পৈশাচিক
পৈশাচিক
কুট্টুস 'ভৌ ভৌ' করছে জঙ্গলের মধ্যে পুকুরওয়ালা দুতলা বাড়িটার গেটের সামনে। জঙ্গলের গাছের ফাঁক দিয়ে ভরা পূর্নিমার আলো কুট্টুসের গায়ের সাদা লোমে পড়ে চকচক করছে। হঠাৎ বাড়িটার দরজাটা ধাম্ করে খুলে গেলো। ভিতর থেকে হাসিমাখা নারীকন্ঠ এলো,"আয়, হি হি .. ভিতরে আয়।" মন্ত্রমুগ্ধের মতো কুট্টুস বাড়িটায় ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল। দোতলার একটা ঘরে হাট করে জানলা খোলা। সেই জানলা দিয়ে পূর্নিমার চাঁদের আলো এসে পড়েছে ঘরে। সেই আলো গায়ে মেখে মুখের সামনে বড়চুল এলিয়ে বাবু হয়ে বসে আছে একটা মেয়ে। কুট্টুস কুঁইকুঁই করে সেই ঘরে ঢুকতেই মেয়েটা কুট্টুসের দিকে দুই হাত প্রসারিত করে আদুরে গলায় অস্ফুট স্বরে বললো,"কাম্ ক্লোজার বেবি..কাম্ ক্লোজার।" কুট্টুস মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে 'ভৌউউউউ' করেডেকে উঠতেই মাথার এক ঝটকায় চুল গুলো পিছনে করেই বিশাল বড় হাঁ করে কুট্টুসের গলার নলি কামড়ে ধরলো মেয়েটা। বিড়ালচোখ মেয়েটার প্রত্যেকটা দাঁত কুমিরের মতো ধাঁরালো। ছটফট করতে করতে এক সময় স্থির হয়ে গেল কুট্টুসের লাল রক্তে ভেজা সাদা লোমশ দেহটা।উচ্চমাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষাটা দিয়ে এসেই গোগোল ওর মাকে বললো,"কাল মামার বাড়ি যাবো।" গোগোলের মা বললো,"একা যাবি?"। গোগোল বললো,"তোমরা গেলে চলো।" গোগোলের মা বললো,"তোর বাবার অফিস আছে। আমরা যেতে পারবো না।" নাছোড়বান্দা গোগোল বললো,"তালে আমি একাই যাবো।" গোগোলের মা বললো,"আমাকে বলে লাভ নেই, বাবা অফিস থেকে এলে বাবার পারমিশান নিস।" "বাবা পারমিশান না দিলে আমি পালিয়ে চলে যাবো কিন্তু।", বলেই গোগোল খেলতে বেরিয়ে গেল।
বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে ছুটে চলেছে মারুতি ওমনি গাড়িটা। গাড়ির সামনের সিটে বসে আছে গোগোলের মা। বাবা গাড়ি চালাচ্ছে। পিছনের সিটে বসে গোগোল হোয়াটস্ অ্যাপে তোতাকে লিখলো,"আসছি। মা বাবা সমেত।" তোতার রিপ্লাই এলো,"সিগ্গির আয়। আই নিড্ ইউ।" সাথে দুটো স্যাড্ ইমোজি। গোগোল লিখলো,"স্যাড্ ইমোজি কেন?"। তোতার রিপ্লাই এলো,"পরশু থেকে কুট্টুসকে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ সন্ধ্যেবেলা আবার পাড়ায় ফাংশন। আমায় গান গাইতে হবে। কিন্তু আমার গাইতেই ইচ্ছে করছে না।" গোগোল লেখে,"চাপ নিস না। আমি আসছি ত। কুট্টুসকে খুঁজে বার না করে কলকাতায় ফিরবো না। প্রমিস।" তোতার রিপ্লাই আসে,"সাবধানে আয়।" গোগোলের বাবা ততক্ষনে গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে 'নীল নির্জনে' সিনেমায় গাওয়া 'ক্যাকটাসে'র টাইটেল সং চালিয়ে দিয়েছে। গাড়ি ছুটে চলেছে বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে জ্যোতিষপুরের দিকে, সাথে গানটাও।"উদাসী হাওয়ার পথে পড়ে আনমনে, অচেনা গানওয়ালার সুর.. লংশটে কাশফুলে ছুটে চলে ধোঁয়া ট্রেন, গায়ে মেখে নীল রোদ্দুর.."বিদ্যধরী নদীর পাশে ছোট্টো একটা গ্রাম জ্যোতিষপুর। সেই গ্রামে পাশাপাশি দুটো বিশাল পাকাবাড়ি আছে। একটা গোগোলের মামার বাড়ি। সেখানে থাকে গোগোলের দাদু, দিদা, বড়মামা, বড়মামী, বড়মামার আটবছরের ছেলে নন্টে, ছোটোমামা আর ছোটোমামী। গোগোল এদের সবার খুব আদুরে। বড়মামার ছেলে নন্টে তো গোগোল ন্যাওটা।
গোগোল এলেই নন্টের আর আনন্দের সীমা থাকে না। কারন যে সব কাজ করা তার মানা, সেসব কাজই গোগোল এলে নন্টে মনের সুখে করতে পারে। আরেকটা বাড়ি তোতাদের। তোতার মা, বাবা, বিধবা ঠাকুমা আর আদরের কুকুর কুট্টুস থাকে। অবশ্য গত দুদিন ধরে কুট্টুসের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ খাওয়া দাওয়ার পর মামার বাড়ির ছাদে ওঠে গোগোল। আকাশে মেঘ করেছে। কি সুন্দর সবুজ চারদিকে। একটু দূরে বয়ে চলেছে বিদ্যাধরী নদী। ততক্ষণে পাশের ছাদে উঠে এসেছে তোতা। তোতাকে দেখেই গোগোল দুই বাড়ির ছাদের মাঝখানের ছোটো পাঁচিলটা টপকে চলে আসে তোতাদের ছাদে। তোতাও এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। কোনো কথা বলার আগেই গোগোল আর তোতা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ চুম্বনে লিপ্ত হয়। তারপর গোগোল তোতার চোখ থেকে গালে নেমে আসা জলে চুমু খেয়ে বলে,"তুই ত আরও সুন্দরী হয়ে গেছিস!" তোতা বলে,"আর তুই আরও বদমাশ।" গোগোল বলে আজ পাড়ার ফাংশনে যে গানটা গাইবি সেটা এখন একবার গা প্লিজ্। কত্তদিন তোর মিষ্টি গলার গান শুনিনি।" লজ্জা পেয়ে তোতা বলে,"ফাংশানেই শুনিস।" নাছোড়বান্দা গোগোল বলে,"ফাংশানে ত সবাই শুনবে। আমি এখন শুনবো।" হুড়হুড়ে হাওয়ায় দুজনেরই চুল ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে। তোতা মিষ্টি করে গানটা ধরে,"কেন মেঘ আসে, হৃদয়ো আকাশে? কেন মেঘ আসে, হৃদয়ো আকাশে? তোমারে দেখিতে দেয় না.. মোহমেঘে তোমারে, অন্ধ করে রাখে, তোমারে..দেখিতে দেয় না.. মাঝেমাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাইনা?"
সন্ধ্যেবেলা গোগোল তোতার বাড়ি যেতেই তোতার মা বললো,"ও বনদূর্গার মন্দিরে পুজো দিতে গেল একটু আগে।" শুনেই গোগোল ছুট লাগালো। বিদ্যাধরী নদীর ধারে জনমনিষ্যিহীন এলাকায় বনদূর্গার মন্দির। দিনের আলো কমলে সে পথ আর কেউ মাড়ায় না। গোগোল মন্দিরের সামনে এসে দেখলো কেউ কোত্থাও নেই। পাগলের মতো "তোতা, তোতা" বলে চেঁচিয়ে খুঁজতে লাগলো গোগোল। হঠাৎ দেখে সামনে একটা শীর্ণকায় বুড়ি। গোগোলকে দেখেই বুড়িটা আঙুল নিজের ঠোঁটে চেপে ধরে ফিসফিসে গলায় বললো,"চুপ। রিঙ্গানী শুনে ফেলবে।" বলেই বিদ্যাধরী নদীর দিকে আঙুল তুলে দেখিয়েই খিঁক্ খিঁক্ করে হাসতে লাগলো। যেদিকে বুড়িটা আঙুল তুলেছিল সেদিকে এগোলো গোগোল। কিছুটা এগোতেই একটা চিৎকার শুনতে পেলো গোগোল। তোতার গলা। সঙ্গে সঙ্গে সেই চিৎকারের দিক বরাবর এগিয়ে যা দেখলো, তাতে রক্ত মাথায় চড়ে গেল গোগোলের। গ্রামের ফণীমামা আর ল্যাংড়া পকাই তোতাকে মাটিতে শুইয়ে মুখ চেপে ধরে রেপ্ করার চেষ্টা করছে আর তোতা প্রানপনে বাঁধা দিচ্ছে ওদের। চিতাবাঘের ক্ষীপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়লো গোগোল ফণীর উপর আর ওর গলার টুটি সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরলো। সেই দেখে পকাই তোতাকে ছেড়ে ঝাপিয়ে পড়লো গোগোলের উপর কিন্তু ফণীর গলা চিপে ধরা গোগোলের দুহাতের শক্তি বিন্দুমাত্রও খর্ব করতে পারলো না। ক্রমশ শরীরের ছটফটানি নিস্তেজ হয়ে এলো চোখ আর জিভ ঠেলে বেরিয়ে আসা ফণীর। এই দেখে ল্যাংড়া পকাই দৌড় দিলো লেংড়ে লেংড়ে। ফণীর মৃতদেহটা ছেড়ে উঠে গোগোল তোতাকে বললো,"এখানেই দাঁড়া।" বলেই ঘুরে দৌড় লাগালো ল্যাংড়া পকাইয়ের দিকে। ফণীর মৃতদেহর সামনে কাঁঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তোতা কিছুক্ষণ পর দেখলো ল্যাংড়া পকাইয়ের লাশটার এক পা ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসছে। তোতার কাছে এসেই গোগোল বললো,"বিদ্যাধরীতে কুমির আছে না?"।তোতা উত্তর দিলো,"হ্যাঁ।"
দুটো লাশ বিদ্যাধরীর জলে ফেলতেই টেনে নিয়ে গেছে কুমিরে। চর থেকে একটু উঁচুতে বসে নদীর ওপারের দ্বীপটার দিকে তাকিয়ে বসে গোগোল আর তোতা। চারদিক নিস্তব্ধ। সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে গোগোল তোতাকে জিজ্ঞেস করলো,"তুই সন্ধ্যেবেলা বনদূর্গার মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলি কোন সাহসে?"। সে কথার উত্তর না দিয়ে তোতা অস্ফুট স্বরে গোগোলকে জিজ্ঞেস করলো,"তুই রিঙ্গানীর গল্প শুনেছিস?"। গোগোল "না" বলতেই তোতা বলতে শুরু করলো,"ইংরেজ আমলে সামনের ওই দ্বীপে একটা বাড়ি তৈরী করেছিল এক সাহেব। সেখানে রিঙ্গানী নামে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে রাখেন তিনি। রিঙ্গানী ছিল অপরূপ সুন্দরী। কিন্তু পাগলাটে। একদিন ওই বাড়িতে রিঙ্গানীকে খুন করে সাহেব ভাসিয়ে দেয় এই বিদ্যাধরীতে। পরের দিন সাহেবের রক্তশূণ্য লাশ পাওয়া যায় ওই বাড়িতে। তারপর থেকে যারাই ওই দ্বীপে যেত তাদেরই রক্তশূণ্য লাশ পাওয়া যেত, সে মানুষ হোক বা জন্তু। এরপর থেকে লোক যাওয়া বন্ধ করে দেয় ওই দ্বীপে। অনেক মাঝিই বলে যে বিদ্যাধরীতে নৌকা চালানোর সময় মাঝেমাঝে রিঙ্গানীর রক্তহিম করা হাসি ভেসে আসে ওই দ্বীপ থেকে। গ্রামের কুল পুরোহিত বলেছিলেন রিঙ্গানীর আত্মা যতদিন আগুনে পুড়বে ততদিন ওই দ্বীপে রিঙ্গানী থাকবে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টি কে বাঁধবে? কারোর সে সাহস আজ অবধি হয়নি। আমি আজ বনদূর্গার মন্দিরে পুজো দিতে এসে কুট্টুসের পায়ের ছাপ দেখতে পাই। সেই ছাপ ধরে এগোতেই দেখি বিদ্যাধরীর উপর ওই সরু ব্রিজটার কাছে অবধি কুট্টুসের পায়ের ছাপটা গেছে। ওই ব্রিজটাই এই গ্রামের সাথে বালির দ্বীপের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমার কেন জানিনা মনে হয় যে কুট্টুস ওটা পেরিয়েই বালির দ্বীপে গেছে। আমিও যেতে যাই কিন্তু তখনই আমায় পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে ফণীকাকা আর ল্যাংড়া পকাই।" এতটা বলে থামে তোতা। তারপর গোগোলের হাতটা ধরে তোতা বলে,"তুই প্রমিস করেছিলি কুট্টুসকে খুঁজে দিবি। যাবি আমার সাথে খুঁজতে?"। এতক্ষণ মন দিয়ে সব শোনা গোগোল বলে,"ওই বালের দ্বীপে?"। তোতা ফিঁক করে হেসে বলে,"বালির।"
রাত সোয়া নটা। তোতা ব্রিজটার সামনে দাঁড়িয়ে গোগোলের অপেক্ষায়। দেখে গোগোল দৌড়ে দৌড়ে আসছে একটা পেট্রলের ডিব্বা হাতে নিয়ে। তোতার কাছে এসে বললো,"কত রিস্ক্ নিয়ে এটা লুকিয়ে নিয়ে এলাম বাবার গাড়ি থেকে। যদি রিঙ্গানী বলে সত্যিই কেউ থাকে তাহলে তার আত্মা আগুনে আহুতি দিয়ে চিরকালের মতো মুক্ত করবো আজ। ফাংশান পন্ড আজকের মতো। কেউ জানেনা আমি আর তুই কোথায়। একটু বাদেই সবাই আমাদের খুঁজতে বেরোলো বলে।" তোতা বললো,"সিগ্গির চল। ঝড় আসছে।" বলতেই দুজন ব্রিজটায় উঠে ব্রিজের মাঝখানে এসে দেখলো কাঁটাতারের ব্যারিকেড করা। গোগোল মোবাইলের আলো জ্বেলে প্যাঁচানো তামার তারগুলো দুহাতে ধরে তোতার গলে যাওয়ার রাস্তা করলো। তারপর নিজে গলে এলো বালির দ্বীপের দিকে। গোগোলের হাত কেঁটে রক্ত পড়ছে দেখে তোতা বলে উঠলো,"গোগোল, রক্ত!" গোগোল বললো,"তোর জন্য যেমন প্রান নিতে পারি, তেমন দিতেও পারি।" তোতা ছলছল চোখে একটা চুমু খেলো গোগোলের ঠোঁটে।
ব্রিজটা শেষ হতেই বালির দ্বীপে পা রাখলো তোতা আর গোগোল। তোতা বললো,"মোবাইল সুইচ্ অফ্ করি। কারোর যেন ফোন না আসে।" গোগোলও মোবাইলটা সুইচ্ অফ্ করে একটা ভাঙা ডাল কুড়িয়ে নিলো। তারপর নিজের জামাটা খুলে সেটাকে ডালটার একপ্রান্তে ভাল করে জড়িয়ে একটু পেট্রল ঢেলে প্যান্টের পকেট থেকে দেশলাই বার করে ডালটাকে মশাল বানিয়ে জ্বালাতেই ঝপ্ করে গাছের উপর থেকে কি একটা পড়লো নীচে ওদের গা ঘেষে। মশালের আলোয় নীচের দিকে তাকাতেই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো তোতা। সাদা লোমওয়ালা কুট্টুসের রক্তশূণ্য দেহটা পড়ে আছে সামনে। গোগোল একহাতে মশাল এবং পেট্রলের ডিব্বাটা আর আরেক হাতে তোতাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো,"ফিরে চল তোতা।" তোতার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। গোগোলের দিকে তাকিয়ে বললো,"পিশাচিনীটাকে না জ্বালিয়ে আমি কোত্থাও যাবো না।" বলেই কুট্টুসের বডিটা টপকে এগোতে থাকলো তোতা। সাথে মশাল নিয়ে গোগোল। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের সাথে একটা ক্ষীন গলার কি যেন শব্দ আসছে। যত এগোচ্ছে ততই ক্ষীন শব্দটা প্রকট এবং হচ্ছে। একটা নারীর ফিসফিসানো গলা,"ওয়েলকাম্..কামিন্..ওয়েলকাম্.."।গোগোল আর তোতা সেই শব্দের দিকে এগোতেই দেখতে পেল একটা পুকুর আর তার সামনেই একটা লম্বা দোতলা বাড়ি। ফিসফিসানো নারীকন্ঠটা "ওয়েলকাম্..কামিন.." বলা চেঞ্জ করেই বুক চিরে দেওয়া "হি হি হি হি" করে হাসছে। গোগোল আর তোতা বাড়িটার দরজার সামনে গিয়ে দেখলো দরজাটা খোলা। ওরা ভিতরে ঢুকতেই গোগোলের হাতে ধরা মশালটা নিভে ডালটা ভেঙে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে গোগোল পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সুইচ্ অন্ করে সেটাকে ফ্লাইট মোডে করে দিলো। তারপর মোবাইলের টর্চটা জ্বালাতেই দেখলো সামনের দোতলার সিঁড়িটা দিয়ে কে যেন দৌড়ে উপরে উঠে গেল। তোতা আর গোগোল পরস্পরের হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করেছে। দোতলা দিয়ে সেই ফ্যাসফ্যাসে নারীকন্ঠটা আসছে,"কাম্ ক্লোজার..হি হি হি হি!" হঠাৎ কেমন মরিয়া হয়ে উঠলো গোগোল। তোতার হাতটা ছেড়েই দৌড়ে দোতলায় উঠে গেল গোগোল। পিছন পিছন তোতাও। দোতলায় পৌছেই গোগোল দেখতে পেল একটা ফিনফিনে সাদা ম্যাক্সি পরা মেয়ে দৌড়ে ছাদে উঠে গেল ফ্যাসফেসিয়ে হাসতে হাসতে। গোগোল আর তোতাও আস্তে আস্তে ছাদে উঠতে লাগলো। ছাদে পৌছাতেই দুজনে দেখলে ছাদের একপ্রান্তে একটা উলঙ্গ নারীমুর্তি হাত দুটো ওদের দিকে প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আর চুলে ঢাকা মুখের ভিতর দিয়ে বুকচেরা ভয়েসে বলছে,"ডিয়ার্ বয়, কাম্ ক্লোজার্ বেবি..কাম্ ক্লোজার..হি হি!" তোতার মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরোলো,"রিঙ্গানী!"বলতেই গোগোল এক পা এক পা করে এগোতে লাগলো নারীমুর্তিটার দিকে। তোতা হতভম্ব হয়ে চেল্লালো,"গোগোল, যাস না.."। গোগোল তোতার দিকে একবার ঘুরে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। তারপর আবার নারীমুর্তিটার দিকে এগোলো। "কাম্ ক্লোজার্ বেবি..কাম্ ক্লোজার্..", বলা রিঙ্গানীর একদম কাছে চলে এলো গোগোল। পৈশাচিক হাসি হেসে রিঙ্গানী গোগোলকে জড়িয়ে ধরে গলার পাশে কুমিরের মতো দাঁত বসিয়ে দিতেই গোগোল সর্বসহ্যশক্তি প্রয়োগ করেই পেট্রলের ডিব্বাটার মুখটা খুলে পুরোটা ঢেলে দিল নিজ সমেত রিঙ্গানীর উপর। তারপর দেশলাইটা জ্বালাতেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো দুজনে। তোতার চোখের সামনে পৈশাচিক চিৎকার করা রিঙ্গানী আর তাকে জড়িয়ে ধরা গোগোল জ্বলতে জ্বলতেই ছাদের উপর থেকে নীচে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তোতার মাথার চুল উড়িয়ে একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল। ঝড় উঠছে।তোতা দৌড়ে ছাদের ধারে গিয়ে ঝুঁকে দেখলো নীচে রিঙ্গানী আর গোগোল জ্বলে পুরো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। তোতা ফ্যাসফেসিয়ে হেসে উঠলো,"হি হি.."। বিদ্যুৎ-এর আলোয় চকচক করে উঠলো তোতার কুমিরের মতো ধাঁরালো দাঁত গুলো।

