Jeet Guha Thakurta

Crime Fantasy Thriller

4.0  

Jeet Guha Thakurta

Crime Fantasy Thriller

ফেলুদা বনাম জটাদা: চতুর্থ পর্ব

ফেলুদা বনাম জটাদা: চতুর্থ পর্ব

9 mins
225


ফেলুদা বনাম জটাদা: পর্ব ৪


"পরশুদিনের ঘটনার কথা আমরা কয়েকবার শুনেছি আপনার বাবার কাছে। তবু আপনার কাছ থেকে একবার বিশদে জানতে চাই ঠিক কী কী ঘটেছিলো সেদিন।" মারিয়ার উদ্দেশ্যে বললো জটাদা।


একটা হলুদ রঙের চুড়িদার পড়েছিলো ডিসুজা সাহেবের মেয়ে। জটাদার প্রশ্ন শুনে একটু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখ খুললো, "পরশুদিন আমার তিনজন বন্ধু এসেছিলো। রিয়া, অদৃজা আর সোহেল। তিনজনে একসঙ্গেই এসেছিলো। ওরা আসার পর পার্টি শুরু হয়। পিউ তো আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই ছিলো। বড়োদিনটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের একটা উৎসব। তার উপর বার্থডে মিলে প্রতি বছরই এই দিনটা খুব হ্যাপিলি কাটে। কিন্তু সেদিন কী যে ছিলো ভাগ্যে। আমরা কেক কাটলাম। আমি কেক কেটে কেটে সবাইকে দিচ্ছিলাম। পিউকেও আমি একটা টুকরো কেটে দিই প্লেটে। আমার বন্ধুরা তো আমার মুখে মাখাবে বলে ক্রিম জড়ো করছিলো। আমি জানতাম। আগে থেকে রেডি ছিলাম। এই সময় হঠাৎ দেখি পিউ যেন মাথা ঘুরে পড়ে গেলো মেঝেতে। ছটফট করছিলো কেমন। কী হলো কী হলো বলতে বলতে দেখি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। ওকে সঙ্গে সঙ্গে কোলে করে তুলি আমরা। তুলে আমার ঘরে নিয়ে গিয়ে ফ্যানের তলায় শুইয়ে দেওয়া হয়। আমি সোহেলকে বলি মিউজিক সিস্টেমটা বন্ধ করতে। অ্যালিস্টার ডাক্তারকে ফোন করলো সঙ্গে সঙ্গে। বোতল থেকে জল নিয়ে জল খাওয়ানোরও চেষ্টা করি আমি পিউকে। কিন্তু তার কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না। আমার তো ভয়ে হাত-পা কাঁপছিলো। ওর মা নিচে ছিলেন, উনি ছুটে এলেন উপরে। কী করা উচিত, কিছু বুঝেই পাচ্ছিলাম না আমরা। শেষে ডাক্তারবাবু এসে দুঃসংবাদটা দিলেন। আমরা একটা ট্রমার মধ্যে পড়ে গেছিলাম বিশ্বাস করুন, এতো আনন্দের একটা অনুষ্ঠান এতো দ্রুত একটা শোকের পরিবেশে পরিণত হবে, কল্পনা করা যায় না জাষ্ট।"


মারিয়া থামতেই জটাদা বললো, "তারপর আপনারা পুলিশকে খবর দিলেন। আর আপনার বন্ধুরাও একে একে আপনাকে বলে বিদায় নিলো, তাইতো ?"


"ওদের দোষ দিই না। এই পরিস্থিতিতে ওরাই বা কী আর করতো। পার্টিটাই পুরো স্টপ হয়ে গেলো তো। ওরা তারপরে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে, রোজ ফোন করেছে। থানায় গিয়ে দেখাও করেছে প্রত্যেকে। পুলিশই সবাইকে ডেকেছিলো।"


"আচ্ছা মিস মারিয়া, আপনি একটু ভালো করে ভেবে দেখুন তো, সেদিন পিউ কি এমন কিছু খেয়েছিলো যেটা অন্যরা কেউ খায়নি, অন্তত সেই সময় খায়নি ?"


"এটা তো আমরা সারা দিন-রাত ধরে ভেবে চলেছি। কিন্তু বিশেষ কিছুই তো পিউ আলাদা করে খায়নি, আলাদা কিছু তো ছিলোও না। স্টার্টার ছিলো, কোল্ড ড্রিঙ্কস, কেক, এইসবই তো।"


"না ধরুন ওর জন্য কোনো ওষুধ, বা বিশেষ বোতলের জল।"


"না, সেরকম কিছুই ছিলো না। জলের জন্য তো কাপ রাখা ছিল, কাগজের কাপ। অ্যাকোয়াগার্ড থেকে নিয়ে খাওয়া। আলাদা জল তো নয়। অথচ ওর পয়জনিং হলো, কিন্তু বাকিদের কিছু হলো না। কী করে সম্ভব, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না।"


জটাদা মারিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো একটু। তারপর বললো, "আচ্ছা ওই প্রসঙ্গ বাদ দিন। আপনার বাবার যে সিগারেট কেসটা হারিয়েছে, সেটার সম্বন্ধে আপনার বন্ধুদের মধ্যে কেউ জানতো ?"


"সবাই-ই জানতো। বাবার সিগারেট কেস আমার বন্ধুদের মধ্যে জনপ্রিয়। আমিই পোষ্ট করেছিলাম ওটা, আমার সিগারেটখোর বেশ কয়েকজন বন্ধুকে ট্যাগও করেছিলাম। সে দু'বছর আগের কথা।"


"কিন্তু ওটা যে বহু পুরোনো দিনের অ্যান্টিক জিনিষ, সেটা কি জানতো সবাই ?"


"তা জানি না। তবে অতো কেউ মাথা ঘামাবে বলে মনে হয় না। একটা স্টাইলিশ জিনিষ, এই আরকি। আর পুরোনো হলেও বা, অ্যালিস্টার তো বলছিলো যে ওসবের দাম চার-পাঁচ হাজার হবে বড়ো জোর। সেরকম দামি কিছু তো নয়। আর তাছাড়া, বাবার একটা অ্যান্টিক জিনিষের জন্য পিউকে খুন করারই বা কী যুক্তি আছে ?"


"না, তা তো নেই। আচ্ছা, আপনার ঘরটা, মানে যেখানে পিউকে শুইয়ে রাখা হয়েছিলো, সেটা একটু দেখতে পারি ?"


একটু কিন্তু-কিন্তু করেও মারিয়া জবাব দিলো, "ঠিক আছে, আসুন।"


মেয়েরা বড়োই কৌতূহলী প্রাণী। মিসেস ডিসুজা বোধহয় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের সব কথা শুনছিলেন। আমরা ঘর থেকে বেরোতে যাবো, সেই সময় তিনি দেখলাম দ্রুত সরে গেলেন সেখান থেকে। আমি পিঙ্কির দিকে তাকালাম একবার। দেখলাম ব্যাপারটা ওরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে।


জটাদা মারিয়ার সঙ্গে ওর ঘরে ঢুকে চারপাশটা দেখলো একবার। মিনিট দু'য়েক পরে বেরিয়ে এলো। পিঙ্কিও গিয়েছিলো ওর সাথে সাথে। আমি ডাইনিংয়ে বসেছিলাম। মিস্টার ডিসুজা কিছু একটা লিখছিলেন ডায়েরিতে। আমাকে দেখে বললেন, "খেলাধুলো করো ?"


আমি বললাম, "ওই আর কি। একটু-আধটু।"


"কী খেলো ? ক্রিকেট ?"


"ক্রিকেটও খেলা হয়। কখনো বা ভলিবল।"


"খেলবে। নিয়মিত খেলাধুলোর চর্চাটা রাখবে। তোমাদের তো গুন্ডা-বদমাশদের সঙ্গে লড়াইটা হলো কাজ। নিয়মিত খেলাধুলোর চর্চা থাকলে দেখবে, শরীরটা খুব ফিট থাকবে।"


"আমাদের কাজটা তো শারীরিক নয় মিস্টার ডিসুজা।" জটাদা মারিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে আসতে আসতে বললো, "আমাদের কাজটা মগজাস্ত্রের। মূলতঃ মাথার কাজ।"


"সেটা তো ঠিক মিস্টার মিত্র। কিন্তু কী জানেন, শরীর ফিট - তো মাথাও ফিট। মাথাকে যদি শরীর নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়, তাহলে অন্য ব্যাপারে মাথা লাগাবেন কীকরে ?"


"তা অবশ্য মন্দ বলেননি।" জটাদা একটু হেসে বললো।


মিসেস ডিসুজা আমাদের সবার জন্য চা আর একটা প্লেটে অনেকরকম কুকিজ নিয়ে এলেন। কুকিজ পিঙ্কির ভীষণ পছন্দ। ও আমার পাশেই এসে বসেছিলো। কুকিজ দেখে ছোঁ মেরে তুললো দেখলাম।


আমি চাপাস্বরে বললাম, "আজ তোর ডায়েটিং না ?"


ততোধিক চাপাস্বরে জবাব দিলো মেয়ে, "ছিলো। এখন নেই।"


একটা চায়ের কাপ তুলে নিয়ে জটাদা বললো, "আচ্ছা মিসেস ডিসুজা, ঘটনার দিন যখন পিউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, আপনি তখন ঠিক কোথায় ছিলেন বা কী করছিলেন, মনে করে বলতে পারেন ?"


"আমি... কেক কাটা হয়ে যাবার পর আমি কিচেনে গিয়েছিলাম। উনি চা খেতে চেয়েছিলেন একবার, তাই চা বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ মারিয়া চিৎকার করে ডাকে আমাকে, মা এসো তো দ্যাখো তো কী হয়েছে -। সেই শুনে আমি গ্যাসটা কমিয়ে রেখে ওদিকে যাই। গিয়ে তো দেখি পিউ অজ্ঞান। কী থেকে যে হলো কে জানে।"


"পিউর বাবা মানে সনৎবাবু, বা ওদের ফ্যামিলির সাথে আপনাদের খুব হৃদ্যতা শুনলাম।"


"হ্যাঁ, হৃদ্যতা আছে। মেয়েটা তো আমাদের ভীষণ ভালোবাসতো। রাত্তিরবেলা পর্যন্ত প্রায়ই থাকতো এখানে। স্কুল থেকে ফিরেই আগে উপরে উঠে আসবে।"


"আর ওনাদের ফ্যামিলি ?"


"সনৎবাবু খুব ভালো। ওনার মিসেস কিন্তু খুব নোংরা। ঘরদোর দেখবেন কেমন করে রেখেছে। মনের দিক থেকে ভালো মানুষ হতে পারে, কিন্তু কীভাবে যে থাকে। আমি পারতপক্ষে ওদের ঘরে ঢুকতাম না। ওরাও কমই আসতো। মেয়েটা আসতো শুধু।"


"পার্টির দিন ওনারা ছিলেন এখানে ?"


"পিউর বাবা বোধহয় এসেছিলেন, কেক কাটার সময়। ওর মা নিচেই ছিলো। পরে খবর পেয়ে উনিও ছুটে আসেন।"


ডিসুজা সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো জটাদা, "আচ্ছা, অ্যালিস্টারকে দেখছি না।"


"ও তো বেরিয়ে গেলো -। বললো কাজ আছে কিছু। আপনার কি ওর সাথে কথা বলতে লাগবে আরও ? ফোন করতে পারি বললে।"


"না না, আজ থাক। অসুবিধা নেই। তা... আপনার ব্যালকনিটা কিন্তু দেখছি ভারী সুন্দর।"


চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে জটাদা সামনের ব্যালকনির দিকে গেলো। বললো, "যদিও গ্রিল আছে, কিন্তু বাইরেটা চমৎকার দেখা যায়।"


আমরা যেখানে বসে আছি, সেখান থেকে অবশ্য ব্যালকনি দিয়ে উল্টোদিকের কয়েকটা বিল্ডিং ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না। জটাদা দেখলাম ওখানে গিয়ে চারপাশ নিরীক্ষণ করছে। তারপর পিছন ফিরে মিস্টার ডিসুজাকে বললো, "এখানেই এলইডি লাগানো হয়েছিলো, অ্যালিস্টার বলছিলো। বোধহয় কোনো একটা এলইডি জ্বলছিলো না।"


"তা হবে। অ্যালিস্টারই বলতে পারবে, ওই সাজিয়েছিলো সব।"


মিসেস ডিসুজা উত্তর দিলেন, "না না, ঠিকই। একটা লাইটে কিছু প্রবলেম হচ্ছিলো বার বার।"


এই সময় হঠাৎ উপর থেকে বিকট একটা শব্দের জগঝম্প শুরু হলো যেন। প্রাশ্চাত্য রক সংগীতের সুর। জটাদা ব্যালকনি থেকে উঁকি মেরে শব্দের উৎস সন্ধান করে সোফার কাছে ফিরে এলো আবার। ফিরে এসে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো ডিসুজা সাহেবের দিকে। তিনি বললেন, "আমাদের উপরের তলার প্রতিবেশী। তিন-চারটে ছেলে ভাড়া থাকে মেসের মতো করে। কখন আসে, কখন যায়, কী করে, কে জানে। মাঝে মাঝেই সারারাত পার্টি চলে ওদের। এই এখন যেমন শুনছেন।"


সোফায় বসে জটাদা জিজ্ঞাসা করলো, "মোট কটা ফ্যামিলি আপনারা থাকেন বলুন তো এইখানে ?"


"নিচে সনৎবাবুরা থাকেন। ওখানে তো আর কেউ থাকে না। দোতলার দুটো ফ্ল্যাট মাঝখান থেকে জুড়ে নিয়েছি আমরা। দোতলার পুরো অংশটা নিয়ে আমরাই আছি। ছেলেদের মেসটা উপরে, তিনতলার সামনের দিকে। আর তার উল্টোদিকে, মানে তিনতলার পিছনদিকের ফ্ল্যাটে থাকেন মিস্টার দত্ত। সুদর্শন দত্ত। এমনি ভালো মানুষ। সাতে-পাঁচে থাকেন না। অফিস-টফিস নিয়ে বিজি থাকেন খুব। এখন অবশ্য তিনি এখানে নেই, সপ্তা দু'য়েক হলো দিল্লি গেছেন অফিসের কাজে। সামনের মাসে নাকি ফিরবেন।"


"মেসটিতে ক'জন ছেলে থাকে জানেন ?"


"কয়েকটা ছেলে থাকে। ক'জন থাকে ঠিক, তাও আমরা জানি না।" ডিসুজা সাহেব বললেন।


মিসেস ডিসুজা যোগ করলেন তার সাথে, "প্রায়ই দেখি নতুন ছেলে আসে, এ আসে তো সে যায়। আমাদের সাথে বা পিউদের সঙ্গে খুব একটা আলাপ-পরিচয় নেই ওদের কারুর। মেয়ে নিয়ে সংসার, বুঝতেই পারছেন। আমরা মিশি না বেশি।"


"পরশুদিনের পার্টিতে তার মানে ওরা কেউ ইনভাইটেড ছিলো না, তাই তো ?"


"না না, প্রশ্নই ওঠে না।" ডিসুজা উত্তর দিলেন।


চা শেষ করে জটাদা বললো, "আমাদের যা যা জানার প্রয়োজন ছিলো সেসব মোটামুটি কমপ্লিট। যাওয়ার পথে সনৎবাবুর সঙ্গে একবার একটু কথা বলতাম, যদি ওনাকে পাওয়া যায় তো।"


"আচ্ছা, চলুন আমি দেখছি। উনি তো সর্বক্ষণ পুলিশ আর হসপিটাল নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।"


আমরা সিঁড়ি দিয়ে নামছি। সেই সময় সনৎবাবু দেখলাম উপরে উঠছেন। চেহারা উশকোখুশকো। সিঁড়ির অল্প আলোয় মুখটা খুব মলিন দেখাচ্ছিলো। ওনার উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, বোঝাই যায়। আমাদেরকে দেখে সনৎবাবু একটু থমকে দাঁড়ালেন। তারপর ডিসুজাকে বললেন, "এখন আবার গিয়েছিলাম, বুঝলেন। হসপিটাল থেকে কাল সকালেই পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পাওয়া যাবে বললো। বডিও কাল দিয়ে দেবে।"


"আচ্ছা, ভালো খবর তাহলে। একটা চিন্তা দূর হলো।" ডিসুজা সাহেব বললেন, "আমরা সবাই আছি, আপনি একদম চিন্তা করবেন না। কালই যখন পাওয়া যাবে রিপোর্ট, আপনি এখন বরং একটু বিশ্রাম নিন।"


"হ্যাঁ, এখন থেকে তো বিশ্রাম নেবারই জীবন। কাল বডি পেলে দাহটা সম্পূর্ণ করা আরকি। মেয়েটাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো, সব শেষ। সব শেষ।"


মানুষ যখন অত্যন্ত প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলে, তাকে বোধহয় কোনো স্বান্তনাই দেওয়া যায় না। একটুক্ষণ নীরব রইলো সবাই। তারপর জটাদা বললো, "আমাকে ক্ষমা করবেন সনৎবাবু, এই পরিস্থিতিতে আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করাটা হয়তো ঠিক নয়। তবু দুটো প্রশ্ন ছিলো। যদি আপনি অনুমতি দেন।"


সনৎবাবু কিছু বললেন না। তাকিয়ে রইলেন শুধু। একটু অপেক্ষা করে জটাদা বললো, "ঘটনার দিন আপনি কি ওইখানেই ছিলেন ? মানে দোতলায় ? ঘটনাটা কি আপনার সামনেই ঘটে ?"


"না, আমি নিচে গিয়েছিলাম। কেক কাটা হলো। আমার মিসেস তো আসেনি। মারিয়া আমাকে একটা প্লেট দিয়ে তাতে কেক তুলে দিয়ে বললো, কাকু আপনি নিচে কাকিমাকে একটু দিয়ে আসুন প্লিজ। আমি সেটা নিয়ে নিচেই গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি এই ব্যাপার। পিউ অজ্ঞান হয়ে পড়েছে, ওকে শুইয়ে রেখে ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়েছে। আমি আবার নিচে গিয়ে আমার মিসেসকে ডেকে আনলাম তখন।"


"আপনি যখন গিয়েছেন-এসেছেন, দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা কি লক করা ছিলো, নাকি খোলাই ছিলো ? মনে আছে আপনার ?"


"তা - মনে হয় খোলাই ছিলো সেইসময়।" আমতা আমতা করে মনে করার চেষ্টা করলেন সনৎবাবু। "তবে বেশি সময়ের ব্যাপার তো নয়। আমি গিয়েছি আর এসেছি।"


"কীরকম কাকতালীয় ব্যাপার দেখুন, সেইদিনই আবার মিস্টার ডিসুজার একটা কাঠের সিগারেট কেস চুরি যায়, মানে যেদিন পিউ এর সাথে দুর্ঘটনাটা ঘটে।" কথাটা বলে জটাদা তীক্ষ্ণ চোখে সনৎবাবুর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে থাকলো।


"হ্যাঁ, শুনলাম।" সনৎবাবু ঘাড় নাড়লেন, "উনি কালকেই বলছিলেন। অনেক পুরোনো বনেদি জিনিষ নাকি। কখনো সেভাবে লক্ষ্য করে তো দেখিনি। কিন্তু এখান থেকে কে নেবে ?"


"নিয়েছে কেউ, শুধু সেটা আমাদের জানা নেই আরকি। আচ্ছা সনৎবাবু, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করি পুলিশ একটা সুরাহা করতে পারবে এই ঘটনার। মিস্টার ডিসুজা, আমরা চলি তাহলে আজকে। একটু সাবধানে থাকবেন। এখানে আবার একটা চুরির চেষ্টা হতে পারে।"


"আবার ?" আতঙ্কিত ডিসুজা প্রশ্ন করলেন।


"আমার তাই মনে হয়। যে লোক এসবের নেপথ্যে রয়েছে, তার উদ্দেশ্য হয়তো পুরোপুরি সফল হয়নি। তাই আবার সে আসতে পারে। তবে চিন্তা করবেন না, প্রাণনাশের কোনো সম্ভাবনা আপাততঃ দেখছি না।"


রাস্তায় নেমেই জটাদা একটা সিগারেট ধরালো। তারপর আমরা কিছুটা এগোনোর পর হঠাৎ বললো, "আয় তো দেখি।" এই বলে ও রাস্তা পার হয়ে গেলো।


ওর পিছু পিছু আমরাও চললাম। রাস্তা পার হয়ে জটাদা উল্টোদিকে চললো, ডিসুজা সাহেবের বাড়ির দিকে। আমরা কিছু বুঝলাম না। কিছুটা যাওয়ার পর ডিসুজাদের বাড়িটা এলো। রাস্তার উল্টোদিক থেকে দাঁড়িয়ে জটাদা ভালো করে দেখতে থাকলো। আর সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকাতে থাকলো বাতাসে।


ডিসেম্বরের রাত, বেশ ঠান্ডা বাইরে। পিঙ্কি ওর হুডির টুপিটা তুলে কান চাপা দিলো দেখলাম। আমিও মাফলারটা পেঁচিয়ে নিলাম ভালো করে। এখান থেকে দেখলে ডিসুজাদের ব্যালকনিটা চোখে পড়ে। একটা আলো জ্বলছে ব্যালকনিতে।


পিঙ্কি চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলো আমাকে, "কী দেখার চেষ্টা করছে তোর দাদা, বুঝতে পারছিস কিছু ?"


"কী জানি। ব্যালকনি থেকে কেউ ঢুকতে পারে কিনা সেটাই হয়তো -।"


"কিন্তু ব্যালকনি তো গ্রিল দিয়ে ঘেরা।"


জটাদা আশপাশটা একবার ভালো করে লক্ষ্য করে নিয়ে বললো, "চল, যাওয়া যাক।"


"কোথায় ?" আমি জিজ্ঞাসা করলাম।


"নিজ নিকেতনে। ব্যাক টু হোম।"



সেদিন বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া হলো। মাঝরাত্রে ঘুমটা কেন জানিনা হঠাৎ ভেঙে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখলাম জটাদা নেই। চট করে উঠে আমি দরজার পাল্লাটা ঠেলে বাইরে উঁকি মেরে দেখি জটাদা ধীর পায়ে ছাদে পায়চারি করছে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।


(এরপর আগামী সংখ্যায়)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime