সৌভাগ্যবতী ভব
সৌভাগ্যবতী ভব
অদিতি যখন প্রথম বউ হয়ে এই বাড়িতে এল তখন ওর দিদি শাশুড়ি আশীর্বাদ করে ছিলেন "সৌভাগ্যবতী হও"। বড় ভালো লেগেছিল অদিতির । এই আশীর্বাদের মধ্যে জড়িয়ে থাকে একটা মেয়ের অনেক স্বপ্ন- আশা- আকাঙ্খা। অদিতিরও ছিল। সেও মনে মনে বুনেছিল অনেক স্বপ্নের জাল। কিন্তু তার ভাগ্যদেবতা বোধ হয় কোনো কারনে বিরূপ ছিল তার প্রতি। সারা দিন ধরে কলুর বলদের মতো সংসারের ঘানি টেনেও স্বামীর সোহাগের পরিবর্তে পেল শুধু মনোবেদনা আর শারীরিক কষ্ট। যার হাত ধরে সে এসেছিল এই নতুন বাড়ি সেই তাকে হাত ধরে পার করে দিল পরপারে। না না ভুল , হাত ধরে নয় বরং বলা ভালো শ্বাস রোধ করে।
কনের সাজে শুয়ে আছে অদিতি । পায়ে লাল টুকটুকে আলতা পরানো। এক মাথা সিন্দুর। তার শেষ সজ্জায় অতি নিপুণ ভাবে ঢেকে দেওয়া হল তার মৃত্যর কারণ চিহ্নটি। আসলে অন্তর্মুখী চাপা স্বভাব মানুষের মনের খবর কেইবা রাখতে যায়! তার ওপর দুর্বল শরীর। তাই কারওর মনে সন্দেহের কোনো অবকাশ রইল না। আশে পাশের নানা লোকজন নানা কথা বলছে। কেউ মেয়েটার বড্ড অসময়ে যাওয়া নিয়ে দুঃখ করছে, কেউ অদিতির স্বামীর কপাল নিয়ে হা হুতাশ করছে আবার কেউ কেউ অদিতির মৃত্যু সজ্জায় মাথা ভর্তি সিন্দুর দেখে তার গতজন্মকৃত পুণ্যের গুণকীর্তন করছে! এমন সময় এক অশীতিপর বৃদ্ধার হাত কাঁপতে কাঁপতে দিলে অদিতির মাথার সিন্দুর মুছে। সবাই হৈ হৈ করে উঠল। ক্ষীন কন্ঠে অদিতির দিদি শাশুড়ি বলে উঠলেন 'যে তার মৃত্যুর কারণ তার নামের সিন্দুর ওর মাথায় দিলে ওর শবকে যে অপমান করা হবে। জীবন থাকতে যে মান সে পেলে না, মরণে এইটুকু সম্মান সে পাক।' তারপর শান্ত দৃঢ় স্বরে বলে উঠল-' তোমরা কেউ পুলিশে খবর দাও । আমি বেঁচে থাকতে আমার বংশের এই কলঙ্ক আমি লুকিয়ে রাখতে পারব না।'