বৃষ্টি মুখর দিনে
বৃষ্টি মুখর দিনে
বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে বাবলু একবার তাকালো আকাশের দিকে। পশ্চিম দিকের আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। সে তাড়াতাড়ি বেরোয় তার ভ্যান নিয়ে। বাজারে মোড়ের মাথায় ভুট্টা বিক্রী করে সে। মা-ছেলের দিন আনি দিন খায়ের সংসার। মোড়ের মাথায় এসে ঠিক করে জুড়িয়ে বসতে বসতে না বসতেই ঝমঝমিয়ে নেমে এল বৃষ্টির মুষল ধারা। ভুট্টা গুলোকে তাড়াতাড়ি ঢাকা দিয়ে নিজে একটা ত্রিপল মাথায় দিয়ে বসল এক দোকানের বারান্দায়। এক ঘন্টা - দু ঘন্টা! নাঃ বৃষ্টি ছাড়ার নাম নেই ভীড়ে ঠাসা বাজারে লোক নেই বলতে গেলে। আজ তার বৈনি হবে বলে আর মনে হচ্ছে না। একটি কুকুর কথা থেকে তার চারটি ছানা নিয়ে এসে বাবলু ত্রিপলের তলায় ঢুকল। বাবলু ত্রিপলটা খুলে আরো বড় করে তাদের ঢেকে দিল। তারপর একটা কুকুর ছানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে- 'নে কালুয়া আজকে রাতটা না হয় মায়ে- ছায়ে আধ পেটা থাকব। যেমন তোরা থাকিস। এমন তো কতদিন হয়েছে!'
টিভিতে খবর শুনতে শুনতে ফণি বাবু হাঁক দিলেন গিন্নিকে। 'কি গো ! আজ এইরকম বৃষ্টির দিনে একটু গরম গরম পোকড়া হলে মন্দ হয় না। বানাবে না কিছু?' রান্না ঘর থেকে উত্তর এল-' আনছি আনছি। আমি তো জানি এমন দিন হলেই তোমার মনটা পোকড়া পোকড়া করে।' এমন সময় প্লেটে সাজানো পেঁয়াজি আর গরম গরম চা নিয়ে হাজির হলেন বীণা দেবী। ফণি বাবু পুরো প্লেটটা তুলে নেবার সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করে উঠলেন- 'রাতের মেনু কি হচ্ছে?' উত্তর এল- খিচুরী আর ওমলেট। শুনে ফণি বাবুর খিদে আরও বেড়ে গেল। নিজেই স্বগোক্তি করলেন- ওহঃ এমন বৃষ্টির দিনে খিচুরী ওমলেট খেয়ে রাতে ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজে শোয়ার মজাই আলাদা। বীণা দেবী চা খেতে খেতে হেসে সায় দিলেন।
আজ অফিস থেকে বেরোতে দেরী হয়ে গেল ঊর্মির। এত মুষলধারে বৃষ্টি যে স্টেশন আসার একটাও গাড়ি পাচ্ছিল না। শেষে একটা অটোতে কোন রকম ম্যানেজ করে স্টেশন পৌছায়। প্ল্যাটফর্মে পা দিতেই ট্রেনের ঘোষনা শুনতে পায়। তাড়াতাড়ি করে ওভারব্রিজে ওঠার সময় দেখে এক পাগলী শত ছিন্ন জীর্ন পোষাকে যাতে আব্রু ঠিক ঠাক ঢাকা যায় না, বৃষ্টির ঝঁটে ঠান্ডায় কাঁপছে। কি ভেবে ঊর্মী নিজের গা থেকে সুতির ওড়না খুলে পাগলীটার গায়ে জড়িয়ে দিল।
নতুন বিয়ের নতুন প্রেম। আজ এই বৃষ্টির দিনে অতনু- নীলা আরো কাছাকাছি এসেছে। বাইরে বৃষ্টির ভারী ধারায় সব ধুয়ে যাচ্ছে আর ঘরের ভেতর প্রেমের ঘন আবেশে দুজনে পরস্পর পরস্পরের ভালোবাসার ধারায় সিক্ত হয়ে চলেছে।
(সমাপ্ত)

