Rima Goswami

Tragedy

4.0  

Rima Goswami

Tragedy

নষ্ট মেয়ে

নষ্ট মেয়ে

4 mins
364


ডালিম দশ বছরের মেয়ে, ভালো নাম হল অনামিকা শর্মা । ঠাকুমা বলেন ডালিম ।

তা ডালিম এর জীবনে নতুন কিছু নেই আছেন মা বাবা দাদু ঠাকুমা আর তিন কাকা দুই পিসি । এই নিয়েই ডালিম ও তার জগত ।

আস্তে আস্তে ডালিম এর পিসি দের বিয়ে হল । কাকা দের জন্য বউ এলো । কিন্তু লোক যতো বাড়তে থাকলো ডালিম যেন তত একা হতে থাকলো । পিসি রা তাদের নিজেদের বাড়ি চলে গেলো । কাকা রা তাদের স্ত্রী দের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । বাড়িতে ছোট্ট খেলার সঙ্গী না থাকলেও বড় রাই ডালিম এর খেলার সঙ্গী ছিল । কিন্ত আজ আর কেউ খেলে না ওর সাথে । মা বাবা তো সব সময়ে বলে পড় পড় । পড়াশোনা কর । দাদু কিন্তু এখনও ডালিম এর সব আব্দার মেটান । খেলা ও করেন কিন্তু বুড়ো দাদু আর কত দৌড়াতে পারে । বাড়িতে আরো ছোট্ট ছোট্ট ভাই বোন এলো ডালিম এবার খুশি ।

কিন্তু ওদের সাথে খেলবে আর কি সবাই বলে যাও তো ডালিম ভাই বোন কে নিয়ে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে এসো... যাও পোলিও ড্রপ খাইয়ে নিয়ে এসো.... ওদের নিয়ে পড়তে বসে পড় ।

বাবা বাবা ডালিম যেনো দিদি না ওদের মা ! এ ভাবেই দিন যায় বছর যায় , ডালিম পনেরো বছর এর হল ।অনেক কিছু বদলে গেছে এর মধ্যে । ওর বাবার বড় ব্যবসা ডুবে গেছে । এখন এক সাধারণ কোম্পানি তে কাজ করে ওর বাবা । কাকারা ভিন্ন ভিন্ন শংসার শুরু করেছে । দাদু ঠাকুমা আরও বুড়ো হয়ে গেছে ।আর সবথেকে বড় পরিবর্তন হয়েছে ডালিম এর কাকী দের যেনো যতো রাগ ডালিমের মায়ের আর ডালিম এর উপর ।পান থেকে চুন খোস বে কি ঝামেলা শুরু। আজ কাল ডালিম কে অনেক ছেলে প্রেম নিবেদন করে কিন্তু ডালিম ওই সব পাত্তা দেয় না.... ও পছন্দ করে প্রভাতকে ।


প্রভাত ভালো বাড়ির ছেলে পার্টি করে ভালো নাম ও করেছে পড়াশোনা তে ও টপ করে । আর দুর্গা পুজো তে ওর মন্ত্র বলা তে ছেলে থেকে বুড়ো সকলে মুগ্ধ । এহেন প্রভাত ডালিম এর থেকে যদিও বারো বছরের বড় তবুও ডালিম প্রভাত কেই চায় । কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে না । সারা দিনে একবারও যদি ও প্রভাত কে দেখতে পায় ও যেনো ধন্য হয়ে যায় । মনের কথা মনেই থাকে বলা আর হয়ে ওঠে না । ক্লাস টেন এ টিউশনি তে রাহুল ডালিম এর বন্ধু সরস্বতী পুজোর দিন ডালিম কে প্রেম নিবেদন করে । ডালিম না করে দেয় । রাহুল ওকে জানায় যে ডালিম যদি নিজের মত না পাল্টায় তা হলে রাহুল নিজেকে শেষ করে দেবে । সেই সময় শুধু রাহুল কে শান্ত করার জন্য ডালিম ওর প্রস্তাব মেনে নেয় । ওরা একসাথে পড়া করে স্কুল যায় । বলব বলব করেও রাহুল কে আর কিছু বলে উঠতে পারে না প্রভাত এর বিষয়ে । এলাকায় সবাই জেনে যায় রাহুল আর ডালিম এর সম্পর্কে । আস্তে আস্তে ডালিম এর মনেও রাহুল বাসা বাঁধতে শুরু করে , ভালো লেগে যায় রাহুলের খুনশুটি গুলো । প্রভাত মুছে যেতে থাকে ডালিম এর মন থেকে । তখন কলেজে পরীক্ষা চলছিল সারা দিন পড়া পরীক্ষা নিয়ে চলে যাচ্ছিল । কিছু ছেলে মেয়ে কে টিউশন পড়াতে হতো ডালিমকে । এ ভাবেই ও নিজের পড়ার খরচ চালাতে হতো ওকে । আর রাহুলের এ সব ঝামেলা ছিল না কারন ওর বাবার টাকার অভাব ছিল না ।


 এলাকার কাউন্সিলর এর মেয়ে নিয়া ছিল ডালিম এর খুব ভালো বন্ধু । নিয়ার দিদি পিয়া র বিয়ের কথা চলছিল রাহুলের এক দাদার সাথে । পিয়া র সমন্ধ টা কোনো কারণে ভেঙে যায় । পিয়ার সব রাগ গিয়ে পড়ে ডালিম এর উপর । ওর মনে হয় ডালিম পিয়ার বিয়েটা রাহুলকে দিয়ে ভাঙ্গা করিয়ে ছিল । জোর গুজব শুরু হয় ডালিম আর রাহুল কে নিয়ে নিয়া পিয়া ওর বাবার পার্টির জোর খাটিয়ে ডালিম এর আন্টি দের সাথে পরামর্শ করে ডালিম আর রাহুলের উপর হামলা করে ওদের অপবাদ দিতে শুরু করে । ডালিম এর বাবা কাজের সূত্রে বাইরে ছিল । ওর বয়স্ক দাদু কিছুই করে উঠতে পারছিল না শুধু কেঁদে কেঁদে বলছিল ওদের কোনো দোষ নেই ওদের তোমরা ছেড়ে দাও । হট করে রাহুল ওই পরিস্থিতিতে সবার সামনে ডালিম এর মাথায় সিঁদুর পড়িয়ে দেয় । উপস্থিত সবাই মিলে বলতে শুরু করে যে রাহুল ভুল করছে একটা নষ্ট মেয়ে কে সে নিজের বউ এর মর্যাদা দিচ্ছে । চোখের জল মুছে ডালিম বলে ওঠে , " নষ্ট কোনো মেয়ে হয় না নষ্ট হয় এই সমাজ.... যারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে.. যারা নিজের বাড়ির মেয়ের ক্ষতি করে তারা নষ্ট...... আমি নষ্ট না এর প্রমান ইশ্বর দেবেন... যারা আজ আমার ক্ষতি করতে এসেছে তাদের শাস্তি ইশ্বর দেবেন..... রাহুল আমার সাথে আছে আমি সমাজের কাওকে ভয় পাই না.... আর কাউন্সিলর বাবু আপনাকে আপনার মেয়ে আব্দার করলো যে একটা নিরপরাধ মেয়ের জীবন নষ্ট করতে হবে আর আপনিও চলে এলেন ওদের কথায়... ছি ছি লজ্জা করে না " ।পরের দিন রাহুলের মা বাবা ডালিম কে ওদের বাড়ি নিয়ে চলে যায় ।কিন্তু অশান্তির প্রাথমিক ধাক্কা টা ডালিম এর দাদু মেনে নিতে না পেরে উনি মারা যান । রাহুলকে পেলেও ডালিম ওর আদরের দাদু কে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে ফেলে ।

এর পর কেটে যায় অনেক সময় প্রকৃতি হোক আর ইশ্বর ডালিম এর অপরাধী রা নানা ভাবে শাস্তি পেয়েছে পাচ্ছে ও পাবে ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy