Himangshu Roy

Crime Tragedy

3  

Himangshu Roy

Crime Tragedy

ফিফটি টুর প্রেম

ফিফটি টুর প্রেম

3 mins
10.4K


একটা ছোট গ্রাম্যশহর রাত্রি আন্দাজ দশটা হবে, কনকনে ঠান্ডা তার উপর বাতাস চলছে, রাস্তাঘাট জনশূন্য, পাহাড়াদার কুকুরগুলোরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না এই ঠান্ডায়। তবে মাঝেমধ্যে দু একখানি ট্রাক

শব্দ করে আসা যাওয়া করছে । কুয়াশা তেমন পড়েনি তাছাড়া পুর্নিমার রাত পথ ঘাট ঝকঝকে তকতকে যেন কোন আসন্ন ফিল্মের স্টুডিও সেট করা হয়েছে।

স্ট্রীটলাইটের আলোতে শুনশান স্ট্যান্ডের খন্ডচিত্র দেখা যাচ্ছে । মৃদু হাওয়ায় মাঝে মাঝে পড়ে থাকা প্লাস্টিক লাফালাফি করছে হাওয়ায় জুয়েলারি দোকানের ভিতর থেকে লাইটের আলো বেরুচ্ছে । মনে হয় লোকটা আজ দোকানেই ঘুমিয়েছে । পার্টি অফিসের চালা থেকে পতাকা উড়ছে পতপত করে ।

বিশ্রামাগারের অন্ধকার কোনা থেকে অস্ফুট শব্দ শোনা যাচ্ছে 'যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক আমি তোমায় ছাড়ব না মা'

গান গাইছে ফিফটি টু , ফিফটি টু মানসিক ভারসাম্যহীন।

ফিফটি টু এখানে কবে এসেছিল জানি না, আমরা এখানে আসার আগেই এসেছিল সবাই বলে। আর এই উদ্ভট নামটা যে কেন দেওয়া হয়েছিল তাও জানি না। শুধু জানি যে বিহারের দিক থেকে এসেছিল, ঘর সংসার আছে কিনা তাও কেউ জানে না। দুপুরবেলা মিষ্টির দোকানের দুটো পরোটা খেয়ে দিন গুজরান হয়ে যায়, এইভাবেই চলছে।জায়গাটার প্রতি মায়া জমেছে মনে হয় ফিফটি টুর।

কয়েকদিন হল একটা পাগলিকে দেখা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে রাস্তাঘাটে বা কোন গাছের তলায়। পরনে শরীর ঢাকার শাড়িটুকুও নেই, চুলে মাকড়সার জাল ভরা , চোখে মুখে বালি কাদা মাখানো , স্তনের আশেপাশে স্পষ্ট নখের আচঁড়!

নিম্নাঙ্গেও আঘাতের ছাপ স্পষ্ট , কোমরে নাভির পাশে দাঁতের প্রতিচ্ছবি, নিতম্বে লাল লাল ছোপ।একটি অসহায় রাতের স্পষ্ট নিদর্শন।

রাতে নারীদের প্রধান ভয় এখন ভূতপ্রেত নয়, ভয় হল নররূপী পিশাচযোনিখাদকরা যারা দেখতে মানুষের মতই।

ঠান্ডা হাওয়া বইছে শনশন করে, পাগলিটা কাপঁতে কাঁপতে বিশ্রামাগারে ঢুকল। ঢুকে দেখে একটা বস্তা পড়ে আছে,কিন্ত টানলে আসছে না। আসলে বস্তার মধ্যে ফিফটি টু শুয়ে আছে আর অঘোরে ঘুমাচ্ছে । টানাটানি করতে করতে একসময় ফিফটি টুর ঘুম ভাঙল

-"কোন হ্যায়"

বস্তা থেকে বেরিয়েই ফিফটি টু দেখল পাগলিটার মুখখানা , গোলগাল মুখ , বড় ভোলা ভোলা চোখ টিকালো নাক কপালটা একটু ছোট তবে মানান সই , নাকে একটা ছোট সোনার ফুল ।

পাগলিটার অবস্থা দেখে ভারি মায়া হল ফিফটি টুর, বস্তাটা নিয়ে পাগলিটাকে ইশারা করল ভিতরে ঢুকতে কিন্ত পাগলিটার মনে ভয় জাঁকিয়ে বসে, চোখ যেন বলে দিচ্ছিল মনের ভাষা। ফিফটি টু বস্তাটা রেখে একটু সরে যেতেই পাগলিটা ক্ষিপ্র গতিতে চটের বস্তাটা নিয়ে বস্তাটার ভিতর ঢুকে বসে পড়ল আর ফিফটি টু হাসতে লাগল

"হিহি হাহা হোহো হুহু "হাসি যেন থামতেই চায় না আর পাগলিটা বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।

হাসি থামলে ফিফটি টু পাগলিটার কাছে গিয়ে বসে, পাগলিটা ভয়ে জড়সড়,হাত দুটো নাড়িয়ে কাছে যেতে নিষেধ করছে অবিরাম । অতঃপর ফিফটি টু সরে আসে আর ঠান্ডা কাটানোর জন্য বিচিত্রসব অঙ্গভঙ্গিমা করে নাচতে থাকে যদিও একে নাচ না বলে অঙ্গসঞ্চালন বা হাতপাছোঁড়াছুড়ি বললেই বেশি ভাল মানাবে মনে হয় ।

হঠাৎ নিশ্চুপ পাগলিটা হেসে ওঠে খিলখিলিয়ে তারপর আবার চুপ হয়ে যায় যেন কোন ভুল কাজ করে ফেলেছে অজান্তেই। প্রতিবার যখনই সে হেসেছে , পিশাচরা এসে রক্তাক্ত করেছে শরীরের নিম্নভাগ তাই পাগলিটা হাসা ছেড়ে দিয়েছে অনেককাল। ফিফটি টু পাগলিটার হাসি দেখে কেমন জানি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল, হাসিটা যেন খুব চেনাচেনা, মনে হয় আগে কোথাও দেখেছে কিন্তু মনে করতে পারছে না। এবার পাগলিটার অনেকটা কাছে যায় কিন্তু পাগলিটা বস্তায় মুখ লুকোয় । চুল ছিঁড়তে থাকে ফিফটি টু , মনে করতে পারছে না কেন, কোথায় যেন দেখেছিল এই হাসি?

তারপর একসময় শান্ত হয়ে গান ধরে"আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি......

পাগলিটা হঠাৎ সুর মেলায় "আন তবে বীনা আ আ আ...."

ফিফটি টু অবাক চোখে তাকায় পাগলির দিকে পাগলিটার চোখ বেয়ে অঝোরে জল ঝরছে, পাগলিটা ছোটবেলার সাথি বীনা!

দিঘীর পাড়ে বসে এই গান গাইত দুজনে মিলে একসাথে।

বস্তাটা নামিয়ে আঁচড় গুলোতে হাতবুলোতে লাগল ফিফটি টু, পাগলিটা বুকভাঙ্গা কান্নায় ভাসিয়ে দিল, অনেকদিন কাঁদার আশ্রয় পায় নি।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাগল দের ভয় পাবে না , ভয় পাবে দেহপিপাসী খাদকদের।

পরদিন সকাল ... ফিফটি টু আর পাগলিটার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, পাগলদের খবর কেই বা রাখে?


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime