Malay Biswas

Horror

3.9  

Malay Biswas

Horror

লুকোচুরি

লুকোচুরি

12 mins
5.7K


(আমি কোনো লেখক নই, তাই যারা যারা রহস্য ও সাসপেন্সের উদ্দেশ্য নিয়ে গল্প পড়েন তাদের বলছি, এই গল্পে সেমন কিছুই উল্লেখ নেই)


 প্রতি বছরের মতোন সেবারো দাদুকে বললাম! দাদু তুমিতো আড়ংঘাটাতে যাচ্ছো। আমাকে নিয়ে চলো। প্রতি বছরেই তো লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়িয়ে যাও। এইবার আমার স্কুলেরও ছুটি আছে আর আমার টিউশন পড়াও ছুটি আছে। এবার যদি আমাকে না নিয়ে যাও, তাহলে তোমাকে আর পিঠ ম্যাসেজ করে দেবোনা। আর তোমার ঘরেও আসবোনা, কথাও বলবোনা। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই দম নিতে লাগলো অনিকেত। অনিকেতের দাদু প্রতিবছর শীতের সময় তার শালিদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। অনিকেতের দাদুর যে বউ ছিলো তারা পাঁচ বোন ছিলো। সেই পাঁচ বোনের মধ্যে দুইজন আড়ংঘাটায় থাকতো, একজন থাকতো বনগাঁ, গোপালনগরে। আর একজন থাকতো শান্তিপুরে। তবে সবথেকে বেশী আদরযত্ন পেতেন আড়ংঘাটায় গেলে। আর তারথেকেও বড়ো কথা, আড়ংঘাটায় অনিকেতের দাদুর জমি ছিলো! উনি চাষবাস করবে বলে কিনেছিলো। সেই জমি এখন কালা নামের একজনকে দিয়ে দিয়েছে। কালা হচ্ছে অনিকেতের দাদুর, ছোটো শালির ছেলে। কারণ অনিকেতের দাদু শহরে চলে এসে ওখানেই ব্যবসা করছে। তাই সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে ওই জমি দিয়ে দিয়েছে ছোটো শালির ছেলেকে। আর কালা নাকি ওই জমিতে চাষাবাদ করছে।

ছোটো অনিকেতের অভিমান ভরা মুখ দেখে তার দাদু আর না করতে পারেনি। তবে অনিকেতের দাদু বলেছিলো, নিয়ে যেতে পারি..! তবে ওখানে গিয়ে বাঁদরামি করা চলবেনা। আর আমি যা বলবো তাই শুনে চলতে হবে যদি দেখি আমার কথার অমান্য করা হচ্ছে তবে আমি তখনি ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে আসবো বলে দিলাম।


দাদুর তরফ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে অনিকেত তখন আহ্লাদে আটখানা। অনিকেত তখন তার দাদুকে খুশীতে জড়িয়ে ধরে। আর দাদুকে আদুরে গলায় বলে, - দাদু আমি কোনো বায়না করবোনা, চুপ করে থাকবো আর তোমার কথাই শুনবো। অনিকেতের দাদু অনিকেত কে বলে - মনে যেনো থাকে পরশুদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো।

ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিস। অনিকেত বললো - আমি এখুনি গুছিয়ে নিচ্ছি।

- - - - - - - - - - - - - (২) - - - - - - - - - - - - - - - - - 

পরশুদিন সকাল ৬.০০ টার মধ্যেই বেড়িয়ে পড়ে অনিকেত আর অনিকেতের দাদু। অনিকেত বেজায় খুশী। তার কারণ যখনি কেউ আড়ংঘাটা থেকে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো তখনি, অনিকেত তাদের সাথে যাওয়ার জন্য বায়না করতো, অতিথিরা রাজি হলেও! অনিকেতের বাড়ির লোক রাজি হতোনা। সেই আত্মীয়দের সাথে আশা অনিকেতের সমবয়সী ছেলে-মেয়ে গুলো কতবার যে তাদের বাড়িতে আসার জন্য অনিকেতের মা, বাবা এবং অনিকেতকে অনুনয়-বিনয় করেছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। মা-বাবা তখন রাজি হলেও যেই ওরা চলে যেতো তখন বলতো কোথাও যাওয়া চলবেনা। ফাইনাল পরীক্ষার পর বাবা-মায়ের সাথে ঘুরতে যাওয়ার একটা মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে অনিকেত'কে আটকে রাখতো। আটকে রাখারি কথা ভীষণ দুরন্ত ছেলে। বাড়িতেই কারুর কথা শোনেনা, ওখানে গিয়ে তো হাতির পাঁচ পা দেখবে। যাকগিয়ে অনিকেত এবার সেইসব বাঁধা কাটিয়ে উঠে আজ দাদুর সাথে ফাইনালি ঘুরতে যাচ্ছে এটাই বড়োকথা। সকাল ১০ টার ভেতর বাজার হতে কেনাকাটি করে অনিকেত আর তার দাদু হাজির হয়৷ সময়'টা ছিলো ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে। অনিকেত তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। অনিকেত আর অনিকেতের দাদুকে দেখে রীতিমতো অবাক। বিশেষ করে কালা (অনিকেত কালা'কাকা বলে ডাকতো) কালা'র যে দুটো মেয়ে আর একটা ছেলে ছিলো তারা প্রত্যেকে। কারণ তারা তো ধারণায় করতে পারেনি যে অনিকেত আসছে। অনিকেতও চুপ ছিলো, তবে এতোবছরের জমে থাকা ক্ষোভ সে ভেতরেই দমিয়ে রাখলো। দাদুর সামনে চেঁচামেচি করাটা ঠিক হবেনা। দাদু তখন তার ছোটো শালির মেয়ে গীতার সাথে কথা বলছিলো, ওই সংসারের টুকটাক আলোচনা। দাদুর অন্যমনষ্কতা দেখে অনিকেত কালার যে ছেলে-মেয়েরা ছিলো ওদের'কে ইঁশারায় বললো - চল ক্ষেতে নিয়ে চল আমাকে। ওখানে গিয়ে অনেক কথা আছে। তবে আমার দাদুর কাছে বলবি আমরা দোকানে যাচ্ছি, দাদু জানতে পারলে আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলে যাবে। 


কালা'কাকার ছেলে, বাবলু। আর রীতা আর ময়না এই দুই মেয়ে, তাদের ঠাকুমা'কে বলে - ঠাকুমা আমরা দোকানে যাচ্ছি, ভাইকে নিয়ে যাচ্ছি এখনি চলে আসবো। অনিকেতের দাদু সেইদিকে কান না দিয়ে কথাবার্তা বলতে লাগলো। এরপর যেই একপা একপা করে বাড়ির বাইরে বেড়িয়েছে অনিকেত আর সকলে, তারপর আর তাদের পায় কে। দে.. ছুঁট........


ক্ষেতের দিকে গিয়ে সকলে আনন্দে এমন চিৎকার চেঁচামেচি করা শুরু করে দিয়েছে যে, চেঁচামেচির আওয়াজ একটু বেশী হলে ছোটোখাটো ভুমিকম্প হয়ে যেতো। অনিকেত তার মনে জমে থাকা সকল ক্ষোভ উগড়ে দিলো। কতবছর অপেক্ষা করেছে সে এখানে আসার জন্য। অবশেষে সে এলো, ওইদিন সকালে বাবলু, রীতা, ময়না, আর অনিকেত মিলে দুপুর ১.০০ টা অবধি হইহই করে, এদিক যাচ্ছে তো ওদিক যাচ্ছে। কখনো কারুর বাগানে যাচ্ছে তো কখনো এক ছুঁটে চলে যাচ্ছে মেন রাস্তার দিকে। এতোক্ষণ টইটই করে যখন সকলে বাড়ির দিকে ফিরছিলো অনিকেতের তখন বুক ধুকপুক শুরু হয়ে গিয়েছিলো। তার কারণ অনিকেতের দাদু হয়তো বুঝে গেছে যে, তার নাতি দোকানে না গিয়ে অন্য জায়গায় গিয়েছে। কিন্তু কালা'কাকার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম দাদু। তার মেজো শালির বাড়িতে গেছে। যেটা কিনা কালা'কাকার বাড়ি থেকে ২ কি.মি মতোন দূরে। দাদু যাওয়ার আগে বলে গেছে কালা'কাকার বউ সম্পর্কে অনিকেতের কাকি। অনিকেতকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে। সে নাকি রাতে একেবারে শোবার সময় আসবে। গীতা পিসি ও কালা কাকার বাড়ি একদম পাশাপাশি।


ব্যাস, অনিকেত আবারো বাঁদরামো করার লাইসেন্স হাতে পেয়ে গেলো। অনিকেত দুপুরে কোনোরকম নয়,ছয় করে খেলো। খেয়ে ঘরে গিয়ে সকলের অপেক্ষা করতে লাগলো, কখন ওদের খাওয়া হবে আর অনিকেত বেড়িয়ে পড়বে ক্ষেতে। সত্যিই খুব সুন্দর জায়গা, অনিকেতের বাড়ির আশেপাশে ওখানে এইরকম ভাবে চাষবাস হতে সে আগে কোনোদিন দেখেনি। আর তাছাড়া অনিকেত তার বাড়িতেও এই জায়গার অনেক কথা শুনতো সেইজন্য অনেক ছোটো থেকেই এই আড়ংঘাটার প্রতি অজানা ভালোবাসা জন্মে গেছিলো। তাই অনিকেতের মন ধ্যান সব ক্ষেতের দিকে। সে যতোটা আশা করেছিলো এই ক্ষেতে এসে অনিকেত আরও বেশীকিছু পেয়েছে। তাই অনিকেত ক্ষেতের মাঝে অজানা ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিলো। আর সেই ভালোবাসার মধ্যে বাবলু, রীতা, ময়না এরা তিনজন হচ্ছে সেই ভালোবাসার জগৎ এর চাবিকাঠি। সত্যিই যদি এখানে না আসা যেতো তাহলে এই জায়গার সৌন্দর্য হয়তো সে বুঝতে পারতোনা। 


তবে প্রতিটা জিনিসের কিছু ভালো-খারাপ, শুভ-অশুভের দিক থাকে। অনিকেত সেই খারাপের দিকেই ধীরেধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলো।

তখন বিকেল চার'টে বাজে। বাবলু, রীতা ও ময়নার অনেক বান্ধবী ক্ষেতের দিকে এসেছে। তারা প্রত্যেকেই বিকেল'বেলায় খেলতে আসে। অনিকেত সকলের সাথে পরিচিত হয় এবং সকলে মিলে কিছুক্ষণ গল্প করার পর ঠিক করে লুকোচুরি খেলবে। যেমন পরিকল্পনা, সেইরকম কাজ।

সকলে লুকোচুরি খেলা শুরু করে। অনেক বড়ো ক্ষেত৷ যে যেখানে পারছে, এলোপাথাড়ি হয়ে লুকিয়ে পড়ছে। পুরোটা বিকেল সকলে বেশ মজায় লুকোচুরি খেলে কাটায়। কিন্তু সন্ধ্যাবেলা যখন সকলে বাড়ি ফিরে যাবে, তখন সকলে মিলে বাড়ি যাওয়ার আগে গোল করে মাঠে বসে একটু গল্প করে নেয়৷ কারণ তখনো ঠিকঠাক সন্ধ্যা হয়নি। চারিদিকে তখনো আলোর ভাব। এমন সময় কেউ একজন ভূতের প্রসঙ্গ তুললো। ব্যাস তারপর সকলে মিলে ভূতের কথা বলতে লাগলো। কেউ বলছিলো তার মামা ভূত দেখেছে, কেউ বলছিলো তার বাবা কাজ থেকে আসার সময় রেললাইনে ভূত দেখেছে এইভাবে আলোচনা যখন জমজমাট হয়ে উঠেছিলো তখন সকল'কে থামিয়ে রানা (বাবলুর বন্ধু) বললো - তোরা সকলে থাম।

তোরা ভূত ভূত করছিস? তোরা কি জানিস এই ক্ষেতেও ভূত আছে? 


সকলে তখন হো হো করে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো। রানা সকল'কে থামিয়ে বললো - চুপ! মন দিয়ে শোন কি বলছি। ওই দেখ যেই খাল থেকে ক্ষেতে জল নিয়ে আসা হয়, ওই খালের দিকে তাকা। ওই খালকে শীত,গ্রীষ্ম কোনো সময়েই দেখবি শুকিয়ে যায়না। কিন্তু কেনো? আর প্রতিটা বছর ওই খাল একটা না একটা জীবন নেয়। তবে মনে করে দেখ, ২০১০ এর দিকে কোনো মানুষ ওই খালে কেউ ডুবে মরিনি, 

কোনো কুকুর,ছাগল,কিংবা গরু ওই খালের কাছে পড়ে থাকতে দেখা যায়নি মানে, ওই খালে ২০১০ সালে কারুরি প্রাণ নেয়নি। তাই সেইবছর গ্রীষ্মকালে খাল কেমন শুকিয়ে গিয়েছিলো৷ প্রতি বছরি তো হয় কোনো জেলে কিংবা কৃষক কিংবা কোনো প্রাণী কারুরু না কারুর তো জান নেয়, সেবার কারুরি জান নেয়নি বলে শুকিয়ে গিয়েছিলো তোরা কি বিষয়'টা জানতিস? আর এইবছরো এই ঝিল কারুর প্রাণ নেয়নি। তবে প্রাণ নেবার চেষ্টা করবেনা এমন'টা কোথাও বলা নেই। কারণ প্রাণ না নিলে এই ঝিল শুকিয়ে যাবে। এদিকে আজকাল এই ঝিলের পাড়ে কোনো প্রাণী জল খেতে আসেনা। মানুষজন ও ঝিলের থেকে বেশ দুরত্ব বজায় রাখে। কৃষকেরাও বেশ সাবধানের সাথে ওই ঝিল থেকে পাম্পের সাহায্য জল নেয়।

এই ঝিল এখন খুবি ক্ষুদার্ত। 

রানার কথা শুনে সকলে তখন চুপ।

কারুর মুখে কোনো কথা নেই। শুধু অনিকেতের ছাড়া। অনিকেত অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে। সে কি হাসি, যা কিনা থামছিলোই না। শেষে বাধ্য হয়ে রানা বলে উঠলো - দেখ অনিকেত, তুই শহরে থাকিস এখানের অনেক কিছুই জানিস না। তবে এইসব বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করিস না৷ 

অনিকেত তখন হাসতে হাসতে বলছিলো - তোরা তো হাসির মতোন কথা বলছিস। এইসময়েও কি ভূত আছে নাকি...

রানা - বটে এই ব্যাপার, তাহলে যা ওইদেখ সামনে যে তালগাছ'টা দেখতে পাচ্ছিস! ওইখানে গিয়ে বলে আয় দেখি..আমি ভূতে ভয় পাইনা। তিন বার বলবি। দেখি তোর কেমন সাহস। অনিকেত নিজের হাসি থামিয়ে নিজে থেকেই সেইখানে যায়। তালগাছের কাছে গিয়ে অনিকেত গাছ'টিকে ভালো করে দেখে তারপর বলতে শুরু করলো - আমি ভূতে ভয় পাইনা, আমি ভূতে ভয় পাইনা, আমি ভূতে ভয় পাইনা। শুধু তাই নয়..অনিকেত আরও বললো - কি করবি তোরা দেখে নেবো। এইবলে অনিকেত যখন পেছন ফিরলো তখন দেখলো সেখানে কেউ নেই, দৌঁড় দিচ্ছে বাড়ির দিকে। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এদিকে ক্ষেতের কাছে লাইট নেই। অনিকেতের কেনো জানিনা ভয় লাগতে লাগলো। অনিকেত যখন সেখান থেকে দুই পা এগিয়েছে। তখনি একটা মৃদু হাসি শুনতে পায়, হাসিটা পৈশাচিক হাসি। অনিকেত তখন এক ছুট দেয়। এবং বাড়ি চলে আসে।

- - - - - - - - - - - - - (৩) - - - - - - - - - - - - - - - - - 

সন্ধ্যাবেলা অনিকেত বাড়ি এসে দেখে দাদু চলে এসেছে। তবে দাদুর মেজাজ দেখে মনে হচ্ছিলো দাদু বেশ খুশীতে আছে। তাই দাদুর কাছে বকাঝকা খাওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। ঘরে হাত-পা ধুঁয়ে বসার পর সকলে মিলে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর। কালা কাকা কাজ থেকে বাড়ি আসে। বাড়িতে এসে অনিকেত'দের দেখে তো বেশ খুশী। সকলে মিলে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর গীতা পিসি সকলের জন্য খাবার নিয়ে আসে। খাবার খাওয়ার পর সকলে মিলে অনিকেত আর অনিকেতের দাদুর শোবার জায়গা ঠিক করে দিলো। খাওয়ার পর অনিকেত শুতে গেলো গীতা পিসির সাথে, আর দাদু শুতে গেলো বাবলু আর কালা কাকার সাথে। তখন হয়তো খুবজোড় রাত ৮.৩০ কি ৯ বাজে। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কোনো অভ্যাস নেই অনিকেতের। এদিকে পিসি নিমেষেই ঘুমিয়ে গেছে। হ্যাঁ পিসির ঘুম'টাই স্বাভাবিক। কারণ ভোর ৪.০০ টের আগেই উঠে যায় গীতা পিসি। অনিকেত ও তখনো ঘুমানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু ঘুম আর আসছিলো না কিছুতেই। বেশীক্ষণ হয়নি, অনিকেতের বাথরুম পেয়ে যায় খুব জোরে। অনিকেত সাবধানে বিছানা থেকে নেমে আসে।

বাথরুম করে এসে অনিকেত যখন ঘরে ঢুকতে যাবে তখনি সে পেছনে যেনো কার হাসির আওয়াজ শুনতে পায়, অনিকেত পেছন ফিরতেই দেখে যে কে একজন দৌঁড়ে সামনের দিকে ছুঁটে যায়। অনিকেত যেখানে বেড়াতে গিয়েছিলো সেই জায়গা'টাতে অনেক জায়গায় কারেন্ট এসেছিলো এটা ঠিকই তবে গীতা পিসিরা তখনো বাড়িতে কারেন্টের লাইন নেইনি। ব্যাপার'টা কেমন অদ্ভুত লাগলো। অনিকেত ঘরে না ঢুকে, উঠান থেকে বেড়িয়ে বাড়ির সামনের সরু কাঁচা রাস্তাটার সামনে এসে দাঁড়ালো। সেইসময়ে অনিকেতের নাকে একটা গন্ধ আসে। এই গন্ধ তার খুব চেনা, এটাতো রীতার জামা থেকে আসছিলো। রীতা যে জামাটা পড়ে বিকেলে ক্ষেতে গিয়েছিলো সেইসময় এই একি গন্ধ পেয়েছে অনিকেত রীতার কাছ থেকে। তখনি কে যেন দূর থেকে বলে উঠলো - "রীতা এক টিপ" 


রীতারা এখন লুকোচুরি খেলছে?

বিষয়'টা কেমন অদ্ভুত লাগলো। তবে রাতের বেলায় লুকোচুরি খেলার আলাদাই মজা, অনিকেত'রা তাদের পাড়াতে কারেন্ট চলে গেলে লুকোচুরি খেলে..তারমানে এই গ্রামেও লুকোচুরি খেলে সকলে রাতেরবেলায়। হয়তো খেলে, অনিকেত ভাবলো দাদু তো এখন ঘুমোচ্ছে, যাইনা গিয়ে একটু খেলে আসি।

 এই ভেবে অনিকেত ওই আওয়াজের উৎসের পেছনে দৌঁড় দিলো। অনিকেত স্পষ্ট শুনতে পেলো কারা যেন দৌঁড়াচ্ছে। অন্ধকারে বোঝার চেষ্টা করলো কিন্তু অনিকেত বুঝতে পারছিলোনা ওরা কারা। অনিকেত ও সেই আওয়াজ অনুসরণ করে দৌঁড় দিলো। ওই সামনের টিনের বাড়িটা, ওই বাড়িটার পরেই ক্ষেত। অনিকেত ওই টিনের বাড়িটা পেরিয়ে দৌঁড়ানো বন্ধ করে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। আকাশে চাঁদ উঠেছে। স্পষ্ট চাঁদের আলোয় এদিক ওদিক তাকানোর পর তার চোখ পড়লো ক্ষেতের দিকে। কে যেনো দৌঁড়ে ক্ষেতের ভেতরের দিকে যাচ্ছে। অনিকেত ভালো মতোন করে না বুঝতে পেলেও, তবে পোষাক ও দৌঁড়ানোর গতিবিধি দেখে অনিকেত অনুমান করলো ওটা রীতা। কিন্তু এতো রাতে রীতা ক্ষেতের দিকে যাচ্ছে কেনো?

অনিকেত রীতার পেছন পেছন দৌঁড় দিলো। কিন্তু রীতাকে দৌঁড়ে ধরা যাচ্ছিলোনা। সে অনেক দূরে। একসময় অনিকেত দেখলো রীতা ওই তালগাছের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। অনিকেত রীতা, রীতা করে চিৎকার দিয়ে সেই তালগাছের দিকে এগোতে লাগলো..রীতার কি হলো কে জানে সে ওই তালগাছের থেকে এক ছুঁট দিয়ে ঝিলের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। ব্যাপার'টা অনিকেত বুঝতে পারছেনা ওটা কি সত্যিই রীতা? কিন্তু পোষাক'টা দেখেতো রীতাই মনে হচ্ছে। অনিকেত তখন রীতার কাছাকাছি চলে আসে। এবার সে দৌঁড় থামিয়ে, এক পা, এক পা করে রীতার নাম ধরে এগোতে থাকে৷ কিন্তু রীতা না কোনো কথা বলছিলো, না পেছন ফিরে অনিকেতের দিকে দেখছিলো। এইভাবে অনিকেত যখন রীতার একেবারে সামনে চলে আসে। এক'হাত দুরত্বে তখন রীতার গায়ে হাত দিতেই রীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। কি হচ্ছিলো ব্যাপার'টা বুঝে ওঠার আগেই অনিকেত'কে এক ঝটকা দিয়ে, পেছনে টেনে নিয়ে এলো। অনিকেত পেছনে পেছন ফিরে দেখলো তার দাদু। অনিকেত বুঝতে পারছিলোনা তার দাদু হঠাৎ এইখানে এসেছে কেনো? আর এইভাবে টানলোই বা কেনো? 


অনিকেত কিছু বুঝে ওঠার আগে, অনিকেতের দাদু, অনিকেত'কে একটা চড় মারে, তারপর ঘাড় ধরে অনিকেত'কে কালা'কাকার বাড়িতে নিয়ে আসে। অনিকেতের দাদু বলে - গিয়ে পিসির কাছে শুয়ে পড়। অনিকেত কোনো কথা না বলে চুপ করে শুয়ে পড়ে। পরেরদিন ভোরবেলায় অনিকেতের দাদু গোছগাছ করে, অনিকেতকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি যাওয়ার এতো তাড়া ছিলো যে, সকালের চা পর্যন্ত খায়নি দাদু। সারাটা রাস্তা কোনো কথা বলেনি দাদু। বাড়ি ফিরে অনিকেতের দাদু অনিকেত'কে প্রচন্ড প্রহার করে। সকলে তখন অনিকেত'কে অনিকেতের দাদুর হাত থেকে বাঁচায়। কি হয়েছে, অনিকেতের দাদু এইরকম আচরণ করছে কেনো অনিকেতের দাদু কিছুই বলছেনা। একদম নিশ্চুপ। তবে অনিকেতের দাদু একটাই কথা বলেছিলো তোকে আর কোনোদিনো আড়ংঘাটায় নিয়ে যাবোনা। যদিও অনিকেতের দাদুর এইরকম আচরণ দেখে সকলে চিন্তিতো। তবে এরুপ আচরণের কারণ অনিকেত জানতে পারেনা। অনিকেত বাড়ির সবাই'কে জিজ্ঞাসা করেছিলো পরে, যে দাদু সেদিন তাকে এইভাবে মারছিলো কেনো? 

কিন্তু কেউই সেইবিষয়ে কোনো কথা বলেনি। অথচ অনিকেতের সাথে কি হয়েছিলো আড়ংঘাটাতে সেই বিষয়ে সকলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনেছে, কিন্তু অনিকেত তার প্রশ্নের জবাব পায়নি। তবে ওই ঘটনার পর থেকে দাদুর সাথে আর কোনো কথা বলতোনা অনিকেত। অনিকেতের ২১ বছর হওয়ার পর অনিকেত সেই রহস্য সম্পর্কে জানতে পেরেছিলো। তাও আবার লুকিয়ে। 


সেইদিন রীতা অনিকেতের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো, বাবার সাথে। অনেক বছর পর তারা অনিকেতের বাড়িতে আসে৷ তো সেইদিন দুপুরেই ঘরের ভেতর সকলেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো! তখনি অনিকেতের প্রসঙ্গ আসতেই, অনিকেতের ঠাকুমা সেই বিষয়ে কথা টেনে আনে।

অনিকেতের ঠাকুমা বলে - অনিকেত নাকি রাতে গীতার ঘর থেকে বেড়িয়ে রীতাকে দেখতে পায়। রীতার পেছন পেছন অনিকেত দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সেই ঝিলের কাছে চলে যায়। অনিকেত সেই রাতেই মারা যেতো যদিনা অনিকেতের দাদু তার পেছন পেছন গিয়ে অনিকেতের জীবন বাঁচাতো।


অনিকেতের দাদু সামনেই বসে ছিলো! অনিকেতের দাদু এবার সে বিষয়ে মুখ খোলে - আসলে সেইরাতে আমারো ঠিক ঘুম আসছিলোনা। এপাশ ওপাশ করছিলাম তাও খুব আসছিলোনা। তখনি কে যেন ফিসফিসিয়ে বাইরে থেকে বলে ওঠে - তোর নাতিকে নিয়ে গেলাম। বাঁচাতে পারলে বাঁচিয়ে নে। এই কথা শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দোনোমোনো করে উঠে বাইরে আসি। আমি বাইরে বেড়িয়ে দেখি অনিকেত দৌঁড় দিয়ে ক্ষেতের দিকে এগোচ্ছে। আমি বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা তো হতে চলেছে। আমি, অনিকেতের পেছন পেছন দৌঁড়াতে ওর নাম ধরে ডাকতে থাকি, ওহ শুনতেই পায়না। এদিকে আমার মতোন ভারী বয়সের একজন বুড়ো মানুষ ইয়ং একটা ছেলের সাথে কি পারে। শেষে অনিকেত'কে ঝিলের কাছে গিয়ে ধরি। আর এক চড় দিয়ে গীতার বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকি৷ আমরা যখন ওই তালগাছেত পাশ দিয়ে আসছিলাম তখন সেই তালগাছের মাথাতে একজন'কে বসে থাকতে দেখি। সে আমাদের দিকে মুখ করে বসে ছিলো এবং তার পা দোলাচ্ছিলো। মুখ'টা দেখা যাচ্ছিলোনা। আমি বুঝতে পেরেছিলাম অনিকেতের উপরে খুব খারাপ একটা জিনিসের দৃষ্টি পড়েছিলো। সেইরাতে যদি আমি না উঠতাম, তাহলে হয়তো অনিকেতের মায়ের কাছে সারাজীবনের জন্য ছোটো হয়ে যেতাম। হয়তো মুখ দেখাতে পারতাম না।


রীতা তখন বললো - সেই রাতে আমিতো বেড়োইনি।

অনিকেতের দাদু রীতাকে বলে - জানি ওটা তুই ছিলিসনা। ও যেই হোক, তোর রুপ ধরে এসেছিলো। 


অনিকেত পুরো ব্যাপার'টা বাইরে থেকে শোনে। অনিকেতের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিলো৷ কারণ সেই ঘটনার পর অনিকেত তার দাদুর সাথে কথা বলতোনা। খুব খারাপ একটা মানুষ ভাবতো অনিকেত, তার দাদুকে। অথচ সেই ব্যাক্তি'ই তার জীবন বাঁচালো। অনিকেতের ইচ্ছে করচগিলো দৌঁড় দিয়ে তার দাদুকে জড়িয়ে ধরে দাদুর কাছে গিয়ে ক্ষমা চেতে। কিন্তু দাদুকি সত্যিই ক্ষমা করবে তাকে?


গল্পটা সম্পুর্ণ কাল্পনিক..

গল্পটা এতো পড়বার জন্য ধন্যবাদ। গল্পে ভুলত্র‍্যুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের সুস্থতা ও সাফল্যতা কামনা করি। ভালো থাকবেন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror