STORYMIRROR

Ankita Mukherjee

Horror Fantasy Thriller

2  

Ankita Mukherjee

Horror Fantasy Thriller

পোখারার অজানা রহস্য

পোখারার অজানা রহস্য

5 mins
112

হিমালয়ের পাদদেশে আন্তর্জাতিক জাদুঘরের দরজাটা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেলো উদ্গাম। এই পোখারা শহরের জাদুঘরটির চারিধারে বিস্তারিত সবুজ। তারই মাঝে চতুষ্কোণ করে কাটা পাথরের মসৃণ রাস্তা। ডান দিকে তিন বাই পাঁচ মিটারের দৈর্ঘ্য প্রস্থ একটি ছোট্ট জলা। উচ্চতায় জলাটি দের-দু ফুটের বেশি নয়। জলাটি বাঁধানো সাদা মার্বেল দিয়ে। জলার উপরে ভাসমান ছোটো-ছোটো তিনটে গোল পাথরের বেদি। ফুটে থাকা প্লুমেরিয়া, ল্যাভেন্ডার আর রোজমেরি, আদ আঙ্গুল কচি সবুজ ঘাসের মধ্যে দিয়ে উকি দেওযায় বেদিগুলির শোভা আরো বেড়ে গেছে। বেদি ছেড়ে একটু এগোতেই খয়েরী কাঠের সিরি। সেগুলো পেরোলেই পারাকেত সবুজ ও সিফোম সবুজের মিশ্রণে মার্বেলের ছাদ। জাদুঘরের দেওয়াল সাদা, খয়েরী ও প্রাচীন সোনালী মিশ্রিত রঙের মার্বেলে সুসজ্জিত।

উদ্গাম এখানে মাত্র দশ দিন আগেই চাকরি পেয়েছে। সজিতের সাথে বন্ধুত্ব স্কুল জীবন থেকেই। মাধ্যমিকে দুবার হোচট খেয়ে তিন বারের বার আর পরীক্ষাই দেয়নি। তারপর বিশ বছর বয়সে এসে টাকার দরকার হওয়ায় সাজীতের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েই, কর্তপক্ষের কাছে পেশায় দারোয়ান সাজীতের আবেদনে উদ্গামের এখানে সুইপারের চাকরি হয়ে যায়।

একদিন দুপুরে জাদুঘর ঝারপোছ করার সময় কেমন যেনো মাংসপচা গন্ধ পেলো উদ্গাম। সাজিতের কাছে কথাটা জানানো মাত্র সে বললো, "আমি এখানে অনেকদিনই কাজ করছি। মাঝে-মাঝে আমিও যে বিকট গন্ধ পাইনা এমনটা নয়। আর তাছাড়া পিছনেই জঙ্গল। তো কোনো জংলী জানোয়ারের পচা-গলা মাংসের গন্ধ না পাওয়াটাই অসভাবিক। তবে আমার নাক সয়ে গেছে, আর তুইও অভ্যেস করেনে। জানবি এই গন্ধ নাকে নিয়েই পেট চালাতে হবে"। "আমি সে কথা কখন বোললাম" বলে উদ্গাম আবার বললো, "আমি একা উপরের ফ্লোরে আজ কাজ করছিলাম, সশিংটাও ডুব মেরে দিল আজ। আমার একা-একা ভয় লাগছিল, তাই তোকে বললাম"। সাজিত বললো, "বেশ বুঝলাম। তুই আজ তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে চলে যা, নইলে রাত বাড়লে আরও ভয় পাবি"। "কেনো?" উদগামের প্রশ্নে সাজিত মুখে রাজ্যের বিরক্তি এনে বললো, "কারণ তুই যে গন্ধটা পেয়েছিস সেটার লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পাবি যদি সন্ধ্যার আগে বাড়ি না যাস। আর যদি সেই দৃশ্য দেখিস তাহলে তোর নিজেকে বাঁচানোটাই, নিজের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে"। সাজিতের কোথায় উদগামের কপালে ভাঁজ পড়ল। সে জিজ্ঞেস করলো, "তোর কথা অনুযায়ী আর কিছুক্ষনের মধ্যে এখানে থেকে না গেলে আমার বিপদ হবে, তাইতো। তো তুই আমায় বাচাবিনা সাজিত। ভাই তুই আমার স্কুল টাইমের ফ্রেন্ড। তোর জন্যেই আমি এই জবটা পেয়েছি"। সাজিত এবার একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, "স্কুল টাইমই বটে। তখনও যা ছিলিশ এখনও তাই আছিস। একেবারে ভীতুর ডিম। আর তোর যেকোনো বেপারে মাত্রাছাড়া কৌতূহলও যায়নি। তবে কৌতূহলি হলে এখানে বেশিদিন তুই কাজ করতে পারবি না। যদিও তোর চাকরির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে এসব কিছুই লেখা ছিল না, কিন্তু আমি তোকে আগাম সতর্ক করে দিলাম, পরে আমায় দোষ দিতে পারবি না। কারণ একটা জিনিস নিশ্চই তুই খেয়াল করেছিস, যে সন্ধ্যার পরে কোনো গার্ড এখানে পাহারা দেয়না। অর্থাৎ ভয় সবার প্রনেই আছে। আর আমারও আছে। তাই তোর ভালোর জন্যেই কথা গুলো বললাম, এবার তুই না শুনলে আমার কিছু করার নেই"। কথা শেষে বাজার ম্যালের রাস্তা ধরে সাজিতের চলে যাওয়া দেখলো উদগাম।

ভয় লাগছিল, তবুও কাজ শেষ করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। কিছুক্ষন লাইট পোস্টের গায়ে হেলান দিয়ে দুটো সিগারেট শেষ করলো উদগাম। কিন্তু বাজার ম্যলের রাস্তায় পা বাড়াতেই সাজিতকে তার দিকে এগোতে দেখে দাড়িয়ে পড়ল। সাজিত তার এক মিটারের মধ্যে পৌঁছতেই, উদগাম বললো, "তুই এসময় এদিকে? তোর তো এখন ডিউটি না"। উদ্গমের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে, সে অন্য এক প্রশ্ন করলো তাকে। "তোকে বলেছিলাম না তুই বিকেলের মধ্যে কাজ সেরে এখন থেকে চলে যাবি। সন্ধ্যে এখানে কটাবি না। তাউ আমার কথা শুনলো না। এবার তোর ভালোমন্দ তুই নিজেই বুঝে নে"। বলে ছেলেটা জাদুঘরের পিছনের জঙ্গল অদৃশ্য হয়ে গেল। উদ্গামের কৌতুহলটা বেড়ে গেলো। কৌতূহল অতি বিষম বস্তু। এর কল্যাণে শত বিপদ জেনেও, মানুষ সেদিকেই পা বাড়ায়।

সজিত একটা গাছের গুঁড়ি তার বর্যো পানীয় ভিজিয়ে যখন প্যান্টের জিপ টেনে জঙ্গল থেকে বেরোবে বলে পিছন ঘুরল, হঠাৎ তার কানজোড়া সজাগ হয়ে গেল শুকনো পাতার মচ-মচ শব্দে। সাজিত পা বাড়ালো। কিন্তু যেতে চাইলেই তো যাওয়া যায়না। তার ঠিক কানের পিছনে, ঘনো-গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলো। পিছন ঘুরতেই এত কাছ থেকে দুটো রক্তিম আলো দেখে কএক পা পিছিয়ে যায় সাজিত। গলার আওয়াজে সে বুঝতে পারে সামনের অবয়বটি উদ্গামের আর ওই আলো দুটি আসলে রক্তবর্ণ দুটি চোখ। উদ্গম বলে, "আমি সত্যিই তখন খুব ভীতু ছিলাম, কিন্তু তোর মত সাহসী ছেলের ভয় দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। কি যেনো বলেছিলিস তুই, আমি কাজ তাড়াতাড়ি না করলে কিসের যেনো লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পাবো, আর তখন আমার লাইফ থ্রিটনিন হবে, আরো কতকিছু বলছিলিস। আসলে ব্যাপারটা কি জানিসতো, সোজা বাজার ম্যাল এগিয়ে গেলেই পারতিস। এখানে ট্যাংক খালি নাই বা করতিস। আমার খিদের সময়টা কিছুটা পারতোনা তাহলে তোর জন্যে। এখন আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে, আর আমার শক্তি নেই বাইরে থেকে শিকার ধরে আনার। তাই আজ তোকেই খাবো"। সাজিতের ফ্যাকাশে মুখটা দেখে একটু হাসলো উদগম। তারপর আবার বললো, "সরি ভাই, কিন্তু তোর কোনো অধিকার নেই আমার ডিনার প্লেস নষ্ট করার নিজের বর্জ্য তরল দিয়ে"। সজিত একটা আঙ্গুল উদগামের দিকে তুলে বললো, "পাগল হয়ে গেছিস নাকি, কি যা তা বকছিস"। উদ্গাম একটুও না হেসে, যথেষ্ট গম্ভীর ভাবে বললো, "তখন কথা গুলো সত্যিই বলেছিলাম, কারণ আমি জানতে চেয়ছিলাম যে আমি ছাড়া অন্য কারোরও কি নাকে পচা গন্ধ গুলো আসে। তাহলে আর একটু গভীরে পচন দেহ গুলো রাক্তে হবে। এই ভেবেই ভয় পেয়েছিলাম যে আমায় কেউ সন্দেহ করবে না তো গন্ধ পেয়ে। বা আমার সত্যি জানতে পারবে না তো। কিন্তু আমার এটা বোঝা উচিত ছিল, যে মানুষ হলো সামাজিক পশু। তাই আমার মত দুয়েকটা বিরলকে কেউ খুব একটা সন্দেহ করে না। কারণ আমাদের দেখতে তো সাধারণ মানুষের মতোই। তাই আমাদের সবাই গল্পের বইতেই পড়তে ভালোবাসে। অবশ্য স্কুল জীবনে ভীতু ছিলাম কারণ তখন নিজেকে চিনে উঠতে পারিনি"।

কথা শেষে উদগামের পরিবর্তনটা সাজিতের নজর এড়ালো না। মুহুর্তের পরিবর্তনে ফর্সা হাত দুটো পুরু লোমে ঢেকে গেলো। লাল গোলাপের মত চোয়াল দুটোয় চাপ দাড়িরও বেশি লোমের আস্তরণে মুখ ঢেকে গেল। শরীরটা কোমর থেকে বেকে হাঁটুর উপর ঝুঁকে যাচ্ছে। মুখের দুপাশ দিয়ে একজোড়া ধারালো দাঁত বেরোচ্ছে। বইতে আর সিনেমায় এই ধরনের পরিবর্তন দেখেছে বলেই সাজিতের এই পরিবর্তন বুঝতে বাকি রইলো না। সে ঊর্ধ্ব সাশে পিছন ফিরে দৌঁড়াতে গেলো। গাছের একটা গুড়িতে পা লেগে মুখ থুবড়ে পড়ল সাজিত। ঘাড়র উপর আবার ঘনো-গরম নিঃশ্বাস দৃঢ হলো।

পর দিন সকালে সসিং বললো, "আজ সাজিত এলো না কেনো, ওর কি শরীর খারাপ নাকি, ও তো কখনো হঠাৎ না জানিয়ে ছুটি করেনা"। উদ্গাম বললো, "ও আর কোনোদিনও আসবে না। চাকরি ছেড়ে দিয়েছে"। "কেনো" সোসিং প্রশ্ন করতেই উদ্গাম বললো, "হয়তো ওর আর চাকরি করার ইচ্ছা ছিল না"। সোশিং অবাক হয়ে বললো, "সেকি কেনো? এ আবার কেমন কথা। তাহলে ওর পেট চলবে কীকরে?" সসিংকে উদ্দেশ্য করে মুখে একটা ক্রুর হাসি এনে উদগাম বললো, "কেনো, কি, কবে, এত কিছু তোমার না জানলেও হবে, কারণ কৌতহল ভালো না"।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror