Malay Biswas

Abstract Horror Thriller

3.7  

Malay Biswas

Abstract Horror Thriller

পরীর সাথে একরাত

পরীর সাথে একরাত

5 mins
1.3K


'তোরা যদি এইখান দিয়ে না যাস তাহলে এইখানেই তোদের মার্ডার করে ফেলবো' মাঝরাতে একটা অর্ধনগ্ন মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থানইট তুলে তিন-চারটে ছেলের দিকে উদ্দেশ্য করে জয় চেঁচিয়ে বলে উঠলো। ছেলেগুলো তখন দৌঁড় দিলো।


 মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেছিলো জয়, বাড়ির লোক প্রচন্ড বকাবকি করায়, জয় বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। সেইযে দুপুরবেলায় জয় বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে, এখনো বাড়িতে ঢোকেনি। খুব উগ্র মেজাজের জয়। একটুও কথা শুনতে পারেনা কারুর। রাত তখন ১২.০০ টা হবে। রাস্তায় কিছু ছেলেকে খালি গায়ে নাচানাচি করতে দেখে জয়ের সন্দেহ হয়। বিষয়'টি কি হচ্ছে দেখার জন্য জয় এগিয়ে যায়, কিন্তু সামনে গিয়ে জয় বুঝতে পারে এইছেলেগুলো আগলা গায়ে একটি মেয়ের উপরে নরকীয় অত্যাচার করছে। এইযে ৩-৪ জন ছেলে, এদের মধ্যে জয় কাউকেই চেনেনা, তবে জয়ের স্কুলের সামনে মাঝেমধ্যে ওদেরই একজন আসতো। স্কুল ড্রেস পড়ে, সুতরাং ছেলেগুলো স্কুল স্টুডেন্ট হবে। কিন্তু এইভাবে একটা মেয়ের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে কেন? না..জয় থেমে থাকেনি। এই শুনশান রাস্তার একটি নিদিষ্ট কোণায় যখন ছেলেগুলো একটি মেয়ের উপর নরকীয় অত্যাচার চালাচ্ছিলো সেইসময়ে জয় থানইট তুলে ওই ছেলেগুলোর উদ্দেশ্য বলে..

'তোরা যদি এইখান দিয়ে না যাস তাহলে এইখানেই তোদের মার্ডার করে ফেলবো'

জয় নিজেও বুঝতে পারেনা যে সে আদেও পেরে উঠবে কিনা ওদের সাথে..কিন্তু সেইসময়ে জয় নিজের জীবনের থেকে ওই মেয়েটির সম্মান'কে বেশী দামী মনে করছিলো।


মনে যখন সাহস থাকে তখন যুদ্ধক্ষেত্রে একাই হাজার হাজার সৈনিক'কে পরাজিত করা যায়। এই থিওরি কাজ করলো এইখানে। মাঝরাতে এইভাবে এতো গর্জনের সাথে জয়ের গলার আওয়াজ ওইছেলেগুলোর মনে হয়তো ভয়ের দাগ কেটে ছিলো। তখন যে যেমন অবস্থায় ছিলো..সে সেইভাবে পালিয়ে গেলো। জয় তখন ওই মেয়েটির দিকে দ্রুত দৌঁড়ে গেলো। জয় দেখলো মেয়েটি নগ্ন অবস্থায় উপুড় হয়ে রাস্তায় পড়ে রয়েছে। জয় সাথে সাথে চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে করে নিলো। কি করবে জয় সেটাই বুঝতে পারছেনা। এদিকে মেয়েটি সমানে গুঙিয়ে যাচ্ছে।

তখন জয় কি করলো নিজের গায়ের যে জামাটা ওটা খুলে ওই মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো - দেখো তুমি এই জামা'টা কোনোরকমে পড়ে নাও..আর এই নাও..এইবলে জয় নিজের জিন্সের প্যান্ট'টাও খুলে দিলো। ভাগ্যিস জয় ভেতরে আজ হাফপ্যান্ট পড়ে এসেছিলো। জয় তার জিন্স'টা ওই মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে বললো - এই নাও তুমি তাড়াতাড়ি এটা পড়ো। ভয় নেই আমি তোমার শরীরের দিকে তাকায়নি, আমি ওই অমানুষ গুলোর মতোন না। তুমি তাড়াতাড়ি পড়ো সামনেই আমার বাড়ি চলো আজরাতে তুমি ওইখানে থাকবে, চলো এখন আর দেরী করোনা ওরা কিন্তু যখন তখন চলে আসতে পারে।


জয় কথাগুলো বলার কিছুক্ষণ পর সে আরচোখে দেখার চেষ্টা করলো মেয়েটি তার দেওয়া জিন্স আর জামা'টা পড়েছে কিনা। জয় দেখলো মেয়েটি ওইভাবেই শুয়ে আছে, সে প্রাণপণে উঠার চেষ্টা করছে পারছেনা। জয় ভাবলো - এইমেয়ে একা একা কিছুই পারবেনা। জয় তখন জামাটি হাতে নিয়ে মেয়েটির দুই হাত জামার হাতার মধ্যে গলিয়ে দিলো। প্যান্টের ক্ষেত্রেও একি ভাবেই সে আগে মেয়েটির দুটো পা, জিন্সের মধ্যে গলিয়ে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে জিন্স'টাকে উপরে তুলে দিলো। এরপর সে মেয়েটিকে টেনেটুনে উপরে তুললো। খুব বেশী বয়স হবেনা মেয়েটার ১৬ কি ১৭।

জয় এর আগে কোনো মেয়ের সাথে সেইভাবে মেশেনি, ওর কোনো মেয়ে বান্ধবীও নেই। ওহ ঠিক মেয়ে দেখলে লজ্জা পায় সেইরকম টাইপের ছেলে। কিন্তু আজ যে এতোটা হিম্মত আর সাহস সে কোথা থেকে পেলো সেটা জয় নিজেও জানেনা। মেয়েটিকে উপরে তোলার পর সেই মেয়েটির সাথে জয়ের ওই প্রথম, চোখাচোখি হয়। কি অদ্ভুত মায়াবতী সেই মুখ। রাস্তায় সেই আবছা আলোয়, মেয়েটির মুখ জ্বলজ্বল করছে। মেয়েটির ঠোঁট ও চোখের কোণা দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। জয় কোনোভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে মেয়েটির জামা টেনে বোতাম গুলো লাগিয়ে জামা'টা ছেড়ে দিলো। এরপর সে ওইভাবেই জিন্সের বোতাম'টিকে আটকে মেয়েটির দিকে মুখ নীচু করে বললো - চলো সামনেই আমার বাড়ি, এইখানে থাকাটা তোমার জন্য নিরাপদ নয়। সকাল অবধি আমাদের বাড়িতে থাকো, কাল তোমার মা-বাবাকে খবর দেবো ওরা এসে নিয়ে যাবে তোমাকে।

মেয়েটির ডান-হাত ধরে জয় ওই মেয়েটিকে বলে - চলো।

কিন্তু মেয়েটি একদমি হাঁটতে পারছিলোনা। জয় কি করলো মেয়েটির ডান'হাত নিজের কাঁধে নিয়ে মেয়েটিকে হাঁটিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিলোনা। শেষে জয় মেয়েটিকে তার কাঁধে উঠিয়ে বাড়ির দিকে এগোতে লাগলো। মেয়েটি খুব হাল্কা, তাই জয়ের কাঁধে করে নিয়ে যেতে অসুবিধা হচ্ছিলোনা। 

জয় বাড়ির দিকে যেতে যেতে একসময় বুঝলো মেয়েটি তার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

এইদিকে এতোসব কান্ডের মধ্যে জয় ভুলেই গেছে যে তার বাড়ির অবস্থা ঠিক কিরকম। বাবা-মা হয়তো এখনো তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

নিজেত বাড়ির কাছে পৌঁছাতেই জয় দেখলো - বাড়ির সদর দরজা'টা খোলা ভেতর থেকে জয়ের মায়ের কাঁন্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। জয়ের শরীরে একটা শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেলো।


জয় ভাবলো - এই মেয়েটি যদি জেনে যায় যে, জয় পরীক্ষায় ফেল করেছে তাহলে হয়তো মেয়েটিও তাকে বাকিদের মতোন ঘৃণা করবে, কিন্তু এতো রাতে মেয়েটিকে বাইরে রাখাও ঠিক হবেনা। জয় তখন দোটানায় পড়ে নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়ে, জোড়ে চেঁচিয়ে বললো - মা...

ওমা...মা..কোথায় তুমি। ঘড়িতে আনুমানিক রাত দুটো বাজে। জয়ের আওয়াজ শুনে ভেতরে জয়ের মায়ের কাঁন্না থেমে গেছে। জয় বুঝলো ভেতর থেকে কেউ একজন হাওয়াই চটি পড়ে দৌঁড়ে বাইরে আসছে। হ্যাঁ..ওনি জয়ের মা..যিনি দৌঁড়ে বাইরে এলেন। জয়কে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে, জয়ের দিকে তাকিয়ে জয়ের মা বললো - কিরে তুই কোথায় ছিলি, কত খুঁজেছি তোকে, এইবলে জয়ের মা কাঁন্না জুড়ে দিলো। জয় তখন তার মা'কে বললো - উফফ! সেসব বলছি তার আগে মা..একে বাঁচাও। এইবলে জয় নিজের পিঠ থেকে সেই মেয়েটিকে নামিয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলো। জয়ের মা তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর মেয়েটির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

জয় বললো - কয়েকজন ছেলেমিলে খুব অত্যাচার করেছে মা, এই মেয়েটির উপরে। আমি অনেক কষ্টকরে ওকে বাড়িতে এনেছি। একে বাঁচাও মা৷ নাহলে এ মারা যাবে।


এ আর নতুন কি? জয় উগ্র মেজাজের ছেলে হলেও মনের দিক থেকে খুব সৎ। সে এর আগেও রাস্তায় পড়ে থাকা কত কুকুর,বিড়াল,পাখি বাড়িতে এনে ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ করেছে যেইগুলো

কোনো না কোনো কারণ বশত আহত কিংবা অসুস্থ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতো। কিন্তু জয় যে এইভাবে একটা মেয়েকে এইপ্রথম তুলে নিয়ে আসবে সেটা বাড়ির সকলের কল্পনারও বাইরে।

জয় খেয়াল করলো তার বাবা ঘরের দরজার ভেতর দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।


জয়ের মায়ের দিকে জয় তাকিয়ে বললো - আহা! তাড়াতাড়ি ওকে পরিস্কার করে কিছু একটা ব্যবস্থা করো মা..নাহলে ওহ মারা যাবে।


জয়ের মা আমতা আমতা করে ছেলে হারিয়ে যাওয়ার শোকভুলে মেয়েটির দিকে এগিয়ে এসে বললো - তাড়াতাড়ি ওকে বাথরুমে নিয়ে চল। মুখ দিয়ে খুব রক্ত বেড়োচ্ছে। আগে ওকে পরিস্কার করে দিই, সকালে কন্ডিশন বুঝে হাসপাতালে নিয়ে যাবো। পেশায় জয়ের মা একজন নার্স। সে এইসবে প্রাথমিক চিকিৎসা তো জানেই।

জয়ের মা, ওই মেয়েটিকে নিয়ে বাথরুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আর এদিকে জয় মাথা নীচু করে বাড়ির বাইরের গেট'টা আটকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো।


চলবে....

বাকিটা পরের পর্বে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract