STORYMIRROR

Gopa Ghosh

Classics

5.0  

Gopa Ghosh

Classics

পাশ চাইই

পাশ চাইই

4 mins
788


বল্টু বইয়ের নিচে রাখা চাঁদমামা বইটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। ও ভাবল বইটা কি আমি আগের দিন কুশল কে ফেরত দিয়েছিল, না ঠিক মনে করতে পারছিল না । হঠাৎ মনে হলো আরে ও তো কিছুক্ষণ আগে চাঁদ মামা বইটা বইয়ের নিচে রেখেছিল। গেল টা কোথায়? চারিদিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বইটার হদিশ পেল না। তবে রাতে খাবার টেবিলে বসে বুঝতে পারল, ওটা মা ওর বইয়ের নিচে থেকে নিয়ে আলমারিতে রেখেছে। মা খুব শান্ত ভাবে বল্টুকে জিজ্ঞেস

"কী রে বল্টু এখন পড়ার বই পড়ছিস না বেশি গল্পের বই?"

"কি যে বলো মা আমার আর এক সপ্তাহ বাদে পরীক্ষা আর তুমি বলছ আমি গল্পের বই পড়ছি?"

এবার মায়ের গলা জোর হলো

"বাজে কথা একদম বলবি না, তোর বইয়ের নিচে যে চাঁদ মামা বইটা ছিল আমি দেখেছি, ওটা পরীক্ষার আগে তুই আর ফেরত পাবি না এটা ভালো করে শুনে রাখ"

বল্টু চুপ। খাবার খেয়ে উঠে গিয়ে বাংলা ব্যাকরন বইটা নিয়ে খুব জোরে জোরে পড়তে লাগলো। বল্টুর বাবা এত কিছু শোনেনি, তাই বল্টুর পিঠে হাত দিয়ে বললো

"দেখেছ আমার ছেলেটা পরীক্ষার জন্য কত সিরিয়াস হয়েছে"

মা বল্টুর দিকে তাকিয়ে একটু অবজ্ঞার হাসি হেসে বলল"সে তো দেখতেই পাচ্ছি তবে পরীক্ষায় পাস করবে কি ফেল করবে সেটাই আগে দেখো"

"কি বলছ ? আমার ছেলে খুব ভালো করেই পাস করবে দেখে নিও"

সেই মুহূর্তে বল্টুর বাবা কে প্রণাম করতে ইচ্ছে হলো, আর সত্যিই উঠে প্রণাম করে ফেলল। বাবা অবাক হয়ে বললো

"প্রণাম করছিস কেন? আগে পাস করে রেজাল্ট নিয়ে এসে প্রণাম করিস"

মা যেন তৈরি ছিল উত্তর দেওয়ার জন্য

"আসলে গল্পের বই পড়ে ওর আর পড়ার বই পড়ার সময় কোথায় ? তাই আজ বলছি জেনে রাখো ও এবারের পরীক্ষায় কিছুতেই পাস করতে পারবে না"

বাবা বুঝলো ব্যাপারটা গুরুতর হয়ে যাচ্ছে তাই চুপ করে পাশের ঘরে চলে গেল।


এটা সত্যি যে পড়ার বইয়ের চেয়ে গল্পের বই বল্টুকে বেশি টানে । পড়ার বই যেনো কেমন একটা চাপিয়ে দেওয়ার মতো লাগে ওর। আবার ওই পাশ ফেল টা তো ওর একেবারেই পছন্দ নয়। কিন্তু মা তো কিছুতেই বুঝবে না ওর মনের কথা। আগের বার রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয় নি। মা তো তখন থেকেই টিভি দেখা আর বিকালের খেলতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। যতদিন না এক থেকে দশের মধ্যে থাকবে ততদিন সব বন্ধ। এখন তাই এই পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে গল্পের বই পড়া ছাড়া ওর আর অন্য কোনো আনন্দ নেই। তবে মা বলে রেখেছে

এবারের রেজাল্ট যদি খুব ভালো হয় ওকে একটা ক্যারাম বোর্ড কিনে দেবে। বল্টু অবশ্য জানে মায়ের কাছে রেজাল্ট ভালো মনে ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড হতে হবে। সে ওর দ্বারা হওয়া যে খুব কঠিন তা ও খুব ভালো করেই জানে।

রেজাল্ট টা যে এত খারাপ হবে বল্টু আন্দাজ করতে পারে নি। ওর বন্ধু সমিরেরও অবস্থা তাই। স্কুলের বাইরে মা আজ ওকে নিতে আসবে। মায়ের মুখটা মনে পড়তেই বল্টুর বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠছে। স্কুলের ছুটির ঘণ্টা পড়তেই সমির আর বল্টু ছাদের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়।

"সমির আমি কিছুতেই বাড়িতে যেতে পারবো না বরং তুই চলে যা"

সমির কান্না ভেজা গলায় বললো

"কি বলছিস, আমার বাবা এই রেজাল্ট দেখে আজ মেরেই ফেলবে, আমিও যাবো না, বরং চল দুজনে কোথাও চলে যাই"

বল্টু একটু চিন্তা করে বললো

"কিন্তু এখন বেরোব কি করে? মা তো বাইরে দাঁড়িয়ে"

সমির সঙ্গে সঙ্গে উপায় বাতলে দিলো

"স্কুলের পিছনে যে ভাঙ্গা বাথরুম টা আছে চল ওখানে আজ রাতটা কাটিয়ে দেই, কাল সকালে দারোয়ান গেট খুললেই লুকিয়ে বেরিয়ে যাবো"

সমীরের কথায় বল্টুর বুক কেঁপে উঠলো।

"না না, যদি ধরা পড়ে যাই, বাড়ি আর স্কুল দুদিক থেকেই পিটুনি, চল বরং সাহস করে বাড়ীতে ই চলে যাই"

সমির রাজি হলো না। বললো

"সে তুই যা, আমার বাবা খুব রাগী, আজ মেরে ফেলবে আমায়"

বল্টু শেষে একাই স্কুল থেকে বেরিয়ে দেখে মা অপেক্ষা করছে। সাথে এবারে বাবাও এসেছে। এতক্ষন দেরী কেনো জিজ্ঞেস করে মা খুব নরম সুরে বলল

"এবার খুব ভালো করে পড়াশুনা কর, দেখবি পরের বার ঠিক ভালো করে পাশ করতে পারবি"

বল্টু অবাক। মা কি করে জেনে গেলো?

আসলে ওদের দেরী দেখে বাবা ওর ক্লাস টিচারের সাথে দেখা করে সব জেনেছিল। বল্টু বুঝলো মা ওর পড়াশুনা নিয়ে বাড়িতে এত চেঁচামেচি করলেও সব ওর ভালোর জন্যই। আর ও নাকি ভেবেছিল বাবা মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে। সত্যি এটা করলে খুব ভুল হতো। হঠাৎ ওর সমীরের কথা মনে পড়লো। বাবা মাকে সব বলতেই ওরা আবার স্কুলে ফিরে এলো। কিন্তু এবার দেখলো স্কুলের সামনে খুব ভিড়। বল্টু ছুটে গিয়ে দ্যাখে সমির রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশটা। ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সমির। বল্টু হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকলো। মা ওকে বলার মত সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পেলো না। অশ্রু ভরা চোখে বল্টুকে বুকে চেপে ধরে রইলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics