পাহাড় কথা বলে
পাহাড় কথা বলে
পাহাড় কথা বলে ! বিশ্বাস হল না তো ?
বলে বলে। কখনো সুযোগ পেলে পাহাড়ের বুকের কাছে কান পাতবে । শুনতে পাবে ওদের ভেতর জমে থাকা কত অব্যক্ত গল্প-গোপন কাহিনী। যা তারা শোনাতে চায় প্রতি সময় । কেউ যদি একবার আপন করে নেয় তাদের, তারাও তাদের সমস্তটুকু দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে বাহুবন্ধনে আগলে রাখে তাকে। আমিও ছিলাম বহুদিন তাদের মনোরম বাহুবন্ধনের সান্নিধ্যে। তাদের বুকে মাথা রেখে কত দিন গেছে ক্লান্ত শরীরকে আরাম দিয়েছি, বিধ্বস্ত মনকে শ্রান্ত করেছি। কত খেলা করেছি তাদের সাথে। পাহাড় আর মেঘেদের যখন ছোঁয়াছুয়ি খেলা হত, আমিও ছিলাম তাদের সঙ্গী। মেঘেদের দল যখন পাহাড়কে ঢেকে দিত তখন পাহাড়ও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত, ভাবখানা এমন যেন আমার শরীর ঢেকে ফেললেও মাথা তুই ছুঁতে পারবি না। মেঘেদের দলও পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ত। এই খেলায় আমি সর্বদা হারতে ভালোবাসতাম। মেঘেদের দল আমাকে ছুঁয়ে শীতল করে যেত সাথে দিয়ে যেত এক রোমাঞ্চকর শিহরণ। কত পাহাড়-কত ফুল- কত স্থান স্পর্শ করে এসে তাদের ছোঁয়ায় আমায় ভিজিয়ে দিয়ে যেত। সেই ছোঁয়ায় থাকত এক স্বর্গীয় সৌরভ। কানে কানে গেয়ে যেত গুন গুন গান। কত নিদ্রাহীন নিঝুম রাতে অনুভব করেছি গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন পাহাড়ের সুশীতল শ্বাস-প্রশ্বাস। উপভোগ করেছি তার ঘুমন্ত রূপের মায়াবী লাস্য রূপ। সেই রূপের পরতে পরতে যেন কোন সুদূর অতীতের রহস্যাবৃত্ত হাতছানি যা আমার চেতনালুপ্ত মনকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকর্ষন করত। ভীষন অচেনা লাগত তখন তাকে। দিবাকরের প্রথম আলো যখন পড়ত তার শিরে;ধীরে ধীরে ভাঙত তার নিদ্রার আবেশ,খুলে পড়ত তার রাত্রিকালীন ভূষণ তখন সে আবার ধরা দিত আমার কাছে তার চির পরিচিত রূপে।
মন কেমন করা গোধূলি বেলায় অস্তরাগের রবি যখন সারা দিনের কাজের পর ঘরে ফেরার বিদায় জানাত আমার মাঝি ঘরে ফেরে না। তখন গান - গল্পের আসর বসাতাম পাহাড়দের সাথে। তারা খুব মন দিয়ে শুনত আমার অন্তরের গহীনে থাকা কথা। আমার সুখে তারা হত সুখী , দুঃখে সহমর্মী। প্রশ্ন করতাম ভালো আছ? উত্তর আসত ভালো আছ? যদি বলতাম ভালো নেই তখন সেও বলত ভালো নেই। এমন প্রাণের সুহৃদকে বহুদিন হল সশরীরে ছেড়ে এসেছি; কিন্তু অন্তরে এখনো আছি জুড়ে সবটুকু দিয়ে। আজও হয় তার আর আমার গোপন কথোপকথন।

