Malay Biswas

Comedy Classics

4  

Malay Biswas

Comedy Classics

বিড়ালপ্রেমী মেয়ে

বিড়ালপ্রেমী মেয়ে

5 mins
398


প্রতিদিন শিয়ালদহ (kolkata) থেকে বিকেল 4.25. এর গ্যালোপিং ধরে বাড়ি ফিরি। সারাদিন প্যান্ট খুলে যাওয়া খাটুনি খেটে শেষে যখন ট্রেনে গেটের ধারে দাঁড়াই, মনে হয় যেন স্বর্গে উড়ে বেড়াচ্ছি! আমার অফিসের কলিগ গুলো বিকেল পনে ছটার ট্রেন ধরে..আগেভাগে বাড়িতে যেতে চাননা যদিও ওরা সকলে বিবাহিত, আর এতোদিন ধরে কাজ করছে তাই অফিসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, ওরাই আবার যারা নতুন জয়েন হয় তাদের ট্রেনিং ও গজ্ রুমি গ্রুমিং করায়। ইদানীং বেশকিছু সুন্দরী বউ অফিসে কাজে ঢুকেছে, সকলেই ফ্রেশার'স। সারাদিন ট্রেনিং এর পর ঘোষ দা, চক্রবর্তী দা, এমন কি মিত্র বাবু ( সিনিয়র এইচ.আর ) ওই নতুন কলিগদের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে গল্প হাসি তামাশা করতেই থাকে। করুক আমার কি?

তবে সমস্যা বাঁধলো দমদমে। সেইদিন অফিস দিয়ে গ্যালোপিং রানাঘাটে করে ফিরছি। এমন সময় ট্রেন যখন দমদমে এসে দাঁড়ালো খুব ভীড় হয়ে গেলো নিমেষেই, আর সেই ভীড়েই ট্রেনে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো সেই মেয়েটা। কি সুন্দর তার চোখ দুটো, হাতে বাঁশের মতোন বড়ো বড়ো নখ, মুখে রক্তরাঙা লিপস্টিক, যেন এইমাত্র কারুর রক্ত খেয়ে এসেছে..ওকে ওইদিনকেই দেখেই প্রেমে পড়ে গেছিলাম। এরপর দুইদিন খেয়াল করতাম ওহ রোজ ওই ট্রেনেই উঠতো, উঠে আমার সামনেই দাঁড়াতো। ভেতরে যেতনা, ওই মেয়েটিকে দেখেই ভেবেছিলাম মালা তো ওর গলায় পড়াবো. কিন্তু ওর সাথেতো ভাব জমাতে হবে, আমিতো মেয়েদের সাথে কথাই বলতে পারিনা। কি করবো কি করবো? তখনি মাথায় এলো ঘোষ দাদা। যখনি মেয়ে পটানোর কথা মাথায় আসে তখনি ঘোষ'দাকে ছবির মতোন দেখতে পাই, শালা! ওইতো টাক মাথা, কিন্তু তাতে কি? ফেসবুক খুললেই দেখি ৪০০-৫০০ টা মেয়েদের লাইক,কমেন্ট। অফিসে এসেই দেখি মেয়েরা ফোনের পর ফোন করে। এককথায় মেয়েদের মধ্যে হিরো ঘোষ দা। ঘোষ দা অফিসে কাজ ছাড়াও একটা কুকুর/বিড়ালদের NGO চালায়। সেইথেকে প্রচুর বিখ্যাত সকলের মাঝে। 


- - - - - - - - - - - - - - - - (2) - - - - - - - - - - - - - - - - - -


চার নম্বর দিনে একেবারে সকাল সকাল অফিসে এসে হাজির হলাম। ঘোষ দা, অফিস টাইমের আগেই আসেন। কুকুরদের বিস্কুট খাওয়ান। আর আমিও সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না। অফিসের ভেতরে এইসব আলোচনা করা যাবেনা, তাই একান্তেই নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে কিছু সাজেশনের জন্য অপেক্ষাই থাকলাম। ঘোষ'দা সব শুনে আমাকে বললো..

দেখো মলয়, তুমি অনেক সাধাসিধে ছেলে, তবে একটা কথা কি জানো? আজকালকার মেয়েরা এই সাধাসিধে ছেলেদের কেই বেশী পছন্দ করে। এইকথা শুনে আমার তো আহ্লাদে আটখানা হওয়ার অবস্থা।

ঘোষ দা বললো - দেখো আমিতো ফেসবুক খুললেই দেখি, কুকুর/বিড়াল প্রেমী ছেলেদের কিরকম চাহিদা। তুমি একবার বলেছিলে না তোমার বাড়িতে একটা বিড়াল আছে? কি যেন নাম?


আমি বললাম - ঘন্টি৷ 


ঘোষ দা বললো - মলয় তুমি ওকে গিয়ে সরাসরি প্রপোজ করে দাও।

আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে - কি?? প্রপোজজজজ?

ঘোষ দা - হ্যাঁ প্রপোজ। পাখি উড়ে যাওয়ার আগে ওকে খাঁচায় আটকাও। বেশি দেরী করোনা আজকেই প্রপোজ করে দাও। দেখো মলয় গোলাপ ফুল, কানের দুল, হাতের বালা এসব দিয়ে প্রপোজ করা খুবি পুরোনো স্টাইল। তুমি সরাসরি ওই মেয়েটির কাছে যাবে, গিয়ে ওর হাত দুটো ধরবে..দেখবে বুক খুব জোরে জোরে ধুকপুক করবে। মনে হবে এই হার্ট অ্যাটাক হবে হবে, কিন্তু তোমাকে ঘাবড়ালে চলবেনা। সোজা ওর হাত ধরে বলবে..

দেখো মায়াবিনী, এইট্রেনে অনেক মেয়ে রোজ যাওয়া আসা করে, কিন্তু আমার চোখ থাকে তোমার উপরে। যখনি দমদমে আসি তখনি বুকের ভেতরে একটা অজানা অনুভুতি হয় যে, এই বুঝি আজ এলেনা। তাজমহলে গেছো কোনোদিন? না..কোনোদিন ভুলেও যেওনা। কারন তাজমহল কি সুন্দর, তুমিতো তার থেকেও বেশী সুন্দর। ওখানে গেলে দেখা গেলো লোকে তোমাকেই দেখছে তাজমহল না দেখে। দেখো আমি সামান্য একটা চাকরি করি, আমার একটা বিড়াল আছে..ওর নাম ঘন্টি..তুমি কি আমার বিড়ালের মা হবে?


ব্যাস তুমি গিয়ে এটা বলবে দেখবে মেয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম ঘোষ দা কাজ করবেতো ওষুধ'টা?


ঘোষ-দা এবার ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো - ১০০% কাজ করবে, করতেই হবে..এইবলে ঘোষ'দা কয়েকটা মেয়ের সাথে হোয়াটসঅ্যাপের কথাবার্তা দেখালো আমাকে। সবাইকে কোনো না কোনো ভাবে লিখেছে আমার বিড়ালের জন্য মা পাচ্ছিনা, আমার কুকুরছানার জন্য একটা পরিবার দরকার। এইসব দেখে একটু কনফিডেন্ট হয়েছিলাম। তারপর ভাবলাম আজ যাই হোক মেয়েটাকে গিয়ে সরাসরি জানাবো আমার মনের কথা।


সারাটা দিন ধুকপুকানি নিয়ে অফিসে বসে আছি, ঘোষ-দা মাঝেমধ্যেই আমাকে দেখে বুকে হাত দিয়ে ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছে। ভয় কি?? সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখতে দেখতে আমার ছুটির সময় হয়ে গেলো। আমি আর কোথাও না দাঁড়িয়ে..সোজা স্টেশনে ছুটলাম। ট্রেন ধরলাম। ট্রেন ধীরেধীরে স্টেশন থেকে ছাড়লো। দমদম আসার অপেক্ষায়। আমি আজকে গেটে না দাঁড়িয়ে,গেটের পাশে দাঁড়িয়েছি। দমদম আসামাত্র আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমার খুব বুক ধুকপুক করছে। আমি চোখ খুলতে পারছিনা। কিন্তু এতো সুন্দর মেয়ে ওহ যদি হাতছাড়া হয়ে যায়। না আমাকে শক্ত হতেই হবে। ধীরেধীরে চোখ'টা খুলে এদিকওদিক দেখতে লাগলাম। ঠিক আমার পাশে খেয়াল করলাম ওই মেয়েটাই পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেটা দেখা যাচ্ছেনা যদিও, আমি ১০০% শিওর এটা ওই মেয়েটাই। আমি কি করলাম কিছুক্ষণের জন্য আশেপাশের এতো যাত্রী আছে সেগুলো ভুলে গেলাম। চোখ বন্ধ করে মেয়েটার একটা হাত ধরে আমার দিকে ঘুরালাম। আমি চোখ খোলা রেখে এই কাজ করতে পারবোনা তাই চোখ বন্ধ করে এই পদক্ষেপ নিলাম। মেয়েটা কিছু বলার আগেই..

আমি গরগর করে নামতা বলার মতোন ঘোষ'দার কথাগুলো বলতে লাগলাম। কথাবলার শেষে দেখলাম,ভীড় ট্রেনে যে শোরগোলটা ছিলো হঠাৎ স্তব্ধ। আশেপাশে সবাই নীরব, কারুর মুখে কোনো কথা নেই৷ নীরবতা আমার ভয় আরও বাড়িয়ে দিলো। আমি ধীরেধীরে চোখ খুলে দেখলাম সেই মেয়েটাই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এ-কি? এ তো বিবাহিত? বিয়ে কবে করলো? কিন্তু ফেস আর চুলের স্টাইল একই দেখতে..কিন্তু এর মুখে ব্রণ আছে। কিন্তু আমি যাকে চিনি তারমুখে তো কোনো ব্রণ নেই। আমি মেয়েটাকে কিছু বলার আগেই, মেয়েটা ঠাস করে একটা চড় মারলো, তারপর ওই মেয়েটা বলে উঠলো - হারামজাদা ছেলে, মা আর মেয়ের মধ্যে তফাৎ বোঝোনা? বিবাহিত বউ দেখলেই কি মাথা খারাপ হয়ে যায়৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম মানে।

ওই মহিলা নিজের পাশে ইঙ্গিত করে দেখালো..তুমি যাকে বলতে চাইছিলে সেইকথা সে আমার মেয়ে এইযে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আর আমি ওর মা। আমরা দুইজনি একই দেখতে। এইকথা শোনার পরতো লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেলো, ছিঃ ছিঃ ছিঃ

শেষে মেয়ের মাকে প্রপোজ করলাম। মেয়ের মা আরও বলে উঠলো - সব জায়গাই এই ট্রিকস খাটেনা, কারন সব মেয়ে নাকি এনিমেল লাভার'স নয়, আর উনি এও জানালো ওর মেয়ের রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। কলেজ কম্পিলিট হয়ে গেলে ওদের বিয়েও হয়ে যাবে, আমি যদি ফারদার ওর মেয়ের পেছনে লাগি তাহলে আমার খবর আছে।


ট্রেন ধীরেধীরে ব্যারাকপুরে ঢুকছে, আমি লজ্জায় কারুর দিকে তাকাতে পাচ্ছিনা, মনে হচ্ছে এইবুঝি আরেকটা চড় এগিয়ে আসছে। ব্যারাকপুর ঢুকতেই সোজা নেমে গেলাম ট্রেন দিয়ে। ট্রেন থেকে নামার সাথে সাথেই দেখি ঘোষ-দা মোবাইলে এমনি ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।

কি..স্যার?

ছয় মারতে পেরেছেন? নাকি তার আগেই আউট হয়ে গেছেন।


মনেমনে ভাবছি, ছয় কেনো? ছয়, এগারো,বারো,তেরো এইগুলোও মারবো, কাল একবার অফিসে যাই, হারামজাদার খবর আছে।


বিড়াল_কেলেঙ্কারি

বিড়ালপ্রেমী_মেয়ে।

মলয় বিশ্বাস।

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy