরে কালোজাদু করতো। সে ভাবতো ওদের হত্যা করে কালোজাদু প্রক্রিয়া দ্বারা নিজের শরীরে বিশেষ এক মন্ত্রের মাধ্যমে আরও কয়েকবছর অতিরিক্ত বেঁচে থাকা যায়। এতোসব করার পরেও তিনি যখন দিনের পর দিন বুড়ি হয়ে যাচ্ছিলেন তখন সেই মহিলা ভাবেন যে, তার হয়তো পদ্ধতি'তে কোনো ভুল হচ্ছে। এই কারণেই সে তার নিজের স্বামীকে হত্যা করে। এবং পরে তিনি তার স্বামীর ওই মৃতদেহকে নিয়ে বিভিন্ন রকম মন্ত্রপাঠ করতেন উনি। ওই যে আম গাছ'টা ওই গাছের নীচে উনি নিজের স্বামীর কাটা মুন্ডু'টা পুঁতে রেখেছিলেন। আর উনি ওইসব প্রাণীদের হত্যা করে তাদের দেহ বাড়ির বাইরে পুঁতে রাখতেন। আমাদের সন্দেহ ছিলো উনি হয়তো এর আগেও অন্য কারুর জান নিয়েছেন। তাই এইকারনেই এখানে এসে মাটি খুঁড়ি। আর তারপর এইসব সামনে আসে।


অফিসার হেঁসে একসময় ওখানে থাকা লোকজনদের ব্যাঙ্গ করে বললো - আপনাদের নাকের নীচে এতোসব ঘটনা ঘটে গেলো আর আপনারা কিছুই জানেন'না।

সত্যিই বড়োই অদ্ভুত। একি পাড়ায় এতোসব ঘটনা ঘটে গেলো কেউ জানতে পারলোনা। যদিও অফিসারের এই কথোপকথনের এই ব্যাপার'টা পরে জেনেছিলো জয় আর বিলু। 

বেশ কয়েকদিন পর একদিন জয় বিলুকে সেই ঘটনা'টার রহস্যে সম্পর্কে বলছিলো। তখনো দুইজন স্বাভাবিক আলোচনা করছিলো অন্য একটা বিষয় নিয়ে। তারপর এই প্রসঙ্গে আসে তারা।

জয় - জানিস তো বিলু আমার মনে হয় পরীর বাবা কষ্ট পাচ্ছিলেন এই কারণেই সে আমাদের ওই বাড়িতে ছেলেপুলেদের নিয়ে আসতে বলেছিলেন। সে সরাসরি বলেনি কারণ যদি আমরা ভয় পেয়ে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যাই। তাহলে হয়তো আমাদেরও পরীর মা হত্যা করতো। এইকারণে সে লুকিয়ে লুকিয়ে আসতে বলেছিলো পাড়ার ছেলেপুলেদের সাথে।

বিলু - হ্যাঁ রে আমিও ঠিক এটাই ভাবছিলাম। তবে আশ্চর্যের বিষয় এইযে আমাদের চোখের আড়ালে পরীর মা যে এইসব কাজকর্ম করে বেড়ায় আমরা সেটা ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি।


এরিমধ্য একদিন বিলু বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়ার সময় খেয়াল করলো পাড়ার ক্লাবের সামনে বেশ জড়োসড়ো হয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের মাঝে জয় ও দাঁড়িয়ে আছে৷ বিলু দুরথেকে জয়কে ডাক দেয়। জয় বিলুর ডাক শুনে দ্রুত দৌঁড়ে আসে। আর চোখ বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞাসা করে, তুই জানিস কি হয়েছে?


বিলু - না তো কি হয়েছে?


জয় - আরে পরীর মা মারা গেছেন?


বিলু - কিকরে মারা গেলো ফাঁসি হয়েছে ওনার?


জয় - আরে না রে। আমাদের পাড়ার ঘলুর বাবা আছেনা। কি যেন নাম..!!


বিলু - সতীশ কাকু।


জয় - হ্যাঁ রে সতীশ কাকুতো পুলিশের কোয়ার্টারে রান্নাবান্নার কাজ করে। ওই কাকুই সকল'কে ঘটনা'টা বলছে ওইদেখ সকলে শুনছে। 


বিলু - কিন্তু কি করে মারা গেলো?


জয় - আরে ওই মহিলা নাকি জেলের ভেতর অদ্ভুত সব আচরণ করতো। সবসময় হাসতো। জেলের ভেতরে খাওয়ার খেতোনা। ওনি যেই সেলে থাকতো সেখানে অন্য কেউ থাকতে চেতোনা। ওনার তো কোর্ট কেস চলছিলো। যেদিন ফাইনাল রায় দেবে কোর্ট থেকে, তার আগেরদিন রাতেই উনি মারা যায়। উনি মারা যাবার আগের দিন খুব অদ্ভুত আচরন করেছে। সারাদিন নাকি পাগলের মতোন হেসেছেন। ওইদিন রাতেই ওনি মারা যায়। কিভাবে মারা গেলো সেটা জানা যায়নি। তবে উনি যেই সেলে থাকতো তার আশেপাশের সেলে থাকা কয়েদী'রা রাতের বেলায় একটা অদ্ভুত চিৎকার শোনে। ওই পরীর মা মাঝেমধ্যেই চিৎকার করতো। তাই তারা সেইসময়ে বিষয়'টাকে আমলে নেয়নি। কিন্তু ওইদিন রাতে বেশ কয়েকজন কয়েদী একটা অদ্ভুত কালো রঙের বিশাল বড়ো একটা ছায়াকে ওনার সেলের আসেপাশে ঘুরতে দেখেছে। 


বিলু - কি বলিস এ তো সাংঘাতিক ব্যাপার। 


জয় - শুধু কি তাই নাকি? এখন রাত হলেই পরীদের বাড়ির ভেতর থেকে অনেকে নাকি অদ্ভুত সব আওয়াজ শুনছে৷ ওদের বাড়ির পাশে যে কাকা থাকেন। তিনি বলছেন পরীদের বাড়িতে রাতের বেলায় কে যেন চিৎকার করছে এইরকম আওয়াজ ভেসে আসে। অথচ তিনি বাইরে বেড়িয়ে এদিকওদিক তাকালে কিছুই দেখতে পায়না। আমার তো এসব শুনেই ভয় করছে না জানি আর কত কি কান্ড হবে এই বাড়ি নিয়ে।


বিলু - এতোসব কিছুই হতোনা যদিনা ওই বাড়িতে আমরা সেইদিন যেতাম। কি বলিস?


জয় - হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। কিন্তু যদি না যেতাম তাহলে এতো রহস্য উন্মোচন হতোই বা কি করে.? আর কি কোনোদিন আমরা কেউ জানতে পারতাম যে আমাদের আশেপাশে এইরকম অদ্ভুত একটা প্রতিবেশী থাকে?


 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror