আয়না 💞
আয়না 💞
স্কুল থেকে ফেরার পথে আলাদা হয়ে যায় আয়না,রাহি আর নীরা।যাওয়ার পথটা এক রাস্তায় হলেও পথটা ভিন্ন।আসার পথে নীরা আর রাহি সোজা চলে যায় আর আয়না একটা সরু নির্জন রাস্তা দিয়ে যায়।আজও এক'ই অবস্থা।রাহি আর নীরার থেকে বিদায় নিয়ে পথ চলতে থাকে আয়না।লোক জন নেই বললেই চলে এই গলিতে।মাঝে মাঝে মনের গহীনে ভয় কাজ করে।যদি কিছু হয়ে যায়?বলা তো যায় না।
আর আজ ভয় একটু বেশিই লাগছে।কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে তার সাথে।কিন্তু মন কে শক্ত করে এগিয়ে চলল আয়না।যতই ভয় পাক উপরে তা প্রকাশ কখনোই করেনি আয়না।তার ভাবনা,তাকে ভয় পেতে দেখলে সবাই তাকে দূর্বল ভাববে।নারী জাতি দূর্বল নয়।
একটু এগুতেই তার ভয় টা বাস্তবতায় রুপ নিল।কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলিষ্ঠ দেহের ৪ জন ছেলে।যার দরুন তার ভয়টা দ্বীগুণ বেড়ে গেল।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায় থম মেরে।কি করবে বুঝতে পারছে না।ছেলে গুলো তার দিকে তাকিয়ে আছে একরাশ বাজে দৃষ্টি নিয়ে।আয়না মনে মনে ভাবল,"ভয় পেলে চলবে না!! নাহলে তারা আমায় দূর্বল ভাববে।"
আয়না এগিয়ে গেল অশান্ত ভয়ার্ত মন টাকে শক্ত করে।তারা এক জায়গায় ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে।উদ্দেশ্য আয়নাকে ওপারে যেতে না দেওয়া।
তাদের মাঝে একটা ছেলে বলল,
"মা*ল*টা জোস না?একদম ঝা*ক্কা*স!আজ খুব মজা হবে।"
এসব শুনে আয়নার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।আয়না মনে সাহস সঞ্চার করে এগিয়ে যায়।তারপর কোন কিছু না ভেবেই মাঝখানে থাকা দু'টো ছেলেকে ঠেলে সরিয়ে সেই জায়গা দিয়ে ওপারে চলে যায়।যা দেখে ছেলেগুলো থ হয়ে যায়।তারা ভেবেছিল আয়না ভয় পেয়ে পালাবে বা তাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবে।কিন্তু এমন কিছুই হলো না বরং বিচিত্র ঘটনা টা ঘটল।আর আয়নার এমন ব্যবহারে তারা বেশ রেগেও গেল।আয়না প্রায় অনেক টা এগিয়ে গেছে।
তখন'ই পেছন থেকে তাদের মধ্যে একটা ছেলে শিস বাজিয়ে বলল,
"এই মেয়ে এই!দাঁড়াও!"
কিন্তু আয়না দাঁড়ায় না।সে চলতেই থাকে।
ছেলেটা আবার ডাকল,
"এই মেয়ে!দাঁড়াতে বললাম না?"
আয়না তবু দাঁড়াল না।সে পা চালাতে থাকে আগের মতোই।এবার তারা রেগে এগিয়ে গিয়ে আয়নার পথ আগলে দাঁড়ায়।
ছেলেটা বলল,
"এই মেয়ে কথা কানে যায় না?ক'বার দাঁড়াতে বললাম শুনোনি?"
আয়না যেন কিছুই বঝেনি। সে ভ্রু কুঁচকে বলল,
"জ্বী আমাকে বলছেন?"
ছেলেটা রেগে বলল,
"শা*লি এখানে কি আর কাউকে দেখতে পাচ্ছিস?তোকেই বলছি।"
আয়না এবার চোখ তীক্ষ্ণ করে বলল,
"কিন্তু..আমার নাম তো এই মেয়ে না।"
ছেলে গুলো ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।একে অপরের দিকে তাকায়।
আয়না আবারো বলল,
"কি শুনেছেন?আমার নাম এই মেয়ে না।আয়না আমি!শুনেছেন?আমি আয়না।যার দিকে একবার তাকালে মানুষ তার কৃতকর্ম গুলো দেখতে পায় একবার হলেও।আর নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে নিজেই বলে,হায়!আমি কি কি করেছি?
আমি মা*ল তাই না?আচ্ছা?তো আপনার মা কি?আপনার প্রাণ প্রিয় বোন টা কি?তারাও কি মা*ল?আমি সেই জাতী,যাকে দেখলে চোখ নামিয়ে চলতে বলা হয় সেখানে আপনারা আমার দিকে বাজে নজর দিচ্ছেন?যদি আপনার মা বোনকেও কেউ এভাবে মা*ল ডাকে,বাজে নজর দেয়,শিস বাজায় তখন আপনার কেমন লাগবে?খুব ভালো লাগবে বুঝি?না'কি মা-বোনকেও ছাড়বেন না?লজ্জা করে না?যেই জাতী থেকে জন্ম নিয়েছেন সেই জাতীকেই মা*ল বলতে।সতীত্ব কেড়ে নিতে?কি জবাব আছে?"
ছেলেগুলো কিছুই বলে না।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
তারপর আয়না বলল,
"আর কোন মেয়ের দিকে বাজে নজর দেওয়ার আগে কথাগুলো ভেবে দেখবেন।"
বলেই আয়না পেছন ঘুরে রওনা দেয় নিজের গন্তব্যে।নিজেকে শক্ত করতে হবে।সাহসী করতে হবে।তবেই হবে নারী জাতির জয়। 🙂
~সমাপ্ত~