Malay Biswas

Horror Thriller

3.6  

Malay Biswas

Horror Thriller

"ঠিকানা"

"ঠিকানা"

3 mins
451



সন্ধ্যা ছ'টায় হঠাৎ সুবীরের ফোন। অমল ফোন'টা রিসিভ করার পর, ফোনের ওপার থেকে সুবীর বললো - তুই কোথায় আছিস? তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাটে আয়। এইটুকু কথা বলার কানেকশন কেটে গেলো। অমল আবারো চেষ্টা করলো কিন্তু নট রিচেবেল বলছিলো। অগত্যা বৃষ্টি মাথায় করে তিন কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে সুবিরের ফ্ল্যাটে পৌঁছালো অমল। এদিকে আকাশ তখন চিৎকার করে করে কাঁদছে। আর তার চোখের জল বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ছে। সাথে আছে প্রবল মেঘ গর্জন ও ঝড়ো হাওয়া। পুরো ফ্ল্যাট'টা নিঝুম। একফোঁটা জল পড়লে সেই আওয়াজ'টাও শোনা যায়।


দুইতলায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ে হঠাৎ করেই কে যেনো বলে উঠলো - আরে অমল নাকি? অমল পেছন ফিরে দেখলো প্রদীপ কাকু। প্রদীপ কাকু হচ্ছে সুবীরের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। সুবীর ওনাকে কাকু বলেই ডাকে। তাই সেদিক থেকে উনি অমলেরও কাকু।


অমল সেই প্রদীপ কাকুর দিকে তাকিয়ে বললো - হ্যাঁ আমি। আসলে সুবীর আমাকে হঠাৎ ডেকেছে তাই এলাম। তুমি ভালো আছো তো?

প্রদীপ কাকু বললো - আর ভালো..অফিসে যা চাপ দিচ্ছে৷ শোন'না আমি এখন একটা অফিসের ট্যুরে যাচ্ছি। বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, ঠিকঠাক গোছগাছও করতে পারলাম না। 

তুইনা সুবীর'কে বলিস এই কাগজ'টা যেন কাকিমার হাতে দেয়। আর বলে এই ঠিকানায় কাকুর খাটের নীচে রাখা কালো যে ব্যাগ'টা আছে সেটা পৌঁছে দিতে৷ আসলে আমিই বলে দিতাম কিন্তু আমার বউ বাড়িতে নেই। আর ফোন'টাও নিয়ে যায়নি।


অমল - হ্যাঁ ঠিক আছে বলে দেবো। সাবধানে যেও।

এইবলে অমল সুবীরের ফ্ল্যাটের দিকে এগোতে লাগলো। ফ্ল্যাটের সামনে এসে দেখে তালা দেওয়া। সুবীরের মাথায় কিছুই আসেনা। অমল এবার সুবীর'কে বেশ কয়েকবার ফোন করে কিন্তু সুবীর ফোন ধরেনা। অমল তখন এই ঝড়বৃষ্টির রাতে সেখানে না দাঁড়িয়ে সে নিজের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 


অমল যখন ফ্ল্যাট থেকে নেমে নীচে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের সাইকেলের লক খুলছিলো তখন অমলের চোখ পড়ে সিকিউরিটি গার্ডের দিকে। সে ছাতা মাথায় দিয়ে এই ফ্ল্যাটের দিকেই আসছিলো। 

অমল'কে দূর থেকে দেখে চিনতে না পেরে ওই গার্ড অমল'কে জিজ্ঞাসা করলো - কে? 

(উনি রতন সাহা এই ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি গার্ড)

অমলও তখন ওই গার্ডের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। অমল বললো - আমি অমল। সুবীরের কাছে এসেছিলাম কিন্তু অহ কি নেই?

সিকিউরিটি তখন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অমলের দিকে। তারপর বললো - সুবীর তো তার বাবা-মায়ের সাথে দেশে গেছে। এইতো কাল ভোরেই বেড়িয়ে পড়েছে তারা।


অমল তখন থতমত খেয়ে যায়। অমল আমতা আমতা করে বলে - কিন্তু ওহ যে আমাকে ফোন করে এখানে ডাকে।


সেই সিকিউরিটি গার্ড তখন বললো - সুবীরের ফোন তো আমার কাছে। ওর ফোন খারাপ হয়ে যাওয়ায় সুবীর আমাকে দিয়েছিলো ফোনটা ঠিক করাতে। এখনো আমার কাছেই আছে ঠিক করাইনি। এরপর অমল সেই সিকিউরিটি গার্ডকে কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছিলোনা। তাই সে সাইকেল নিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে রওনা দেয়। তবে ওই ফ্ল্যাটের থেকে সাইকেল চালিয়ে বেড়নোর সময় অমলের চোখ যায় ফ্ল্যাটের চারতলা ছাদের উপর। সেখানে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে মুখ'টা দেখা যাচ্ছিলোনা। তখনি বিদ্যুতের একটা ঝলকানিতে সেই আগন্তুকের চেহারা ফুঁটে ওঠে। আরে এটাতো প্রদীপ কাকু। 

কি অদ্ভুত তার চাওনি। অমল এই দৃশ্য দেখে দ্রুত সাইকেলের প্যাডেল করে বাড়ির দিকে যেতে থাকে।


 - - - - - - - - - - - - - - - -(২)- - - - - - - - - - - - - - - - -

 


বাড়ি ফেরার পরেই আবারো সুবীরের নম্বর থেকে ফোন আসে অমলের। অমল দ্রুত সেই ফোন রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করার পরেই সুবীর বলে - কিরে তুই কি বেড়িয়ে গেছিস নাকি? শোন'না তুই আসিস না আজ। আসলে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের প্রদীপ কাকু আজ হঠাৎ করেই বুকে ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলো। আমরা সকলে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে হাসপাতাল যাওয়ার আগেই তিনি মারা যান। আমি তোকে অনেকক্ষন ধরেই ফোন করছিলাম কিন্তু তোকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। 

হ্যালো শুনতে পাচ্ছিস?? 

হ্যালো অমল...

আবারো ফোনের কানেকশন চলে যাওয়ায় ফোন'টা বন্ধ হয়ে যায়।


পাশের ঘরে অমলের বাবা টিভি দেখছিলো। টিভিতে যে মেয়েটা নিউজ বলছিলো, হঠাৎ করেই তার গতানুগতিক খবর বন্ধ করে বলতে থাকে। এই মুহুর্তে বিশেষ খবর, ঝড়ের রাতে হাসপাতাল থেকে বেড়নোর সময় গায়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় বছর ৫৫ বয়সের একটি লোকের। গায়ে সিকিউরিটি পোশাক ছিলো, পকেটে আইডেন্টিটি কার্ড দেখে সেই ব্যাক্তিটির নাম জানা যায় - রতন সাহা।


খবর'টা শোনার পর অমলের হাত কাঁপতে থাকে। অমল তখন প্রদীপ কাকুর দেওয়া কাগজ'টা বের করতেই সে দেখতে পেলো ওতে যে ঠিকানা'টা দেওয়া আছে সেটা একটা শ্মশানের ঠিকানা। তাদের পাড়ারি স্থানীয় শ্মশান। যেই ঠিকানায় প্রদীপ কাকুর খাটের নীচে রাখা কালো ব্যাগ'টা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু কেন? সেটাই অজানা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror