Manab Mondal

Abstract

4  

Manab Mondal

Abstract

প্রেমিক ভ্যাম্পেয়ার

প্রেমিক ভ্যাম্পেয়ার

4 mins
406


আমাদের বন্ধু মহলে অনেক দিন ধরে গুঞ্জন চলছে। গত দুই মাস ধরে দিপঙ্কর রোজ বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে প্রতিদিন এক বোতল করে A group এর রক্ত কিনে গোপনে বাড়ি ফেরে। কিন্তু এ সব কথা তো গোপন থাকার নয়। ফুর্তিবাজ দিপঙ্কর এর ছেলে বিদেশে চাকরি করে। বৌ ও সুস্থ সবল। তাহলে ঠিক কি করছে রক্ত দিয়ে তাছাড়া আমরা জানি ওর রক্তের গ্রুপ 'o' আর বৌদির 'AB' এ রূপ অবস্থায় ও " A " রক্ত কি করছে রোজ। তন্দ্র সাধনা বা কালা যাদু করেছে না তো । শেষমেশ ঠিক করলাম এ রহস্যের সমাধান করতে আজ আমরা দিপঙ্করকে চেপে ধরলাম।

অনেকক্ষণ জেরার পর দিপঙ্কর ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠলো। কি ব্যাপার বুঝতে পারলাম আমরা বন্ধুকে দুঃখিত দেখে আমরা বললাম " ছেড়ে কাঁদিস না বাপু। তোকে কিছু বলতে হবে না!"

কিন্তু এবার সে সেই রক্ত কেনার গল্পটা জানাবেই আমদের।

দিপঙ্কর বললো " বন্ধুরে মনের দুঃখ কি বলবো এ এক তিনকোনা প্রেমের গল্প। গল্প টা আমি তোদের বললবো কিন্তু মাঝখান থেকে তোরা কোনো কথা বলবি না তোরা। আমি বোর করবো না । সংক্ষেপে বলল বো গল্প টা। তার আগে বল তোরা ভ্যাম্পায়ার কি জানিস বা বিশ্বাস করিস? আসলে আমার গল্পটা ভ্যাম্পায়ার নিয়ে "

সবাই তা শুনে ভীষন উত্তেজিত হয়ে পরলাম। কারণ ১৮১৯ সালে প্রকাশিত হয় ইংরেজ লেখক জন পোলিডোরি লেখা "দ্য ভ্যাম্পায়ার" বই,যার মাধ্যমেই আধুনিক কথাসাহিত্যের ও কেতাদুরস্ত ভ্যাম্পায়ার-ধারণার আমরা পাই। বইটি সাফল্য হয় এবং তর্কসাপেক্ষে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে লেখা সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ভ্যাম্পায়ার কাহিনি এটাই।১৮৯৭ সালে প্রকাশিত ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা উপন্যাসটিও ভ্যাম্পায়ার-বিষয়ক উপন্যাসের একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন । এই উপন্যাসটিই আধুনিক ভ্যাম্পায়ার কিংবদন্তির ধারণা দিয়েছিলো। উনার সমসাময়িক আইরিশ লেখক জোসেফ শেরিডান লে ফানুর কারমিলা উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭২ সালেই। তবে ড্রাকুলা উপন্যাসের সাফল্যই পরবর্তীকালে কথাসাহিত্যে ভ্যাম্পায়ার কথাসাহিত্যের বর্গটির জন্ম দেয় এবং সেই সময় থেকেই ভ্যাম্পায়ারেরা ভৌতিক কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান চরিত্রে পরিণত হয়েছে তাই নয় কথাসাহিত্যের বাইরেও চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও ভিডিও গেমের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীতেও তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।

তাই আমি বললাম " সে তো আমরা স্ত্রীকে বিশ্বাস করি না ওরা ও আমাদের করে না তবু তাদের সাথেই আমাদের সংসার করতে হয়। তাই তুই বলল তোর গল্প"

ওরা কান্নার গতি বেড়ে গেল বললো" গল্পটা আমার সরল স্ত্রীকে নিয়েই।"

ওকে আমরা থমকে বললাম " ভনিতা না করে ভাই গল্প টেলার দে। বেশি সময় নেই আমাদের হাতে।"

একটু থতমত খেয়ে ও বলা শুরু করলো " ঠিক আজ থেকে দুই মাস আগে , সকাল বেলায় আমি আমার বাগানে গাছগুলো দেখছি। ভোর ভোর হবে আলো তখনও ফোটে নি। জানিস তো ফুল চোর বৌদিদের দেখার জন্য ভোরে ওঠা গাছ পোতা আমার। হঠাৎ দেখি বাগানের ভিতর চেয়ার বসে আছে একটা কালো কোট পরা লোক। দৌড়ে গিয়ে দেখি একটা সাহেব চোখে রঙিন চশমা । ভাবলাম চোর হলে তো এরকম প্রকাশ্যে বসবে না। নিশ্চিত , পাগল হবে। তাকে বললাম "ভাগ এখান থেকে।"

সে বললো " জানেন আমি কে ? আমি ভ্যামপেয়ার!" 

আমি একটু হাসলাম। ও সাথে সাথে এক লাফে ছাদে উঠে গেলো বাদলে মতো। তারপর কার্নিশে ঝুলতে থাকলো বাদূরের মতো। দেখে আমি তো ভিরমি খেলাম। উনি আমাকে চোখে জল টল দিয়ে জ্ঞান ফেরানো। তুই তুকারি করে আগেই ভুল করে ফেলেছি ,আমি ভয় ভয়ে বললাম " পিলিজ আমাকে কামবেন না। আমি আর কখনো বৌদি দেখতে এ বাগানে আসবোনা।"

ভ্যামপেয়ার টা হো হো করে হেঁসে উঠলো , ওর দাঁত কপাটি খুলে আমার হাতে দিয়ে দিলো। অভয় দিলো সেও আমার মতো এক বৌদির প্রেমিক। বৌদির সাথে দেখা করতে এসেছে। সে আসলে রক্ত খাওনা বেশি। কারণ রক্ত তো অনেক ধরনের অসুখ বিসুখ হয়। তাছাড়া A group রক্ত না খেলে ওর পেটে খারাপ হয়।

নিশ্চিত হলাম একটু কিন্তু কোন বৌদির প্রেমে পাগল হয়ে দিনের বেলায় আসার ঝুঁকি নিয়েছে সেটা জানতে ইচ্ছে করলো কারণ সূর্যের আলো ফুটতেই সে বাড়ি ছায়ায় অংশে গিয়ে লুকানোর চেষ্টা করলো।

বৌদির নাম সে বলতে চাইলো না। জানালো সে বৌদির সাথে তার প্রেমটা এক তরফা। দাম্পত্য জীবনে সুখী না হয়ে বৌদি আত্মহত্যা করতে চায়। কিন্তু সাঁতার জানে না তাই জলে লাফ দিতে ভয় পায়। গায়ে আগুন দিতে ভয় করে। কারণ দেখতে খারাপ হয়ে যাবে। আবার উঁচু দিয়ে লাফ দিতে ভয় পায় মাথাটা ঝিমঝিম করে‌। বাড়িতে সিলিং ফ্যান নেই তাই গলায় দড়িও দিতে পারে না। তাই ওর সাহায্য চেয়েছে উনি এক কামড়ে যাতে মেরে দিতে পারে। ও প্রথমে রাজী হয়নি। কিন্তু পরে শুনলো। ওর বরটা নাকি কাল শুধু সাতেরো বার চা করিয়েছে। ভীষন কিপটা স্বামী পিঁয়াজ এর দাম বেশি বলে বাঁধা কপি মিশিয়ে পিঁয়াজি করিয়েছে। বৌদির কলা ওর ব্লাড রিপোর্ট সেন্ড করে রিকোয়েস্ট পাঠাইছি তার hiv, হেপেটাইদিস V , করোনা কোন অসুখ বিসুখ নেই। এই রিপোর্ট দেখে সে আরো আবেগী হতে পরে। বৌদিকে সে খুব ভালো বাসে । তাঁর জন্য সে যেকোনো ঝুঁকি নিতে পারেন। তাই আজ এলো এ বাড়িতে।

কথা শুনেই আমি আঁতকে উঠলাম। ও নিশ্চিত নিলুকে মানে আমার বৌকে ভালোবাসে।  নিলুকে আমি খুব ভালোবাসি। ও বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি গেলেই আমার জীবনটা নুন ছাড়া সিদ্ধ ডিম এর মতো হয়ে যায়। ওকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা আমি ভাবতে ই পারি না।

তবু কনফার্ম করা জন্য ভ্যামপেয়ার মুখে নিজের নিন্দা মন্দ শুনলাম। আর নিজেকে বদলে নেবার প্রতিশ্রুতি দিলাম। ওর ওকে রোজ ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে A group এর বিশুদ্ধ রক্ত এনে দেবার দায়িত্ব নিলাম। এখন ও খুশি ।আমরাও সুখী। একটা ভালো বন্ধুর জন্য এটুকু তো করতেই হবে।"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract