STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Action

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Action

নতুন বৌ

নতুন বৌ

4 mins
232

নতুন বৌ শিক্ষিত মেয়ে। মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে বেশ সংসারটাকে‌। সুরঞ্জিত বাবু যদিও তার প্রথমা স্ত্রীর সাথে সম্পর্কটা এখনো ছিন্ন করে নি। ফলে নতুন বৌ ভট্টাচার্য বাড়ি চাবি গোছা আঁচলে বেঁধে সারা বাড়িময় কতৃত্ব ফলিয়ে গেলেও।এখন স্ত্রী হিসেবে সুরজিৎ বাবুর হৃদয় দখল দারি করতে পারে নি।

ভট্টাচার্য বাড়ির একটা সুনাম আছে । বর্তমানে কলকাতা বাসিন্দা। এতোটাই প্রভাব এ বাড়ির যে বাড়ির সমানের রাস্তাটার নাম তার পিতামহের নামে। নবাবের হিসাব রক্ষক ছিলো তাদের পূর্ব পুরুষরা। পরে কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। ব্রিটিশ রাজ থেকে তাদের বংশধরদের সুনাম উকিল হিসেবে। সুরজিৎ বাবু নিজেও উকিল চার পুরুষ ধরে উকিল।

কিন্তু ভালোবাসা তো কোন হিসাব নিকাশ করে হয়না। সুচিত্রা শহর তলির এক সাধারন ডানপিটে মেয়ে। বন্ধু বাড়ি গিয়ে আলাপ তার সাথে। স্কুল গন্ডি পেরানো বিদ্যা নিয়ে কবিতা গল্প লেখে । এছাড়া কোন গুন নেই তবু ভালো বেসে ফেলো তাকে সুরজিৎ। একটা সাধারণ নারী জন্য সে তাঁর গম্ভীর বাবার বিরুদ্ধে যেতে রাজি ছিলো। কিন্তু তাঁর বাবা সমান জেদি। সুচিত্রা তিনি মনে নেবেন কেন? চালচুলোহীন বংশ মর্যাদাহীন একটা মেয়েকে তিনি তার একমাত্র ছেলের কখনো বৌ হিসাবে মানবে না।

কিন্তু সুরজিৎ হার মানলো না। যখন রায় চৌধুরীর মেয়ে নিবেদিতাকে তাঁর বাবা ভাবি পুত্র বধু হিসেবে ঘোষণা করলো। পরের দিন সুরজিৎ বাবু আইন সম্মত ভাবে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলো। সাত দিনের মধ্যেই বিবাহ দেবে বলে ঠিক করে ছিলেন সুরজিৎ এর বিভুতি বাবু। সুরজিৎ বাবু বিবাহ করে গৃহত্যাগী হলেন। কিন্তু সুচিত্রা উপরে যতই ডানপিটে হোক। সে যে কমল হৃদয়ের মেয়ে , সে খবর জানতেন বিভুতি বাবু । তাঁর বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হবার মিথ্যা খবর সুচিত্রা দেবীর কানে পৌঁছে দিলেন তিনি। আবেগী সুচিত্রা দেবী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিবেদিতা দেবীকে ভট্টাচার্য বাড়ির নতুন বৌ হিসাবে বরণ করে নিয়ে এলেন এ বাড়িতে।

সুরজিৎ বাবুর সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বৃন্দাবন বাসি হলেন।

নিবেদিতা অর্থাৎ নতুন বৌকে কিন্তু সুরজিৎ বাবু স্ত্রী মর্যদা দিলেন না। বারবার প্রত্যাক্ষণ পেয়েও তিনি সুচিত্রার কাছে ফিরে জেতেন। কিন্তু সুচিত্রা নিবেদিতার সুখে ভাগ বসাতে চাইতেন না। সুচিত্রা জানতেন একদিন ক্লান্ত হয়ে সুরজিৎ নিবেদিতার কাছে আশ্রয় নেবে কিন্তু তার হলো না। সে নিলো আশ্রয় মাদকের।

নতুন বৌ বহুদিন প্রত্যাখানের অপমান বুকে সহ্য করেই দিন গুজরান করছিল। বেশ হাসি ঠাট্টার সম্পর্ক ছিলো তার সুরজিৎ বাবুর পিসতুতো ভাই সৌমিত্রর সাথে। নিবেদিতার জীবনে নতুন করে আশার আলো এনেছিল ও।সুরজিৎ নিবেদিতার প্রতি উদাসীন হলেও বিভুতি বাবুর সতর্ক নজর ছিলো নতুন বৌএর প্রতি পদক্ষেপে।

হঠাৎ একদিন সৌমিত্র এর মৃত্যু হলো রহস্য জনক ভাবে। যদিও বিভুতি বাবুর সব শর্ত মেনে নিয়েছিলো নতুন বৌ তবুও বিভুতি বাবুর ক্রোধানল সৌমিত্র জীবনটা নিয়ে নিলো।

বিভুতি বাবু নতুন বৌএর কাছে থেকে একটা বংশ ধর চেয়েছিলো। তারপর জানা গেলো নতুন বৌ গর্ভবতী। সুরজিৎ বাবু অবাক হলেন হঠাৎ করে সে কিভাবে বাবা হলেন? অন্তর মহলের খবরতো বাইরের কেউ জানানে না। বিভুতি বাবু বোঝালেন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাঁরা দ্বারা এই ভালো কাজ টা হয়ে গেছে।

