Rima Goswami

Tragedy Inspirational

4.0  

Rima Goswami

Tragedy Inspirational

ফুটপাতের শাড়ি

ফুটপাতের শাড়ি

3 mins
291


পুজো এলেই মোহনার বুকটা ধড়াস ধড়াস করে কেমন । একেই এই বয়সেই হাই প্রেসার , সুগার সব কমিয়ে ফেলেছে সে । স্বামী রাতুলের ওই দশ হাজার টাকা মাইনেতে কুলিয়ে ওঠা দুর্ভর হয়ে দাঁড়িয়েছে মোহনার । মেয়েটার পড়ার খরচ , সংসারের খাই খরচ করে কিছুই থাকে না তেমন । এর পর আবার একটা ঠিকে ঝি রাখতেই হয়েছে কারণ মোহনার অসুস্থতা । পুজোর সময় সেই কাজের মেয়েটাকেও বোনাস দিতে হবে । না দিলে ওই বেচারিই বা কি করে পুজোর কেনা কাটা করবে ? রাতুল বোনাস নিয়ে মোট পনেরো হাজারটা টাকা পাবে এ মাসে । কিন্তু যে খরচের লিস্ট হয়েছে তাতে করে আবার লোন না করতে হয় ! সরকারি চাকুরে স্বামী ননদের আবদার পুজোর সময় বাপের বাড়ি থেকে ব্র্যান্ডেড তত্ব না করলে নাকি জামাইয়ের কাছে মান থাকে না । তা ওদের পছন্দ মতো তত্ব করতে নয় নয় করে হাজার সাতেক লাগবে । শাশুড়ি মা ছেলের আয় সমন্ধে ওয়াকিবহল তবুও ওনার দাবি পুজোতে একটি রেশম জামদানি শাড়ি ওনার লাগবে । ওই শাড়ি নিশ্চই পাঁচ হাজার টাকার কম হবে না । তা হলে কাজের মেয়ে , ননদ , শাশুড়ি এদের উপলক্ষেই তো তেরো হাজার টাকা খরচা ! তো বাকি দুই হাজার টাকাতে তো সারা মাসের খরচই চলবে না !


বিয়ের পর থেকে মোহনা কোনদিন নিজের জন্য একটা নতুন শাড়ি কিনতে পারেনি । সে হয়ত বেশ দামি দামি শাড়িই পড়ে কিন্তু সবই ননদের ফেলে দেয়া । রাতুল আর মোহনার না হলেও চলে কিন্তু ওদের বাচ্চা মেয়েটা ? ওকে তো কিছু কিনে দিতে হবে ? এসব কথা ভাবতে ভাবতে এই শরৎ কালেও ঘেমে উঠেছে মোহনা । তা করতে করতেই কাজের মেয়ে শান্তি ঢুকলো । বৌদিকে চিন্তায় দেখে শান্তি কিন্তু কিন্তু করে জিজ্ঞাসা করেই ফেলে যে বৌদির কি হয়েছে ? মোহনা প্রথমে কিছুনা বলে কাটিয়ে দিতে গিয়েও বলেই ফেলে ওর সব চিন্তার কারণ । আর কত চিন্তার পাহাড় একার পিঠে বইবে ? রাতুলকে কিছুই বলা যায় না তেমন , ও বেচারা এমনিতেই চিন্তা করে ।

শান্তি সব শুনে অবাক হয় । মুখ বেঁকিয়ে বলে , আমি না হয় হাজারটা টাকা তোমার কাছে নিতাম না । একান্তই অভাব তাই নিতে হয় আমাকে , সে না হয় তুমি কিছু কম দিও আমাকে । তা বলে জেঠিমার আর তোমার ননদের কি আক্কেল শুনি ? তারা জানে না , দাদাবাবুর কত টাকা রোজগার ? তুমি একটা কাজ করো বৌদি আমাদের মত মহিলা সমিতি ফান্ডে জয়েন করো । যখন ইচ্ছা টাকা ধার পাবে , সুদ না বরাবরই । কথাটা শুনে নড়েচড়ে বসে মোহনা । শান্তির বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে যায় সে । পরে ভাবনা চিন্তা করে মোহনা শান্তির কথা মতো মহিলা সমিতি থেকে দশ হাজার টাকা ধার করেই ফেলে । কথা হয়েছে মাসে মাসে শোধ করতে হবে টাকাটা । এবার বাজার গিয়ে রাতুল বেশ অবাক হয় ! মোহনা সস্তার হলেও নিজের জন্য আর রাতুলের জন্য জামাকাপড় কেনে । ননদের বাড়ি তত্ব করতে গেলে ননদ বলে , বৌদি মায়ের কাছে শুনলাম তুমি শেষে ফুটপাতের সস্তা শাড়ি কিনেছো নিজের জন্য ? কেন আমার দেওয়া ভালো ভালো শাড়ি গুলো কি পড়তে ভালো লাগছে না ? মোহনা শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বলে , আমার রায়বাঘিনী ননদিনী দুর্গা পূজা যে তোমার আমার সকলের । সেই পুজোতে নিজের সাধ্য অনুযায়ী শাড়ি কিনে পড়বো তাতে কোন লজ্জা তো নেই । ফুটপাতের হলেও ওটা যে আমার পুজোর নতুন শাড়ি । আর তোমার দেওয়া গুলো দামি হলেও বাতিল করা শাড়ি । ননদ বৌদির কথা শুনে চুপ করে যায় ।


বাইরে কোন ক্লাবের সামনে মাইকে বাজছে তখন ...

অশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর , ধরণীর বহিরাকাশি অন্তর্হিত মেঘমালা ,

প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী

জগন্মাতার আগমন-বার্তা .....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy