নিয়তি 🥀
নিয়তি 🥀
" চলো না, আমরা আজ কোথাও ঘুরতে যাই। "
" ঘুরতে?
কিন্তু আমার তো আজ স্কুল আছে! "
" থাক না, একদিন স্কুল কামাই করলে কিছু আসে যায় না, স্কুল ছুটির সময় বাড়িতে চলে গেলেই হল। "
কেউ জানতেও পারবে না।"
কিছুক্ষণ কি যেন একটা ভাবল অয়ন্তিকা। সঞ্জয় তার উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে গলিটার মোড়ে। মাত্র এক মাস আগে দুজনের আলাপ হয়েছে।
ছোট্ট শহর, মধুপুরে দুজনের বসবাস।
অয়ন্তিকা পড়ে ক্লাস ইলেভেনে, আর সঞ্জয় কলেজের সেকেন্ড ইয়ার।
একদিন শহরের রাস্তায় দুজনের আলাপ।
প্রথম দেখাতেই অয়ন্তিকা পড়ে যায় সঞ্জয়ের প্রেমে ।
সঞ্জয়ের অবস্থাও ঠিক তাই।
তারপর আস্তে আস্তে শুরু ফোনে কথা বলা। কতবার যে চ্যাট করাকালীন দুজনে রাত জেগেছে, তার ইয়ত্তা নেই।
এই ব্যাপারটা অয়ন্তিকা আর কাউকে জানায়নি। এমনকি ওর প্রিয় ছন্দাদিকেও না।
আজ স্কুল যাওয়ার আগে সঞ্জয়ের কথাতে একবার ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে অয়ন্তিকা।
কিচুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর অয়ন্তিকা বলল,
" ঠিক আছে চলো। কিন্তু আমরা যাবে কোথায়? কাছাকাছি তো তেমন কোনো জায়গা নেই। "
সঞ্জয় বলল -- "মধুপুরের সীমান্তে যে জঙ্গলটা আছে, সেখানে চলো না আজ। "
" সেখানে গিয়ে কি হবে? "
" দুজনে নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটাব। "
" তবে.. "
অয়ন্তিকাকে থামিয়ে দিয়ে সঞ্জয় বলল,
" তোমার কি আমার উপর ভরসা নেই? "
এবার একটা মুচকি হাসির রেখা দেখা দিল অয়ন্তিকার ওষ্ঠে।
ওটা ছিল সম্মতির হাসি যার সাথে মিশ্রিত হয়েছিল ভালোবাসা, আদর ও প্রতিশ্রুতি।
সঞ্জয়ের বাইকে চেপে দুজনে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেল ছোট জঙ্গলটায়। জঙ্গলটাকে সবাই বনানী বলে চেনে।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা পৌঁছে গেল জঙ্গলটার মধ্যিখানে। সেখানে একটি অশ্বত্থ গাছের নিচে দুজনে আরাম করে বসলো।
সঞ্জয় এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে অয়ন্তিকার মুখমন্ডলের দিকে। অয়ন্তিকার মনের মধ্যেও এক অজানা তৃপ্তিতার আস্তরণ বিছিয়েছে।
সঞ্জয় আঙুলগুলো নিয়ে অয়ন্তিকার গালে একবার হাত দিল।
অয়ন্তিকার দুই নয়ন যেন অজান্তেই বন্ধ হয়ে গেল।
এক অজানা আনন্দে সেও সঞ্জয়ের হাতটা ধরে নিল।
ঠিক যেন সেই স্পর্শের প্রতীক্ষায় বসে ছিল অয়ন্তিকা।
সে এক আলাদা অনুভূতি।
হঠাৎ ঘটে গেল এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
সঞ্জয় দ্রুতবেগে অয়ন্তিকার হাতটা সরিয়ে দিয়ে একটা সিটি মারল মুখে আঙুল ঢুকিয়ে।
অয়ন্তিকা কিছু বোঝার আগেই সেই অশ্বত্থ গাছটার পেছন থেকে বেরিয়ে এলো আর ও একজন ছেলে। ওর বয়স ও সঞ্জয়ের মত। ছেলেটার হাতে একটা মোটা দড়ি।
সঞ্জয় ততক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়েছে, অয়ন্তিকা তখনো বসে আছে নিচে।
সঞ্জয় এবার ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
" আর দেরি করা ঠিক হবে না আমাদের। এখন একে বাঁধ আর তাড়াতাড়ি নিয়ে চল। বস, অপেক্ষা করছে সেখানে। "
অয়ন্তিকা কিছু বুঝতে পারছে না, তাকে এখন গ্রাস করেছে অজানা এক ভয়।
এ কোন সঞ্জয়কে দেখছে সে? এ তো তার সেই চেনা সঞ্জয় নয়!!
সে চিৎকার করে উঠলো,
" কি হলো সঞ্জয় তোমার, এ ছেলেটা কে? তুমি আমাকে বাঁধতে বলছ কেন? "
সঞ্জয় এবার রেগে গর্জন করে উঠল অয়ন্তিকার ওপর,
" ওই, তুই একদম চুপ করে বসে থাক। একটা কথাও যেন মুখ থেকে না বেরায় তোর। এতদিন এই সুযোগটাই আমি খুঁজছিলাম। অনেক জ্বালিয়েছিস আমায়। এবার তোকে বিক্রি করে চালান করে দিতে পারলেই কাজ শেষ। "
অয়ন্তিকার এক চোখ পেটে যেন কান্না বেরিয়ে এলো,
" ছিঃ ছিঃ, তুমি কিনা শেষ পর্যন্ত আমাকে… "
আগন্তুক ছেলেটা ততক্ষণে অয়ন্তিকার দুই হাত ধরে বাঁধার চেষ্টা করছে।
সঞ্জয় ও এগিয়ে গেল সাহায্য করার জন্য।
অয়ন্তিকা সতো চেষ্টা করেও আটকাতে পারছে না। সে আর্তনাদ করে উঠলো
" বাঁচাও, বাঁচাও। "
কিন্তু ওই ঘন জঙ্গলে কে আসবে তাকে রক্ষা করতে?
হঠাৎ অয়ন্তিকা শুনতে পেল ওই আগন্তুক ছেলেটার আর্তনাদ।
" আঃ"
সঙ্গে সঙ্গে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল মাটিতে।
অয়ন্তিকা পেছনে ফিরে দেখল তার পাশে হাতে একটা বড় লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছন্দা দি।
অয়ন্তিকাও যেন এবারে মনে সাহস পেল।
সে উঠে দাঁড়িয়ে সঞ্জয়ের পেটে চালালো এক ঘুষি। ছন্দাদি ও এসে সঞ্জয়ের পায়ে মারল লাঠির বাড়ি।
সঞ্জয়ও চিৎকার করে মাটিতে পড়ে গেল।
ছন্দাদি এবার অবন্তিকার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে চলল। যেতে যেতে ছন্দাদি বলল,
" তোর মতো এরকম বোকা মেয়ে আর কটা আছে বলতো?
ভাগ্যিস এদিকটায় এসেছিলাম। নয়তো আজ কি যে হতো! ! "
অয়ন্তিকা কেঁদে কেঁদে বলল, " আমাকে ক্ষমা করো ছন্দাদি। আমি আর এরকম ভুল কখনো করবো না।"
অবন্তিকা একবার পেছন ফিরে সঞ্জয়ের দিকে তাকালো।তার নিজেরও বিশ্বাস হচ্ছে না যে সে এমন একটা ছেলের প্রেমে পড়েছিল।
কত স্বপ্ন দেখেছিল সে সঞ্জয় কে নিয়ে কিন্তু নিয়তি..?
------ সমাপ্ত ------