সুরজিৎ বাবু অবুজ নয়। একটা পুরুষ নারী চাল চলন দেখে অনুমান করে নিলেন কি ঘটনা ঘটতে পারে এই বাড়ির অন্দর মহলে। সে অবশ্য এসব ব্যাপার এখন বেশ উদাসীন। সবাই ভাবে সে মাতাল। হ্যা সে মাতাল। কিন্তু মদ সে এখন খায় না। ব্যবসায় মন তার নেই, হ্যা সে একা থাকে , কারো সাথে দেখা করতে চায় না। তাবলে সে মদ খেয়ে মাতাল নয়।সে হরি নামের প্রেমে মাতাল। কিন্তু গুরু তাঁকে দিক্ষা দিচ্ছে না । কারণ গুরু ভাবে সে কৃষ্ণ প্রেমে নয় এখনো সুচিত্রার প্রেমের টানে বৃন্দাবন যায় বারে বারে।

নতুন বৌ ধিরে ধিরে ব্যবসা বাণিজ্য সামলাতে শুরু করলো। যদিও সৌমিত্র ওকে সব কিছুই দেখিয়ে ছিলো বুঝিয়ে ছিলো। তখন ও ব্যবসা বুঝতে আগ্রহী ছিলো না। কিন্তু আজ এক সন্তানের মা হয়ে সে একটু বেশি আগ্রহী হয়েছেন ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাপারে। বিভুতি বাবু খুশি। তাঁর অবর্তমানে তাঁর বংশধরের ভবিষ্যৎ যাতে সুনিশ্চিত থাকে তাই সে নতুন বৌকে সবকিছু নিজে হাতে বুঝিয়ে দিলেন।

শিক্ষিত নারী নিবেদিতা দেবী। মা হিসেবে আরো ভয়ঙ্কর। সন্তান এর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সে যে কোন পদক্ষেপ নিতে রাজি ছিলেন।

জানেন জঙ্গলের বাঘিনী তার সন্তানদের জন্য কোন পুরুষের উপর নির্ভর করে না। নতুন বৌ সুরজিৎ বাবুর কাছে প্রথম কিছু চাইলেন। তাদের সন্তানকে নিয়ে বৃন্দাবন দর্শন করতে চাইলেন তিনি।

সুচিত্রা দেবী বৃন্দাবন বাসী হলেও তাঁর মনের সিংহাসনে সুরজিৎ বাবুই বসে ছিলেন। নিবেদিতা দেবী সুচিত্রা দেবীকে যখন জানালেন, তার সন্তানের আসল পিতা কে ?তার নাম জানতে না চেয়ে , তার সন্তানকে নিজের নাম দিয়েছেন সুরজিৎ বাবু তখন , তার প্রতি ভালোবাসা আরো গাঢ় হলো। সুচিত্রা দেবীকে একটাই অনুরোধ করলো নিবেদিতা দেবী, সে সুরজিৎ বাবুকে যেনো তার কাছে টেনে নেন। সুচিত্রা দেবী রাজী হলেন। সুরজিৎ বাবু , বৃন্দাবন রেয়ে গেলেন। যদিও নিবেদিতা দেবী বললেন তিনি মাসহারা পাঠাবেন। কিন্তু সুরজিৎ বাবু তা নিতে অস্বীকার করলেন জানালেন, তিনি সুচিত্রা দেবী বিবাহের সময়ই ও সম্পত্তি ত্যাগ করেছিলেন। তাছাড়া আজ তার সব পাওয়া হয়ে গেছে। এখন বিষয় আশয়ে চিন্তা ছেড়ে ঈশ্বর চরণ সে মন দিতে চায়। তাছাড়া সৌমিত্র খুন হয়েছে সে জানে। তাই সৌমিত্র বংশধর ও সম্পত্তির মালিক হলে তাঁর বুকের ভিতর থেকে একটা বোঝা নামবে। কারণ পিসিমা বলে সেই এ শহরে সৌমিত্রকে নিয়ে এসেছিল। এক সন্তান হারানোর যন্ত্রণা তার মা একমাত্র বুঝতে পারে।

একজন প্রকৃত প্রেমিকা ও বিরোহ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলো এতো দিন ধরে। বিভুতি বাবুর হঠাৎ মৃত্যু প্রমাণ করে দিলো নারীরা দূর্বল নয়। সব অপমানের শোধও সে নিতে পারে। সুরজিৎ বাবু বিভুতি বাবু ভীষণ ঘৃণা করতেন। সে শ্রাদ্ধ শান্তি করতে এলেন না তো নতুন বৌ কাছে থেকে জবাবদাহি কে নেবে আর? নতুন বৌ সাদা শাড়ি পড়া শুরু করলো বিভুতি বাবুর শ্রাদ্ধ দিন থেকে। সুরজিৎ এর স্ত্রী হতে পারি নি সে, কিন্তু সৌমিত্র এর বিধবা হিসেবে গোলাপ এর মা হয়ে, নতুন একটা গল্প শুরু করলো সে আজ থেকে ,,,,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract