পলাশের কোলে সোনালী মুহূর্ত
পলাশের কোলে সোনালী মুহূর্ত


শীতের রুক্ষতার পরেই প্রকৃতির রাজ্যে ঘটে পটপরিপর্তন। আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের,প্রকৃতি সেজে ওঠে অশোক আর গোলাপে। বাঁকুড়া -পুরুলিয়ার বনে হেসে ওঠে আগুনরঙা পলাশ। পাহাড়কে প্রেমের গানে ভরিয়ে ফুটে ওঠে রডোডেনড্রন। অপরূপ সাজে সেজে ওঠে ডুয়ার্স। প্রেমের বার্তা নিয়ে ফুটে ওঠে লাল গোলাপ। প্রেমিককে দেখে হেসে ওঠে স্বচ্ছ আকাশের নীলিমা। কবিমনকে শিহরিত করে অস্তমিত সূর্যের লালিমা। হৃদয়কে প্রেমের শিহরণে শিহরিত করে বয়ে চলে দখিনা বাতাস। নিঃসঙ্গ প্রেমিকের মনে গীত হয় বসন্তবিলাপ।
যাই হোক,আসি নিজের কথায়। বসন্তের দখিনা বাতাসে বাঁকুড়ার পলাশকে দর্শন করার সৌভাগ্য হলে সেই সুযোগ কে না ছাড়ে! আর এরকমই কোনো এক বসন্তের সকালে দাদুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম বাঁকুড়ার শাল সেগুনের গহন বন দেখতে। তখন আমি ক্লাস নাইনের একজন কিশোর, প্রকৃতির প্রেমে পুরোপুরি মত্ত। আর সেই বনে আগুন জ্বালিয়ে খেলে উঠেছিল পলাশ। আর আরেকজন যে হৃদয়কে মুগ্ধ করেছিল,যাকে দেখার পর হৃদয়ে বেজে উঠেছিল অজানা কতো জলতরঙ্গের লহরী,সে হল বিদিশা। কৈশোরের হৃদয় পেয়েছিল প্রেমের ছোঁয়ার অনুভূতি। আমাকে দেখে প্রথম যখন হেসেছিল সে, নির্নিমেষ চক্ষে তাকিয়
ে ছিল তার চন্দ্রজ্যোৎস্নাস্নিগ্ধ মুখমণ্ডলীর দিকে। কালো মেঘের মতো চুল আর হরিণীর মতো আঁখি দেখে মনের মধ্যে প্রথমবারের জন্য জেগে উঠেছিল হাজার কবিতা। আমার থেকে একবছরের ছোট ছিল,ওর সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত ছিল স্বপ্নের ন্যায়। ওকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছি প্রথম কবিতা। প্রথম গল্পের নায়িকা ছিল ও।
যাই হোক, দশ বছর কেটে গিয়েছে। বসন্ত এসে গেছে। বইতে শুরু করেছে দখিনা বাতাস। শীতের রুক্ষতার পর মহীরুহতে জেগে উঠেছে নবীন কিশলয়। কোকিলের কূজনে মুখরিত হয়েছে সারা পৃথিবী। প্রেমের বার্তা নিয়ে ফুটে উঠেছে লাল গোলাপ। পুরুলিয়ার পাহাড়ে আগুন জ্বালিয়ে ফুটে উঠেছে পলাশ। এবার একাই যাচ্ছি বাঁকুড়ায়। বিদিশার সাথে দেখা হবে কি?
কে জানে হয়তো পরমেশ্বরের কৃপায় এবার পূর্ণ হবে আমার অভিলাষা,হয়তো দেখা হয়েই যাবে হৃদয়হারিণী বিদিশার সাথে। আর সেই মুহূর্ত সত্যিই হবে অনন্য।
ধনসম্পদ কেড়ে নেওয়া যায়,পরিস্থিতি পালটে যায়। ঘাসের আগায় শিশিরবিন্দুর মতো যৌবন চিরকাল থাকে না। বার্ধক্য আসে ,শরীর ভেঙে পড়ে। কিন্তু এইসব সোনালী মুহূর্ত কেউ কেড়ে নিতে পারে না। এইসব মুহূর্ত চিরকাল মনের মণিকোঠায় স্মৃতিসুধা হয়ে থেকে যায়।